ভুটানের ট্রাক আটকানোয় একাধিক ভারতীয় ট্রাকচালক-শ্রমিক গ্রেপ্তার
Published: 23rd, June 2025 GMT
ভুটানের পণ্য বোঝাই ট্রাক ভারতের ট্রানজিট নিয়ে বাংলাদেশে পণ্য রপ্তানি করছে। কিন্তু ভারতীয় ট্রাক মালিকরা ভুটানি পণ্য পরিবহনের সেই সুযোগ পাচ্ছে না। এমন ঘটনাকে কেন্দ্র করে প্রায় এক সপ্তাহ ধরে উত্তপ্ত ভারতের শিলিগুড়ি করিডরে অবস্থিত ভারত-বাংলাদেশের ফুলবাড়ি, চ্যাংড়াবান্ধা সীমান্ত।
সোমবার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। ভারতীয় ট্রাকমালিক এবং সিএনএস এজেন্টদের বিক্ষোভে অশান্তি ছড়িয়ে পড়ে স্থলবন্দর এলাকায়। পাল্টা হস্তক্ষেপ করে পুলিশ। গ্রেপ্তার করা হয় একাধিক বিক্ষোভকারীকে।
জানা যায়, গত ১৪ জুন ভুটানি ট্রাকের মাধ্যমে বাংলাদেশে ট্রানজিট বন্ধের দাবিতে সীমান্ত বন্ধ করে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করে ভারতীয় ট্রাক চালক ও মালিক সংগঠনের সদস্যরা। সেসময় একটানা তিনদিন অব্যাহত বিক্ষোভ, সীমান্ত অবরোধ ঘটনায় ব্যাপক উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে সীমান্ত সংলগ্ন এলাকায়।
ভারতীয় ট্রাক মালিকদের অভিযোগ, ভুটান সরকারের রেজিস্টার ট্রাক ভুটান থেকে পণ্য বোঝাই করে ভারতের ট্রানজিট নিয়ে বাংলাদেশে পাথর রপ্তানি করে। কিন্তু ভারতের ভূমির ট্রানজিট নিলেও এই সুযোগ পায়না ভারতীয় ট্রাক। ভারতীয় ট্রাক মালিক ও চালক সংগঠনের দাবি ভুটানি ট্রাকের পাশাপাশি ভারতীয় ট্রাককেও ট্রানজিট পণ্য রপ্তানির সুযোগ দিতে হবে। ভারতীয় ট্রাক মালিক এবং চালকদের অভিযোগ তারা সীমান্তে পণ্য পরিবহনের সমঅধিকার থেকে বঞ্চিত হওয়ায় বিপাকে পড়েছেন।
বিক্ষোভকারীরা জানান, সীমান্তের ৪টি সংগঠন- ট্রাক মালিক সমিতি, ট্রাক চালক সমিতি, এক্সপোর্টার অ্যাসোসিয়েশন ও সিএনএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশন এই অনশন-অবরোধ বিক্ষোভে অংশ নিয়েছেন। তারা বলছেন, বিগত ৪ মাসের বেশি সময় বাংলাদেশে পণ্য পরিবহনের জন্য ভারতীয় ট্রাক ব্যবহারের সুযোগ হারিয়েছেন তারা। আর তাই ভারত বাংলাদেশ সীমান্ত বন্ধ করে সীমান্তের রাস্তায় বসে পড়েন শতাধিক ভারতীয় ট্রাক চালক ও ট্রাক মালিকরা। অনশন ,বিক্ষোভ, অবরোধ অব্যাহত ভাবে চালিয়ে যেতে শুরু করেন।
তাদের দাবি, ভুটানের ট্রাককে ভারত ভুটান সীমান্তে পণ্য আনলোড করে সেই পণ্য ভারতীয় ট্রাকের মাধ্যমে বাংলাদেশে রপ্তানির সুযোগ দিতে হবে। নয়তো ভুটানের ট্রাকের জন্য ২০টির বেশি স্লট বরাদ্দ করা যাবে না।
সীমান্ত বাণিজ্য যখন সম্পূর্ণরূপে বন্ধ হওয়ার মুখে সে সময় স্থানীয় তৃণমূল কংগ্রেসের বিধায়ক ও উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেব সমস্যা সমাধানে এগিয়ে আসেন। এ বিষয়ে তিনি বৈঠক করলেও বিক্ষোভকরীদের দাবি সেই বৈঠকের এক সপ্তাহ পেরিয়ে গেলেও বাস্তবে তার প্রতিফলন ঘটেনি। প্রতিদিন ভারতের ট্রানজিট নিয়ে শত শত ভুটানের ট্রাক বাংলাদেশে পণ্য পরিবহন করছে। কিন্তু এখনও ভারতীয় ট্রাক মালিকরা স্লট বরাদ্দ পাচ্ছেন না।
ফলে সোমবার সকাল থেকে আবারও ভুটানের বাংলাদেশগামী পণ্য বোঝাই ট্রাক আটকে আবারও বিক্ষোভ শুরু করেন ট্রাক মালিক, শ্রমিক, এক্সপোর্টার অ্যাসোসিয়েশন ও সিএনএফ এজেন্টরা। ঘটনায় ব্যাপক উত্তেজনা ছড়ায় সীমান্ত এলাকায়। ঘটনাস্থলে ছুটে আসে নিউ জলপাইগুড়ি থানার পুলিশ। বিক্ষোভকারীদের সরাতে গেলে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ শুরু হয় বিক্ষোভকারীদের। একপর্যায়ে গ্রেপ্তার করা হয় একাধিক বিক্ষোভকারীকে। এ ঘটনায় দিনভর উত্তেজনা বিরাজ করছে সীমান্ত এলাকায়।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: এল ক য
এছাড়াও পড়ুন:
দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আমরণ অনশনের ঘোষণা প্রবাসী ও স্বজনদের
বিক্ষোভের ঘটনায় সাজাপ্রাপ্ত ৫৭ বাংলাদেশির সবাইকে আমিরাত প্রেসিডেন্টের ক্ষমা
সংযুক্ত আরব আমিরাতে কারাবন্দী ও আটক হওয়া প্রবাসীদের মুক্তিসহ চার দাবিতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আলোচনা ফলপ্রসূ না হওয়ায় আমরণ অনশনের ঘোষণা দিয়েছেন আন্দোলনকারীরা। তাঁদের দাবি, জুলাই আন্দোলনের সমর্থনে মিছিল করায় তাদের আটক করা হয়।
আজ রোববার বেলা ৩টার দিকে রাজধানীর হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালের সামনে থেকে আন্দোলনের অন্যতম সংগঠক ও সংযুক্ত আরব আমিরাত ফেরত সগীর তালুকদার এই ঘোষণা দেন। এ সময় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে যাওয়া আটজন প্রতিনিধি সেখানে উপস্থিত ছিলেন। এরপর তাঁরা সেখানেই অবস্থান নেওয়ার চেষ্টা করলে পুলিশ তাদের বুঝিয়ে সরিয়ে দেয়। পরে তারা মিছিল নিয়ে ইস্কাটন গার্ডেন রোডে প্রবাসী কল্যাণ ভবনের সামনে অবস্থান নেন।
‘জুলাই ২৪-এর আন্দোলনে ক্ষতিগ্রস্ত জেলফেরত ভুক্তভোগী প্রবাসী রেমিট্যান্স যোদ্ধারা’ ব্যানারে এই কর্মসূচি পালন করা হচ্ছে। কর্মসূচিতে ভুক্তভোগী প্রবাসীদের স্বজনেরাও অংশ নিয়েছেন।
এই আন্দোলনকারীরা সকালে শাহবাগ এলাকায় জড়ো হন। পরে তাঁরা প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনা অভিমুখে মিছিল নিয়ে রওনা হন। হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালের সামনে এলে তাঁদের বাধা দেয় পুলিশ। পরে তাঁরা সেখানে অবস্থান নেন। এতে বাংলামোটর হয়ে যমুনা অভিমুখের রাস্তা বন্ধ হয়ে যায়। বেলা দেড়টার দিকে পুলিশের সহায়তায় আন্দোলনকারীদের আট সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে যান। অন্যরা সেখানকার সড়কের অবস্থান নেন।
উল্লেখ্য, গত বছরের ১৯ জুলাই কোটা সংস্কার আন্দোলনের প্রতি সংহতি জানিয়ে সংযুক্ত আরব আমিরাতে বিক্ষোভ করেন প্রবাসী বাংলাদেশিরা। এ ঘটনায় জন বাংলাদেশিকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দিয়েছেন দেশটির একটি আদালত। সংযুক্ত আরব আমিরাতে অনুমতি ছাড়া যেকোনো ধরনের বিক্ষোভ নিষিদ্ধ। পরে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস ওই বাংলাদেশিদের মুক্তির ব্যাপারে আরব আমিরাত সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে গত সেপ্টেম্বরের শুরুতেই সেই ৫৭ বাংলাদেশির সবাইকে আমিরাত প্রেসিডেন্ট ক্ষমা করে দেন। এরপর ৭ সেপ্টেম্বর দেশে ফেরেন ১৪ জন।
আজ সগীর তালুকদার সাংবাদিকদের বলেন, সংযুক্ত আরব আমিরাতের আল সদর কারাগারে ২৫ জন ভাই বন্দী আছেন। তাদের মুক্তির জন্য আমরা প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে দেখা করতে চেয়েছিলাম কিন্তু পুলিশের পক্ষ থেকে আমাদের পররাষ্ট্র উপদেষ্টার সঙ্গে দেখা করানোর কথা বলা হয়। কিন্তু সেখানে গিয়ে মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তার সঙ্গে দেখা করানো হয়েছে। আমাদের সঙ্গে প্রতারণা করা হয়েছে।
সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন সংযুক্ত আরব আমিরাত ফেরত সগীর তালুকদার