খুলনা থেকে ঢাকার পথে চলাচলকারী আন্তনগর সুন্দরবন ও চিত্রা এক্সপ্রেস ট্রেনের রাত্রিকালীন যাত্রাবিরতির দাবিতে আজ মঙ্গলবার চুয়াডাঙ্গার দর্শনা হল্ট স্টেশনে দুই ঘণ্টা ট্রেন থামিয়ে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ কর্মসূচি পালিত হয়েছে। ‘দর্শনাবাসীর’ ব্যানারে আয়োজিত এ কর্মসূচিতে সর্বস্তরের মানুষ অংশ নেন।

ঢাকা থেকে খুলনাগামী আন্তনগর সুন্দরবন এক্সপ্রেস ট্রেন থামিয়ে বেলা ১টা ৫৫ মিনিট থেকে কর্মসূচি শুরু হয়। পরে সেনাবাহিনীর চুয়াডাঙ্গা ক্যাম্পের ক্যাপ্টেন সৌমিক আহমেদ অয়নের আশ্বাসে সাত দিনের জন্য আন্দোলন স্থগিত করা হয়। বেলা ৩টা ৫৫ মিনিটে ট্রেনটি খুলনার উদ্দেশে রওনা দেয়। এ সময় ঘোষণা দেওয়া হয়, আগামী সোমবারের মধ্যে দাবি পূরণ না হলে মঙ্গলবার থেকে রেলপথ অবরোধ কর্মসূচি পালন করা হবে।

সরেজমিন দেখা যায়, বিভিন্ন স্লোগান লেখা ব্যানার–ফেস্টুন নিয়ে দুপুর ১২টা থেকে দর্শনা হল্ট স্টেশনে সমবেত হতে থাকেন বিভিন্ন শ্রেণি–পেশার মানুষ। ব্যানার ও ফেস্টুনে লেখা ছিল ‘বঞ্চনা নয়, অধিকার চাই’, ‘দর্শনায় যাত্রাবিরতি চাই’, ‘মিথ্যা আশ্বাস আর নয়, এবার বাস্তবায়ন চাই’, ‘সুন্দরবন এক্সপ্রেস ট্রেনের আপ ও চিত্রা এক্সপ্রেস ট্রেনের ডাউন বিরতি চাই’। দর্শনা পৌর বিএনপির সমন্বয়ক হাবিবুর রহমান, সাংস্কৃতিক সংগঠক সাজ্জাদ হোসেনসহ বাজার কমিটি ও ছাত্রসংগঠনের নেতারা কর্মসূচির প্রতি সংহতি প্রকাশ করেন।

কর্মসূচি চলাকালে দামুড়হুদা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) তিথি মিত্র দর্শনা হল্ট স্টেশনে আসেন। তিনি আন্দোলনকারীদের দাবিকে যৌক্তিক হিসেবে উল্লেখ করে রেলপথ অবরোধ থেকে সরে আসার আহ্বান জানান। তবে কর্মসূচি অব্যাহত রাখেন আন্দোলনকারীরা। বিকেল পৌনে চারটার দিকে সেনাবাহিনীর ক্যাপ্টেন সৌমিক আহমেদ অয়ন আন্দোলনকারীদের নেতাদের সঙ্গে কথা বলেন। এ সময় তাঁর আশ্বাসে আন্দোলনকারীদের পক্ষ থেকে কর্মসূচি স্থগিতের ঘোষণা দেওয়া হয়।

রেলওয়ে সূত্র জানায়, কর্মসূচির কারণে বেনাপোল এক্সপ্রেস, মহানন্দা এক্সপ্রেস ও রূপসা এক্সপ্রেস ট্রেনের শিডিউল বিপর্যয় ঘটে। এতে হাজারো যাত্রী দুর্ভোগে পড়েন।
দর্শনাবাসীর ব্যানারে আয়োজিত কর্মসূচি স্থানীয়ভাবে সমন্বয় করেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-আন্দোলনের চুয়াডাঙ্গা জেলা শাখার যুগ্ম আহ্বায়ক তানভীর আহম্মেদ অনিক ও সংগঠনটির দর্শনার সমন্বয়ক আবিদ হাসান রিফাত।

আবিদ হাসান বলেন, জেলার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ শহর দর্শনা। দর্শনার চেকপোস্ট হয়ে প্রতিদিন হাজারো যাত্রী ভারত-বাংলাদেশ যাতায়াত করেন। এখানকার যাত্রীদের বেশির ভাগই ট্রেনের ওপর নির্ভরশীল। তিনি বলেন, ‘খুলনা-ঢাকা পথে চলাচলকারী সুন্দরবন এক্সপ্রেস ও চিত্রা এক্সপ্রেস ট্রেন দিনের বেলা দর্শনা হল্ট স্টেশনে যাত্রাবিরতি দিয়ে আসছে। অথচ দর্শনায় ট্রেন দুটির রাত্রিকালীন বিরতি নেই। এতে রাতে এসব ট্রেনে চলাচলকারী যাত্রীদের ঝুঁকি নিয়ে ২৫ কিলোমিটার দূরে চুয়াডাঙ্গায় যেতে হয়। এতে অনেকেই ছিনতাইসহ নানা রকম সমস্যায় পড়েন। তাই এ দুটি ট্রেনের রাত্রিকালীন যাত্রাবিরতির জন্য আমরা দীর্ঘদিন আন্দোলন করে আসছি। রেলওয়ের মহাপরিচালকসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা দফায় দফায় আশ্বাস দিলেও তা বাস্তবায়ন করছেন না।’

আন্দোলন স্থগিত রাখা প্রসঙ্গে তানভীর আহম্মেদ অনিক বলেন, এবার যদি সমস্যার সমাধান না হয়, তাহলে তাঁরা দর্শনা রেলস্টেশন বন্ধ করে দেবেন। এই স্টেশন থেকে কোনো টিকিট বিক্রি হবে না। প্রয়োজনে তাঁরা আমরণ অনশন করবেন।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: স ন দরবন

এছাড়াও পড়ুন:

নতুন ডিজাইনের ১০০ টাকার নোট বাজারে আসছে মঙ্গলবার

বর্তমান গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর স্বাক্ষরিত নতুন ডিজাইন ও সিরিজের ১০০ টাকা মূল্যমানের ব্যাংক নোট মঙ্গলবার (১২ আগস্ট) বাজারে ছাড়বে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। নোটটি প্রাথমিকভাবে বাংলাদেশ ব্যাংকের মতিঝিল অফিস থেকে এবং পরবর্তীতে বাংলাদেশ ব্যাংকের অন্যান্য অফিস থেকে ইস্যু করা হবে।

রবিবার (১০ আগস্ট) বাংলাদেশ ব্যাংকের ডিপার্টমেন্ট অব কমিউনিকেশন্স অ্যান্ড পাবলিকেশন্স থেকে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংক জানিয়েছে, ‘বাংলাদেশের ঐতিহাসিক এবং প্রত্নতাত্ত্বিক স্থাপত্য’ শীর্ষক নতুন ডিজাইন ও সিরিজের ১০০ টাকা মূল্যমান ব্যাংক নোটের ডিজাইন ও নিরাপত্তা বৈশিষ্ট্য হচ্ছে- ব্যাংক নোটটির আকার নির্ধারণ করা হয়েছে ১৪০x৬২ বর্গ মিলিমিটার। নোটের সম্মুখভাগে বামপাশে ষাট গম্বুজ মসজিদের ছবি ও মাঝখানে ব্যাকগ্রাউন্ডে পাতা ও কলিসহ প্রস্ফুটিত জাতীয় ফুল শাপলার ছবি এবং নোটের পেছন ভাগে সুন্দরবন, বাংলাদেশের ছবি মুদ্রিত আছে। নোটে জলছাপ হিসেবে রয়েল বেঙ্গল টাইগারের মুখ, এর নিচে উজ্জ্বল ইলেক্ট্রো টাইপ জলছাপে ‘100’ ও বাংলাদেশ ব্যাংকের মনোগ্রাম রয়েছে। নোটটিতে নীল রঙের আধিক্য রয়েছে।

আরো পড়ুন:

ব্যাংকের বেনামী ঋণ বন্ধ হয়েছে, আমানতকারীদের আস্থা ফিরছে

‘টাকা পে’ এর নামে ভুয়া ওয়েবসাইট, সতর্ক করল কেন্দ্রীয় ব্যাংক

১০০ টাকা মূল্যমান নোটটিতে মোট ১০ ধরনের নিরাপত্তা বৈশিষ্ট্য সংযোজন করা হয়েছে। নোটের সম্মুখভাগে ডানদিকে কোনায় মুদ্রিত মূল্যমান ‘১০০’ রঙ পরিবর্তনশীল উন্নতমানের নিরাপত্তা কালি দ্বারা মুদ্রিত। নোটটি নাড়াচাড়া করলে এর রঙ সোনালি থেকে সবুজ রঙে পরিবর্তিত হয়।

নোটটির সম্মুখভাগে বামপাশে ৪ মিলিমিটার চওড়া লাল রঙ এবং উজ্জ্বল রূপালি বারের সমন্বয়ে পেঁচানো নিরাপত্তা সুতা রয়েছে। নোটটি নাড়াচাড়াকরণে নিরাপত্তা সুতার রঙ লাল হতে সবুজ রঙে পরিবর্তিত হয়, যাতে ‘১০০ টাকা’ খচিত রয়েছে এবং উজ্জ্বল রংধনুর রঙের বারে রূপান্তরিত হয়ে উপর থেকে নীচে চলতে দেখা যাবে। দৃষ্টি প্রতিবন্ধীদের জন্য নোটের সম্মুখভাগে ডানে নীচের দিকে তিনটি ছোট বৃত্ত রয়েছে, যা হাতের স্পর্শে অসমতল অনুভূত হয়।

নোটটিতে ইন্টাগ্লিও কালিতে মুদ্রিত অংশগুলো হাতের স্পর্শে অসমতল অনুভব করা যাবে। ইন্টাগ্লিও কালিতে মুদ্রিত অংশগুলোর মধ্যে রয়েছে- নোটের সম্মুখভাগের ষাট গম্বুজ মসজিদের ছবি, বাংলাদেশ ব্যাংক, প্রতিশ্রুত বাক্য, বাংলা ও ইংরেজিতে মূল্যমান নোটের ডানদিকে আড়াআড়িভাবে অবস্থিত ছয়টি লাইন এবং নোটের পেছন ভাগে সুন্দরবন, বাংলাদেশের ছবি, সব মূল্যমান (অংকে ও কথায়), বাংলাদেশ ব্যাংকের মনোগ্রাম, BANGLADESH BANK ইত্যাদি।

নোটের সম্মুখভাগে নিরাপত্তা সুতা সংলগ্ন নকশাগুলো আই অ্যাবজরবেন্ট কালি দ্বারা মুদ্রিত, যা আইআর সনাক্ত যন্ত্র দ্বারা দৃশ্যমান হবে। নোটের সম্মুখভাগে নিরাপত্তা সুতার বামপাশে ও ‘BANGLADESH BANK’ লেখাটির নিচে মাইক্রোপ্রিন্ট হিসেবে উলম্বভাবে ‘BANGLADESH BANK 100 Taka’ পুনরায় মুদ্রিত রয়েছে।

এছাড়া, নোটের পেছন ভাগে বামপাশে নীচে ও ডানপাশে উলম্বভাবে ‘BANGLADESH BANK’ এবং বামপাশে উপরে ‘100 Taka’ মাইক্রোপ্রিন্ট হিসেবে পুনরায় মুদ্রিত রয়েছে, যা শুধু ম্যাগনিফাই গ্লাস দ্বারা দেখা যাবে।

নোটটিতে গভর্নর স্বাক্ষরের ডানপাশে See-Through image হিসেবে ‘১০০’ মুদ্রিত রয়েছে যা আলোর বিপরীতে ধরলে ‘১০০’ লেখা দৃশ্যমান হবে। নোটের সম্মুখভাগে নীচের দিকের বর্ডারের মাঝখানে নীল ডিজাইন অংশে গুপ্তভাবে ‘100’ লেখা আছে, যা নোটটি অনুভূমিকভাবে ধরলে দেখা যাবে। নোটের কাগজে লাল, নীল ও সবুজ রংয়ের অসংখ্য আঁশ রয়েছে, যা আল্ট্রা ভায়োলেট সনাক্ত যন্ত্র দ্বারা দৃশ্যমান হয়।

নোটটির উভয় পৃষ্ঠে ইউভি কিউরিং ভার্নিশ সংযোজন করা হয়েছে। এর ফলে নোটটি চকচকে অনুভূত হবে, নোটের স্থায়ীত্ব বৃদ্ধি পাবে।

নতুন ডিজাইনের ১০০ টাকা মূল্যমানের নোটের পাশাপাশি বর্তমানে প্রচলিত সব কাগুজে নোট এবং ধাতব মুদ্রাও যথারীতি চালু থাকবে। এছাড়া, মুদ্রা সংগ্রাহকদের চাহিদার বিষয়টি বিবেচনা করে নিয়মিত নোটের পাশাপাশি ১০০ টাকা মূল্যমান নমুনা নোট (যা বিনিময়যোগ্য নয়) মুদ্রণ করা হয়েছে, যা মিরপুরের টাকা জাদুঘর থেকে নির্ধারিত মূল্যে সংগ্রহ করা যাবে।

ঢাকা/নাজমুল/মেহেদী

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • নতুন ডিজাইনের ১০০ টাকার নোট বাজারে আসছে মঙ্গলবার