গত মঙ্গলবার ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলী রাস্তা বন্ধ করে কর্মসূচি পালন না করার জন্য রাজনৈতিক দলসহ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। এর আগেও সড়ক অবরোধ, সড়কে মিছিল, মানববন্ধন না করার জন্য সংস্থাটির পক্ষ থেকে একাধিকবার পরিপত্র জারি করা হয়েছে।

ডিএমপি কমিশনার এমন সময়ে রাস্তা বন্ধ করে কর্মসূচি না নেওয়ার অনুরোধ জানালেন, যখন এইচএসসি পরীক্ষা সমাগত। আজ বৃহস্পতিবার থেকে শুরু হওয়া পরীক্ষা চলবে ১০ আগস্ট পর্যন্ত। ডিএমপি যথার্থই এইচএসসি পরীক্ষাকেন্দ্রের ২০০ গজের মধ্যে জনসাধারণের প্রবেশ নিষিদ্ধ করেছে। প্রায় দুই কোটি মানুষের ঢাকা শহরে সব সময়ই যানজট লেগে থাকে। এর ওপর কোনো সড়ক বন্ধ করে কেউ কর্মসূচি পালন করলে কী ভয়াবহ পরিস্থিতি হয়, সেটা নগরবাসী হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছেন।

ডিএমপি কমিশনার যখন অনুরোধ জানালেন, তখনো ঢাকা শহরের রাস্তা বন্ধ করে কোনো না কোনো সংগঠন আন্দোলন কর্মসূচি পালন করছে। ফলে শহরের বাসিন্দারা দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন। কখনো কখনো আন্দোলন মোকাবিলায় ছত্রভঙ্গ করতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে শক্তি প্রয়োগ করতেও দেখা যাচ্ছে; যদিও ডিএমপি কমিশনার বলেছেন তাঁরা সেটি করতে চান না।

সমস্যাটি শুধু আইনশৃঙ্খলাজনিত নয়। এর পেছনে রাজনৈতিক, সামাজিক ও প্রশাসনিক কারণও আছে। প্রধান উপদেষ্টা ড.

মুহাম্মদ ইউনূস গত বছর জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে আন্দোলনকারীদের প্রতি সহানুভূতি দেখিয়ে বলেছিলেন, ‘আপনাদের কাছে অনুরোধ, আমাদের কাজ করতে দিন। আপনাদের যা চাওয়া, লিখিতভাবে আমাদের দিয়ে যান। আমরা আপনাদের বিপক্ষ দল নই। আইনসংগতভাবে যা কিছু করার, আমরা অবশ্যই করব। কিন্তু আমাদের ঘেরাও করে কাজে বাধা দেবেন না।’ 

এখন প্রশ্ন হলো বিভিন্ন গোষ্ঠী রাস্তায় নামার আগে সরকারের কাছে যখন লিখিত আরজি জানায়, তখন সরকার কী ধরনের প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে? লিখিত আভিযোগ পেয়েই কি তাঁরা আন্দোলনকারীদের সঙ্গে আলোচনায় বসেছেন?  

ডিএমপি কমিশনার যখন রাস্তা বন্ধ করে কর্মসূচি না নেওয়ার কথা বলেছেন, তখনই ঢাকা মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থীরা আন্দোলনে আছেন। তাঁরা বলেছেন, ঢাকা মেডিকেল কলেজ কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে আবাসন সমস্যা নিরসনে সুনির্দিষ্ট কোনো আশ্বাস না পেয়ে ক্লাসে ফিরে যাবেন না। এখন পর্যন্ত তাঁদের আন্দোলন ক্যাম্পাসের মধ্যেই সীমিত আছে। সরকার দ্রুত সমস্যার সমাধান না করলে যেকোনো সময় তাঁরা রাস্তায় নেমে আসতে পারেন।

বেশ কিছুদিন ধরে আবাসন সমস্যার সমাধানে পাঁচ দফা দাবি তুলে ক্লাস বর্জন করে আসছেন ঢাকা মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থীরা। উল্লেখ্য, কর্তৃপক্ষের নির্দেশ উপেক্ষা করে তাঁরা হলে অবস্থান করছেন। শিক্ষার্থীদের আন্দোলন ক্যাম্পাসে সীমিত থাকতেই সরকারের উচিত আলোচনার মাধ্যমে সমস্যার সমাধান করা।

জনমনে ধারণা হয়েছে যে দাবিদাওয়া নিয়ে মানুষ রাস্তায় নামলেই সরকার তা মেনে নেয়। তার আগে কোনো ব্যবস্থা নেয় না। সরকারের প্রতি জনমনে সৃষ্ট হওয়া এই ধারণা বদলানোর ক্ষেত্রে সরকারকেই কার্যকর ভূমিকা নিতে হবে। এ সমস্যাগুলোর সঙ্গে যেহেতু সরকারের সামর্থ্য ও নীতির প্রশ্ন জড়িত, সেহেতু সংশ্লিষ্ট সবাইকে উদ্যোগী ভূমিকা নিতে হবে। আন্দোলনকারী পক্ষগুলোর সঙ্গে সরকারের পক্ষে কারা আলোচনা করেছেন এবং সেই আলোচনার ফল কী, সেসব জানার অধিকারও নিশ্চয়ই জনগণের আছে।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: সরক র র ড এমপ সমস য

এছাড়াও পড়ুন:

ইবিতে অভয়ারণ্যের মেহেদি উৎসব

হারিয়ে যাওয়া ঐতিহ্য ফেরাতে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে (ইবি) মেহেদি ও নবান্ন উৎসবের আয়োজন করেছে পরিবেশবাদী সংগঠন অভয়ারণ্য।

সোমবার (১৭ নভেম্বর) বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলায় তারা এ আয়োজন করে। 

আরো পড়ুন:

খাগড়াছড়িতে চলছে রাস উৎসব ও মেলা

পুণ্যস্নান মধ্য দিয়ে কুয়াকাটায় শেষ হলো রাস উৎসব, মেলা চলবে ৫ দিন

সরেজমিনে দেখা যায়, মেহেদি ও নবান্ন উৎসব ঘিরে শিক্ষার্থীদের ব্যাপক উপস্থিতি। রঙিন কাগজের সাজে পুরো স্থানজুড়ে তৈরি হয়েছিল উৎসবের আমেজ। পরিবেশবান্ধব বার্তা বহনকারী ঝুলন্ত ডেকোরেশন, প্রাকৃতিক মেহেদি দেওয়ার স্টল এবং সাহিত্য–সংস্কৃতির বিভিন্ন উপস্থাপনা দর্শনার্থীদের আকর্ষণ করে।

শিক্ষার্থীরা জানান, অভয়ারণ্য সবসময়ই ব্যতিক্রমী উদ্যোগ নেয়। প্রাকৃতিক মেহেদি দেওয়ার হার কমে গেলেও এ আয়োজন সেই ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করছে।

ফাতিমা খাতুন নামে ইবির এক শিক্ষার্থী বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন সংগঠনগুলোর মধ্যে অভয়ারণ্য সবসময়ই ব্যতিক্রম। আজ মেহেদি উৎসবে এসে আমার অনেক ভালো লাগছে। আজকাল প্রাকৃতিক মেহেদি দেওয়ার সংস্কৃতি অনেকটাই কমে গেছে। তারা সেই সংস্কৃতিকে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করছে। তাছাড়া নবান্ন উৎসব যেখানে একদম বিলীনপ্রায়, সেখানে তারা এটারও আয়োজন করেছে। আশা করছি, এ রকম সুন্দর আয়োজন চলমান থাকবে।”

সংগঠনটির সভাপতি নাইমুল ফারাবী বলেন, “আমরা এবার দ্বিতীয়বারের মতো মেহেদি উৎসবের আয়োজন করছি। একসময় মেয়েদের হাত সর্বদা মেহেদীর রঙে রাঙা থাকত। কিন্তু প্রযুক্তির উন্নয়নের কারণে এ চর্চা এখন কমে গেছে। এটাকে স্মরণ করিয়ে দেওয়ার জন্যই আজকের এই আয়োজন।”

তিনি বলেন, “আজ যে মেহেদি দেওয়া হচ্ছে, সেটা আমাদের সংগঠনের রোপণ করা গাছের পাতা থেকে তৈরি। এর মাধ্যমে আমরা শুদ্ধতা ছাড়িয়ে দিতে চাই।”

তিনি আরো বলেন, “মেহেদি উৎসবের পাশাপাশি আমরা এবার প্রথমবারের মতো নবান্ন উৎসব আয়োজন করেছি। এর মাধ্যমে আমার বাংলার সংস্কৃতিকে পূনর্জ্জীবিত করতে চাচ্ছি। বাংলার বহুল প্রচলিত সংস্কৃতিকে যাতে করে শিক্ষার্থীরা পুনরায় ধারণ করতে পারে, সেজন্য আমাদের এই আয়োজন।”

ঢাকা/তানিম/মেহেদী

সম্পর্কিত নিবন্ধ