আলোচনার জন্য উদ্যোগী ভূমিকা নিতে হবে
Published: 26th, June 2025 GMT
গত মঙ্গলবার ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলী রাস্তা বন্ধ করে কর্মসূচি পালন না করার জন্য রাজনৈতিক দলসহ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। এর আগেও সড়ক অবরোধ, সড়কে মিছিল, মানববন্ধন না করার জন্য সংস্থাটির পক্ষ থেকে একাধিকবার পরিপত্র জারি করা হয়েছে।
ডিএমপি কমিশনার এমন সময়ে রাস্তা বন্ধ করে কর্মসূচি না নেওয়ার অনুরোধ জানালেন, যখন এইচএসসি পরীক্ষা সমাগত। আজ বৃহস্পতিবার থেকে শুরু হওয়া পরীক্ষা চলবে ১০ আগস্ট পর্যন্ত। ডিএমপি যথার্থই এইচএসসি পরীক্ষাকেন্দ্রের ২০০ গজের মধ্যে জনসাধারণের প্রবেশ নিষিদ্ধ করেছে। প্রায় দুই কোটি মানুষের ঢাকা শহরে সব সময়ই যানজট লেগে থাকে। এর ওপর কোনো সড়ক বন্ধ করে কেউ কর্মসূচি পালন করলে কী ভয়াবহ পরিস্থিতি হয়, সেটা নগরবাসী হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছেন।
ডিএমপি কমিশনার যখন অনুরোধ জানালেন, তখনো ঢাকা শহরের রাস্তা বন্ধ করে কোনো না কোনো সংগঠন আন্দোলন কর্মসূচি পালন করছে। ফলে শহরের বাসিন্দারা দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন। কখনো কখনো আন্দোলন মোকাবিলায় ছত্রভঙ্গ করতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে শক্তি প্রয়োগ করতেও দেখা যাচ্ছে; যদিও ডিএমপি কমিশনার বলেছেন তাঁরা সেটি করতে চান না।
সমস্যাটি শুধু আইনশৃঙ্খলাজনিত নয়। এর পেছনে রাজনৈতিক, সামাজিক ও প্রশাসনিক কারণও আছে। প্রধান উপদেষ্টা ড.
এখন প্রশ্ন হলো বিভিন্ন গোষ্ঠী রাস্তায় নামার আগে সরকারের কাছে যখন লিখিত আরজি জানায়, তখন সরকার কী ধরনের প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে? লিখিত আভিযোগ পেয়েই কি তাঁরা আন্দোলনকারীদের সঙ্গে আলোচনায় বসেছেন?
ডিএমপি কমিশনার যখন রাস্তা বন্ধ করে কর্মসূচি না নেওয়ার কথা বলেছেন, তখনই ঢাকা মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থীরা আন্দোলনে আছেন। তাঁরা বলেছেন, ঢাকা মেডিকেল কলেজ কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে আবাসন সমস্যা নিরসনে সুনির্দিষ্ট কোনো আশ্বাস না পেয়ে ক্লাসে ফিরে যাবেন না। এখন পর্যন্ত তাঁদের আন্দোলন ক্যাম্পাসের মধ্যেই সীমিত আছে। সরকার দ্রুত সমস্যার সমাধান না করলে যেকোনো সময় তাঁরা রাস্তায় নেমে আসতে পারেন।
বেশ কিছুদিন ধরে আবাসন সমস্যার সমাধানে পাঁচ দফা দাবি তুলে ক্লাস বর্জন করে আসছেন ঢাকা মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থীরা। উল্লেখ্য, কর্তৃপক্ষের নির্দেশ উপেক্ষা করে তাঁরা হলে অবস্থান করছেন। শিক্ষার্থীদের আন্দোলন ক্যাম্পাসে সীমিত থাকতেই সরকারের উচিত আলোচনার মাধ্যমে সমস্যার সমাধান করা।
জনমনে ধারণা হয়েছে যে দাবিদাওয়া নিয়ে মানুষ রাস্তায় নামলেই সরকার তা মেনে নেয়। তার আগে কোনো ব্যবস্থা নেয় না। সরকারের প্রতি জনমনে সৃষ্ট হওয়া এই ধারণা বদলানোর ক্ষেত্রে সরকারকেই কার্যকর ভূমিকা নিতে হবে। এ সমস্যাগুলোর সঙ্গে যেহেতু সরকারের সামর্থ্য ও নীতির প্রশ্ন জড়িত, সেহেতু সংশ্লিষ্ট সবাইকে উদ্যোগী ভূমিকা নিতে হবে। আন্দোলনকারী পক্ষগুলোর সঙ্গে সরকারের পক্ষে কারা আলোচনা করেছেন এবং সেই আলোচনার ফল কী, সেসব জানার অধিকারও নিশ্চয়ই জনগণের আছে।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: সরক র র ড এমপ সমস য
এছাড়াও পড়ুন:
খেলাপি কারখানা কিনে চালুর উদ্যোগ আকিজ বশির গ্রুপের
চার প্রকৌশলী মিলে ২০১৬ সালে গাজীপুরের শ্রীপুরে গড়ে তোলেন বিদ্যুতের তার ও কেবলস উৎপাদন কারখানা। নাম দেওয়া হয় এমিনেন্স ইলেকট্রিক ওয়্যার অ্যান্ড কেব্লস লিমিটেড। তখন প্রকল্পটির উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ বিবেচনা করে ন্যাশনাল ব্যাংকের নেতৃত্বে চার ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান মিলে প্রতিষ্ঠানটিকে অর্থায়ন করে।
তবে ডলারের দামের ঊর্ধ্বগতি ও সময়মতো চলতি মূলধন না পাওয়ায় প্রকল্পটি ব্যবসায়িক উৎপাদনই শুরু করতে পারেনি। উৎপাদন শুরুর আগেই শতকোটি টাকা ঋণখেলাপি হয়ে পড়ে। আর তাতে বিপাকে পড়ে প্রকল্পটিতে অর্থায়ন করা ন্যাশনাল ব্যাংক, রূপালী ব্যাংক, এক্সিম ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান লংকাবাংলা ফাইন্যান্স।
এখন পুরো ঋণ ও দায়দেনা পরিশোধ করে প্রকল্পটি কিনে নিচ্ছে আকিজ বশির গ্রুপ। এ জন্য চুক্তিবদ্ধ হয়েছে চার অর্থায়নকারী প্রতিষ্ঠান, আকিজ বশির গ্রুপ ও এমিনেন্স ইলেকট্রিক ওয়্যার অ্যান্ড কেব্লস। কারখানাটি কিনে নিতে আকিজ বশির গ্রুপ প্রায় ১১০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করছে। ইতিমধ্যে এমিনেন্সকে অর্থায়নকারী চার প্রতিষ্ঠানকে ঋণের একটা অংশ পরিশোধ করে দিয়েছে আকিজ বশির গ্রুপ। আগামী অক্টোবরের মধ্যে পুরো ঋণ শোধ করে কারখানাটির মালিকানা বুঝে নেবে তারা। এর মাধ্যমে আকিজ বশির গ্রুপ দেশের বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের পণ্য উৎপাদনে বড় পরিসরে যাত্রা শুরুর পরিকল্পনা করছে।
ব্যাংক কর্মকর্তারা বলছেন, এই প্রকল্প কিনে আকিজ বশির গ্রুপ নিজেরা লাভবান হয়েছে। পাশাপাশি তারল্যসংকটে পড়া ব্যাংকগুলোও তাতে উপকৃত হয়েছে। ন্যাশনাল ব্যাংক ও এক্সিম ব্যাংক এই প্রকল্পে দেওয়া পুরো অর্থ ফেরত পেতে যাচ্ছে। ব্যাংক দুটির কর্মকর্তারা বলছেন, এতে আমানতকারীদের উপকার হবে। ব্যাংক–সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা আরও বলেন, দেশে একটা নতুন প্রকল্প প্রস্তুত করতেই কয়েক বছর সময় লেগে যায়। কিন্তু এমিনেন্স কিনে নেওয়ার ফলে আকিজ বশির গ্রুপ এখন চাইলেই কয়েক মাসের মধ্যে উৎপাদন শুরু করতে পারবে।
এ বিষয়ে লংকাবাংলা ফাইন্যান্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক হুমায়রা আজম প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা ইতিমধ্যে ঋণের একটা অংশ পেয়ে গেছি। পুরো টাকা কয়েক দিনের মধ্যে পেয়ে যাব। এটা খুবই ভালো হয়েছে। এভাবে বড় শিল্প গ্রুপগুলো এগিয়ে এলে কোনো কারখানা বন্ধ হয়ে পড়ে থাকবে না।’
প্রকল্পের অবস্থা
অর্থায়নকারী প্রতিষ্ঠানগুলো সূত্রে জানা যায়, গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার গোদারচালা এলাকায় এমিনেন্স ইলেকট্রিক ওয়্যারস অ্যান্ড কেবলস লিমিটেড বৈদ্যুতিক তার ও কেবল উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে ওঠে। উচ্চমানের অ্যালুমিনিয়াম ও কপার বৈদ্যুতিক কেবল, উচ্চ ভোল্টেজ বৈদ্যুতিক কেবল এবং খোলা কপার কেবল উৎপাদনের লক্ষ্যে প্রতিষ্ঠানটি গড়ে তোলা হয়, যার বার্ষিক উৎপাদনক্ষমতা ৬৭ হাজার ১৫০ কিলোমিটার। প্রাথমিকভাবে প্রকল্পের মোট ব্যয় ধরা হয় ১১২ কোটি টাকা। এর মধ্যে ন্যাশনাল ব্যাংকের নেতৃত্বে রূপালী ব্যাংক, এক্সিম ব্যাংক ও লংকাবাংলা ফাইন্যান্স সিন্ডিকেট করে ৬৯ কোটি টাকা অর্থায়ন করে। বাকি টাকার জোগান দেন উদ্যোক্তারা।
প্রকল্পটি যখন পরিকল্পনা করা হয়, তখন ডলারের দাম ছিল ৮০ টাকা। ২০২১ সালে ডলারের দাম বেড়ে হয় ৮৫ টাকা। এর মধ্যে করোনার প্রকোপ শুরু হলে নির্মাণ ব্যয় আরও বেড়ে যায়। ফলে অবকাঠামো সম্পন্ন করতে আরও ৫ কোটি টাকা প্রয়োজন হয় প্রতিষ্ঠানটির। ২০২১ সালে প্রতিষ্ঠানটি ৭৮ লাখ ডলারের যন্ত্রপাতি আমদানির জন্য ঋণপত্র খোলে, যা পরে ফোর্সড ঋণে পরিণত হয়। এর মধ্যে ২০২২ সালে ডলারের বিনিময় হার অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যায়। ফলে ৬৯ কোটি টাকা ঋণ বেড়ে হয় ১১৫ কোটি টাকা। পাশাপাশি চলতি মূলধন না পাওয়ায় বাণিজ্যিক উৎপাদনও শুরু করতে পারেনি প্রতিষ্ঠানটি। এখন কারখানাটি কিনে নিয়ে উৎপাদনে যাওয়ার পরিকল্পনা করছে আকিজ বশির গ্রুপ।
আকিজ বশির গ্রুপের প্রধান পরিচালন কর্মকর্তা (সিওও) মো. খোরশেদ আলম প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা আগামী নভেম্বর থেকে নতুন এই কারখানায় উৎপাদন শুরু করব। কম ভোল্টেজের তার উৎপাদন দিয়ে শুরু করব। কী নামে এই তার বাজারে আসবে, তা এখনো চূড়ান্ত হয়নি। স্থানীয় চাহিদা বিবেচনা করে বাজারে বড় আকারে আসার পরিকল্পনা আছে আমাদের।’
আকিজ বশির যেভাবে কিনছে
এক বছরের বেশি সময় ধরে এমিনেন্সের উদ্যোক্তারা প্রকল্পটি বিক্রির চেষ্টা করে যাচ্ছিলেন। আকিজ বশির গ্রুপও এই ব্যবসায় আসতে পুরোনো প্রকল্প খুঁজছিল। এর মধ্যে তারা একাধিক তার ও কেব্লস উৎপাদন কারখানা কেনার জন্য আলোচনা করে। শেষমেশ এমিনেন্সের সঙ্গে আলোচনা চূড়ান্ত হয়। দুই পক্ষ সমঝোতায় পৌঁছালে ৬ আগস্ট এ নিয়ে চুক্তিও হয়। এই চুক্তির ফলে আকিজ বশির গ্রুপ এখন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ঋণের পাশাপাশি এমিনেন্সের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সুবিধা, তাদের সরবরাহকারীদের বিলসহ আরও কিছু দায়দেনা শোধ করবে।
অর্থায়নকারী প্রতিষ্ঠানগুলো সূত্রে জানা যায়, প্রকল্পটিতে ন্যাশনাল ব্যাংকের ঋণ ৮৪ কোটি ৭২ লাখ টাকা, রূপালী ব্যাংকের ১৬ কোটি ২৭ লাখ টাকা, লংকাবাংলা ফাইন্যান্সের ৪ কোটি ১৩ লাখ টাকা ও এক্সিম ব্যাংকের ঋণ ২ কোটি ৬০ লাখ টাকা। ইতিমধ্যে ঋণের কিছু অর্থ পেয়ে গেছে অর্থায়নকারী প্রতিষ্ঠানগুলো।
এক্সিম ব্যাংকের উপব্যবস্থাপনা পরিচালক মাকসুদা খানম বলেন, ‘আমরা ইতিমধ্যে ৫ লাখ টাকা পেয়েছি। ৬০ দিনের মধ্যে ঋণের বাকি টাকা পেয়ে যাব। এটা আমাদের জন্য ভালো হয়েছে।’