কঠোর অবস্থানে সরকার অনড় আন্দোলনকারীরা
Published: 28th, June 2025 GMT
জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) সংস্কার ও চেয়ারম্যানের অপসারণের দাবিতে চলমান আন্দোলন ঘিরে পরিস্থিতি আরও জটিল আকার ধারণ করেছে। গতকাল শুক্রবার অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে বলা হয়েছে, বৃহস্পতিবার এনবিআরের চেয়ারম্যান ও সদস্যদের নিয়ে বৈঠকে ঐক্য পরিষদের কমপ্লিট শাটডাউন ও মার্চ টু এনবিআর কর্মসূচি প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত হয়েছে। তবে রাতে পাল্টা আরেক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এই কর্মসূচি চলবে বলে জানিয়েছে এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদ। পরে এক বিজ্ঞপ্তিতে এনবিআর জানিয়েছে, কোনো কর্মকর্তা-কর্মচারী বিনা অনুমতিতে কর্মস্থলে অনুপস্থিত, অফিস ত্যাগ, বিলম্বে অফিসে এলে সরকারি বিধি অনুযায়ী শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এদিকে এনবিআর সূত্রে জানা গেছে, চলমান আন্দোলন থামাতে গতকাল এনবিআরের সদস্য, চেয়ারম্যান ও আন্দোলনকারীদের প্রতিনিধিদের সঙ্গে দফায় দফায় আলোচনা হয়েছে। পরে এনবিআরের দুই সদস্য সৈয়দ মোহাম্মদ আবু দাউদ ও আলমগীর হোসেন অর্থ উপদেষ্টা ড.
গত ১২ মে এনবিআর বিলুপ্ত করে রাজস্ব নীতি ও ব্যবস্থাপনা বিভাগে বিভক্ত করে অধ্যাদেশ জারি করে অর্থ মন্ত্রণালয়। এর পর থেকে এনবিআর বিলুপ্তি রোধসহ কয়েকটি দাবিতে সংস্থাটির কর্মকর্তা-কর্মচারীরা এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের ব্যানারে আন্দোলন শুরু করেন। গত ২৫ মে মন্ত্রণালয় ৩১ জুলাইয়ের আগে অধ্যাদেশটি সংশোধন করার আশ্বাস দিলে আন্দোলন প্রত্যাহার করা হয়। এর পর ২২ জুন থেকে ফের চেয়ারম্যানের অপসারণের দাবিতে আন্দোলন শুরু করেন তারা।
এই সমস্যা সমাধানে গত বৃহস্পতিবার অর্থ উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠক হয় এনবিআরের কর্মকর্তাদের। বৈঠকের বিষয়ে গতকাল অর্থ মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের ব্যানারে চলমান আন্দোলন নিরসনের লক্ষ্যে গত বৃহস্পতিবার অর্থ উপদেষ্টার কার্যালয়ে আড়াই ঘণ্টাব্যাপী একটি আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। অর্থ উপদেষ্টার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় অর্থ সচিব, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব, এনবিআর চেয়ারম্যান এবং ১৬ জন সদস্য অংশগ্রহণ করেন।
সভায় তিনটি বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়। এক. এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের ব্যানারে ঘোষিত কমপ্লিট শাটডাউন এবং মার্চ টু এনবিআর কর্মসূচি প্রত্যাহার করা। দুই. সম্প্রতি এনবিআরের ইস্যু করা কর্মকর্তাদের দুটি বদলির আদেশ পুনর্বিবেচনা করা এবং তিন. আগামী মঙ্গলবার বিকেল ৪টায় এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদ, এনবিআর সংস্কারবিষয়ক পরামর্শক কমিটি ও এনবিআরের সদস্যদের সঙ্গে গত ২৫ মে অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে জারি করা সংবাদ বিজ্ঞপ্তির আলোকে রাজস্ব নীতি ও রাজস্ব ব্যবস্থাপনা অধ্যাদেশ, ২০২৫ সংশোধনের বিষয়ে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে। ওই সভায় আলোচনার মাধ্যমে সবার মতামতের ভিত্তিতে ৩১ জুলাইয়ের মধ্যে রাজস্ব নীতি ও ব্যবস্থাপনা অধ্যাদেশের প্রয়োজনীয় সংশোধন করা সম্ভব হবে বলে সরকার প্রত্যাশা করে।
‘মার্চ টু এনবিআর’ পালনের ঘোষণা
অর্থ মন্ত্রণালয়ের বিজ্ঞপ্তির বিপরীতে পাল্টা সংবাদ বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদ। এতে বলা হয়েছে, অর্থ মন্ত্রণালয়ে বৃহস্পতিবারের ওই বৈঠকে ঐক্য পরিষদকে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি। ফলে সেখানে তাদের কোনো প্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন না। তাই তাদের ঘোষণা অনুযায়ী, ট্যাক্স, কাস্টমস ও ভ্যাট বিভাগের সব দপ্তরে লাগাতার কমপ্লিট শাটডাউন যথারীতি চলবে। তবে আন্তর্জাতিক যাত্রীসেবা এই কমপ্লিট শাটডাউনের আওতাবহির্ভূত থাকবে। এ ছাড়া আজ সারাদেশের ট্যাক্স, কাস্টমস ও ভ্যাট বিভাগের সব দপ্তর থেকে এনবিআর অভিমুখে ‘শান্তিপূর্ণ মার্চ টু এনবিআর’ কর্মসূচি পালিত হবে।
এতে আরও বলা হয়, দেশ ও রাজস্বের স্বার্থে উদ্ভূত পরিস্থিতি নিরসনে ঐক্য পরিষদের রাজস্ব সংস্কার বিষয়ে দাবিগুলো এবং চেয়ারম্যানের অপসারণের দাবি জানাতে যে কোনো সময় অর্থ উপদেষ্টার সঙ্গে আলোচনায় বসতে সংগঠনটি প্রস্তুত রয়েছে। সমস্যা সমাধানে প্রধান উপদেষ্টার হস্তক্ষেপ চেয়েছে তারা।
কর্মস্থলে অনুপস্থিত থাকলে ব্যবস্থা
এমন পাল্টাপাল্টি অবস্থানের মধ্যেই গত রাতে এনবিআরের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সংস্থার কর্মকর্তা-কর্মচারীরা বিনা অনুমতিতে কর্মস্থলে অনুপস্থিত, অফিস ত্যাগ, বিলম্বে অফিসে উপস্থিত হলে তার বিরুদ্ধে সরকারি বিধি অনুযায়ী শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এতে বলা হয়, অত্যন্ত উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ্য করা যাচ্ছে, এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের ব্যানারে চলমান আন্দোলনের কারণে দেশের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের প্রাণকেন্দ্র এবং রাজস্ব আদায়ের মতো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কাজে নিয়োজিত এনবিআরের মাঠ পর্যায়ের দপ্তরগুলোতে জনগণ কাঙ্ক্ষিত সেবা পাচ্ছেন না। সরকারি কর্মচারীদের জন্য প্রযোজ্য বিধিবিধান অনুযায়ী বিনা অনুমতিতে কর্মে অনুপস্থিতি, বিনা অনুমতিতে অফিস ত্যাগ এবং বিলম্বে অফিসে উপস্থিতি অফিস শৃঙ্খলা পরিপন্থি ও শাস্তিযোগ্য অপরাধ।
এনবিআরের বিজ্ঞপ্তিতে দাপ্তরিক শৃঙ্খলা সমুন্নত রাখা এবং অর্থবছরের শেষ তিনটি কর্মদিবসে ব্যবসা-বাণিজ্য ও আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম সচল রাখাসহ রাজস্ব আদায় কার্যক্রম আরও গতিশীল করতে বলা হয়েছে। এ জন্য এনবিআরের অধীন সব কাস্টম হাউস, কর কমিশনারেট এবং কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেটের কমিশনারদের নিয়ন্ত্রণাধীন দপ্তরে নিয়মিত উপস্থিতি নিশ্চিত করে জনগণকে কাঙ্ক্ষিত সেবা দিতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
‘আন্দোলনকারীরা বিএনপির কেউ না’
এনবিআরের চলমান আন্দোলন প্রসঙ্গে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, নিজেদের ফায়দা আদায়ের জন্য ইনকাম ট্যাক্সে বিএনপির নাম ভাঙিয়ে একটি সুবিধাভোগী চক্র আন্দোলন করছে। গতকাল নয়াপল্টনে ঢাকা মহানগর বাংলাদেশ পূজা উদযাপন ফ্রন্ট আয়োজিত রথযাত্রা উপলক্ষে আলোচনা সভায় তিনি এ কথা বলেন।
রিজভী বলেন, দলের অনুমতি ছাড়া বিএনপির নামে সরকারি দপ্তরে কেউ আন্দোলন করলে এ দায় বিএনপির না, বিএনপি এসব আন্দোলন সমর্থন করে না। ইনকাম ট্যাক্সে বিএনপির নামে যারা আন্দোলন করছে, তারা বিএনপির কেউ না।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ব এনপ র ন কর মকর ত ব যবস থ উপস থ ত অন ষ ঠ অন য য় র অর থ সরক র সদস য গতক ল
এছাড়াও পড়ুন:
ইবিতে অভয়ারণ্যের মেহেদি উৎসব
হারিয়ে যাওয়া ঐতিহ্য ফেরাতে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে (ইবি) মেহেদি ও নবান্ন উৎসবের আয়োজন করেছে পরিবেশবাদী সংগঠন অভয়ারণ্য।
সোমবার (১৭ নভেম্বর) বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলায় তারা এ আয়োজন করে।
আরো পড়ুন:
খাগড়াছড়িতে চলছে রাস উৎসব ও মেলা
পুণ্যস্নান মধ্য দিয়ে কুয়াকাটায় শেষ হলো রাস উৎসব, মেলা চলবে ৫ দিন
সরেজমিনে দেখা যায়, মেহেদি ও নবান্ন উৎসব ঘিরে শিক্ষার্থীদের ব্যাপক উপস্থিতি। রঙিন কাগজের সাজে পুরো স্থানজুড়ে তৈরি হয়েছিল উৎসবের আমেজ। পরিবেশবান্ধব বার্তা বহনকারী ঝুলন্ত ডেকোরেশন, প্রাকৃতিক মেহেদি দেওয়ার স্টল এবং সাহিত্য–সংস্কৃতির বিভিন্ন উপস্থাপনা দর্শনার্থীদের আকর্ষণ করে।
শিক্ষার্থীরা জানান, অভয়ারণ্য সবসময়ই ব্যতিক্রমী উদ্যোগ নেয়। প্রাকৃতিক মেহেদি দেওয়ার হার কমে গেলেও এ আয়োজন সেই ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করছে।
ফাতিমা খাতুন নামে ইবির এক শিক্ষার্থী বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন সংগঠনগুলোর মধ্যে অভয়ারণ্য সবসময়ই ব্যতিক্রম। আজ মেহেদি উৎসবে এসে আমার অনেক ভালো লাগছে। আজকাল প্রাকৃতিক মেহেদি দেওয়ার সংস্কৃতি অনেকটাই কমে গেছে। তারা সেই সংস্কৃতিকে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করছে। তাছাড়া নবান্ন উৎসব যেখানে একদম বিলীনপ্রায়, সেখানে তারা এটারও আয়োজন করেছে। আশা করছি, এ রকম সুন্দর আয়োজন চলমান থাকবে।”
সংগঠনটির সভাপতি নাইমুল ফারাবী বলেন, “আমরা এবার দ্বিতীয়বারের মতো মেহেদি উৎসবের আয়োজন করছি। একসময় মেয়েদের হাত সর্বদা মেহেদীর রঙে রাঙা থাকত। কিন্তু প্রযুক্তির উন্নয়নের কারণে এ চর্চা এখন কমে গেছে। এটাকে স্মরণ করিয়ে দেওয়ার জন্যই আজকের এই আয়োজন।”
তিনি বলেন, “আজ যে মেহেদি দেওয়া হচ্ছে, সেটা আমাদের সংগঠনের রোপণ করা গাছের পাতা থেকে তৈরি। এর মাধ্যমে আমরা শুদ্ধতা ছাড়িয়ে দিতে চাই।”
তিনি আরো বলেন, “মেহেদি উৎসবের পাশাপাশি আমরা এবার প্রথমবারের মতো নবান্ন উৎসব আয়োজন করেছি। এর মাধ্যমে আমার বাংলার সংস্কৃতিকে পূনর্জ্জীবিত করতে চাচ্ছি। বাংলার বহুল প্রচলিত সংস্কৃতিকে যাতে করে শিক্ষার্থীরা পুনরায় ধারণ করতে পারে, সেজন্য আমাদের এই আয়োজন।”
ঢাকা/তানিম/মেহেদী