জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) সংস্কার ও চেয়ারম্যানের অপসারণের দাবিতে চলমান আন্দোলন ঘিরে পরিস্থিতি আরও জটিল আকার ধারণ করেছে। গতকাল শুক্রবার অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে বলা হয়েছে, বৃহস্পতিবার এনবিআরের চেয়ারম্যান ও সদস্যদের নিয়ে বৈঠকে ঐক্য পরিষদের কমপ্লিট শাটডাউন ও মার্চ টু এনবিআর কর্মসূচি প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত হয়েছে। তবে রাতে পাল্টা আরেক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এই কর্মসূচি চলবে বলে জানিয়েছে এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদ। পরে এক বিজ্ঞপ্তিতে এনবিআর জানিয়েছে, কোনো কর্মকর্তা-কর্মচারী বিনা অনুমতিতে কর্মস্থলে অনুপস্থিত, অফিস ত্যাগ, বিলম্বে অফিসে এলে সরকারি বিধি অনুযায়ী শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এদিকে এনবিআর সূত্রে জানা গেছে, চলমান আন্দোলন থামাতে গতকাল এনবিআরের সদস্য, চেয়ারম্যান ও আন্দোলনকারীদের প্রতিনিধিদের সঙ্গে দফায় দফায় আলোচনা হয়েছে। পরে এনবিআরের দুই সদস্য সৈয়দ মোহাম্মদ আবু দাউদ ও আলমগীর হোসেন অর্থ উপদেষ্টা  ড.

সালেহউদ্দিন আহমেদের সঙ্গে এ বিষয়ে দেখা করতে গাজীপুরের ভাওয়াল রিসোর্টে যান। সেখানে অর্থ মন্ত্রণালয়ের একটি অনুষ্ঠানে যোগ দিতে গিয়েছিলেন অর্থ উপদেষ্টা। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে সদস্য আলমগীর হোসেন সমকালকে জানান, বিষয়টি নিয়ে গণমাধ্যমে কোনো কথা বলতে চান না তিনি।

গত ১২ মে এনবিআর বিলুপ্ত করে রাজস্ব নীতি ও ব্যবস্থাপনা বিভাগে বিভক্ত করে অধ্যাদেশ জারি করে অর্থ মন্ত্রণালয়। এর পর থেকে এনবিআর বিলুপ্তি রোধসহ কয়েকটি দাবিতে সংস্থাটির কর্মকর্তা-কর্মচারীরা এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের ব্যানারে আন্দোলন শুরু করেন। গত ২৫ মে মন্ত্রণালয় ৩১ জুলাইয়ের আগে অধ্যাদেশটি সংশোধন করার আশ্বাস দিলে আন্দোলন প্রত্যাহার করা হয়। এর পর ২২ জুন থেকে ফের চেয়ারম্যানের অপসারণের দাবিতে আন্দোলন শুরু করেন তারা। 

এই সমস্যা সমাধানে গত বৃহস্পতিবার অর্থ উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠক হয় এনবিআরের কর্মকর্তাদের। বৈঠকের বিষয়ে গতকাল অর্থ মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের ব্যানারে চলমান আন্দোলন নিরসনের লক্ষ্যে গত বৃহস্পতিবার অর্থ উপদেষ্টার কার্যালয়ে আড়াই ঘণ্টাব্যাপী একটি আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। অর্থ উপদেষ্টার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় অর্থ সচিব, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব, এনবিআর চেয়ারম্যান এবং ১৬ জন সদস্য অংশগ্রহণ করেন। 
সভায় তিনটি বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়। এক. এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের ব্যানারে ঘোষিত কমপ্লিট শাটডাউন এবং মার্চ টু এনবিআর কর্মসূচি প্রত্যাহার করা। দুই. সম্প্রতি এনবিআরের ইস্যু করা কর্মকর্তাদের দুটি বদলির আদেশ পুনর্বিবেচনা করা এবং তিন. আগামী মঙ্গলবার বিকেল ৪টায় এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদ, এনবিআর সংস্কারবিষয়ক পরামর্শক কমিটি ও এনবিআরের সদস্যদের সঙ্গে গত ২৫ মে অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে জারি করা সংবাদ বিজ্ঞপ্তির আলোকে রাজস্ব নীতি ও রাজস্ব ব্যবস্থাপনা অধ্যাদেশ, ২০২৫ সংশোধনের বিষয়ে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে। ওই সভায় আলোচনার মাধ্যমে সবার মতামতের ভিত্তিতে ৩১ জুলাইয়ের মধ্যে রাজস্ব নীতি ও ব্যবস্থাপনা অধ্যাদেশের প্রয়োজনীয় সংশোধন করা সম্ভব হবে বলে সরকার প্রত্যাশা করে। 

‘মার্চ টু এনবিআর’ পালনের ঘোষণা 
অর্থ মন্ত্রণালয়ের বিজ্ঞপ্তির বিপরীতে পাল্টা সংবাদ বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদ। এতে বলা হয়েছে, অর্থ মন্ত্রণালয়ে বৃহস্পতিবারের ওই বৈঠকে ঐক্য পরিষদকে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি। ফলে সেখানে তাদের কোনো প্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন না। তাই তাদের ঘোষণা অনুযায়ী, ট্যাক্স, কাস্টমস ও ভ্যাট বিভাগের সব দপ্তরে লাগাতার কমপ্লিট শাটডাউন যথারীতি চলবে। তবে আন্তর্জাতিক যাত্রীসেবা এই কমপ্লিট শাটডাউনের আওতাবহির্ভূত থাকবে। এ ছাড়া আজ সারাদেশের ট্যাক্স, কাস্টমস ও ভ্যাট বিভাগের সব দপ্তর থেকে এনবিআর অভিমুখে ‘শান্তিপূর্ণ মার্চ টু এনবিআর’ কর্মসূচি পালিত হবে।   
এতে আরও বলা হয়, দেশ ও রাজস্বের স্বার্থে উদ্ভূত পরিস্থিতি নিরসনে ঐক্য পরিষদের রাজস্ব সংস্কার বিষয়ে দাবিগুলো এবং চেয়ারম্যানের অপসারণের দাবি জানাতে যে কোনো সময় অর্থ উপদেষ্টার সঙ্গে আলোচনায় বসতে সংগঠনটি প্রস্তুত রয়েছে। সমস্যা সমাধানে প্রধান উপদেষ্টার হস্তক্ষেপ চেয়েছে তারা।

কর্মস্থলে অনুপস্থিত থাকলে ব্যবস্থা 
এমন পাল্টাপাল্টি অবস্থানের মধ্যেই গত রাতে এনবিআরের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সংস্থার কর্মকর্তা-কর্মচারীরা বিনা অনুমতিতে কর্মস্থলে অনুপস্থিত, অফিস ত্যাগ, বিলম্বে অফিসে উপস্থিত হলে তার বিরুদ্ধে সরকারি বিধি অনুযায়ী শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। 

এতে বলা হয়, অত্যন্ত উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ্য করা যাচ্ছে, এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের ব্যানারে চলমান আন্দোলনের কারণে দেশের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের প্রাণকেন্দ্র এবং রাজস্ব আদায়ের মতো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কাজে নিয়োজিত এনবিআরের মাঠ পর্যায়ের দপ্তরগুলোতে জনগণ কাঙ্ক্ষিত সেবা পাচ্ছেন না। সরকারি কর্মচারীদের জন্য প্রযোজ্য বিধিবিধান অনুযায়ী বিনা অনুমতিতে কর্মে অনুপস্থিতি, বিনা অনুমতিতে অফিস ত্যাগ এবং বিলম্বে অফিসে উপস্থিতি অফিস শৃঙ্খলা পরিপন্থি ও শাস্তিযোগ্য অপরাধ। 
এনবিআরের বিজ্ঞপ্তিতে দাপ্তরিক শৃঙ্খলা সমুন্নত রাখা এবং অর্থবছরের শেষ তিনটি কর্মদিবসে ব্যবসা-বাণিজ্য ও আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম সচল রাখাসহ রাজস্ব আদায় কার্যক্রম আরও গতিশীল করতে বলা হয়েছে। এ জন্য এনবিআরের অধীন সব কাস্টম হাউস, কর কমিশনারেট এবং কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেটের কমিশনারদের নিয়ন্ত্রণাধীন দপ্তরে নিয়মিত উপস্থিতি নিশ্চিত করে জনগণকে কাঙ্ক্ষিত সেবা দিতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

‘আন্দোলনকারীরা বিএনপির কেউ না’
এনবিআরের চলমান আন্দোলন প্রসঙ্গে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, নিজেদের ফায়দা আদায়ের জন্য ইনকাম ট্যাক্সে বিএনপির নাম ভাঙিয়ে একটি সুবিধাভোগী চক্র আন্দোলন করছে। গতকাল নয়াপল্টনে ঢাকা মহানগর বাংলাদেশ পূজা উদযাপন ফ্রন্ট আয়োজিত রথযাত্রা উপলক্ষে আলোচনা সভায় তিনি এ কথা বলেন।
রিজভী বলেন, দলের অনুমতি ছাড়া বিএনপির নামে সরকারি দপ্তরে কেউ আন্দোলন করলে এ দায় বিএনপির না, বিএনপি এসব আন্দোলন সমর্থন করে না। ইনকাম ট্যাক্সে বিএনপির নামে যারা আন্দোলন করছে, তারা বিএনপির কেউ না।

 

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ব এনপ র ন কর মকর ত ব যবস থ উপস থ ত অন ষ ঠ অন য য় র অর থ সরক র সদস য গতক ল

এছাড়াও পড়ুন:

আবারও সেই গোলের ‘গাড়ি’ নিয়ে প্রস্তুত বার্সেলোনা

গোল ফুটবলে চরম আনন্দের এক মুহূর্ত। দুই দলের ২২ ফুটবলারের লক্ষ্য থাকে এটাই—প্রতিপক্ষের জালে কোনোভাবে বলটা জড়ানো। সেই গোল ঠেকাতে কৌশলেরও কমতি নেই। ডিফেন্ডাররা এমন কোনো চেষ্টা নেই, যা করেন না, যেন গোল দিতে না পারলে ক্ষতি নেই কিন্তু গোল হজম করা যাবে না!

তবে গোল ঠেকানোর এই চেষ্টা সব সময় সফল হয় না। শেষ পর্যন্ত ফুটবল মানেই যে গোল। হোক তা কম বা বেশি, কিন্তু গোল করেই তো জিততে হয়। আর গোলের খেলায় সাম্প্রতিক কালে একচ্ছত্র আধিপত্য প্রতিষ্ঠাকারী দল বার্সেলোনা।

হ্যান্সি ফ্লিকের অধীনে বদলে যাওয়া বার্সেলোনা গোল করাকে এখন ছেলের হাতে হাতের মোয়া বানিয়ে ছেড়েছে। ব্যাপারটা এমন যে এলাম দেখলাম আর গোল করলাম! সর্বশেষ মৌসুমে তো বটেই সাম্প্রতিক প্রাক্‌–মৌসুমেও গোলের বন্যা বইয়ে দিয়েছে কাতালুনিয়ার ঐতিহ্যবাহী ক্লাবটি।

গত মৌসুম দিয়েই শুরু করা যাক। ২০২৪–২৫ মৌসুমে ফ্লিক যখন বার্সার দায়িত্ব নেন, তখন অনেকেরই সন্দেহ ছিল, জার্মান কোচের অধীনে বার্সেলোনা কতটা সফল হবে। কেউ কেউ আগেভাগেই ফ্লিকের বিদায়ী এপিটাফও লিখে রেখেছিলেন। কিন্তু জার্মান এই কোচ ডাগআউটে এসেই আমূল বদলে দেন বার্সাকে। পুরো দলটিকেই তিনি পরিণত করেন আশ্চর্য এক গোল মেশিনে।

আরও পড়ুনবার্সেলোনায় রিয়াল মাদ্রিদ যেভাবে ‘হালি মাদ্রিদ’১২ মে ২০২৫

দলের ফরোয়ার্ড লাইনের প্রত্যেক ফুটবলার ফ্লিক হাতে ধরে কার্যকর স্কোরারে পরিণত করেন। এই চিত্র যে শুধু লা লিগাতে দেখা গেছে তা নয়, বরং প্রতিটি প্রতিযোগিতায় গোল করায় এককভাবে নিজেদের রাজত্ব প্রতিষ্ঠা করে বার্সা। গত মৌসুমে সব প্রতিযোগিতা মিলিয়ে ৬০ ম্যাচ খেলে বার্সা গোল করেছে ১৭৪টি। ম্যাচ প্রতি গোল প্রায় তিনটি (২.৯) করে। গত মৌসুমে ৩৮ ম্যাচের লা লিগায় বার্সেলোনা গোল করেছে ১০২টি, ম্যাচে বার্সার গোলগড় ২.৬৮ করে। যা ইউরোপিয়ান শীর্ষ ৫ লিগে সর্বোচ্চ। পাশাপাশি লিগে গত আট মৌসুমের মধ্যে কোনো দলের সর্বোচ্চ গোলের পরিসংখ্যানও এটি।

লিগে বার্সেলোনা সর্বোচ্চ ব্যবধানে জয় পেয়েছে গত বছরের ৩১ আগস্ট রিয়াল ভায়াদোলিদের বিপক্ষে। ৭–০ গোলে জেতে বার্সা। এরপর ৭ জানুয়ারি ভ্যালেন্সিয়ার বিপক্ষে বার্সা জিতেছিল ৭–১ গোলে। আর সব মিলিয়ে ৪ বা তার বেশি গোল করে বার্সা জিতেছে ১৩ ম্যাচ। মৌসুমজুড়ে বার্সার গোলের উৎসব কেমন ছিল, সেটা বোঝা যাবে আরেকটি পরিসংখ্যানে। লিগে দ্বিতীয় রিয়াল মাদ্রিদের গোল সংখ্যা ৭৮। অর্থাৎ বার্সার সমান ম্যাচ খেলে তাদের চেয়ে ২৪ গোল কম করেছে রিয়াল।

চ্যাম্পিয়নস লিগেও দেখা গেছে একই দৃশ্যপট। এই প্রতিযোগিতায় সেমিফাইনালে ইন্টার মিলানের কাছে হেরে বিদায় নিলেও গোল করায় বার্সার ধারেকাছেও ছিল না অন্যরা। প্রতিযোগিতায় ১৪ ম্যাচ খেলে বার্সা গোল করে ৪৩টি, ম্যাচপ্রতি গোল তিনটির বেশি। ৩৮ গোল করে এ তালিকার দুই নম্বরে চ্যাম্পিয়ন পিএসজি। বার্সার চেয়ে ৫ গোল কম করা পিএসজি ৩ ম্যাচ বেশি খেলেছে।

বার্সার গোল করার এই ধারা দেখা গেছে কোপা দেল রে এবং সুপার কোপাতেও। কোপা দেল রেতে ৬ ম্যাচ খেলে বার্সার গোল ২২টি। ম্যাচপ্রতি গোল ৩.৬৬। আর স্প্যানিশ সুপার কাপে দুই ম্যাচে বার্সার গোল ৭টি, এখানেও ম্যাচ প্রতি গোল সাড়ে তিনটি করে। গোলের অবিশ্বাস্য এক পরিসংখ্যানই বটে।

আরও পড়ুনযে ক্লাসিকোয় বার্সার কাছে ৬৩ গোল খেয়েছে রিয়াল০৭ মার্চ ২০২৫

গত মৌসুমে অ্যাটাকিং থার্ডে বার্সা ছিল অনেকটা শিকারি নেকড়ের মতো। এমনকি তাদের সামনে দাঁড়াতে পারেনি চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী রিয়াল মাদ্রিদও। ২০২৪–২৫ মৌসুমে এল ক্লাসিকোয় রিয়াল–বার্সা মুখোমুখি হয়েছিল চার ম্যাচে। এই চার ম্যাচে রিয়ালের জালে বার্সা বল জড়িয়েছে ১৬ বার। ম্যাচপ্রতি গোল সংখ্যা ৪টি! খেলাধুলার তথ্য–উপাত্ত নিয়ে গবেষণা করা প্রতিষ্ঠান ‘অপ্টা’ জানিয়েছে, এক মৌসুমে সব প্রতিযোগিতা মিলিয়ে রিয়ালের জালে কোনো দলের সর্বোচ্চ গোলের রেকর্ড এটাই। বলা বাহুল্য, এই চার ম্যাচের প্রতিটিতে জিতেছে বার্সাই।

বার্সেলোনা কোচ হান্সি ফ্লিক

সম্পর্কিত নিবন্ধ