জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যানের অপসারণের দাবিতে দীর্ঘদিন ধরে সংস্থাটির কর্মকর্তা-কর্মচারীরা যে আন্দোলন করে আসছেন তা সমর্থন করেন না বলে জানিয়েছেন দেশের শীর্ষ ব্যবসায়ী নেতারা। তারা বলছেন, চেয়ারম্যানকে অপসারণ কোনোভাবে কাম্য নয়। কারণ, আজ চেয়ারম্যান কাল হয়তো সংস্থার অন্য কোনো সদস্যের অপসারণের দাবি নিয়ে আন্দোলন শুরু হবে। ফলে সমস্যা বাড়তে থাকবে। উদ্ভূত পরিস্থিতির সমাধানে মঙ্গলবার নয়, আজই সরকারকে আলোচনায় বসার আহ্বান জানিয়েছেন ব্যবসায়ী নেতারা। 

আজ শনিবার রাজধানীর ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেলে শীর্ষস্থানীয় ১৩টি ব্যবসায়ী সংগঠনের পক্ষ থেকে যৌথভাবে আয়োজিত এক জরুরি সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন তারা। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন ব্যবসায়ীদের সংগঠনগুলোর সাবেক ও বর্তমান শীর্ষ নেতারা।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন বাংলাদেশ চেম্বারের সভাপতি আনোয়ার উল আলম চৌধুরী (পারভেজ)। এ সময় উপস্থিত ছিলেন ইন্টারন্যাশনাল চেম্বার অফ কমার্স ইন বাংলাদেশের (আইসিসিবি) সভাপতি মাহবুবুর রহমান, বিজিএমইএ’র সভাপতি মাহমুদ হাসান খান, বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশনের (বিটিএমএ) সভাপতি শওকত আজিজ রাসেল, লেদারগুডস অ্যান্ড ফুটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (এলএফএমইএবি) সভাপতি সৈয়দ নাসিম মঞ্জুর, মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি কামরান টি রহমান, সিরামিক শিল্পমালিকদের সংগঠন বিসিএমইএ’র সভাপতি মঈনুল ইসলাম, বিকেএমইএ’র নির্বাহী সভাপতি ফজলে শামীম এহসান, ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি মীর নাসির হোসেন, মেট্রো চেম্বারের সহ-সভাপতি ও ট্রান্সকম গ্ৰগ্রুপের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) সিমিন রহমান, ঢাকা চেম্বারের সাবেক সভাপতি আবুল কাসেম খান প্রমুখ।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, এনবিআরের চেয়ারম্যানের অপসারণ কোনো মতেই কাম্য নয়। এতে কোনো প্রকার সফলতা নিয়ে আসবে বলে আমরা মনে করি না। তাই, দেশ ও ব্যবসার স্বার্থে আলোচনার টেবিলে বসতে হবে। আন্দোলনকারীসহ সব পক্ষের আলোচনায় বিদ্যমান সমস্যার সমাধান সম্ভব হবে।

কমপ্লিট শাটডাউনের কারণে প্রতিদিন প্রায় আড়াই হাজার কোটি টাকার সমপরিমাণ আমদানি ও রপ্তানি ব্যাহত হচ্ছে উল্লেখ করে ব্যবসায়ী নেতারা বলেন, চলমান স্থানীয় এবং বৈশ্বিক অর্থনৈতিক নানা পরিস্থিতিতে চাপে থাকা ব্যবসায়ীরা নতুন করে এনবিআরের অচলাবস্থার কারণে আরও সমস্যায় পড়েছেন। গুরুত্বপূর্ণ সংস্থায় এ ধরনের আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত থেকে ফিরে আসা উচিত। একইসঙ্গে ব্যবসায়ীরা বলেন, সব অফিসার যে অসৎ তা-ও নয়, তাদেরও ভবিষ্যৎ আছে, সেই বিষয়টিও বিবেচনায় রাখতে হবে সরকারকে।

এই আন্দোলনের কারণে ব্যবসা বাণিজ্যে স্থবিরতা নেমে এসেছে-এমন উদ্বেগের কথা জানিয়ে তারা বলেন, এই অবস্থায় ব্যবসায়ীদের পিঠ দেয়ালে ঠেকে গেছে। কালক্ষেপণ না করে আজকের মধ্যে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের নেতৃত্বে অর্থ মন্ত্রণালয়, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এবং বাংলাদেশ ইনভেস্টমেন্ট ডেভেলপমেন্ট অথোরিটি (বিডা) যৌথভাবে আন্দোলনরত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সঙ্গে আলোচনায় বসা জরুরি। তাদের ভবিষ্যৎ ন্যায়সঙ্গত সুরক্ষা ও দেশের অর্থনীতি যাতে আর ক্ষতিগ্রস্ত না হয়; সেই পদক্ষেপও গ্রহণ করতে হবে। 

এসময় তারা আন্দোলনকারীদের দেশের অর্থনীতির স্বার্থে ‘কলম বিরতি’ ও ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ কর্মসূচি প্রত্যাহার করে কোনো শর্ত ছাড়া কাজে যোগ দেওয়ার আহ্বান জানান। 

সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে আইসিসিবির সভাপতি মাহবুবুর রহমান বলেন, যে কোনো দেশের সরকারের সঙ্গে বেসরকারি খাতের ইন্টারেকশন মিথস্ক্রিয়া অতীব জরুরি। কিন্তু বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে এই যোগাযোগ বা সংলাপ অনেকটা স্তিমিত। তিনি বলেন, চেয়ারম্যানের অপসারণের পর হয়ত অন্য কোনো সদস্যের অপসারণের দাবিও উঠবে। তাতে সমস্যা বাড়তে থাকবে।

শাটডাউনের কারণে আমি রপ্তানির ক্ষতির বিষয়টি উল্লেখ করে এলএফএমইএবি সভাপতি সৈয়দ নাসিম মঞ্জুর বলেন, স্থানীয় এবং আন্তর্জাতিক বাজার আমাদের তথা বাংলাদেশের জন্য অপেক্ষা করবে না। যুদ্ধ ছাড়া কোন দেশের কাস্টমস বন্ধ থাকে; এটা আমাদের জানা নেই।

তিনি বলেন, ব্যবসায়ীরা এনবিআরের সংস্কার চায়। তবে এনবিআরে অনেক সৎ অফিসার আছেন। বর্তমান সংস্কারের ফলে তাদের ভবিষ্যৎ কি হবে সেটি বলার অধিকার তাদের আছে। সে বিষয়টিও সরকারকে বিবেচনায় নিতে হবে।

বিটিএমএ সভাপতি শওকত আজিজ রাসেল বলেন, এনবিআরের কর্মকর্তারা এতদিন ব্যবসায়ীদের জ্বালিয়েছে (হয়রানি করা)। এখন সরকারকে জ্বালাচ্ছে। দেশের ব্যবসা ও দেশের স্বার্থে সমস্যার সমাধান জরুরি।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: এনব আর ব যবস য় কর মকর ত ব যবস য় ন ব যবস ব যবস য সরক র সমস য রহম ন

এছাড়াও পড়ুন:

ইবিতে অভয়ারণ্যের মেহেদি উৎসব

হারিয়ে যাওয়া ঐতিহ্য ফেরাতে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে (ইবি) মেহেদি ও নবান্ন উৎসবের আয়োজন করেছে পরিবেশবাদী সংগঠন অভয়ারণ্য।

সোমবার (১৭ নভেম্বর) বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলায় তারা এ আয়োজন করে। 

আরো পড়ুন:

খাগড়াছড়িতে চলছে রাস উৎসব ও মেলা

পুণ্যস্নান মধ্য দিয়ে কুয়াকাটায় শেষ হলো রাস উৎসব, মেলা চলবে ৫ দিন

সরেজমিনে দেখা যায়, মেহেদি ও নবান্ন উৎসব ঘিরে শিক্ষার্থীদের ব্যাপক উপস্থিতি। রঙিন কাগজের সাজে পুরো স্থানজুড়ে তৈরি হয়েছিল উৎসবের আমেজ। পরিবেশবান্ধব বার্তা বহনকারী ঝুলন্ত ডেকোরেশন, প্রাকৃতিক মেহেদি দেওয়ার স্টল এবং সাহিত্য–সংস্কৃতির বিভিন্ন উপস্থাপনা দর্শনার্থীদের আকর্ষণ করে।

শিক্ষার্থীরা জানান, অভয়ারণ্য সবসময়ই ব্যতিক্রমী উদ্যোগ নেয়। প্রাকৃতিক মেহেদি দেওয়ার হার কমে গেলেও এ আয়োজন সেই ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করছে।

ফাতিমা খাতুন নামে ইবির এক শিক্ষার্থী বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন সংগঠনগুলোর মধ্যে অভয়ারণ্য সবসময়ই ব্যতিক্রম। আজ মেহেদি উৎসবে এসে আমার অনেক ভালো লাগছে। আজকাল প্রাকৃতিক মেহেদি দেওয়ার সংস্কৃতি অনেকটাই কমে গেছে। তারা সেই সংস্কৃতিকে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করছে। তাছাড়া নবান্ন উৎসব যেখানে একদম বিলীনপ্রায়, সেখানে তারা এটারও আয়োজন করেছে। আশা করছি, এ রকম সুন্দর আয়োজন চলমান থাকবে।”

সংগঠনটির সভাপতি নাইমুল ফারাবী বলেন, “আমরা এবার দ্বিতীয়বারের মতো মেহেদি উৎসবের আয়োজন করছি। একসময় মেয়েদের হাত সর্বদা মেহেদীর রঙে রাঙা থাকত। কিন্তু প্রযুক্তির উন্নয়নের কারণে এ চর্চা এখন কমে গেছে। এটাকে স্মরণ করিয়ে দেওয়ার জন্যই আজকের এই আয়োজন।”

তিনি বলেন, “আজ যে মেহেদি দেওয়া হচ্ছে, সেটা আমাদের সংগঠনের রোপণ করা গাছের পাতা থেকে তৈরি। এর মাধ্যমে আমরা শুদ্ধতা ছাড়িয়ে দিতে চাই।”

তিনি আরো বলেন, “মেহেদি উৎসবের পাশাপাশি আমরা এবার প্রথমবারের মতো নবান্ন উৎসব আয়োজন করেছি। এর মাধ্যমে আমার বাংলার সংস্কৃতিকে পূনর্জ্জীবিত করতে চাচ্ছি। বাংলার বহুল প্রচলিত সংস্কৃতিকে যাতে করে শিক্ষার্থীরা পুনরায় ধারণ করতে পারে, সেজন্য আমাদের এই আয়োজন।”

ঢাকা/তানিম/মেহেদী

সম্পর্কিত নিবন্ধ