Samakal:
2025-06-29@12:09:51 GMT

যে বেহালা চুলের চেয়েও ছোট

Published: 29th, June 2025 GMT

যে বেহালা চুলের চেয়েও ছোট

বেহালার সুর মুগ্ধতা ছড়ায়। বেজে উঠলে অনেকে হারিয়ে যান অতীতে, হয়ে ওঠেন স্মৃতিকাতর। যে বেহালা মানুষের চুলের আকারের চেয়েও ছোট, সেটি বাজাবে কে? ধূলিকণা আছড়ে পড়লে সেখানে কি আওয়াজ ওঠে? সে আওয়াজ শোনে কে? অবিশ্বাস্য শোনালেও বিজ্ঞানীরা মানুষের একটি চুলের চেয়ে ছোট বেহালা তৈরি করেছেন। বিশ্বের সবচেয়ে ছোট এ বেহালা বাজানো সম্ভব নয়। এটি তারা করেছেন কেবল নিজেদের সক্ষমতা প্রদর্শনের জন্য। এর মাধ্যমে প্রযুক্তি কোন পর্যায়ে গিয়ে পৌঁছেছে, তার ইঙ্গিত পাওয়া যায়। ইংল্যান্ডের লাফবোরাফ ইউনিভার্সিটির বিজ্ঞানীরা অসাধারণ বেহালা বানিয়েছেন। এর দৈর্ঘ্য ৩৫ মাইক্রোমিটার ও প্রস্থ ১৩ মাইক্রোমিটার। এ মাইক্রোমিটার হলো, এক মিটারের ১০ লাখের এক ভাগ। 

প্রশ্ন উঠেছে, বিজ্ঞানীরা কেন এত ছোট বেহালা তৈরি করলেন, যা বাজানোই সম্ভব নয়? তাদের মতে, বেহালা কেবল সাংস্কৃতিক বিষয় নয়, এটি গবেষণা ও উচ্চতর প্রযুক্তির বিষয়ও। কার্যত ন্যানো প্রযুক্তির ওপর বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজের দক্ষতা প্রকাশে বিজ্ঞানীরা এটি তৈরি করেছেন।

লাফবোরাফ ইউনিভার্সিটির পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের প্রধান অধ্যাপক কেলি মরিসন বলেন, ‘বিশ্বের সবচেয়ে ছোট এ বেহালা তৈরির ঘটনাকে মজার বিষয় বা খেলা মনে হতে পারে। এটি তৈরি করতে গিয়ে আমরা অনেক কাজ করেছি, অনেক কিছুই শিখেছি।’ 

ন্যানো-ভাস্কর্যের নতুন যুগ
এ প্রচেষ্টার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে ন্যানোফ্রেজার নামক একটি যন্ত্র। এ ক্ষেত্রে থার্মাল স্ক্যানিং প্রোব লিথোগ্রাফি ব্যবহার করা হয়েছে। এ প্রক্রিয়ায় একটি উত্তপ্ত সুচের মতো টিপ ন্যানোস্কেল নকশা তৈরি করে। প্রথমে একটি ক্ষুদ্র চিপকে রেজিস্ট নামক জেলসদৃশ উপাদানের দুটি স্তর দিয়ে প্রলেপ দেওয়া হয়। এর পর ন্যানোফ্রেজার বেহালার নকশাটি ওপরের স্তরে পুড়িয়ে দেয়। প্যাটার্ন সেট হয়ে গেলে উন্মুক্ত স্থানগুলো দ্রবীভূত হয়, যার ফলে একটি বেহালা আকৃতির গহ্বর তৈরি হয়। তার পর প্ল্যাটিনাম একটি পাতলা আবরণে প্রয়োগ করা হয় এবং অবশিষ্ট উপাদানটি ধুয়ে ফেলা হয়, যাতে ক্ষুদ্র যন্ত্রটি প্রকাশ পায়।

এ সম্পূর্ণ প্রক্রিয়াটি একটি কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রিত পরিবেশে ঘটে। ধুলা বা আর্দ্রতার দূষণ এড়াতে ল্যাবটি গ্লাভবক্স ও সিল করা চেম্বার ব্যবহার করা হয়। একটি চিপকে এক পর্যায় থেকে অন্য পর্যায়ে স্থানান্তর করা হয় রোবটিক যন্ত্র ব্যবহার করে। 

ক্ষুদ্র বেহালা তৈরি
প্রতিটি বেহালা তৈরি করতে প্রায় তিন ঘণ্টা সময় লাগে। চূড়ান্ত সংস্করণটি নিখুঁত হতে কয়েক মাস সময় লেগেছে। কারণ, দলটি তাদের প্রক্রিয়াটি পরীক্ষা ও পরিমার্জন করেছে। অধ্যাপক মরিসন বলেন, আমাদের ন্যানোলিথোগ্রাফি সিস্টেম বিভিন্নভাবে এটিকে পরীক্ষা করে। এ ক্ষেত্রে আলো, চৌম্বকত্ব বা বিদ্যুৎ ব্যবহার করা হয়। এভাবে লব্দ জ্ঞান আমরা নতুন প্রযুক্তি বিকাশে প্রয়োগ শুরু করতে পারি। এটি কম্পিউটিং দক্ষতা উন্নত করার ক্ষেত্রেও ব্যবহার করা যেতে পারে। সূত্র: আর্থ ডটকম।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ব যবহ র কর

এছাড়াও পড়ুন:

আলোচিত কয়েকটি মাস্টার্স প্রোগ্রামের খোঁজখবর

এমবিএ ও এক্সিকিউটিভ এমবিএ

দেশে–বিদেশে এমবিএ ডিগ্রির চাহিদা তৈরি হয়েছে আরও বেশ কয়েক বছর আগেই। তাই ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদ কিংবা ব্যবসায় প্রশাসন ইনস্টিটিউটের অধীনে প্রায় সব বিশ্ববিদ্যালয়েই এমবিএ ও এক্সিকিউটিভ এমবিএর সুযোগ পাওয়া যায়। করপোরেট চাকরিজীবী থেকে শুরু করে প্রকৌশলীরাও এমবিএ ডিগ্রি নেন। কেননা, এই প্রোগ্রামের মাধ্যমে ব্যবস্থাপনা, বিপণন, নেতৃত্ব ও নানা ক্ষেত্রে নিজেকে দক্ষ করে গড়ে তোলার সুযোগ থাকে। চাকরিদাতারা কেন এমবিএ ডিগ্রিকে গুরুত্ব দিচ্ছেন? ইনডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটি, বাংলাদেশের সহকারী অধ্যাপক হানিফ মাহতাব বলেন, ‘ব্যাচেলরে সাধারণত সার্বিকভাবে পড়ানো হয়, কোনো একটা নির্দিষ্ট বিষয়ে অ্যাডভান্সড নলেজটা হয় না। দেখা যায়, যাঁরা এমবিএ বা ইএমবিএ করতে আসেন, তাঁদের কিছুটা হলেও অভিজ্ঞতা থাকে। তখন তাঁদের পড়াতেও সুবিধা হয়। তাঁর নিজের অভিজ্ঞতার সঙ্গে মিলিয়ে আরও গভীরে গিয়ে বিষয়গুলো বুঝতে পারেন। সে জন্যই চাকরিদাতারা অনেক সময় এমবিএ ডিগ্রিকে গুরুত্ব দেন। এ ছাড়া চাকরিতে একটা নির্দিষ্ট পর্যায়ে পৌঁছানোর পর পদোন্নতির জন্যও এই ডিগ্রির প্রয়োজন হতে পারে।’ ব্র্যাক ইউনিভার্সিটি থেকে এমবিএ করেছেন আফরিনা খান। তাঁর বক্তব্য, ‘আমি সিটি কলেজ থেকে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে ইংরেজিতে স্নাতক করেছি। এরপরে প্রযুক্তি খাতে চাকরি শুরু করেছিলাম। ব্যবস্থাপনাসংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয় জানতে পরে এক্সিকিউটিভ এমবিএ ডিগ্রি নিই। এর ফলে আমার দক্ষতা অনেকটা বেড়েছে। এখন যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক একটি প্রযুক্তিপ্রতিষ্ঠানে কাজ করছি।’

প্রকৌশল ও প্রযুক্তির নানা দিক

একসময় শুধু তড়িৎ ও ইলেকট্রনিকস প্রকৌশল কিংবা কম্পিউটার প্রকৌশলের মতো বিষয়গুলোয় স্নাতকোত্তরের চল ছিল। এখন নানা বিশেষায়িত বিষয়েও শিক্ষার্থীরা মাস্টার্স ডিগ্রি নিচ্ছেন। তথ্যপ্রযুক্তি (আইটি), ইনফরমেশন সিস্টেম সিকিউরিটি, সাইবার সিকিউরিটি, ডেটা সায়েন্স, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, মেশিন লার্নিংসহ নানা বিষয়ে শিক্ষার্থীরা পড়ছেন। অনেক বিশ্ববিদ্যালয় চাকরিজীবীদের জন্য এক্সিকিউটিভ মাস্টার্সের সুযোগও রেখেছে। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) বিভিন্ন ইনস্টিটিউট ও বিভাগের অধীনেও স্নাতকোত্তর পর্যায়ের বিভিন্ন ডিগ্রি নেওয়া যায়। বুয়েটের বিভিন্ন মাস্টার্স ডিগ্রির জন্য সাধারণত দেড় থেকে দুই বছর সময় লাগে।

আরও পড়ুন‘মাস্টার্সের আগে কমপক্ষে দুই বছর চাকরি করে আসতে পারলে ভালো’১০ ঘণ্টা আগেজনস্বাস্থ্য নিয়ে পড়াশোনা

বর্তমানে জনস্বাস্থ্যসংক্রান্ত বিভিন্ন কাজের সুযোগ বেড়েছে। যাঁরা জনস্বাস্থ্য, মহামারিবিদ্যা ও স্বাস্থ্যনীতি নিয়ে কাজ করছেন বা করতে চান, তাঁরা মাস্টার্স ইন পাবলিক হেলথ (এমপিএইচ) প্রোগ্রামে ভর্তি হতে পারেন। চিকিৎসক, এনজিওর কর্মী ও স্বাস্থ্যসংক্রান্ত পেশাজীবীরা আজকাল এই ডিগ্রি বেছে নিচ্ছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ভেদে এমপিএইচ প্রোগ্রামে ভর্তির খরচ পড়তে পারে দুই থেকে পাঁচ লাখ টাকা। হাসপাতাল ব্যবস্থাপনা, মহামারি প্রতিরোধ ও শিশুস্বাস্থ্যের মতো বিভিন্ন বিশেষায়িত বিষয়ে পড়ানো হয় এমপিএইচে। গবেষণাসংশ্লিষ্ট কাজও করতে হয়। অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে পেশাজীবীদের জন্যও রাখা হয়েছে আলাদা সুযোগ। একটি আন্তর্জাতিক গবেষণাপ্রতিষ্ঠানে কর্মরত বিজ্ঞানী শাহরিয়ার আহমেদ বলেন, ‘আমি ঢাকা মেডিকেল কলেজ থেকে চিকিৎসাবিজ্ঞানে পড়াশোনা শেষ করি। জনস্বাস্থ্য ও স্বাস্থ্যনীতি নিয়ে কাজের আগ্রহ ছিল বলেই মাস্টার্স ডিগ্রির জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হই। চিকিৎসাবিজ্ঞানের বাইরে দেশীয় স্বাস্থ্য খাত ব্যবস্থাপনার বিভিন্ন বিষয় জানার সুযোগ হয়েছে স্বাস্থ্য অর্থনীতি বিষয়ে মাস্টার্স করার সময়।’

উন্নয়ন অধ্যয়নে আগ্রহ অনেকের

উন্নয়ন অধ্যয়নের পরিধি এখন অনেক বড়। যাঁরা এনজিও, গবেষণা, জলবায়ু, জেন্ডার, পরিবেশ ইত্যাদি নিয়ে কাজ করেন বা করতে চান, তাঁরাই উন্নয়ন অধ্যয়নে আগ্রহী। মাস্টার অব ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ (এমডিএস) প্রোগ্রামটি যেসব বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ানো হয়, প্রায় সব ক্ষেত্রেই এর পাঠ্যক্রমের সঙ্গে মাঠপর্যায়ের কার্যক্রম ও গবেষণা যুক্ত। তাই হাতে–কলমে কাজের অভিজ্ঞতা হয় শিক্ষার্থীদের। এই খাতে নেটওয়ার্কিংয়েরও বড় সুযোগ মেলে এমডিএস ডিগ্রির মাধ্যমে। এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক পরিচালিত একটি কার্যক্রমে ব্যবস্থাপকের দায়িত্বে আছেন মোস্তাফিজুর রহমান। তিনি বলেন, ‘বিবিএ শেষ করে আমি উন্নয়ন অধ্যয়নে মাস্টার্স ডিগ্রি নিই। উন্নয়ন খাতসংশ্লিষ্ট কাজের সুযোগ এখন অনেক বেশি। গবেষণাসংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয় ক্লাসে শিখেছি। উন্নয়ন সংস্থার কার্যক্রম কীভাবে পরিচালিত হয়, কীভাবে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান কাজ করে, গবেষণা কীভাবে এসব কার্যক্রমে ভূমিকা রাখে, অনেক কিছু জানার সুযোগ হয়েছে।’

যোগাযোগ ও গণমাধ্যম

এই খাতেও মাস্টার্সের সুযোগ এখন অনেক বিস্তৃত। মাস্টার্স ইন জার্নালিজম অ্যান্ড ম্যাস কমিউনিকেশন, এমএ ইন গ্রাফিক ডিজাইন অ্যান্ড মাল্টিমিডিয়া, মাস্টার্স ইন মিডিয়া অ্যান্ড কমিউনিকেশন, এমন নানা প্রোগ্রাম দেশে চালু আছে। শুধু সাংবাদিকতা বা জনসংযোগ-সংক্রান্ত পেশাজীবীদের জন্যই নয়, করপোরেট খাতেও যোগাযোগসংক্রান্ত ডিগ্রির গুরুত্ব বেড়েছে। ব্র্যান্ড কমিউনিকেশন থেকে শুরু করে ডিজিটাল মিডিয়া কিংবা গ্রাফিক ডিজাইন, কমিউনিকেশন স্ট্র্যাটেজিসহ নানা বিষয়ে বিশেষায়িত জ্ঞানার্জন করা যায় যোগাযোগ–সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন মাস্টার্স প্রোগ্রামে।

আরও পড়ুনব্র্যাক ইউনিভার্সিটির স্নাতকোত্তর প্রোগ্রামগুলো আলাদা কেন৫ ঘণ্টা আগে

সম্পর্কিত নিবন্ধ