বেহালার সুর মুগ্ধতা ছড়ায়। বেজে উঠলে অনেকে হারিয়ে যান অতীতে, হয়ে ওঠেন স্মৃতিকাতর। যে বেহালা মানুষের চুলের আকারের চেয়েও ছোট, সেটি বাজাবে কে? ধূলিকণা আছড়ে পড়লে সেখানে কি আওয়াজ ওঠে? সে আওয়াজ শোনে কে? অবিশ্বাস্য শোনালেও বিজ্ঞানীরা মানুষের একটি চুলের চেয়ে ছোট বেহালা তৈরি করেছেন। বিশ্বের সবচেয়ে ছোট এ বেহালা বাজানো সম্ভব নয়। এটি তারা করেছেন কেবল নিজেদের সক্ষমতা প্রদর্শনের জন্য। এর মাধ্যমে প্রযুক্তি কোন পর্যায়ে গিয়ে পৌঁছেছে, তার ইঙ্গিত পাওয়া যায়। ইংল্যান্ডের লাফবোরাফ ইউনিভার্সিটির বিজ্ঞানীরা অসাধারণ বেহালা বানিয়েছেন। এর দৈর্ঘ্য ৩৫ মাইক্রোমিটার ও প্রস্থ ১৩ মাইক্রোমিটার। এ মাইক্রোমিটার হলো, এক মিটারের ১০ লাখের এক ভাগ।
প্রশ্ন উঠেছে, বিজ্ঞানীরা কেন এত ছোট বেহালা তৈরি করলেন, যা বাজানোই সম্ভব নয়? তাদের মতে, বেহালা কেবল সাংস্কৃতিক বিষয় নয়, এটি গবেষণা ও উচ্চতর প্রযুক্তির বিষয়ও। কার্যত ন্যানো প্রযুক্তির ওপর বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজের দক্ষতা প্রকাশে বিজ্ঞানীরা এটি তৈরি করেছেন।
লাফবোরাফ ইউনিভার্সিটির পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের প্রধান অধ্যাপক কেলি মরিসন বলেন, ‘বিশ্বের সবচেয়ে ছোট এ বেহালা তৈরির ঘটনাকে মজার বিষয় বা খেলা মনে হতে পারে। এটি তৈরি করতে গিয়ে আমরা অনেক কাজ করেছি, অনেক কিছুই শিখেছি।’
ন্যানো-ভাস্কর্যের নতুন যুগ
এ প্রচেষ্টার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে ন্যানোফ্রেজার নামক একটি যন্ত্র। এ ক্ষেত্রে থার্মাল স্ক্যানিং প্রোব লিথোগ্রাফি ব্যবহার করা হয়েছে। এ প্রক্রিয়ায় একটি উত্তপ্ত সুচের মতো টিপ ন্যানোস্কেল নকশা তৈরি করে। প্রথমে একটি ক্ষুদ্র চিপকে রেজিস্ট নামক জেলসদৃশ উপাদানের দুটি স্তর দিয়ে প্রলেপ দেওয়া হয়। এর পর ন্যানোফ্রেজার বেহালার নকশাটি ওপরের স্তরে পুড়িয়ে দেয়। প্যাটার্ন সেট হয়ে গেলে উন্মুক্ত স্থানগুলো দ্রবীভূত হয়, যার ফলে একটি বেহালা আকৃতির গহ্বর তৈরি হয়। তার পর প্ল্যাটিনাম একটি পাতলা আবরণে প্রয়োগ করা হয় এবং অবশিষ্ট উপাদানটি ধুয়ে ফেলা হয়, যাতে ক্ষুদ্র যন্ত্রটি প্রকাশ পায়।
এ সম্পূর্ণ প্রক্রিয়াটি একটি কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রিত পরিবেশে ঘটে। ধুলা বা আর্দ্রতার দূষণ এড়াতে ল্যাবটি গ্লাভবক্স ও সিল করা চেম্বার ব্যবহার করা হয়। একটি চিপকে এক পর্যায় থেকে অন্য পর্যায়ে স্থানান্তর করা হয় রোবটিক যন্ত্র ব্যবহার করে।
ক্ষুদ্র বেহালা তৈরি
প্রতিটি বেহালা তৈরি করতে প্রায় তিন ঘণ্টা সময় লাগে। চূড়ান্ত সংস্করণটি নিখুঁত হতে কয়েক মাস সময় লেগেছে। কারণ, দলটি তাদের প্রক্রিয়াটি পরীক্ষা ও পরিমার্জন করেছে। অধ্যাপক মরিসন বলেন, আমাদের ন্যানোলিথোগ্রাফি সিস্টেম বিভিন্নভাবে এটিকে পরীক্ষা করে। এ ক্ষেত্রে আলো, চৌম্বকত্ব বা বিদ্যুৎ ব্যবহার করা হয়। এভাবে লব্দ জ্ঞান আমরা নতুন প্রযুক্তি বিকাশে প্রয়োগ শুরু করতে পারি। এটি কম্পিউটিং দক্ষতা উন্নত করার ক্ষেত্রেও ব্যবহার করা যেতে পারে। সূত্র: আর্থ ডটকম।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ব যবহ র কর
এছাড়াও পড়ুন:
ইবিতে অভয়ারণ্যের মেহেদি উৎসব
হারিয়ে যাওয়া ঐতিহ্য ফেরাতে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে (ইবি) মেহেদি ও নবান্ন উৎসবের আয়োজন করেছে পরিবেশবাদী সংগঠন অভয়ারণ্য।
সোমবার (১৭ নভেম্বর) বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলায় তারা এ আয়োজন করে।
আরো পড়ুন:
খাগড়াছড়িতে চলছে রাস উৎসব ও মেলা
পুণ্যস্নান মধ্য দিয়ে কুয়াকাটায় শেষ হলো রাস উৎসব, মেলা চলবে ৫ দিন
সরেজমিনে দেখা যায়, মেহেদি ও নবান্ন উৎসব ঘিরে শিক্ষার্থীদের ব্যাপক উপস্থিতি। রঙিন কাগজের সাজে পুরো স্থানজুড়ে তৈরি হয়েছিল উৎসবের আমেজ। পরিবেশবান্ধব বার্তা বহনকারী ঝুলন্ত ডেকোরেশন, প্রাকৃতিক মেহেদি দেওয়ার স্টল এবং সাহিত্য–সংস্কৃতির বিভিন্ন উপস্থাপনা দর্শনার্থীদের আকর্ষণ করে।
শিক্ষার্থীরা জানান, অভয়ারণ্য সবসময়ই ব্যতিক্রমী উদ্যোগ নেয়। প্রাকৃতিক মেহেদি দেওয়ার হার কমে গেলেও এ আয়োজন সেই ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করছে।
ফাতিমা খাতুন নামে ইবির এক শিক্ষার্থী বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন সংগঠনগুলোর মধ্যে অভয়ারণ্য সবসময়ই ব্যতিক্রম। আজ মেহেদি উৎসবে এসে আমার অনেক ভালো লাগছে। আজকাল প্রাকৃতিক মেহেদি দেওয়ার সংস্কৃতি অনেকটাই কমে গেছে। তারা সেই সংস্কৃতিকে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করছে। তাছাড়া নবান্ন উৎসব যেখানে একদম বিলীনপ্রায়, সেখানে তারা এটারও আয়োজন করেছে। আশা করছি, এ রকম সুন্দর আয়োজন চলমান থাকবে।”
সংগঠনটির সভাপতি নাইমুল ফারাবী বলেন, “আমরা এবার দ্বিতীয়বারের মতো মেহেদি উৎসবের আয়োজন করছি। একসময় মেয়েদের হাত সর্বদা মেহেদীর রঙে রাঙা থাকত। কিন্তু প্রযুক্তির উন্নয়নের কারণে এ চর্চা এখন কমে গেছে। এটাকে স্মরণ করিয়ে দেওয়ার জন্যই আজকের এই আয়োজন।”
তিনি বলেন, “আজ যে মেহেদি দেওয়া হচ্ছে, সেটা আমাদের সংগঠনের রোপণ করা গাছের পাতা থেকে তৈরি। এর মাধ্যমে আমরা শুদ্ধতা ছাড়িয়ে দিতে চাই।”
তিনি আরো বলেন, “মেহেদি উৎসবের পাশাপাশি আমরা এবার প্রথমবারের মতো নবান্ন উৎসব আয়োজন করেছি। এর মাধ্যমে আমার বাংলার সংস্কৃতিকে পূনর্জ্জীবিত করতে চাচ্ছি। বাংলার বহুল প্রচলিত সংস্কৃতিকে যাতে করে শিক্ষার্থীরা পুনরায় ধারণ করতে পারে, সেজন্য আমাদের এই আয়োজন।”
ঢাকা/তানিম/মেহেদী