এনবিআরে চাকরি ‘অত্যাবশ্যকীয়’ সেবা ঘোষণার সিদ্ধান্ত, কাজে না ফিরলে ব্যবস্থা
Published: 29th, June 2025 GMT
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সব শ্রেণির চাকরিকে ‘অত্যাবশ্যকীয়’ সেবা ঘোষণার সিদ্ধান্ত নিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। পাশাপাশি সংস্থাটির আন্দোলনরত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কর্মস্থলে ফেরার আহ্বান জানিয়ে সরকার বলেছে, কাজে যোগ না দিলে দেশের জনগণ ও অর্থনীতির সুরক্ষায় কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
আজ রোববার বিকেলে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় থেকে এ তথ্য জানানো হয়।
প্রেস উইংয়ের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, অতি জরুরি আমদানি-রপ্তানি ও বৈদেশিক বাণিজ্যের কার্যক্রম চলমান রাখার জাতীয় স্বার্থে সরকার জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের আওতাধীন সব কাস্টমস হাউস, আইসিডি, বন্ড কমিশনারেট এবং শুল্ক স্টেশনসমূহের সব শ্রেণির চাকরিকে অত্যাবশ্যকীয় সার্ভিস ঘোষণা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
এনবিআরের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা গতকাল শনিবার থেকে দেশের সব কর, ভ্যাট ও কাস্টমস দপ্তর বন্ধ রেখে ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ ও ‘মার্চ টু এনবিআর কর্মসূচি’ পালন করছেন। আজও চলছে এই কর্মসূচি। এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের ব্যানারে আন্দোলনকারীরা আজ সকাল থেকে আগারগাঁওয়ের প্রধান কার্যালয়ের বাইরে অবস্থান নেন। এতে দেশের আমদানি ও রপ্তানি কার্যক্রমে ‘স্থবিররা’ দেখা দেয়।
এদিকে আজ দুপুরে অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ জানান, এদিন এনবিআরের আন্দোলনকারী কর্মকর্তাদের সঙ্গে কোনো বৈঠক হচ্ছে না। তিনি বলেন, ‘কর্মকর্তারা শাটডাউন কর্মসূচি পালন করতে চাইলে করুক।’
এর পরপরই সরকারের সিদ্ধান্তের কথা জানানো হলো।
বিবৃতিতে বলা হয়, দেশের বাজেট ব্যবস্থাপনায় উন্নয়নমুখী কার্যক্রম পরিচালনার সবচেয়ে বড় সীমাবদ্ধতা হলো দুর্বল রাজস্ব সংগ্রহ ব্যবস্থা। রাষ্ট্রের প্রয়োজনের তুলনায় আমাদের রাজস্ব সংগ্রহ অনেক কম। এর মূল কারণ হলো- আমাদের রাজস্ব আহরণ ব্যবস্থাপনার নানা দুর্বলতা, অনিয়ম ও দুর্নীতি। এর পরিপ্রেক্ষিতে অন্তর্বর্তী সরকার সব অংশীজনের পরামর্শ অনুযায়ী জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) পুনর্গঠনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
প্রেস উইংয়ের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, সরকার গভীর উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ্য করছে যে, রাজস্ব সংস্কারের কাজকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য কতিপয় কর্মকর্তা-কর্মচারীরা নজিরবিহীনভাবে গত ২ মাস ধরে আন্দোলন করছে। এর মাধ্যমে দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য, আমদানি-রপ্তানি এবং রাজস্ব আদায় কার্যক্রম অন্যায় ও অনৈতিকভাবে ব্যাহত করছে। আন্দোলনের নামে তারা চরম দুর্ভোগ তৈরি করেছে, সম্পূর্ণভাবে অগ্রহণযোগ্য। সংস্কারের বিরোধিতা ছাড়াও অর্থবছরের শেষ ২ মাসে তারা রাজস্ব আদায় কার্যক্রম মারাত্মকভাবে বাধাগ্রস্ত করেছে।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, এই তথাকথিত আন্দোলন পরিকল্পিত ও দুরভিসন্ধিমূলক, যা জাতীয় স্বার্থ এবং নাগরিক অধিকারের চরম পরিপন্থি। সরকারের পক্ষ থেকে রাজস্ব বোর্ডের কর্মকর্তা-কর্মচারিদের দাবি বিবেচনায় নেওয়ার সুস্পষ্ট ঘোষণা দেওয়া হয় এবং আলোচনায় আসার আহ্বান জানালেও তারা তা অগ্রাহ্য করে। আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে সমস্যার গ্রহণযোগ্য সমাধান না করে তারা আন্দোলনের নামে অনমনীয় অবস্থান নিয়ে ক্রমাগত দেশের অর্থনীতির ক্ষতি করে চলেছে। এ পরিস্থিতিতে, অতি জরুরি আমদানি-রপ্তানি ও বৈদেশিক বাণিজ্যের কার্যক্রম চলমান রাখার জাতীয় স্বার্থে সরকার জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের আওতাধীন সব কাস্টমস হাউস, আইসিডি, বন্ড কমিশনারেট এবং শুল্ক স্টেশনসমূহের সব শ্রেণির চাকরিকে অত্যাবশ্যকীয় সার্ভিস ঘোষণা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়, আমরা আশা করি, অনতিবিলম্বে কর্মকর্তা-কর্মচারীরা কর্মস্থলে ফিরে যাবেন এবং আইনবিরোধী ও জাতীয় স্বার্থবিধ্বংসী কর্মকাণ্ড থেকে সরে আসবেন। অন্যথায় দেশের জনগণ ও অর্থনীতির সুরক্ষায় সরকার কঠোর হতে বাধ্য হবে।
গত ১২ মে এনবিআর বিলুপ্ত করে রাজস্বনীতি ও ব্যবস্থাপনা বিভাগে বিভক্ত করে অধ্যাদেশ জারি করে অর্থ মন্ত্রণালয়। এর পর থেকে এনবিআর বিলুপ্তি রোধসহ কয়েকটি দাবিতে সংস্থাটির কর্মকর্তা-কর্মচারীরা সংস্কার ঐক্য পরিষদের ব্যানারে আন্দোলন করছেন। গত ২৫ মে অর্থ মন্ত্রণালয় ৩১ জুলাইয়ের মধ্যে অধ্যাদেশটি সংশোধন করার আশ্বাস দিলে আন্দোলন প্রত্যাহার করা হয়। এর পর ২২ জুন থেকে চেয়ারম্যানের অপসারণ দাবিতে আন্দোলন শুরু হয়।
এরই ধারাবাহিকতায় পূর্বঘোষণা অনুযায়ী গতকাল সারাদেশে এনবিআরের কর, মূসক ও শুল্ক দপ্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা কমপ্লিট শাটডাউন এবং মার্চ টু এনবিআর কর্মসূচি পালন করেন। আজও চলছে এই কর্মসূচি।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: এনব আর সরক র র কর মকর ত ব যবস থ র কর ম আমদ ন সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
যশোরে ব্যবসায়ীকে বালুতে পুঁতে ৪ কোটি টাক চাঁদা আদায়, বিএনপি নেতা
এক ব্যবসায়ীকে অপহরণ করে বালুতে বুক পর্যন্ত পুঁতে রেখে ৪ কোটি টাকা চাঁদা আদায়ের অভিযোগে দায়ের করা মামলায় যশোরের অভয়নগর উপজেলার আলোচিত বিএনপি নেতা আসাদুজ্জামান জনিকে গ্রেপ্তার করেছে যৌথ বাহিনী। তার সহযোগী চলিশিয়া ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক ইউপি সদস্য তুহিনকেও আটক করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (১৪ আগস্ট) ভোরে খুলনার রোজ গার্ডেনে অভিযান চালিয়ে তাদেরকে গ্রেপ্তার করা হয়।
অভয়নগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল আলিম সাংবাদিকদেরকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
পুলিশ জানিয়েছে, জনি দীর্ঘদিন ধরে পলাতক ছিলেন। গত বছরের জুলাই মাসে যশোরের নওয়াপাড়ার এক ব্যবসায়ীর স্ত্রী আসমা খাতুন অভিযোগ করেন যে, তার স্বামীকে অপহরণ করে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করা হয়। চাঁদা না দিলে তাকে হত্যার হুমকি দেওয়া হয়। এরপর তাকে বালুতে বুক পর্যন্ত পুঁতে রেখে কয়েক দফায় ৪ কোটি টাকা চাঁদা আদায় করা হয়।
এ ঘটনায় চলতি বছরের ৩ আগস্ট আসাদুজ্জামান জনিসহ মোট ৬ জনের বিরুদ্ধে একটি মামলা করা হয়।
অভয়নগর থানার ওসি আব্দুল আলিম বলেছেন, আটকের পর জনিকে নিয়ে নওয়াপাড়ায় তার ইকোপার্কসহ বিভিন্ন স্থানে মাদক ও অস্ত্র উদ্ধারে অভিযান চালাচ্ছে যৌথ বাহিনী।
জনি নওয়াপাড়া পৌর বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলেন। গত বছরের ৫ আগস্ট রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গ ও চাঁদাবাজিসহ বিভিন্ন অভিযোগে তার পদ স্থগিত করে বিএনপি।
ঢাকা/রিটন/রফিক