‎জুলাই অভ্যুত্থানের প্রথম শহীদ আবু সাঈদের হত্যাকাণ্ড নিয়ে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনালের তদন্ত সংস্থার প্রতিবেদন চূড়ান্ত হওয়ার খবরে আন্দোলন করেন বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (বেরোবি) শিক্ষার্থীরা। এ নিয়ে বিস্ময় প্রকাশ করেছে শহীদ আবু সাঈদের পরিবার।

‎এর আগে, ট্রাইবুনালের তৈরি করা তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ হওয়ার আগেই অসন্তোষের বার্তা দেন বেরোবির একটি বিভাগের শিক্ষার্থীরা। এছাড়া প্রতিবেদন দাখিলের আগে গণশুনানি হয়নি প্রথমে এমন অভিযোগ তুলে ক্যাম্পাসে আন্দোলনের চেষ্টা করেন অনেকে।

‎তবে সে আন্দোলনে আওয়ামীপন্থি শিক্ষক ও নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের কর্মীদের উপস্থিতি থাকায় রংপুর জুড়ে শুরু হয় সমালোচনা।

আরো পড়ুন:

জাবিতে ছাত্রীকে হেনস্তার অভিযোগে রাবি শিক্ষার্থী আটক

নিউ মার্কেটে ভবন থেকে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীর মরদেহ উদ্ধার

এবার তদন্ত ঘিরে বেরোবিতে হওয়া আন্দোলন নিয়ে মুখ খুলেছে আবু সাঈদের পরিবার। তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের শুরুতে কতিপয় শিক্ষার্থীর আন্দোলনে পারিবারিক অসন্তোষের কথাও জানান তারা।

শনিবার (২৮ জুন) রাতে আবু সাঈদের ভাই আবু হোসেন বলেন, “সাবেক প্রক্টর শরিফুল ইসলামের নাম তদন্তের জন্য দেওয়া হয়েছিল। তদন্ত কর্তৃপক্ষ হয়তো কিছু পেয়েছেন তার বিরুদ্ধে। প্রাথমিকভাবে সবাইকে অভিযুক্ত করা হয়। তারপর তাদের বিরুদ্ধে আসা অভিযোগের তদন্ত করা হয়। তদন্ত কর্তৃপক্ষের কাছে তার ওই সময়ের কল রেকর্ডসহ যাবতীয় ডকুমেন্ট আছে।”

শরিফুল ইসলামের সঙ্গে তাদের কারো কোনো রাজনৈতিক শত্রুতা নেই জানিয়ে আবু সাঈদের ভাই বলেন, “আমরা এ মামলায় সর্বোচ্চ সততা রক্ষা করার চেষ্টা করেছি। অন্যান্য মামলার মত এই মামলায় ১০০-২০০ আসামি করা হয়নি।”

‎তিনি বলেন, “এই মামলায় আমরা যাদের হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে দায়বদ্ধ মনে করেছি, তাদের নাম দিয়েছি। শুনানির সময় সাক্ষ্য প্রমাণের ভিত্তিতে আদালত নির্দোষ মনে করেন, তাহলে তাকে আদালত জামিন দেবেন।”

তিনি আরো বলেন, “মামলা শুনানির সময় যদি প্রক্টর নির্দোষ প্রমাণিত হয়, তাহলে তিনি জামিন পাবেন। আন্দোলনকারীরা সরাসরি যা চোখে দেখেছেন, শুধু তাই জানেন। কিন্তু গোপনে যে ষড়যন্ত্র হয়েছে, তা কি তারা জানেন? কিছু লোক আছে, যারা শুধু উপরে উপরে সান্ত্বনা দেন।”

আবু সাঈদের ভাই হতাশ ও শঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, “এভাবে চলতে থাকলে হয়তো শুধু আল্লাহর কাছে বিচার দিয়েই আমাদের সন্তুষ্ট থাকতে হবে।”

“আবু সাঈদ হত্যার সঙ্গে যারা প্রত্যক্ষ পরোক্ষভাবে জড়িত, তাদের আমরা বিচার চাই। কোনো নিরঅপরাধ মানুষের শাস্তি চাই না,” যোগ করেন ‎আবু সাঈদের ভাই।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে ১৬ জুলাই পুলিশের গুলিতে নিহত হন আবু সাঈদ। ৫ আগস্ট আওয়ামী সরকারের পতন ও শেখ হাসিনার পলায়নের পর ১৮ আগস্ট ১৭ জনকে আসামি করে মামলা করেন আবু সাঈদের ভাই রমজান আলী।

পরে অধিকতর তদন্তের জন্য আরো সাতজনের নাম আসামীর তালিকায় যোগ করার আবেদন করে বাদীপক্ষ। এরপর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনালে গড়ায় মামলা। আলোচিত এ মামলার তদন্তের জন্য একাধিকবার রংপুরে এসেছিলেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনালের প্রসিকিউশন টিমের সদস্যরা।

গত বৃহস্পতিবার (২৬ জুন) তদন্ত প্রতিবেদনের আলোকে চার্জ গঠন করে ট্রাইবুনালে জমা দেওয়ার কথা থাকলেও তা পিছিয়ে রবিবার (২৯ জুন) দিন ধার্য করা হয়।

‎এর আগে, আবু সাঈদ হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় দায়েরকৃত মামলার এজাহারভুক্ত আটজন পুলিশ কর্মকর্তা এখনো স্বপদে বহাল রয়েছেন। এ অবস্থায় ক্ষোভে ফেটে পড়েছে রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। মামলাটি ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করা হচ্ছে এবং মূল অভিযুক্তদের আড়াল করা হচ্ছে—এমন অভিযোগ তুলে বৃহস্পতিবার (২৬ জুন) দিনভর প্রশাসনিক ভবনে তালা ঝুলিয়ে আন্দোলন করেন শিক্ষার্থীরা।

‎তারা অভিযোগ করে বলেন, মামলার মূল অভিযুক্ত পুলিশ কর্মকর্তারা বহাল থাকলেও কম দায়ে অভিযুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর শরিফুল ইসলামকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এ ঘটনায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের নিরপেক্ষতা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন তারা।

ঢাকা/‎সাজ্জাদ/মেহেদী

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর স ঈদ র ভ ই তদন ত র র তদন ত

এছাড়াও পড়ুন:

গাইবান্ধায় শিশুকে ‘ধর্ষণ’, পিটুনিতে নিহত অভিযুক্ত

গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলায় ছয় বছরের শিশুকে ধর্ষণের অভিযোগে এলাকাবাসীর পিটুনিতে হাবিল মিয়া নামে এক ব্যক্তি নিহত হয়েছে। গত শনিবার রাতের এ ঘটনায় রোববার আটজনের নামে গোবিন্দগঞ্জ থানায় হত্যা মামলা করেছেন হাবিলের ভাই।

এলাকাবাসীর অভিযোগ, গত শুক্রবার বিকেলে ওই শিশুকে ফুসলিয়ে নিজের বাড়িতে নিয়ে ধর্ষণ করে পালিয়ে যায় হাবিল। পরিবার জানতে পেরে শিশুটিকে গোবিন্দগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করে। পরে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে অবস্থার অবনতি হলে তাকে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভতির্র জন্য পাঠান চিকিৎসক।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্র জানায়, শনিবার রাত ১২টার দিকে এলাকায় ঘোরাঘুরি করছিল হাবিল। তাকে দেখে ধরে পিটুনি দেয় এলাকাবাসী। এতে সে অসুস্থ হয়ে পড়ে। খবর পেয়ে পুলিশ আহত অবস্থায় তাকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।

এদিকে গতকাল বিকেলে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গিয়ে জানা যায়, ভুক্তভোগী শিশু শনিবার হাসপাতালে ভর্তি হলেও রোববার দুপুরের আগেই চলে গেছে। ওয়ানস্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে দায়িত্বশীল কাউকে পাওয়া যায়নি। তবে দায়িত্বরত আয়া মাসুদা বেগম রেজিস্ট্রার খাতা দেখে জানান, দুপুর ২টার আগে ওই শিশুসহ স্বজনরা হাসপাতাল ছেড়ে চলে গেছেন।

গোবিন্দগঞ্জ থানার ওসি বুলবুল ইসলাম বলেন, হাবিলের বিরুদ্ধে শিশু ধর্ষণের মৌখিক অভিযোগ পেয়েছিলাম। এর পরদিন এলাকাবাসীর মারধরে তার নিহতের অভিযোগ উঠেছে। মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য গাইবান্ধা জেনারেল হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে। এ ঘটনায় হাবিলের ভাই গোবিন্দগঞ্জ থানায় আটজনের নামে মামলা করেছেন। এতে অজ্ঞাত আসামি দু’জন। ওই শিশুর পরিবার রংপুর থেকে ফিরে মামলা করার কথা ছিল। কিন্তু গতকাল সন্ধ্যা পর্যন্ত কেউ থানায় আসেনি।

এদিকে সাদুল্যাপুর উপজেলায় গোপনে এক কিশোরীর গোসলের ভিডিও ধারণ করে তা ছড়ানোর ভয় দেখিয়ে দিনের পর দিন ধর্ষণের অভিযোগে শনিবার দুই যুবকের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। আসামিরা হলো– রায়হান রহমান প্রামাণিক ও শাকিল আহম্মেদ মিম। তারা পলাতক। একই উপজেলায় শিশুকে ধর্ষণচেষ্টার অভিযোগে আমিনুর রহমান আকন্দ নামে এক বৃদ্ধকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

ধর্ষণচেষ্টার অভিযোগে যুবককে হত্যা

কক্সবাজারের রামুতে গতকাল সকালে নারীকে ধর্ষণচেষ্টা ও ছুরিকাঘাতের অভিযোগে আবদুল মান্নান নামের এক যুবককে পিটিয়ে ও কুপিয়ে হত্যা করেছেন স্থানীয়রা। নিহতের বাড়ি উপজেলার খুনিয়াপালং ইউনিয়নে। স্থানীয়দের অভিযোগ, আবদুল মান্নানের বাবা মছন আলীর নামে ‘মছন বাহিনী’ নামে এক ডাকাত দল রয়েছে। তাদের অত্যাচারে এলাকাবাসী অতিষ্ঠ।

রামু থানার ওসি (তদন্ত) মোহাম্মদ ফরিদ জানান, সকালে এলাকার এক বাড়িতে লুটপাট ও নারীকে ধর্ষণের চেষ্টা চালায় মান্নান। ধর্ষণে ব্যর্থ হয়ে ওই নারীকে ছুরিকাঘাত করে। ভুক্তভোগীর চিৎকারে প্রতিবেশীরা জড়ো হয়ে মান্নানকে আটক করে। এ সময় পালানোর চেষ্টা করলে উত্তেজিত জনতা তাকে পিটিয়ে ও কুপিয়ে হত্যা করে। 

কিশোরীকে পাঁচ মাস আটকে রেখে ধর্ষণ

নোয়াখালীর হাতিয়ায় কিশোরীকে অপহরণ করে পাঁচ মাস ধর্ষণের অভিযোগে জাহেদ হাসান নামে এক যুবককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। শনিবার সন্ধ্যায় চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে র‍্যাব।

সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে র‍্যাব-১১ জানায়, গত ৬ জানুয়ারি কিশোরীকে অপহরণের পর চট্টগ্রামের কাপ্তাইয়ে নিয়ে যায় জাহেদ। সেখানে একটি জায়গায় আটকে রেখে ভয় দেখিয়ে মাসের পর মাস ধর্ষণ করে। এক পর্যায়ে ওই কিশোরীর গর্ভে সন্তান আসে। জোরপূর্বক ওষুধ সেবন করিয়ে তার গর্ভের সন্তান হত্যা করে আসামি। ১৮ জুন ভুক্তভোগীকে তার বাড়ির কাছে ফেলে চলে যায়। এর আগে কিশোরীর মা-বাবা হাতিয়া থানায় জিডি করেছিলেন। পরে নোয়াখালী চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলার আবেদন করেন। আদালতের নির্দেশে হাতিয়া থানায় তিনজনের নামে মামলা করা হয়েছে।

চট্টগ্রামে কিশোরীকে ধর্ষণের অভিযোগ

চট্টগ্রাম নগরে রোববার দুপুরে কিশোরীকে গলায় ছুরি ধরে পাহাড়ি এলাকায় নিয়ে ধর্ষণের অভিযোগে এক যুবককে গণধোলাই দিয়ে পুলিশে দিয়েছে স্থানীয়রা। ভুক্তভোগীকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ওয়ানস্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে পাঠিয়েছে পুলিশ। গ্রেপ্তার যুবকের নাম মো. রায়হান। তার গ্রামের বাড়ি নেত্রকোনায়। সে দীর্ঘদিন ধরে চট্টগ্রামের আকবরশাহ থানা এলাকায় পরিবার নিয়ে থাকে। এর আগেও ধর্ষণের অভিযোগে গ্রেপ্তার হয়েছিল রায়হান। আকবরশাহ থানার এসআই সৈয়দ মাঈনুদ্দিন আহমেদ ফয়সাল বলেন, তার বিরুদ্ধে মামলা প্রক্রিয়াধীন।

যৌন হয়রানির অভিযোগে শিক্ষক গ্রেপ্তার

ফেনীর দাগনভুঞায় ছাত্রীকে যৌন হয়রানির অভিযোগে শনিবার রাতে সাইফুল ইসলাম নামের এক মাদ্রাসাশিক্ষককে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। জানা গেছে, দ্বিতীয় শ্রেণির ওই ছাত্রীকে এদিন সকালে মাদ্রাসাসংলগ্ন একটি পাকা ভবনের কক্ষে নিয়ে যৌন হয়রানি করে সাইফুল। ভুক্তভোগী বাড়ি ফিরে বিষয়টি তার মাকে জানায়। পরে সাইফুলকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। রোববার সকালে ভুক্তভোগীর মা দাগনভুঞা থানায় সাইফুলের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন।

এদিকে রংপুরের মিঠাপুকুরে আলোচিত সাত বছরের শিশুকে ধর্ষণ ও হত্যার ঘটনায় জড়িতদের ফাঁসির দাবিতে গতকাল মানববন্ধন করেছে এলাকাবাসী। 

(সংশ্লিষ্ট ব্যুরো, অফিস, প্রতিনিধি ও সংবাদদাতার পাঠানো তথ্য)

সম্পর্কিত নিবন্ধ