তদন্তের বিরুদ্ধে বেরোবির আন্দোলন নিয়ে হতবাক শহীদ আবু সাঈদের পরিবা
Published: 29th, June 2025 GMT
জুলাই অভ্যুত্থানের প্রথম শহীদ আবু সাঈদের হত্যাকাণ্ড নিয়ে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনালের তদন্ত সংস্থার প্রতিবেদন চূড়ান্ত হওয়ার খবরে আন্দোলন করেন বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (বেরোবি) শিক্ষার্থীরা। এ নিয়ে বিস্ময় প্রকাশ করেছে শহীদ আবু সাঈদের পরিবার।
এর আগে, ট্রাইবুনালের তৈরি করা তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ হওয়ার আগেই অসন্তোষের বার্তা দেন বেরোবির একটি বিভাগের শিক্ষার্থীরা। এছাড়া প্রতিবেদন দাখিলের আগে গণশুনানি হয়নি প্রথমে এমন অভিযোগ তুলে ক্যাম্পাসে আন্দোলনের চেষ্টা করেন অনেকে।
তবে সে আন্দোলনে আওয়ামীপন্থি শিক্ষক ও নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের কর্মীদের উপস্থিতি থাকায় রংপুর জুড়ে শুরু হয় সমালোচনা।
আরো পড়ুন:
জাবিতে ছাত্রীকে হেনস্তার অভিযোগে রাবি শিক্ষার্থী আটক
নিউ মার্কেটে ভবন থেকে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীর মরদেহ উদ্ধার
এবার তদন্ত ঘিরে বেরোবিতে হওয়া আন্দোলন নিয়ে মুখ খুলেছে আবু সাঈদের পরিবার। তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের শুরুতে কতিপয় শিক্ষার্থীর আন্দোলনে পারিবারিক অসন্তোষের কথাও জানান তারা।
শনিবার (২৮ জুন) রাতে আবু সাঈদের ভাই আবু হোসেন বলেন, “সাবেক প্রক্টর শরিফুল ইসলামের নাম তদন্তের জন্য দেওয়া হয়েছিল। তদন্ত কর্তৃপক্ষ হয়তো কিছু পেয়েছেন তার বিরুদ্ধে। প্রাথমিকভাবে সবাইকে অভিযুক্ত করা হয়। তারপর তাদের বিরুদ্ধে আসা অভিযোগের তদন্ত করা হয়। তদন্ত কর্তৃপক্ষের কাছে তার ওই সময়ের কল রেকর্ডসহ যাবতীয় ডকুমেন্ট আছে।”
শরিফুল ইসলামের সঙ্গে তাদের কারো কোনো রাজনৈতিক শত্রুতা নেই জানিয়ে আবু সাঈদের ভাই বলেন, “আমরা এ মামলায় সর্বোচ্চ সততা রক্ষা করার চেষ্টা করেছি। অন্যান্য মামলার মত এই মামলায় ১০০-২০০ আসামি করা হয়নি।”
তিনি বলেন, “এই মামলায় আমরা যাদের হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে দায়বদ্ধ মনে করেছি, তাদের নাম দিয়েছি। শুনানির সময় সাক্ষ্য প্রমাণের ভিত্তিতে আদালত নির্দোষ মনে করেন, তাহলে তাকে আদালত জামিন দেবেন।”
তিনি আরো বলেন, “মামলা শুনানির সময় যদি প্রক্টর নির্দোষ প্রমাণিত হয়, তাহলে তিনি জামিন পাবেন। আন্দোলনকারীরা সরাসরি যা চোখে দেখেছেন, শুধু তাই জানেন। কিন্তু গোপনে যে ষড়যন্ত্র হয়েছে, তা কি তারা জানেন? কিছু লোক আছে, যারা শুধু উপরে উপরে সান্ত্বনা দেন।”
আবু সাঈদের ভাই হতাশ ও শঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, “এভাবে চলতে থাকলে হয়তো শুধু আল্লাহর কাছে বিচার দিয়েই আমাদের সন্তুষ্ট থাকতে হবে।”
“আবু সাঈদ হত্যার সঙ্গে যারা প্রত্যক্ষ পরোক্ষভাবে জড়িত, তাদের আমরা বিচার চাই। কোনো নিরঅপরাধ মানুষের শাস্তি চাই না,” যোগ করেন আবু সাঈদের ভাই।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে ১৬ জুলাই পুলিশের গুলিতে নিহত হন আবু সাঈদ। ৫ আগস্ট আওয়ামী সরকারের পতন ও শেখ হাসিনার পলায়নের পর ১৮ আগস্ট ১৭ জনকে আসামি করে মামলা করেন আবু সাঈদের ভাই রমজান আলী।
পরে অধিকতর তদন্তের জন্য আরো সাতজনের নাম আসামীর তালিকায় যোগ করার আবেদন করে বাদীপক্ষ। এরপর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনালে গড়ায় মামলা। আলোচিত এ মামলার তদন্তের জন্য একাধিকবার রংপুরে এসেছিলেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনালের প্রসিকিউশন টিমের সদস্যরা।
গত বৃহস্পতিবার (২৬ জুন) তদন্ত প্রতিবেদনের আলোকে চার্জ গঠন করে ট্রাইবুনালে জমা দেওয়ার কথা থাকলেও তা পিছিয়ে রবিবার (২৯ জুন) দিন ধার্য করা হয়।
এর আগে, আবু সাঈদ হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় দায়েরকৃত মামলার এজাহারভুক্ত আটজন পুলিশ কর্মকর্তা এখনো স্বপদে বহাল রয়েছেন। এ অবস্থায় ক্ষোভে ফেটে পড়েছে রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। মামলাটি ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করা হচ্ছে এবং মূল অভিযুক্তদের আড়াল করা হচ্ছে—এমন অভিযোগ তুলে বৃহস্পতিবার (২৬ জুন) দিনভর প্রশাসনিক ভবনে তালা ঝুলিয়ে আন্দোলন করেন শিক্ষার্থীরা।
তারা অভিযোগ করে বলেন, মামলার মূল অভিযুক্ত পুলিশ কর্মকর্তারা বহাল থাকলেও কম দায়ে অভিযুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর শরিফুল ইসলামকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এ ঘটনায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের নিরপেক্ষতা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন তারা।
ঢাকা/সাজ্জাদ/মেহেদী
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর স ঈদ র ভ ই তদন ত র র তদন ত
এছাড়াও পড়ুন:
ইবিতে অভয়ারণ্যের মেহেদি উৎসব
হারিয়ে যাওয়া ঐতিহ্য ফেরাতে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে (ইবি) মেহেদি ও নবান্ন উৎসবের আয়োজন করেছে পরিবেশবাদী সংগঠন অভয়ারণ্য।
সোমবার (১৭ নভেম্বর) বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলায় তারা এ আয়োজন করে।
আরো পড়ুন:
খাগড়াছড়িতে চলছে রাস উৎসব ও মেলা
পুণ্যস্নান মধ্য দিয়ে কুয়াকাটায় শেষ হলো রাস উৎসব, মেলা চলবে ৫ দিন
সরেজমিনে দেখা যায়, মেহেদি ও নবান্ন উৎসব ঘিরে শিক্ষার্থীদের ব্যাপক উপস্থিতি। রঙিন কাগজের সাজে পুরো স্থানজুড়ে তৈরি হয়েছিল উৎসবের আমেজ। পরিবেশবান্ধব বার্তা বহনকারী ঝুলন্ত ডেকোরেশন, প্রাকৃতিক মেহেদি দেওয়ার স্টল এবং সাহিত্য–সংস্কৃতির বিভিন্ন উপস্থাপনা দর্শনার্থীদের আকর্ষণ করে।
শিক্ষার্থীরা জানান, অভয়ারণ্য সবসময়ই ব্যতিক্রমী উদ্যোগ নেয়। প্রাকৃতিক মেহেদি দেওয়ার হার কমে গেলেও এ আয়োজন সেই ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করছে।
ফাতিমা খাতুন নামে ইবির এক শিক্ষার্থী বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন সংগঠনগুলোর মধ্যে অভয়ারণ্য সবসময়ই ব্যতিক্রম। আজ মেহেদি উৎসবে এসে আমার অনেক ভালো লাগছে। আজকাল প্রাকৃতিক মেহেদি দেওয়ার সংস্কৃতি অনেকটাই কমে গেছে। তারা সেই সংস্কৃতিকে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করছে। তাছাড়া নবান্ন উৎসব যেখানে একদম বিলীনপ্রায়, সেখানে তারা এটারও আয়োজন করেছে। আশা করছি, এ রকম সুন্দর আয়োজন চলমান থাকবে।”
সংগঠনটির সভাপতি নাইমুল ফারাবী বলেন, “আমরা এবার দ্বিতীয়বারের মতো মেহেদি উৎসবের আয়োজন করছি। একসময় মেয়েদের হাত সর্বদা মেহেদীর রঙে রাঙা থাকত। কিন্তু প্রযুক্তির উন্নয়নের কারণে এ চর্চা এখন কমে গেছে। এটাকে স্মরণ করিয়ে দেওয়ার জন্যই আজকের এই আয়োজন।”
তিনি বলেন, “আজ যে মেহেদি দেওয়া হচ্ছে, সেটা আমাদের সংগঠনের রোপণ করা গাছের পাতা থেকে তৈরি। এর মাধ্যমে আমরা শুদ্ধতা ছাড়িয়ে দিতে চাই।”
তিনি আরো বলেন, “মেহেদি উৎসবের পাশাপাশি আমরা এবার প্রথমবারের মতো নবান্ন উৎসব আয়োজন করেছি। এর মাধ্যমে আমার বাংলার সংস্কৃতিকে পূনর্জ্জীবিত করতে চাচ্ছি। বাংলার বহুল প্রচলিত সংস্কৃতিকে যাতে করে শিক্ষার্থীরা পুনরায় ধারণ করতে পারে, সেজন্য আমাদের এই আয়োজন।”
ঢাকা/তানিম/মেহেদী