আন্দোলনকারীরা পক্ষপাতভাবে কাজ না করলে কারও কোনো সমস্যা হবে না: অর্থ উপদেষ্টা
Published: 30th, June 2025 GMT
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আন্দোলন প্রত্যাহার করা এবং পোর্ট চালু হওয়ায় খুশি হয়েছেন জানিয়ে অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, আন্দোলনকারীদের বলবো আপনারা ভালো করে কাজ করেন। পক্ষপাতভাবে কাজ না করলে কারও কোনো সমস্যা হবে না। স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার সঙ্গে মানুষের সেবা করলে সেখানে কোনো সমস্যা হওয়ার কথা না।
সোমবার রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান ও স্বায়ত্তশাসিত সংস্থাগুলোর অনলাইন ডাটাবেইস সিস্টেমে বাজেট রিপোর্টিং, ঋণ ও প্রচ্ছন্ন দায় বিশ্লেষণসহ সার্বিক কাজ মূল্যায়নের প্রথম বছরের কাজের সমাপ্তি উপলক্ষে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে অর্থ উপদেষ্টা এ কথা বলেন। সচিবালয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
অর্থ উপদেষ্টা বলেন, আজকে আমরা একটু খুশি। প্রধান উপদেষ্টাও ছিলেন। এনবিআরের বিষয়টি সলভ (সমাধান) হয়েছে, পোর্ট চালু হয়েছে। আমরা মাঝখানে একটু সমস্যায় ছিলাম। আমি প্রধান উপদেষ্টার কাছে বললাম পরে। বললেন ঠিক আছে ওরা কথা বলুক, কমিটি করা হয়েছে। আমাকে বললো তুমি পরে বসো, এখন না।
আন্দোলনে সম্পৃক্ত থাকা এনবিআরের ৬ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) অনুসন্ধান নিয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের উত্তরে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, প্রথমত আমি দুদক সম্পর্কে কোনো উত্তর দেবো না। ওদের আলাদা টার্ম অফ কন্ডিশন আছে। ওটা দরকার হলে আপনি তাদেরকে আলাদাভাবে জিজ্ঞাসা করবেন। ডেফিনেটলি সরকার থেকে এখন পর্যন্ত কোনো ধরনের ইন্টারফেয়ার (হস্তক্ষেপ) করা হয়নি।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকে আপনি দেখেছেন অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে হস্তক্ষেপ করতে? আমার গভর্নর থাকাকালীন সময়ের পরে বাংলাদেশ ব্যাংক তো চলতো সরকারের নির্দেশে, আদেশে। যারা গভর্নর ছিলেন, তারা বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ছিলেন না। দু:খের সঙ্গে বলছি তারা (গভর্নররা) কিন্তু সরকারের এজেন্ট হিসেবে কাজ করেছেন। এখন কিন্তু সেটা নেই।
তিনি আরও বলেন, দুদক দেখবে, যদি ফ্যাক্ট থাকে। ভাবতে পারেন এই সময় এটা শুরু করলো কেন? শুধু এনবিআর’র কেন আমার কাছে প্রতিদিন দুনিয়ার লোক আসে তাদের অ্যাকাউন্ট বন্ধ হয়ে গেছে কেন।
এনবিআরের কর্মকর্তাদের আন্দোলন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, একটু লস হয়েছে, খুবই দুর্ভাগ্যজনক। ব্যবসায়ীদের সঙ্গে গতকাল আমি মিটিং করলাম অনেকক্ষণ। আজকেও কয়েকজন ব্যবসায়ী ফোন করে বলেছে অনেক লস হয়ে গেছে। এটা কোনো ক্রমেই গ্রহণযোগ্য না। সরকারের সঙ্গে মতপার্থক্য থাকতে পারে। কিন্তু জাতীয় স্বার্থের একটা সার্ভিস বন্ধ করে দেওয়া, বন্দরের সেবা বন্ধ রাখা, এটা কোনো যুক্তিতে গ্রহণযোগ্য না।
অর্থ উপদেষ্টা বলেন, আমাদের সঙ্গে তাদের মতবিরোধ থাকতে পারে। আমি বহু আগে বলেছি। কিন্তু পোর্ট বন্ধ করে দেওয়া। এটা তো প্রাইভেট প্রপার্টি না। আমার সাধারণ কোন ফ্যাক্টরি আমি বন্ধ করে দিলাম, ব্যাপারটা এমন না। এটা সরকারের বা রাষ্ট্রের বিষয়। ইউ আর পেইড বাই দ্য গভমেন্ট। রাজস্ব আমি কোথা থেকে পাই, এটা বন্ধ করে দেওয়া যায় না। যাইহোক এখন জিনিসটা সলভ হয়েছে। আমি বলবো এটার সলিউশন ডিফিক্যাল্ট না। পাঁচজন উপদেষ্টা আছেন, তারা হিয়ারিং করে সলভ করবেন।
আন্দোলনকারীদের উদ্দেশে আপনি কি বলবেন? সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের উত্তরে সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, তাদের উদ্দেশ্যে আমি বলবো আপনারা ভালো করে কাজ করবেন। পক্ষপাতভাবে কাজ না করলে কারও কোনো সমস্যা হবে না। আমি চাই ট্রান্সপারেন্সি (স্বচ্ছতা) ও অ্যাকাউন্টিবিলিটির (জবাবদিহিতা) সঙ্গে মানুষের সেবা করুক। সেখানে কারও সমস্যা হওয়ার কথা না। যারা সারাজীবন এভাবে কাজ করেছে, তাদের সমস্যা হতে দেখেছেন? যাদের কাজে বিচ্যুতি ঘটে তারাই জবাদিহিতার আওতায় আসে একদিন না একদিন।
এদিকে অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে জানানো হয়েছে, রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান ও স্বায়ত্তশাসিত সংস্থাগুলো আর্থিক ও প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থাপনা স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার জন্য এই প্রতিষ্ঠানগুলোর বাজেট প্রণয়ন, ঋণ ও প্রচ্ছন্ন দায়ের হিসাবায়ন, বিশ্লেষণসহ সার্বিক ব্যবস্থাপনা ও মূল্যায়নের জন্য সরকার ‘স্টেট-ওন এন্টারপ্রাইজেস অ্যান্ড অটোনোমাস বডিস বাজেট, রিপোর্টিং অ্যান্ড ইভালুয়েশন ডাটাবেইজ (সেবার+)’ সফটওয়্যার ব্যবহার করছে।
সেবার+ এর মাধ্যমে চলতি বছর ৭২টি প্রতিষ্ঠানের বাজেট প্রণয়নের কাজ অর্থ উপদেষ্টা ড.
সেবার+ হলো অর্থ বিভাগের মনিটরিং সেল প্রণীত একটি অনলাইন ডাটাবেইজ সিস্টেম, যার মাধ্যমে রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান ও স্বায়ত্তশাসিত সংস্থাগুলোর বাজেট প্রস্তুত, সংস্থাগুলোর ঋণ ও প্রচ্ছন্ন দায়ের হিসাবায়ন, রিপোর্টিং ও সার্বিক কাজকর্মের মূল্যায়ন করা হয়। এই সিস্টেমের লক্ষ্য হলো বাজেট প্রস্তুত, সম্পদ ও দায়ের সঠিক হিসাবায়ন, মূল্যায়ন এবং প্রতিবেদন প্রক্রিয়াকে অনলাইন মাধ্যমে ডিজিটাল পদ্ধতিতে সহজতর করার মাধ্যমে স্বচ্ছতা, দক্ষতা ও সুষ্ঠু আর্থিক ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করা।
২০২৩ সালের সেপ্টেম্বর মাস পরীক্ষামূলকভাবে চালু হওয়া সেবার+ বিগত অর্থবছরে ১২টি প্রতিষ্ঠানে পাইলটিংয়ের মাধ্যমে যাত্রা শুরু করে। চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরে এটি ৭২টি সংস্থার বাজেট প্রস্তুতসহ ১০১ সংস্থার ঋণ ও প্রচ্ছন্ন দায়ের হিসাবায়নের পাশাপাশি সরকারের আর্থিক ঝুঁকি নিরূপণ ও ২০টি সংস্থার কাজকর্মের মূল্যায়নে তথ্যনির্ভর সিদ্ধান্ত গ্রহণে প্রধান ভূমিকা পালন করেছে।
সেবার+ এর সাথে আইবাস++ এর ‘এপ্লিকেশন প্রোগ্রামিং ইন্টারফেস (এপিআই) থাকায় জাতীয় আর্থিক রেকর্ডের মধ্যে স্বয়ংক্রিয় ডেটা বিনিময় সম্ভব হয়। এর ফলে সমন্বয় নিশ্চিত হয়, কাজের পুনরাবৃত্তি কমে এবং আর্থিক প্রবাহের প্রকৃত তথা রিয়েল-টাইম নজরদারি সহজ হয়।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ড ট ব ইজ সরক র র আর থ ক ক জ কর ব যবস সমস য
এছাড়াও পড়ুন:
যুক্তরাষ্ট্রের মাটিতে পুতিনকে কেন গ্রেপ্তার করা হবে না
যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে ২০২৩ সালের মার্চে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (আইসিসি)।
যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন সে সময় পুতিনকে একজন ‘যুদ্ধাপরাধী’ আখ্যায়িত করে বলেছিলেন, এই গ্রেপ্তারি পরোয়ানা ন্যায়সংগত। তবে যুক্তরাষ্ট্র আইসিসির সদস্য কোনো দেশ নয়।
২০০০ সালে যুক্তরাষ্ট্রের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটন রোম সংবিধিতে স্বাক্ষর করেছিলেন, ওই সংবিধির আলোকে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের সিনেট কখনো ওই চুক্তিকে আইনগতভাবে বাধ্যতামূলক করার জন্য অনুসমর্থনের জন্য পদক্ষেপ নেয়নি।
বিল ক্লিনটন রোম সংবিধিতে স্বাক্ষরের দুই বছর পর যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশ আনুষ্ঠানিকভাবে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সব ধরনের সম্পৃক্ততার অবসান ঘটান। এর পেছনে যুক্তি হিসেবে তিনি বলেছিলেন, প্রতিষ্ঠানটি যুক্তরাষ্ট্রের সার্বভৌমত্ব লঙ্ঘন করেছে।
সে কারণে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের গ্রেপ্তারি পরোয়ানার কার্যকারিতা আমেরিকার মাটিতে নেই।
এদিকে ট্রাম্প প্রশাসন প্রকাশ্যে আইসিসির প্রতি বৈরিতা করছে। নেদারল্যান্ডসের হেগ শহরে অবস্থিত এই আদালতের বেশ কয়েকজন কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে ওয়াশিংটন। আফগানিস্তানে যুদ্ধের সময় যুক্তরাষ্ট্রের সেনারা যুদ্ধাপরাধ করেছেন, এমন অভিযোগের তদন্ত করায় আইসিসির ওই সব কর্মকর্তার বিরুদ্ধে এ পদক্ষেপ নেয় ট্রাম্প প্রশাসন।
আইসিসির এখতিয়ারের এই ঘাটতিই পুতিনের সঙ্গে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের আজকের বৈঠকের স্থান হিসেবে আলাস্কাকে বেছে নেওয়ার একটি কারণ হতে পারে।
অবশ্য আইসিসির স্বাক্ষরকারী দেশ মঙ্গোলিয়ায় ২০২৩ সালের আগস্টে সফর করেছিলেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। সে সময় তাঁকে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা তামিলের অনুরোধ করা হলেও তাতে অস্বীকৃতি জানিয়েছিল দেশটি। সে জন্য মঙ্গোলিয়াকে কোনো পরিণতি ভোগ করতে হয়নি।
শেষ পর্যন্ত আন্তর্জাতিক আইন কেবল ততটাই কার্যকর হয়, যতটা দেশগুলোর সরকার এবং তাদের নেতারা কার্যকর করতে চান। আর এই ক্ষেত্রে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে দেখা করতে চান এবং এই সাক্ষাৎ তাঁর পছন্দ মতো করতে তাঁকে আটকানোর মতো কিছুই নেই।