ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে দিনব্যাপী নানা আয়োজনের মধ্য দিয়ে আজ মঙ্গলবার বিশ্ববিদ্যালয়ের ১০৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদ্‌যাপিত হয়েছে। সকাল পৌনে ১০টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি চত্বরসংলগ্ন স্মৃতি চিরন্তনের সামনে থেকে শোভাযাত্রা বের হয়। এরপর সকাল ১০টায় ছাত্র শিক্ষক কেন্দ্রের (টিএসসি) সামনে পায়রা চত্বরে জাতীয় পতাকা, বিশ্ববিদ্যালয় ও হলগুলোর পতাকা উত্তোলন এবং কেক কাটার মধ্য দিয়ে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী কার্যক্রমের উদ্বোধন করা হয়।

১৯২১ সালের ১ জুলাই ৩টি অনুষদ, ১২টি বিভাগ, ৬০ জন শিক্ষক ও ৮৪৭ শিক্ষার্থী নিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা শুরু করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। এ বছর দিবসটির প্রতিপাদ্য হলো ‘বৈষম্যহীন ও অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজ বিনির্মাণে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়’।

সকালে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর উদ্বোধন অনুষ্ঠানে সংগীত বিভাগের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা জাতীয় সংগীত ও দেশাত্মবোধক গান পরিবেশন করেন। বিদেশি শিক্ষার্থীরাও একটি সংগীত পরিবেশনায় অংশ নেন।

বিকেলে ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্র মিলনায়তনে (টিএসসি) এক আলোচনা সভা হয়। সেখানে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের (ইউজিসি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক এস এম এ ফায়েজ সভায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন। তিনি বলেন, ‘আজকের এই গৌরবময় দিনে আমরা দাঁড়িয়ে আছি এক শতাব্দী ও চার বছরের এক দীপ্ত ইতিহাসের দ্বারপ্রান্তে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেবল একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নয়, এটি জাতির আত্মপরিচয়ের প্রতীক, সভ্যতা গঠনের শিকড় ও স্বাধীনতার জাগরণগাথা। আজ যে দিনটি আমরা উদ্‌যাপন করছি, তার প্রতিপাদ্য ‘বৈষম্যহীন ও অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজ বিনির্মাণে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়’। এটি কেবল একটি স্লোগান নয়, এটি আমাদের বোধ, আমাদের নৈতিক দায় এবং আমাদের সামনে দাঁড়িয়ে থাকা ভবিষ্যতের প্রতিশ্রুতি।’

অধ্যাপক এস এম এ ফায়েজ বলেন, এই বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্মই হয়েছিল বৈষম্য দূরীকরণের তাগিদে। তাই আজকের এই প্রতিপাদ্য ইতিহাসের ধারবাহিকতায় যেমন ক্তিযুক্ত, তেমনি বর্তমান সময়ের বিবেচনায় তা অত্যন্ত উপযোগী।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড.

নিয়াজ আহমদ খান বলেন, ভাষা আন্দোলন, মহান মুক্তিযুদ্ধ, উনসত্তরের গণ–অভ্যুত্থান, নব্বইয়ের স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন এবং চব্বিশের গণ–অভ্যুত্থান—এই ঐতিহাসিক অধ্যায়গুলো একে অপরের পরিপূরক। তিনি বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের যাত্রা শুরু হয়েছিল মাত্র ৬০ জন শিক্ষক ও ৮৭৭ জন শিক্ষার্থী নিয়ে। বর্তমানে শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় ৪০ হাজার এবং শিক্ষক আছেন প্রায় ২ হাজার। এ ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে সম্পৃক্ত ২০০টি প্রতিষ্ঠানে প্রায় দেড় লাখ শিক্ষার্থী অধ্যয়নরত আছেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পথচলা কখনো শুধু একাডেমিক পরিসরে সীমাবদ্ধ ছিল না উল্লেখ করে উপাচার্য বলেন, এই বিশ্ববিদ্যালয় ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ সন্ধিক্ষণগুলোয় সমাজের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রেখেছে।

আলোচনা সভায় উপস্থিত ছিলেন সহ–উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক সায়মা হক বিদিশা, সহ–উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক মামুন আহমেদ, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক এম জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী প্রমুখ। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার মুনসী শামস উদ্দীন আহম্মদ।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: উপ চ র য

এছাড়াও পড়ুন:

দেশবাসীকে ধৈর্য, সতর্কতা ও ঐক্য বজায় রাখার আহ্বান জামায়াত আমিরের

জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে করা মামলায় তাকে দুটি অভিযোগে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। 

সোমবার (১৭ নভেম্বর) দুপুরে এ রায় ঘোষণা করা হয়। এর কিছুক্ষণ পর নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এক বিবৃতিতে দেশবাসীকে ধৈর্য, সতর্কতা ও ঐক্য বজায় রাখার আহ্বান জানিয়েছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান। 

বিবৃতিতে বলা হয়েছে, “বাংলাদেশ আজ এক গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে দাঁড়িয়ে আছে। নানা রাজনৈতিক উত্তাপ, সামাজিক অস্থিরতা ও দীর্ঘদিনের অনিশ্চয়তার মাঝে আমাদের জন্য জরুরি হলো—ন্যায়বিচার, সত্য এবং জনগণের অধিকারকে সবচেয়ে উঁচু আসনে প্রতিষ্ঠা করা।

আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, একটি দেশ তখনই সত্যিকার অর্থে অগ্রসর হয়, যখন সেখানে বৈধতা, ন্যায়, স্বচ্ছতা এবং জনগণের মতামত সর্বাধিক মর্যাদা পায়। ব্যক্তিনির্ভর রাজনীতির ঊর্ধ্বে উঠে, নীতিনির্ভর রাজনৈতিক সংস্কৃতি প্রতিষ্ঠা করাই আজ সময়ের দাবি।

এই সংকটময় সময়ে আমি আবারও স্মরণ করিয়ে দিতে চাই—আমাদের সংগ্রাম কারো বিরুদ্ধে নয়; আমাদের সংগ্রাম ন্যায়, অধিকার, গণতন্ত্র ও স্বাধীনতার পক্ষে। আমরা চাই এমন একটি বাংলাদেশ, যেখানে সব নাগরিক নিরাপদে মত প্রকাশ করতে পারে, যেখানে বিচার হবে নিরপেক্ষ, এবং যেখানে পরিবর্তন আসবে শান্তিপূর্ণ গণতান্ত্রিক উপায়ে।

আমি দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি—ধৈর্য, সতর্কতা ও ঐক্য বজায় রাখুন। আমাদের লক্ষ্য হোক শান্তি, ন্যায় ও জাতীয় পুনর্গঠন। আল্লাহ তায়ালা আমাদের দেশকে সত্য, ন্যায় ও কল্যাণের পথে পরিচালিত করুন।”

আজ একই মামলায় সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালকে মৃত্যুদণ্ড এবং পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনকে ৫ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। 

বিচারপতি গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এ রায় ঘোষণা করেন। ট্রাইব্যুনালের অপর দুই সদস্য হলেন- বিচারপতি মো. শফিউল আলম মাহমুদ ও বিচারক মো. মোহিতুল হক এনাম চৌধুরী।

ঢাকা/রফিক

সম্পর্কিত নিবন্ধ