মিরপুরে মাদ্রাসাছাত্রের ঝুলন্ত মরদেহের ছবি ছড়িয়ে পড়েছে ফেসবুকে
Published: 25th, July 2025 GMT
রাজধানীর মিরপুরে এক মাদ্রাসাছাত্রের ঝুলন্ত মরদেহের ছবি ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে। ছবিতে দেখা যায়, শৌচাগারের জানালার গ্রিলের সঙ্গে গলায় গামছা প্যাঁচানো অবস্থায় লুঙ্গি, সাদা পাঞ্জাবি ও টুপি পরা এক কিশোরের মরদেহ ঝুলছে। এক পা কমোডে ও আরেক পা মেঝেতে ঠেকে আছে। পাশে পড়ে আছে দুটি বদনা।
বৃহস্পতিবার এ ঘটনা নিয়ে দারুসসালাম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রকিব-উল-হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, প্রাথমিকভাবে এটিকে আত্মহত্যা বলে মনে হচ্ছে।
তবে ফেসবুকে অনেকে এটিকে হত্যাকাণ্ড বলে প্রচার করছেন। পরিবারের কোনো আপত্তি না থাকায় এ ঘটনায় একটি অপমৃত্যুর মামলা হয়েছে। ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন পাওয়া গেলে মৃত্যুর সঠিক কারণ জানা যাবে।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা দারুসসালাম থানার উপপরিদর্শক (এসআই) আজিজুল হক জানান, মরদেহটি মিরপুর ১ নম্বরে অবস্থিত মারকাযু ফয়জিল কুরআন আল-ইসলামী মাদ্রাসার হেফজ বিভাগের ছাত্র সিয়ামের (১৪)। গত সোমবার (২১ জুলাই) মাদ্রাসার দোতলার শৌচাগার থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।
সোমবারের ঘটনা হলেও বুধবার দিবাগত রাত থেকেই সিয়ামের মরদেহের ছবি ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে। এরপর তা সবার নজরে আসে।
পুলিশ জানায়, মাদ্রাসার ক্লোজড সার্কিট (সিসি) ক্যামেরার ফুটেজে দেখা যায়, সোমবার বেলা ১১টার দিকে সিয়াম একবার শৌচাগারে ঢোকে। সেখান থেকে বেরিয়ে কিছুক্ষণ পর একটি গামছা নিয়ে আবার শৌচাগারে প্রবেশ করে। কিন্তু দীর্ঘক্ষণ বের না হওয়ায় সহপাঠী ও মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষের লোকজন ডাকাডাকি করে। কোনো সাড়া না পেয়ে দরজায় ধাক্কা দিলে ছিটকিনি ভেঙে সেটি খুলে যায়। তখন দেখা যায়, সিয়ামের মরদেহ জানালার গ্রিলের সঙ্গে গলায় গামছা প্যাঁচানো অবস্থায় ঝুলছে।
এসআই আজিজুল হক বলেন, ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন হাতে না পাওয়া পর্যন্ত নিশ্চিত করে কিছু বলা যাচ্ছে না। তবে প্রাথমিকভাবে এটি আত্মহত্যা বলে মনে হচ্ছে।
জানা গেছে, সিয়াম মাদ্রাসার হোস্টেলে থাকতেন। তার গ্রামের বাড়ি সাতক্ষীরার শ্যামনগরে। মৃত্যুর আগের দিন তার বাবা সাজ্জাদ হোসেন ঢাকায় ছেলেকে দেখতে এসেছিলেন। ঠোঁটে ও পায়ে ফোসকার জন্য চিকিৎসকের কাছেও নিয়েছিলেন ছেলেকে। দুই ভাই এক বোনের মধ্যে সিয়াম ছিল সবার বড়।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
কুষ্টিয়ার সাবেক এসপি তানভীর আরেক হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার
কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলায় বিএনপি কর্মী কুদরত আলীকে গুলি করে হত্যা মামলার আসামি কুষ্টিয়ার সাবেক পুলিশ সুপার এস এম তানভীর আরাফাতকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে।
সোমবার (২৮ জুলাই) দুপুর ১টা ৪১ মিনিটে কড়া নিরাপত্তায় কারাগার থেকে এস এম তানভীর আরাফাতকে কুষ্টিয়া আদালতে আনা হয়। এরপর দৌলতপুর আমলি আদালতের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মোস্তফা পারভেজের আদালতে হাজিরা করা হয়। এরপর তাকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। পরে ১টা ৫১ মিনিটে আদালত থেকে তাকে আবার কারাগারে পাঠানো হয়।
গত ২৬ ডিসেম্বর বিএনপির আরেক কর্মী সুজন মালিথাকে গুলি করে হত্যা মামলার প্রধান আসামি এই পুলিশ কর্মকর্তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। এরপর থেকে তিনি কুষ্টিয়া কারাগারে আছেন।
আরো পড়ুন:
মেহেরপুরে হত্যা মামলায় একজনের মৃত্যুদণ্ড
গজারিয়ায় প্রতিপক্ষের গুলিতে ‘শুটার’ মান্নান নিহত
উপপুলিশ কমিশনার এস এম তানভীর আরাফাত সিলেট রেঞ্জ ডিআইজি অফিসে সংযুক্ত ছিলেন। তার গ্রামের বাড়ি খুলনার খালিশপুর উপজেলায়। কুষ্টিয়ায় চাকরিকালে বিতর্কিত ছিলেন এই পুলিশ কর্মকর্তা। কুষ্টিয়া জেলায় আসার পর থেকে নানা কর্মকান্ডে সমালোচনার মুখে পড়েন তিনি। এমনকি, তখন এ সব কর্মকাণ্ডের জন্য তাকে আদালতের কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হয়। বিভাগীয় শাস্তিও পেতে হয়।
নিহত বিএনপি কর্মী কুদরত আলীর ছেলে বাদী হয়ে ২০২৪ সালের ২ অক্টোবর দৌলতপুর থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলার এজাহারে বাদী উল্লেখ করেছেন, কুদরত আলী বিএনপির সক্রিয় সমর্থক ছিলেন। বিএনপির প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে তিনি দলের সঙ্গে আছেন। এ কারণে আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীরা ও কিছু সুবিধাভোগী পুলিশ সদস্য কুদরত আলীকে মিথ্যা মামলায় আটক ও হত্যার পরিকল্পনা করে। এই ষড়যন্ত্রের পরিপ্রেক্ষিতে পুলিশ পরিদর্শক নিশিকান্ত সরকার, এসআই রোকনুজ্জামান, এসআই মেহেদী হাসান, এসআই শাহজাহান, এএসআই আনিচুর রহমান, পুলিশ সুপার এস এম তানভীর আহমেদসহ অন্য পুলিশ সদস্যরা কুদরত আলীকে হত্যা করার পরিকল্পনা করে। ২০২০ সালের ২৩ জুলাই রাত ২টার দিকে ১০-১২ জন পুলিশ কুদরত আলীকে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে যায়। ২৫ জুলাই তাকে গুলি করে হত্যা করা হয়। তার বুকের ডান দিকে ও বাম দিকে দুটি গুলির চিহ্ন, দুই হাতে, পিঠে, মুখে ও পায়ে আঘাতের চিহ্ন ছিল।
বাদী মামলায় দাবি করেন, কুদরত আলীকে গুম করে নির্যাতন ও গুলি করে হত্যা করে লাশ হাসপাতালের মর্গে রেখে চলে যায়।
দৌলতপুর থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সোলাইমান শেখ জানান, দৌলতপুর থানার একটি মামলায় এস এম তানভীর আরাফাতকে গ্রেপ্তারের আবেদন করা হয়েছিল। সেই আবেদন আদালত মঞ্জুর করেছেন।
২০১৯ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর বিএনপির কর্মী সুজন মালিথাকে গুলি করে হত্যার অভিযোগে কুষ্টিয়া সাবেক এসপি এস এম তানভীর আরাফাতের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়। গত ২৯ সেপ্টেম্বর নিহত সুজনের রাজনৈতিক বড় ভাই সুজন হোসেন (৪২) বাদী হয়ে কুষ্টিয়া মডেল থানায় মামলা করেন। মামলায় মোট ১৫ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে।
নিহত সুজন মালিথা কুষ্টিয়া সদর উপজেলার টাকিমারা গ্রামের ইসমাইল মালিথার ছেলে।
ঢাকা/কাঞ্চন/বকুল