সরকারের পক্ষ থেকে চট্টগ্রাম বন্দরের মাশুল বাড়ানোর ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। বন্দর কর্মকর্তারা বলছেন, বর্ধিত মাশুল কার্যকর হলে গড়ে ৪০ শতাংশ কম–বেশি হারে বন্দরের আয় বাড়বে। অর্থাৎ বাস্তবে মাশুলের গড় হার বাড়বে ৪০ শতাংশ। এ ঘোষণা এমন সময়ে এল, যখন বাংলাদেশের ওপর ট্রাম্পের ৩৫ শতাংশ বাড়তি শুল্কের খড়্গ ঝুলছে। দর–কষাকষিতে বাংলাদেশ কতটা সফল হবে, তা এখনো পরিষ্কার নয়। এ অবস্থায় চট্টগ্রাম বন্দরের সব ধরনের মাশুল বাড়ানোর সিদ্ধান্তে আপত্তি জানিয়েছেন বন্দর ব্যবহারকারী ব্যবসায়ীরা।

তৈরি পোশাকশিল্পের সংগঠন বিজিএমইএর নেতাদের বক্তব্য হলো ব্যবহারকারীদের সঙ্গে চূড়ান্ত আলোচনা ছাড়াই বন্দরের মাশুল বাড়ানোর পদক্ষেপ যুক্তিযুক্ত হতে পারে না। বাড়তি মাশুল রপ্তানি খাতে প্রতিযোগিতা সক্ষমতা পিছিয়ে দেবে। অর্থনীতিবিদেরাও অনুরূপ মত পোষণ করেন।

চট্টগ্রাম বন্দরের মাশুল আদায়ের প্রধান দুটি খাত হলো জাহাজ ও পণ্য পরিবহনের সেবা বাবদ। বন্দরের হিসাব অনুযায়ী, বিদ্যমান মাশুলের হার অনুযায়ী ২৩-২৪ অর্থবছরের এই দুই খাতে মাশুল আদায় হয়েছে ৩ হাজার ৯১২ কোটি টাকা। বর্ধিত মাশুল থেকে বন্দরের দেড় হাজার কোটি টাকা বাড়তি আয় হবে।

সারা দেশের সমুদ্রপথে কনটেইনার পরিবহনের ৯৯ শতাংশ ও মোট আমদানি–রপ্তানি পণ্যের ৮৭ শতাংশ চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে আনা-নেওয়া হয়। চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের দাবি, মাশুল বাড়ানোর পরও বিশ্বের অন্যান্য বন্দরের তুলনায় কম। বিষয়টি কেবল মাশুলের হার দিয়ে বিবেচনা করলে হবে না। সেবার মানও দেখতে হবে। চট্টগ্রাম বন্দরে যেখানে একটি জাহাজ থেকে পণ্য খালাস করতে অপেক্ষার সময়সহ পাঁচ–ছয় দিন লেগে যায়, অন্যান্য বন্দরে সেটি এক দিনে খালাস হয়। স্বল্প সময়ে কনটেইনার খালাস করা গেলে মাশুল বাড়ালেও ব্যবসায়ীদের ওপর বাড়তি চাপ পড়ে না। সে ক্ষেত্রে সরকারের উচিত ছিল আগে সেবার মান বাড়ানো, এরপর মাশুল বাড়ানোর কথা চিন্তা করা।

দ্বিতীয়ত সরকারকে যেকোনো সিদ্ধান্ত নিতে হবে অংশীজনদের সঙ্গে আলোচনা করে। গত ২ জুন নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় ব্যবহারকারীদের সঙ্গে মাশুল নিয়ে এক দফা আলোচনা করে, যেখানে সংশ্লিষ্টদের পক্ষ থেকে সর্বোচ্চ ১০ থেকে ২০ শতাংশ মাশুল বাড়ানোর প্রস্তাব দেওয়া হয়। এরপর তাদের সঙ্গে দ্বিতীয় দফা আলোচনা না করেই মাশুল বাড়ানোর সিদ্ধান্ত কতটা যৌক্তিক, সেই প্রশ্নও উঠেছে।

বন্দর কর্তৃপক্ষ বলছে, ১৯৮৬ সালের পর এই প্রথম মাশুল বাড়ানো হচ্ছে। তাদের এই বক্তব্যের মধ্যেও শুভংকরের ফাঁকি আছে। মাশুল নির্ধারিত হয় ডলারের হিসাবে, অর্থাৎ ১৯৮৬ সালে ডলারের দর ছিল ৩০ টাকা ৪১ পয়সা, বর্তমান দর ১২২ টাকা। সে ক্ষেত্রে সরকার ঘোষণা দিয়ে না বাড়ালেও ব্যবহারকারীদের চার গুণ মাশুলই গুনতে হচ্ছে।

উল্লেখ্য, চট্টগ্রাম বন্দরের কিছু টার্মিনাল পরিচালনার দায়িত্ব বিদেশি কোম্পানি ডিপি ওয়ার্ল্ডকে দেওয়ার উদ্যোগ নেয় সরকার। প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস নিজেও চট্টগ্রাম বন্দর পরিদর্শনকালে বিদেশি কোম্পানিকে দেওয়ার পক্ষে জোরালো যুক্তি তুলে ধরেন।

ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, বিদেশি কোম্পানিকে সুবিধা দেওয়ার জন্যই মাশুল বাড়ানো হয়েছে। সাধারণত যে কোম্পানি টার্মিনাল পরিচালনার দায়িত্ব পায়, তারা মোটা অঙ্কের বিনিয়োগ করে। কিন্তু চট্টগ্রাম বন্দরের যে টার্মিনালটি নিয়ে ডিপি ওয়ার্ল্ডের সঙ্গে আলোচনা হচ্ছে, সেটি স্বয়ংসম্পূর্ণ, নতুন করে বিনিয়োগের প্রয়োজন নেই। অন্তর্বর্তী সরকার বন্দরের বিষয়ে যে সিদ্ধান্তই নিক না কেন, সেটা হওয়া উচিত রাজনৈতিক দল ও ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আলোচনার ভিত্তিতে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ব যবস য় দ র সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

রোজার আগেই নির্বাচন, এরপর আগের কাজে ফিরে যাবেন

অন্তর্বর্তী সরকার সময়মতো ও বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন আয়োজনের জন্য অঙ্গীকারবদ্ধ বলে উল্লেখ করেছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেছেন, আগামী ফেব্রুয়ারিতে পবিত্র রমজানের আগেই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচনের পর তিনি তাঁর আগের কাজে ফিরে যাবেন।

আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ব্যবস্থাপনা পরিচালক ক্রিস্টালিনা জর্জিয়েভাকে এসব কথা বলেছেন প্রধান উপদেষ্টা। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ওয়াশিংটন থেকে ভিডিও ফোনকলে অধ্যাপক ইউনূসের সঙ্গে কথা বলেন জর্জিয়েভা।

এ সময় তাঁরা বাংলাদেশের চলমান অর্থনৈতিক সংস্কার, আঞ্চলিক পরিস্থিতি এবং আগামী ফেব্রুয়ারিতে সাধারণ নির্বাচনের পূর্ববর্তী চ্যালেঞ্জ নিয়ে আলোচনা করেন।

আলোচনায় প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বের ভূয়সী প্রশংসা করেন ক্রিস্টালিনা জর্জিয়েভা। তিনি বলেন, অধ্যাপক ইউনূস দায়িত্ব গ্রহণের পর বাংলাদেশের অর্থনীতি উল্লেখযোগ্যভাবে ঘুরে দাঁড়িয়েছে এবং এই কৃতিত্ব তাঁর নিজের।

অর্থনীতির সংকটকালীন পরিস্থিতি স্মরণ করে আইএমএফ প্রধান বলেন, ‘আপনার অর্জন আমাকে মুগ্ধ করেছে। অল্প সময়ে আপনি অনেক কিছু করেছেন। যখন অবনতির ঝুঁকি অত্যন্ত বেশি ছিল, তখন আপনি দেশের দায়িত্ব নিয়েছেন। আপনি সঠিক সময়ে সঠিক ব্যক্তি।’

ক্রিস্টালিনা জর্জিয়েভা বিশেষভাবে বৈদেশিক মুদ্রা বাজারের স্থিতিশীলতা এবং রিজার্ভ পুনরুদ্ধারের জন্য সরকারের সাহসী পদক্ষেপ, বাজারভিত্তিক বিনিময় হার প্রবর্তনের প্রশংসা করেন।

অধ্যাপক ইউনূস বাংলাদেশের এক সংকটময় সময়ে আইএমএফ প্রধানের অবিচল সহায়তার জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে বলেন, ‘চমৎকার সহায়তার জন্য ধন্যবাদ।’ তিনি স্মরণ করিয়ে দেন, গত বছর নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে তাঁদের প্রথম সাক্ষাৎ বাংলাদেশের অর্থনীতি পুনরুদ্ধারের পথ সুগম করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিল।

কথোপকথনে আইএমএফ প্রধান অভ্যন্তরীণ রাজস্ব আয় বৃদ্ধি এবং ব্যাংকিং খাতে গভীর সংস্কার বাস্তবায়নের ওপর গুরুত্বারোপ করেন। তিনি বলেন, ‘শক্ত অবস্থানে থাকতে হলে সংস্কার অনিবার্য। এটি বাংলাদেশের ইতিহাসের এক অমূল্য মুহূর্ত।’

অধ্যাপক ইউনূস জানান, তাঁর সরকার ইতিমধ্যে ব্যাংকিং খাত পুনর্গঠন এবং রাজস্ব সংগ্রহ জোরদারের জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। তিনি বলেন, ‘আমরা এক বিধ্বস্ত ও সম্পূর্ণ ভেঙে পড়া অর্থনীতি উত্তরাধিকার সূত্রে পেয়েছি। কিছু ব্যক্তি আক্ষরিক অর্থে ব্যাগভর্তি টাকা ব্যাংক থেকে নিয়ে পালিয়ে গেছে।’

এ ছাড়া আঞ্চলিক পরিস্থিতি নিয়েও আলোচনা হয়। এর মধ্যে ছিল নেপালে চলমান যুব আন্দোলন এবং আসিয়ানভুক্তির জন্য বাংলাদেশের আকাঙ্ক্ষা। অধ্যাপক ইউনূস আঞ্চলিক কানেক্টিভিটি জোরদারের লক্ষ্যে ঢাকার বৃহৎ অবকাঠামো উদ্যোগ—যেমন নতুন বন্দর ও টার্মিনাল প্রকল্প—সম্পর্কেও অবহিত করেন।

আলোচনাকালে অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ এবং অর্থসচিব খায়রুজ্জামান মজুমদার উপস্থিত ছিলেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ফের রিজার্ভ ৩১ বিলিয়ন ডলার 
  • আমার স্বামীর উপরে কু-নজর পড়েছে: অঙ্কিতা
  • সম্পদ বৃদ্ধি নিয়ে প্রশ্ন করায় সাংবাদিকের ওপর ক্ষেপলেন ট্রাম্প
  • ‘আমি থানার ওসি, আপনার মোবাইল হ্যাকড হয়েছে’
  • অস্ট্রেলীয় সাংবাদিকের প্রশ্নে কেন চটে গেলেন ট্রাম্প, আলবানিজের কাছে নালিশেরও হুমকি দিলেন
  • কালিয়াকৈরে এক মাসে ২০ ডাকাত গ্রেপ্তার 
  • বাঁশির সুরে বিরহের কষ্ট ভুলতে চান রিকশাচালক শফিকুল
  • রোজার আগেই নির্বাচন, এরপর আগের কাজে ফিরে যাবেন
  • ট্রেন থেকে পড়ে ৮ দিন ধরে হাসপাতালে ছেলে, ফেসবুকে ছবি দেখে ছুটে এলেন মা
  • ভাড়া বাসায় একা থাকতেন বৃদ্ধা, তার অর্ধগলিত লাশ উদ্ধার