ন্যায়পরায়ণ বিচারক হওয়ার স্বপ্ন ছিল জোবায়ের ওমর খানের (২১)। রাজশাহী, চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ পেয়েও তিনি ভর্তি হন একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগে। তবে এর আগেই গুলিতে ঝাঁঝরা হয়ে যায় তাঁর সব স্বপ্ন।

গত বছরের ৫ আগস্ট রাজধানীর যাত্রাবাড়ী এলাকায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে গুলিবিদ্ধ হয়ে প্রাণ হারান এই স্বপ্নবাজ তরুণ। পরিবার ও কয়েকজন প্রত্যক্ষদর্শীর দাবি, ওই দিন পুলিশের এলোপাতাড়ি গুলিতে নিহত হন জোবায়ের।

জোবায়ের ওমর ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবা উপজেলার সৈয়দাবাদ গ্রামের জাহাঙ্গীর আহমেদ খানের ছেলে ও বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালসের (বিইউপি) দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র ছিলেন। তাঁর বাবা জাহাঙ্গীর আহমেদ খান সুপ্রিম কোর্টের ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল। তাঁরা সপরিবারে নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জ উপজেলার দক্ষিণ কদমতলীতে বসবাস করেন। দুই ভাই ও এক বোনের মধ্যে সবার ছোট ছিলেন জোবায়ের।

গত রোববার বিকেলে জাহাঙ্গীর আহমেদের সঙ্গে এই প্রতিবেদকের কথা হয়। তিনি প্রথম আলোকে জানান, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শুরু থেকেই সক্রিয় ছিলেন জোবায়ের। তাঁর ছেলে মিরপুরে বিইউপির শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে সমন্বয়কারীর দায়িত্বে ছিলেন। তিনি সবাইকে জড়ো করে আন্দোলনস্থলে নিয়ে যেতেন। শুরুতে জোবায়েরকে আন্দোলনে যেতে বাধা দিত পরিবার। বলা হয়েছিল জীবনের ঝুঁকির কথা। তবে তাঁর একটাই কথা ছিল, আন্দোলনে না গেলে বন্ধুদের রক্তের সঙ্গে বেইমানি করা হবে। আন্দোলনে তাঁর অনেক বন্ধু হতাহত হচ্ছে। এ অবস্থায় ঘরে বসে থাকা ঠিক হবে না। দেশজুড়ে একের পর এক প্রাণহানিতে জোবায়ের আরও বেশি আবেগতাড়িত হয়ে পড়েন। মনে জেদ চেপে বসে। সেই থেকে প্রতিদিন সকালে বেরিয়ে রাতে বাসায় ফিরতেন।

আন্দোলনের একপর্যায়ে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ হয়ে গেলে জোবায়েরের আন্দোলনে যোগদান বন্ধ হয়নি জানিয়ে তাঁর বাবা বলেন, ৫ আগস্ট সকালে নাশতা খেয়ে বাড়ি থেকে বের হয় জোবায়ের। বেলা দুইটার দিকে দনিয়া কলেজ থেকে শাহবাগ মোড়ের উদ্দেশে একটি মিছিলে রওনা হন তিনি। যাত্রাবাড়ী থানার দক্ষিণ দিক দিয়ে পার হওয়ার সময় মিছিলে এলোপাতাড়ি গুলি করে পুলিশ। এতে আহত হন তিনি। পরে তাঁকে উদ্ধার করে স্যার সলিমুল্লাহ (মিটফোর্ড) মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে সন্ধ্যা ছয়টার দিকে তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসক।

জাহাঙ্গীর জানান, তাঁর ছেলের ডান হাতের বগলের নিচ দিয়ে দুটি গুলি বের হয়ে যায়। এতে প্রচুর রক্তক্ষরণ হয়েছিল এবং হাসপাতালে নিতে বিলম্ব হওয়ায় জোবায়েরের মৃত্যু হয়। কসবার সৈয়দাবাদ গ্রামের বাড়িতে তাঁর লাশটি দাফন করা হয়েছে।

জাহাঙ্গীর আলম আক্ষেপ করে বলেন, ‘জোবায়ের রাজশাহী ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পেয়েছিল। কিন্তু পরিবারের সবার মতো এলএলবি পড়তে চেয়েছিল। তাই বিইউপিতে এলএলবিতে ভর্তি হয়েছিল। আইনজীবী অথবা ন্যায়বিচারক হতে চেয়েছিল। কিন্তু গুলিতে তার স্বপ্নের সমাপ্তি ঘটল। জুলাই আন্দোলনে সব শহীদের স্মৃতি ধরে রাখা প্রয়োজন।’

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: পর ব র

এছাড়াও পড়ুন:

ন্যায়বিচারক হতে চেয়েছিলেন জোবায়ের, ৫ আগস্ট যাত্রাবাড়ীতে ঝাঁঝরা হয়ে যায় সব স্বপ্ন

ন্যায়পরায়ণ বিচারক হওয়ার স্বপ্ন ছিল জোবায়ের ওমর খানের (২১)। রাজশাহী, চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ পেয়েও তিনি ভর্তি হন একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগে। তবে এর আগেই গুলিতে ঝাঁঝরা হয়ে যায় তাঁর সব স্বপ্ন।

গত বছরের ৫ আগস্ট রাজধানীর যাত্রাবাড়ী এলাকায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে গুলিবিদ্ধ হয়ে প্রাণ হারান এই স্বপ্নবাজ তরুণ। পরিবার ও কয়েকজন প্রত্যক্ষদর্শীর দাবি, ওই দিন পুলিশের এলোপাতাড়ি গুলিতে নিহত হন জোবায়ের।

জোবায়ের ওমর ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবা উপজেলার সৈয়দাবাদ গ্রামের জাহাঙ্গীর আহমেদ খানের ছেলে ও বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালসের (বিইউপি) দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র ছিলেন। তাঁর বাবা জাহাঙ্গীর আহমেদ খান সুপ্রিম কোর্টের ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল। তাঁরা সপরিবারে নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জ উপজেলার দক্ষিণ কদমতলীতে বসবাস করেন। দুই ভাই ও এক বোনের মধ্যে সবার ছোট ছিলেন জোবায়ের।

গত রোববার বিকেলে জাহাঙ্গীর আহমেদের সঙ্গে এই প্রতিবেদকের কথা হয়। তিনি প্রথম আলোকে জানান, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শুরু থেকেই সক্রিয় ছিলেন জোবায়ের। তাঁর ছেলে মিরপুরে বিইউপির শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে সমন্বয়কারীর দায়িত্বে ছিলেন। তিনি সবাইকে জড়ো করে আন্দোলনস্থলে নিয়ে যেতেন। শুরুতে জোবায়েরকে আন্দোলনে যেতে বাধা দিত পরিবার। বলা হয়েছিল জীবনের ঝুঁকির কথা। তবে তাঁর একটাই কথা ছিল, আন্দোলনে না গেলে বন্ধুদের রক্তের সঙ্গে বেইমানি করা হবে। আন্দোলনে তাঁর অনেক বন্ধু হতাহত হচ্ছে। এ অবস্থায় ঘরে বসে থাকা ঠিক হবে না। দেশজুড়ে একের পর এক প্রাণহানিতে জোবায়ের আরও বেশি আবেগতাড়িত হয়ে পড়েন। মনে জেদ চেপে বসে। সেই থেকে প্রতিদিন সকালে বেরিয়ে রাতে বাসায় ফিরতেন।

আন্দোলনের একপর্যায়ে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ হয়ে গেলে জোবায়েরের আন্দোলনে যোগদান বন্ধ হয়নি জানিয়ে তাঁর বাবা বলেন, ৫ আগস্ট সকালে নাশতা খেয়ে বাড়ি থেকে বের হয় জোবায়ের। বেলা দুইটার দিকে দনিয়া কলেজ থেকে শাহবাগ মোড়ের উদ্দেশে একটি মিছিলে রওনা হন তিনি। যাত্রাবাড়ী থানার দক্ষিণ দিক দিয়ে পার হওয়ার সময় মিছিলে এলোপাতাড়ি গুলি করে পুলিশ। এতে আহত হন তিনি। পরে তাঁকে উদ্ধার করে স্যার সলিমুল্লাহ (মিটফোর্ড) মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে সন্ধ্যা ছয়টার দিকে তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসক।

জাহাঙ্গীর জানান, তাঁর ছেলের ডান হাতের বগলের নিচ দিয়ে দুটি গুলি বের হয়ে যায়। এতে প্রচুর রক্তক্ষরণ হয়েছিল এবং হাসপাতালে নিতে বিলম্ব হওয়ায় জোবায়েরের মৃত্যু হয়। কসবার সৈয়দাবাদ গ্রামের বাড়িতে তাঁর লাশটি দাফন করা হয়েছে।

জাহাঙ্গীর আলম আক্ষেপ করে বলেন, ‘জোবায়ের রাজশাহী ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পেয়েছিল। কিন্তু পরিবারের সবার মতো এলএলবি পড়তে চেয়েছিল। তাই বিইউপিতে এলএলবিতে ভর্তি হয়েছিল। আইনজীবী অথবা ন্যায়বিচারক হতে চেয়েছিল। কিন্তু গুলিতে তার স্বপ্নের সমাপ্তি ঘটল। জুলাই আন্দোলনে সব শহীদের স্মৃতি ধরে রাখা প্রয়োজন।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ