ইসির প্রস্তাব বাতিল করে আশাশুনিকে স্বতন্ত্র নির্বাচনী আসন করার দাবিতে মানববন্ধন
Published: 6th, August 2025 GMT
আশাশুনি ও শ্যামনগর উপজেলাকে একীভূত করে সংসদীয় সাতক্ষীরা-৪ আসন করার প্রস্তাব বাতিল ও আশাশুনি উপজেলাকে স্বতন্ত্র আসন করার দাবিতে মানববন্ধন হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার বিকেল চারটার দিকে সচেতন নাগরিক সমাজের ব্যানারে আশাশুনি উপজেলা পরিষদ সড়কে এ কর্মসূচি পালিত হয়।
আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে সাতক্ষীরার দুটি আসনসহ দেশের ৩৯টি সংসদীয় আসনের সীমানা পুনর্নির্ধারণের খসড়া প্রকাশ করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। ৩০ জুলাই এ খসড়া প্রকাশ করা হয়। পুনর্বিন্যাস করার আগে আশাশুনি ছিল সংসদীয় আসন সাতক্ষীরা-৩ এর মধ্যে। আশাশুনির ১১টি ইউনিয়ন, দেবহাটা উপজেলার পাঁচটি ও কালীগঞ্জ উপজেলার চারটিসহ মোট ২০টি ইউনিয়ন নিয়ে ছিল সাতক্ষীরা-৩ আসন। পুনর্বিন্যাসের পর শ্যামনগর উপজেলার ১১টি ইউনিয়ন, ১টি পৌরসভা ও আশাশুনির ১১টি আসন নিয়ে সংসদীয় আসন সাতক্ষীরা-৪ গঠনের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
মানববন্ধনে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ অংশ নেন। এতে বক্তব্য দেন সাতক্ষীরা লইয়ার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি আবদুস সোবহান, শোভনালী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবু বক্কর সিদ্দিক, উপজেলা জামায়াতের নায়েবে আমির নুরুল আবছার মুরতাজা, আশাশুনি বাজার বণিক সমিতির সভাপতি এ বি এম আলমগীর, সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসেন, আশাশুনি প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি জি এম মুজিবুর রহমান প্রমুখ।
বক্তারা বলেন, আশাশুনি চারটি ও শ্যামনগর তিনটি দ্বীপে বিভক্ত। যোগাযোগব্যবস্থা খুবই নাজুক। আশাশুনির সঙ্গে শ্যামনগরের সড়কপথে সরাসরি কোনো যোগাযোগ নেই। আশাশুনি থেকে শ্যামনগর যেতে হলে কালীগঞ্জ উপজেলার ওপর দিয়ে যেতে হয়। না হলে নদী পার হয়ে যাতায়াত করতে হয়। নদীর ওপর নেই কোনো সেতু। বিচ্ছিন্ন ও দূরবর্তী দুটি উপজেলা নিয়ে আসনবিন্যাস অকল্পনীয়। জনকল্যাণের কথা বিবেচনা করলে আশাশুনিকে কখনো শ্যামনগরের সঙ্গে একীভূত করা যায় না। আশাশুনিকে স্বতন্ত্র আসন না করা হলে আশাশুনির ভোটাররা ভোট বর্জন করবেন এমন প্রচার পাড়া–মহল্লায় শোনা যাচ্ছে দাবি করে ন্যায্য জনদাবির প্রতি সমর্থনের জোর আবেদন জানানো হয়।
বক্তারা অবিলম্বে আশাশুনিকে সাতক্ষীরা-৪ আসনে একীভূত করার প্রস্তাব বাতিল করার দাবির পাশাপাশি আশাশুনি ২০০৮ সালের আগে যে স্বতন্ত্র আসন ছিল, তা বহাল করার দাবি জানান।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: র প রস ত ব স বতন ত র শ য মনগর কর র দ ব উপজ ল র য় আসন
এছাড়াও পড়ুন:
কেরানীগঞ্জে তিন ফসলি জমি অধিগ্রহণ না করার দাবিতে কৃষকদের মানববন্ধন
অর্থনৈতিক অঞ্চলের জন্য ঢাকার কেরানীগঞ্জে তিন ফসলি জমি অধিগ্রহণ চেষ্টার প্রতিবাদে মানববন্ধন করেছেন কৃষক ও এলাকাবাসী। আজ সোমবার বিকেলে ঢাকা-নবাবগঞ্জ মহাসড়কের কেরানীগঞ্জের নতুন সোনাকান্দা পেট্রলপাম্প সড়ক এলাকায় এ মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। এতে তিন ফসলি জমির কয়েক শ মালিক ও এলাকাবাসী অংশগ্রহণ করেন।
সোনাকান্দা গ্রামের কৃষক আমানউল্লাহ বলেন, ‘আমি ৩৫ বছর ধরে কৃষিকাজ করছি। সোনাকান্দা মৌজায় আমার আট বিঘা তিন ফসলি জমি রয়েছে। বছরজুড়েই সেখানে ফসল ও শাকসবজি চাষ করি। আমাদের ওই সব ফসলি জমি অধিগ্রহণের পাঁয়তারা চলছে। যদি এই জমি অধিগ্রহণ করা হয়, তাহলে পুরো কেরানীগঞ্জের ক্ষতি হবে। আমরা কেরানীগঞ্জবাসীর সবজির চাহিদা মিটিয়ে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায়ও বিক্রি করি। সেই আয় দিয়ে আমাদের ঘর–সংসার চলে। জমি চলে গেলে আমরা এই বয়সে কী করে খাব? এর আগেও বিসিক শিল্পনগরী ও কেমিক্যাল পার্কের নামে আমাদের জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে। এভাবে কেরানীগঞ্জের ফসলি জমি হারিয়ে যাচ্ছে।’
আরেক কৃষক সোবহান আলী (৫৭) বলেন, ‘আমগো গ্রামের হগলতে চাষবাস কইরা খায়। ঢাকা থেইকা লুক আইসা আমগো জমির শাকসবজি কিনা লয়া যায়। জমি নিয়া (অধিগ্রহণ) গেলে আমরা সবাই না খাইয়া মরুম।’
সোনাকান্দা গ্রামের গৃহবধূ জুলেখা বেগম (৬৫) তাঁর দুই নাতিকে নিয়ে মানববন্ধনে দাঁড়িয়ে ছিলেন। তিনি বলেন, ‘এই গ্রামে আমাদের চার বিঘা জমি রয়েছে। আমার বাবা কৃষিকাজ করতেন। বিয়ের পর দেখেছি আমার স্বামীও কৃষিকাজ করেছেন। এখন আমার ছেলেও কৃষিকাজ করে খায়। আমার পরিবারের তিন পুরুষ এই গ্রামে কৃষিকাজ করে সংসার চালিয়েছে। আমাদের এলাকায় ফসলি জমি নষ্ট করে কোনো শিল্পকারখানা চাই না। আমাদের গ্রামের মাটি খুবই শক্তিশালী। সারা বছরই এখানে ফসল ফলে। আমরা আমাদের ভিটামাটি হারাতে চাই না।’
মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, অতীতে সরকার ঝিলমিল আবাসন প্রকল্প, ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার, বিসিক শিল্পনগরী, পানগাঁও পোর্ট, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন প্রকল্পের নামে কেরানীগঞ্জে বিশাল আকারের কৃষিজমি অধিগ্রহণ করেছে। এ অবস্থায় আবারও যদি জমি অধিগ্রহণ করা হয়, তাহলে অনেকেই ভিটামাটি হারা হবেন।
সোনাকান্দা গ্রামের বাসিন্দা কলেজশিক্ষক গোলাম হোসেন বলেন, ‘ঢাকার আশপাশে অনেক অনাবাদি জমি আছে। সেখানে এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করা উচিত। আমাদের অনুরোধ এই প্রকল্প কেরানীগঞ্জ ছাড়া অন্য কোথাও বাস্তবায়ন করা হোক।’
এ বিষয়ে কেরানীগঞ্জ রাজস্ব সার্কেল সহকারী কমিশনার (ভূমি) জান্নাতুল মাওয়া জানান, কর্মসংস্থান, দ্রুত দারিদ্র্য বিমোচন ও পরিকল্পিত শিল্পায়নের লক্ষ্যে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষের (বেজা) অধীন কেরানীগঞ্জে অর্থনৈতিক অঞ্চল নির্মাণের জন্য প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় থেকে প্রস্তাবনা এসেছে। এই বিষয়ে আজ বিকেলে প্রকল্প পরিচালকের সঙ্গে কেরানীগঞ্জের বিসিক শিল্পনগরীতে বৈঠক হয়। তিনি বলেন, জমি অধিগ্রহণ অনেক দূরের কথা। প্রকল্পটি বাস্তবায়নের বিষয়ে এখনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্তই গ্রহণ করা হয়নি। চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের পর পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে। এতে গ্রামবাসীর আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই।