প্রতারণামূলক বার্তা ঠেকাতে নতুন নিরাপত্তা–সুবিধা চালু করছে হোয়াটসঅ্যাপ
Published: 6th, August 2025 GMT
ব্যবহারকারীদের প্রতারণামূলক বার্তা থেকে রক্ষা করতে একাধিক নতুন নিরাপত্তা–সুবিধা পরীক্ষামূলকভাবে চালু করছে হোয়াটসঅ্যাপ। গতকাল মঙ্গলবার এক ঘোষণায় মেটার মালিকানাধীন মেসেজিং অ্যাপটি জানিয়েছে, প্রতারণা চক্রের সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকার অভিযোগে ৬ লাখ ৮০ হাজারের বেশি অ্যাকাউন্ট বন্ধ করা হয়েছে। এসব অ্যাকাউন্ট থেকে বিশ্বজুড়ে নানা ধরনের ভুয়া বার্তা পাঠিয়ে প্রতারণা করা হচ্ছিল। নতুন নিরাপত্তা–সুবিধাগুলো ব্যক্তিগত ও গ্রুপ চ্যাটে প্রতারণামূলক বার্তা শনাক্তে সহায়তা করবে।
নিরাপত্তা–সুবিধাগুলো চালু হলে কোনো অপরিচিত ব্যক্তি ব্যবহারকারীদের নতুন কোনো গ্রুপে যুক্ত করলেই হোয়াটসঅ্যাপ একটি ‘সেফটি ওভারভিউ’ দেখাবে। এতে গ্রুপ সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য প্রদর্শন করা হবে। ফলে ব্যবহারকারীর কাছে গ্রুপটি পরিচিত মনে হলে তিনি চ্যাট খুলে বিস্তারিত দেখতে পারবেন। অন্যথা, স্বয়ংক্রিয়ভাবে গ্রুপের নোটিফিকেশন বন্ধ থাকবে। ব্যবহারকারী আগ্রহ প্রকাশ না করা পর্যন্ত কোনো বার্তা দেখানো হবে না। এর ফলে ব্যবহারকারীদের অজান্তে কোনো সন্দেহজনক গ্রুপে যুক্ত হওয়া ও বিভ্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা কমবে।
ব্যক্তিগত চ্যাটেও প্রতারণা প্রতিরোধে বাড়তি সতর্কতা যুক্ত করছে হোয়াটসঅ্যাপ। অনেক প্রতারক প্রথমে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম বা অন্য ওয়েবসাইটে পরিচিত হয়ে বিশ্বাসযোগ্যতা অর্জন করেন। এরপর হোয়াটসঅ্যাপে প্রতারণামূলক বিভিন্ন বার্তা পাঠান। নতুন সুবিধার মাধ্যমে ব্যবহারকারী যদি কন্ট্যাক্ট লিস্টে না থাকা কারও সঙ্গে চ্যাট শুরু করেন, তাহলে হোয়াটসঅ্যাপ সেই ব্যক্তির সম্পর্কে কিছু প্রাসঙ্গিক তথ্য দেখাবে।
এক ব্লগ বার্তায় হোয়াটসঅ্যাপ জানিয়েছে, প্রতারণা প্রতিরোধে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রতিষ্ঠান ওপেনএআইয়ের সঙ্গে যৌথভাবে কাজ করছে হোয়াটসঅ্যাপ। সম্প্রতি কম্বোডিয়াভিত্তিক প্রতারক চক্রকে শনাক্ত করে কার্যক্রম বন্ধে পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। ওই চক্র চ্যাটজিপিটি ব্যবহার করে প্রতারণামূলক বিভিন্ন বার্তা পাঠিয়ে অর্থ সংগ্রহ করত।
সূত্র: টেক ক্রাঞ্চ
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: হ য় টসঅ য প ব যবহ র
এছাড়াও পড়ুন:
বৈষম্যহীন সমাজ গড়তে শিশু–কিশোরদের মানসিক সুস্থতা জরুরি কেন
শিশু–কিশোরদের মানসিক স্বাস্থ্যে আমরা আদতে কতটা গুরুত্ব দিচ্ছি? এই প্রশ্নের উত্তরের আগে আরেকটি প্রশ্ন ছুড়ে দিই। মানসিক স্বাস্থ্য মানে কী? অধিকাংশই বলবেন, ‘মানসিক রোগ না থাকা।’ কিন্তু এটি আরও অনেক বড় বিষয়। এটি ব্যক্তির আবেগীয়, মানসিক ও সামাজিকভাবে ভালো থাকা বোঝায়, যা প্রভাবিত করে তার চিন্তা, অনুভূতি ও আচরণকে। অন্যের সঙ্গে সম্পর্ক, চাপ মোকাবিলার দক্ষতা এবং সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতাও এর সঙ্গে সম্পর্কিত।
শৈশবের পরের ধাপটাই কৈশোরকাল। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, বয়ঃসন্ধিকাল ১০ বছর বয়স থেকে শুরু করে ১৯ বছর পর্যন্ত চলে। সময়টা অফুরান প্রাণশক্তি, উদ্দাম আবেগ আর সীমাহীন সম্ভাবনার। সবকিছুতে কৌতূহল, শরীরে নতুন অনুভূতির রোমাঞ্চ, স্বাধীনচেতা মনোভাব অথবা বিদ্যমান নিয়মরীতি নিয়ে প্রশ্ন তোলা—এ রকম আরও অনেক বৈশিষ্ট্য কৈশোরকালকে করে তোলে অনন্য।
‘আমি কে, কী চাই, কীভাবে দেখব আমার জীবন’—আত্মপরিচয়ের এই অনুসন্ধানের পথ ধরেই কৈশোরের চারিত্রিক বিকাশ ঘটতে থাকে। মস্তিষ্কের দ্রুত স্নায়বিক বিকাশ ও হরমোনের প্রভাবে শরীরের যেমন পরিবর্তন হয়, তেমনই মন দ্রুত বদলায়। এ বিকাশ নির্ভর করে তার জিনগত বৈশিষ্ট্য, পারিবারিক পরিবেশ, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও চারপাশের ওপর।
আরও পড়ুনমন ও মস্তিষ্কের ১২টি গোপন সত্য, আপনি কয়টা মানেন?০১ সেপ্টেম্বর ২০২৫সাফল্য ও ঝুঁকির দ্বন্দ্বশিশু–কিশোরের সাফল্য অনেকাংশেই নির্ভর করে মানসিক সুস্থতার ওপর। আবার প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের চিন্তাপদ্ধতি, আবেগীয় রূপ ও সামাজিক ভূমিকা অনেকাংশেই নির্ধারিত হয় শৈশব ও কৈশোরকালীন মনের যত্নের ভিত্তিতে। আবেগের প্রবলতা, অনুসন্ধিৎসু মন, নিজেকে প্রকাশের চেষ্টা এ সময়কে যেমন বৈশিষ্ট্যমণ্ডিত করে, তেমনই অপরিপক্বতা ও ঝুঁকি নেওয়ার প্রবণতা এই সময়কে করে তোলে নাজুক।
সারা বিশ্বে বর্তমান প্রজন্ম বেড়ে উঠছে এক পরিবর্তনশীল ও অস্থির সময়ের সন্ধিক্ষণে। ভোগবাদী ব্যবস্থা নির্ধারণ করছে দৈনন্দিন জীবনযাপন, ইচ্ছা-অনিচ্ছা ও সম্পর্ক। শক্তি আর প্রতিযোগিতার খেলায় সবাই জয়ী হতে চাইছে। আমদের ভাবনা, দৃষ্টিভঙ্গি, চিন্তাপদ্ধতি, এমনকি অনুভূতিও নিয়ন্ত্রণ করছে মুঠোফোন বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা।
শিশুরা বাস্তব জগতের বদলে মোহাচ্ছন্ন হয়ে বেড়ে উঠছে ভার্চ্যুয়াল জগতের অবাস্তব স্বপ্নমায়ায়। ছোটবেলা থেকেই পরিচিত হচ্ছে সাইবার ক্রাইম, সহিংস ভিডিও গেম, মাদকাসক্তি ও আত্মহত্যার মতো বিপজ্জনক বিষয়গুলোর সঙ্গে।
বর্তমান সময় শিশু–কিশোরদের মানসিক বিকাশে নতুন চ্যালেঞ্জ তৈরি করছে প্রযুক্তি ও সমাজ। জীবনকে সহজ করার নামে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআইকে মানুষের জায়গায় প্রতিস্থাপন করা হচ্ছে। এতে মানুষ থেকে দ্রুত বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ছে মানুষ। শিশু–কিশোরেরা বন্ধুদের সময় দেওয়ার বদলে সময় কাটাচ্ছে এআই বা অনলাইন গেমে। এতে সামাজিক মেলামেশা ও খেলাধুলা থেকে যে আবেগীয় গঠন ও জীবনদক্ষতা তৈরি হওয়ার কথা, তা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বিচ্ছিন্নতা ও আত্মকেন্দ্রিকতায়। মানসিক রোগের ঝুঁকি উঠতি বয়সে সব সময় বেশি হলেও বর্তমান যুগের এসব উপাদান বাড়তি ঝুঁকি যোগ করছে।
বর্তমান সময় শিশু–কিশোরদের মানসিক বিকাশে নতুন চ্যালেঞ্জ তৈরি করছে প্রযুক্তি ও সমাজ