কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম পৌর এলাকার চান্দিশকরা ও ফাল্গুনকরা গ্রামের আবহ অন্যান্য দিনের তুলনায় আজ কিছুটা ভিন্ন। দুই গ্রামই শোকে স্তব্ধ। গতকাল বুধবার কক্সবাজারে বেড়াতে যাওয়ার পথে সড়ক দুর্ঘটনায় ওই দুই গ্রামের পাঁচ নারী নিহত হন। আজ বৃহস্পতিবার সকালে পৃথক জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে তাঁদের দাফন করা হয়েছে।

কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলার ফাঁসিয়াখালীর ঢালায় চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কে গতকাল মাইক্রোবাসের সঙ্গে যাত্রীবাহী বাসের মুখোমুখি সংঘর্ষে পাঁচজন নিহত হন। তাঁরা চান্দিশকরা গ্রামের বাসিন্দা আমিনুল হক পাটোয়ারীর পরিবারের সদস্য ও শ্বশুরবাড়ির লোকজন। দুর্ঘটনায় আমিনুল হক, তাঁর শিশুসন্তান সাদমান পাটোয়ারী ও শ্যালক শাহেদ মজুমদার গুরুতর আহত হয়েছেন।

নিহত পাঁচজন হলেন আমিনুল হকের মা রুমেনা বেগম (৬০), স্ত্রী ফারজানা মজুমদার (২৮), ছোট বোন কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সাদিয়া হক (২৪), আমিনুল হকের শাশুড়ি পাশের ফাল্গুনকরা গ্রামের রিজওয়ানা ইসলাম (৫০) ও শ্যালিকা চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ফারহানা মজুমদার (২৪)।

গতকাল দিবাগত রাত তিনটার দিকে নিহত পাঁচ নারীর মরদেহ চান্দিশকরা ও ফাল্গুনকরা গ্রামে পৌঁছায়। আজ সকাল ৯টার দিকে ফাল্গুনকরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে আমিনুল হকের শাশুড়ি ও শ্যালিকার জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। আর ১০টার দিকে চান্দিশকরা কেন্দ্রীয় ঈদগাহ মাঠে আমিনুল হকের স্ত্রী, মা ও ছোট বোনকে শেষবিদায় দেন স্বজনসহ এলাকাবাসী। দুই পরিবারের আত্মীয়স্বজনের এমন মৃত্যু মেনে নিতে পারছেন না এলাকাবাসী।

স্বজনদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, পরিবার ও স্বজনদের নিয়ে কক্সবাজারে বেড়াতে যাওয়ার জন্য গত মঙ্গলবার রাতে রাজধানীর উত্তরার বাসা থেকে নিজের অফিসের একটি মাইক্রোবাসে রওনা দেন আমিনুল হক। তিনি নিজে ছিলেন চালকের আসনে। ঢাকা থেকে স্ত্রী-সন্তান এবং শ্যালক ও শ্যালিকাকে গাড়িতে সঙ্গে নেন। মঙ্গলবার দিবাগত রাত তিনটার দিকে চৌদ্দগ্রাম থেকে মা, বোন ও শাশুড়িকে গাড়িতে তোলেন। বুধবার সকাল ৯টার দিকে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের চকরিয়ার ফাঁসিয়াখালীর ঢালা এলাকায় তাঁদের মাইক্রোবাসের সঙ্গে চট্টগ্রামমুখী মারছা পরিবহনের একটি যাত্রীবাহী বাসের সংঘর্ষে ঘটনাস্থলেই পাঁচজন নিহত হন।

আমিনুলের বাবা এনামুল হক বলেন, ‘হঠাৎ আসা অজানা এক ঝড় যেন সবকিছু কেড়ে নিয়েছে আমাদের। নিজ হাতে স্ত্রী, কন্যা আর পুত্রবধূকে শেষবিদায় জানালাম। আমার ছেলে আর নাতি হাসপাতালের বেডে মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছে। এই শোক আমি কীভাবে সইব? ভাবতেই পারছি না, আনন্দ ভ্রমণে গিয়ে আমার পরিবারের সবকিছু এভাবে শেষ হয়ে যাবে।’

আমিনুলের শ্বশুর আবদুল মান্নান মজুমদার বলেন, ‘আমার তো সব শেষ হয়ে গেল। এখন আমি কী নিয়ে বাঁচব? আমার স্ত্রী আর দুই কন্যা কবরে। ছেলেটা চট্টগ্রাম মেডিকেলে এখন মৃত্যুর সঙ্গে যুদ্ধ করছে। নাতি আর জামাতার অবস্থাও ভালো না। আনন্দভ্রমণ এমন বিষাদে পরিণত হবে জানলে আমি কী তাদের যেতে দিতাম?’

আমিনুলের চাচাতো ভাই সুমন পাটোয়ারী বলেন, ‘আমাদের এলাকার মানুষ এর আগে একসঙ্গে এত লাশ দেখেনি। একস্থানে তিনজন, আরেক স্থানে একসঙ্গে দুজনকে শেষবিদায় জানিয়েছি। এমন মৃত্যু এলাকার মানুষ কিছুতেই মেনে নিতে পারছে না। হাসপাতালে যাঁরা আছেন, তাঁদের অবস্থাও সংকটাপন্ন।’

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ফ ল গ নকর চ ন দ শকর পর ব র

এছাড়াও পড়ুন:

উপদেষ্টারা পক্ষপাতদুষ্ট  হয়ে কাজ করছেন: ফখরুল

বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘‘রাজনৈতিক দলকে হাতের খেলনা মনে করছেন কিছু উপদেষ্টা। তারা পক্ষপাতদুষ্ট হয়ে কাজ করছেন। একটি মহলের চক্রান্তে পড়েছেন। এভাবে চললে এ সরকারের ব্যর্থ সরকারের পরিণত হবে।’’ 

বৃহস্পতিবার (৬ নভেম্বর) বিকেল যশোর টাউন হল ময়নদানে স্মরণসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। 

আরো পড়ুন:

‘পদ্মা বাঁচাও’ গণসামবেশে ১৫ নভেম্বর, যোগ দেবেন ফখরুল

এটাই হয়তো আমার শেষ নির্বাচন: মির্জা ফখরুল

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সাবেক সদস্য তরিকুল ইসলামের সপ্তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে স্মরণসভার আয়োজন করা হয়। জেলা বিএনপির সভাপতি সৈয়দ সাবেরুল হক সাবুর সভাপতিত্বে সভায় দলের কেন্দ্রীয় ও জেলা নেতারা উপস্থিত ছিলেন।

সভায় মির্জা ফখরুল আবার বলেন, ‘‘ঐক্যমত কমিশন আলোচনা আর খাওয়া-দাওয়া করেছেন। পূর্বে যে প্রস্তাবনা স্বাক্ষর হয়েছে, সেটাকে ভিন্নভাবে নতুন করে উপস্থাপন করা হচ্ছে। এ সুযোগে কয়েকটি রাজনৈতিক দল নির্বাচন বানচালের চেষ্টা করছে। এ ষড়যন্ত্র জনগণ মানবে না। নির্বাচনের আগে গণভোট হবে না।’’

সভায় তিনি আরো বলেন, ‘‘অনেক রক্তের বিনিময়ে ফ্যাসিস্টের হাত থেকে স্বাধীন হয়েছি। সুযোগ হয়েছে নির্বাচনের মাধ্যমে গণতন্ত্র ফিরে যাওয়ার। এ সুযোগ কোনো মহলের চক্রান্ত বা ষড়যন্ত্রের কারণে বিনষ্ট হতে দিতে পারি না।’’

মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, ‘‘আমরা অনেক দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিয়েছি। এখনো রাস্তায় নামেনি। বিএনপি এই দেশের জনগণের দল, বিএনপিকে অবজ্ঞা করে দেখবেন না। রাজপথে নামলে ফল ভালো হবে না।’’ 
রাজনৈতিক দলগুলোর উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘‘দয়া করে পানি ঘোলা করার চেষ্টা করবেন না। দেশকে অস্থিতিশীলতার দিকে নিয়ে যাবেন না। আপনাদের রাজনৈতিক ফায়দা হাসিলের এ প্রক্রিয়া জনগণ মেনে নেবে না।’’ 

সভায় কেন্দ্রীয় বিএনপির সহধর্ম বিষয়ক সম্পাদক অমলেন্দু দাস অপু, জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য টি এস আইয়ুব, সাবেক দপ্তর সম্পাদক মফিকুল হাসান তৃপ্তি, জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য টি এস আইয়ুব, কাজী রওনকুল ইসলাম শ্রাবণ, সাবিরা সুলতানা, আবুল হোসেন আজাদ প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।

সভায় তরিকুল ইসলামের স্ত্রী বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান অধ্যাপক নার্গিস বেগম ও খুলনা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক অনিন্দ্য ইসলাম আমিন উপস্থিত ছিলেন। 


 

ঢাকা/রিটন/বকুল

সম্পর্কিত নিবন্ধ