ফরজ নামাজের পর নবীজি (সা.)–এর আমল
Published: 6th, August 2025 GMT
ফরজ নামাজ ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভের অন্যতম এবং মুমিনের জন্য সর্বোচ্চ গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। মহানবী (সা.) ফরজ নামাজের পর নির্দিষ্ট কিছু আমল করতেন, যা তাঁর সুন্নাহর অংশ। এই আমলগুলো নামাজের সওয়াবকে পূর্ণতা দেয়, আধ্যাত্মিক সংযোগ বাড়ায় এবং আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনে সহায়তা করে।
ফরজ নামাজের পর নবীজি (সা.)-এর আমল ও তার ফজিলত সম্পর্কে আলোচনা করা হলো।
ফরজ নামাজের পর মহানবী (সা.)-এর আমল
নবীজি (সা.) ফরজ নামাজের পর নিয়মিত কিছু জিকির, দোয়া এবং অন্যান্য আমল করতেন, যা হাদিসে বিস্তারিত বর্ণিত আছে। যেমন:
১. নির্দিষ্ট তসবিহ পাঠ
তিনি ফরজ নামাজের পর নির্দিষ্ট তসবিহ পাঠ করতেন। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে আছে, নবীজি (সা.) বলেছেন, “যে ব্যক্তি প্রত্যেক ফরজ নামাজের পর ৩৩ বার ‘সুবহানাল্লাহ’, ৩৩ বার ‘আলহামদুলিল্লাহ’ এবং ৩৩ বার ‘আল্লাহু আকবার’ বলে, তারপর একবার ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লা শারিকা লাহু, লাহুল মুলকু ওয়া লাহুল হামদু ওয়া হুয়া আলা কুল্লি শাইইন কাদির’ বলে, তার গুনাহ সমুদ্রের ফেনার চেয়েও বেশি হলেও মাফ করে দেওয়া হবে।” (সহিহ মুসলিম, হাদিস: ৫৯৭)
যে ব্যক্তি প্রত্যেক ফরজ নামাজের পর আয়াতুল কুরসি পড়ে, তার জন্য মৃত্যু ব্যতীত জান্নাতে প্রবেশ করার আর কিছুই বাধা হবে না।নাসাঈ, আল–কুবরা, হাদিস: ৯৯২৮আরও পড়ুন শুক্রবারের আমল২৪ মার্চ ২০২৫২. আয়াতুল কুরসি পাঠ
ফরজ নামাজের পর আয়াতুল কুরসি (সুরা বাকারা, আয়াত: ২৫৫) পাঠ করা নবীজি (সা.)-এর সুন্নাহ। আবু উমামা (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে আছে, নবীজি (সা.) বলেছেন, “যে ব্যক্তি প্রত্যেক ফরজ নামাজের পর আয়াতুল কুরসি পড়ে, তার জন্য মৃত্যু ব্যতীত জান্নাতে প্রবেশ করার আর কিছুই বাধা হবে না।” (নাসাঈ, আল–কুবরা, হাদিস: ৯৯২৮)
৩. সুরা ইখলাস, ফালাক ও নাস পাঠ
নবীজি (সা.) ফজর ও মাগরিব নামাজের পর সুরা ইখলাস, সুরা ফালাক এবং সুরা নাস তিনবার করে পড়তেন। আব্দুল্লাহ ইবনে খুবাইব (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে আছে, নবীজি (সা.) বলেছেন, “প্রত্যেক ফরজ নামাজের পর সুরা ইখলাস, ফালাক ও নাস তিনবার পড়ো, এটি তোমাদের জন্য সব ধরনের ক্ষতি থেকে সুরক্ষা দেবে।” (সুনানে তিরমিজি, হাদিস: ২৯০৩)
৪. দোয়া ও মুনাজাত
নবীজি (সা.) ফরজ নামাজের পর দোয়া করতেন। উকবা ইবনে আমির (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে, নবীজি (সা.) বলেছেন, “প্রত্যেক ফরজ নামাজের পর দোয়া করা কবুল হয়।” (সুনানে তিরমিজি, হাদিস: ৩৪৯৯)
সাধারণত তিনি এই সময়ে নিজের জন্য, পরিবারের জন্য এবং উম্মাহর জন্য দোয়া করতেন। একটি সাধারণ দোয়া হলো:
উচ্চারণ: “আল্লাহুম্মা আনতাস সালামু ওয়া মিনকাস সালাম, তাবারাকতা ইয়া জাল জালালি ওয়াল ইকরাম।
অর্থ: হে আল্লাহ, তুমি শান্তির উৎস এবং তোমার কাছ থেকে শান্তি আসে, তুমি মহিমান্বিত, হে মহত্ত্ব ও সম্মানের অধিকারী। (সহিহ মুসলিম, হাদিস: ৫৯১)
নবীজি (সা.) ফরজ নামাজের পর তাঁর স্থানে বসে জিকির করতেন এবং সালাম ফিরিয়ে ডান দিকে মুখ করতেন।৫. নির্দিষ্ট অবস্থানে থেকে জিকির
নবীজি (সা.) ফরজ নামাজের পর নামাজের স্থানে বসে জিকির করতেন। আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে আছে, “নবীজি (সা.) ফরজ নামাজের পর তাঁর স্থানে বসে জিকির করতেন এবং সালাম ফিরিয়ে ডান দিকে মুখ করতেন।” (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৮৪৫)
৬. সুন্নত নামাজ
তিন ওয়াক্ত ফরজ নামাজের পর নবীজি (সা.) সুন্নাত নামাজ পড়তেন। জোহরের পর: ২ রাকাত সুন্নাতে মুয়াক্কাদা, মাগরিবের পর: ২ রাকাত সুন্নাতে মুয়াক্কাদা এবং ইশার পর: ২ রাকাত সুন্নাতে মুয়াক্কাদা। (সহিহ বুখারি, হাদিস নং: ১১৮৩)
আরও পড়ুনঋণ থেকে মুক্তির আমল ১৫ জানুয়ারি ২০২৫ফজিলত ও তাৎপর্যফরজ নামাজের পর নবীজি (সা.)-এর এই আমলগুলোর ফজিলত অপরিসীম। এগুলো মুমিনের জন্য:
গুনাহ মাফ: উপরে উল্লিখিত জিকিরগুলো গুনাহ মাফের কারণ হয়।
সুরক্ষা: সুরা ইখলাস, ফালাক ও নাস পাঠ শয়তান ও ক্ষতি থেকে রক্ষা করে।
জান্নাতের পথ: আয়াতুল কুরসি পাঠ জান্নাতের পথ সহজ করে।
আল্লাহর নৈকট্য: দোয়া ও জিকির আল্লাহর সঙ্গে সম্পর্ক দৃঢ় করে। (তাফসির ইবনে কাসির, পৃষ্ঠা: ১/৪৫৬, দারুস সালাম প্রকাশনী, ২০০০)
মনে রাখতে হবেফরজ নামাজের পর জিকির নিয়মিত করা উচিত, ছেড়ে দেওয়া উচিত নয়, কারণ এটি সুন্নাহ এবং ফজিলত-পূর্ণ। জিকির ও দোয়া মনোযোগ সহকারে করা, যাতে এর আধ্যাত্মিক প্রভাব পাওয়া যায়। জিকিরের সঠিক উচ্চারণ শেখা উচিত, প্রয়োজনে কোনো আলিমের কাছ থেকে শিখে নিন।
আরও পড়ুনরাতের শেষ প্রহরে রাসুলুল্লাহ (সা.) কী আমল করতেন১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: বর ণ ত হ দ স ত ল ক রস র জন য বল ছ ন আল ল হ র আমল ইখল স করত ন
এছাড়াও পড়ুন:
মনোনয়ন পেয়েই খুলনায় বিএনপি প্রার্থীদের নির্বাচনী প্রচারণা শুরু
দলীয় মনোনয়ন ঘোষণার পর খুলনায় বিএনপির প্রার্থীরা আনুষ্ঠানিকভাবে উৎসাহ-উদ্দীপনার সাথে নিজেদের নির্বাচনী প্রচারণা শুরু করেছেন। দলের ‘ধানের শীষ’ প্রতীকের জন্য ভোট প্রার্থনা করে দোয়া মাহফিল, মোটর শোভাযাত্রা এবং সভা-সমাবেশের মাধ্যমে নিজ নিজ নির্বাচনী এলাকায় প্রচারণা শুরু হয়েছে।
খুলনায় ছয়টি সংসদীয় আসন রয়েছে। আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য সোমবার (৩ নভেম্বর) বিএনপি ছয়টি আসনের মধ্যে পাঁচটিতে প্রার্থী ঘোষণা করে। একটি আসন স্থগিত রেখেছে।
মনোনীত প্রার্থীরা হলেন- খুলনা-২ আসনে সাবেক এমপি নজরুল ইসলাম মঞ্জু, খুলনা-৩ আসনে রকিবুল ইসলাম বকুল, খুলনা-৪ আসনে আজিজুল বারী হেলাল, খুলনা-৫ আসনে আলী আসগর লবি এবং খুলনা-৬ আসনে খুলনা জেলা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সদস্য সচিব মনিরুল হাসান বাপ্পী। তবে, খুলনা-১ আসনের প্রার্থী এখনও ঘোষণা করা হয়নি।
দলের অভ্যন্তরীণ সূত্র সাবেক এমপি নজরুল ইসলাম মঞ্জু এবং মনিরুল হাসান বাপ্পির মনোনয়নকে নতুন চমক বলে অভিহিত করেছে।
সূত্র মতে, খুলনা-২ আসনে প্রত্যাশীদের মধ্যে নগর বিএনপির সভাপতি অ্যাডভোকেট শফিকুল আলম মনা এবং সাধারণ সম্পাদক শফিকুল আলমসহ বিএনপির বেশ কয়েকজন সিনিয়র নেতা মনোনয়ন ছিলেন। তবে, দল মঞ্জুকে বেছে নিয়েছে। যিনি ২০২৩ সাল থেকে সাংগঠনিক পদ থেকে অব্যহতিপ্রাপ্ত ছিলেন। কিন্তু নগরীতে তার অনুসারীর সংখ্যা রয়েছে প্রচুর।
অনুভূতি প্রকাশ করে নজরুল ইসলাম মঞ্জু বলেন, ‘‘দল সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আমি ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান এবং সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার প্রতি তাদের আস্থা ও স্বীকৃতির জন্য কৃতজ্ঞ।’’
খুলনা-৩ আসনে দলের ছাত্র বিষয়ক সম্পাদক রকিবুল ইসলাম বকুল একক প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন পেয়েছেন। যিনি আগে একই আসন থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন।
খুলনা-৪ আসনে বিএনপির তথ্য বিষয়ক সম্পাদক আজিজুল বারী হেলাল এবং যুক্তরাজ্য বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম সম্পাদক পারভেজ মল্লিকের মধ্যে মনোনয়নের প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয়েছিল। কিন্তু দলটি অবশেষে হেলালকে মনোনয়ন দেয়।
খুলনা-৫ আসনে প্রাক্তন এমপি এবং প্রাক্তন বিসিবি সভাপতি আলী আসগর লবিকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে।
তবে, সবচেয়ে বড় চমকটি এসেছে খুলনা-৬ আসনে। যেখানে জেলা বিএনপির আহ্বায়ক মনিরুজ্জামান মন্টু, সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট মোমরেজুল ইসলাম, সিনিয়র সাংবাদিক আমিরুল ইসলাম কাগজী, বাসস চেয়ারম্যান আনোয়ার আল-দীন এবং স্থানীয় নেতা ডা. আব্দুল মজিদ এবং রফিকুল ইসলামসহ বেশ কয়েকজন সিনিয়র বিএনপি নেতাকে সামনের দৌড়ে দেখা গেছে। তবুও দলটি মনিরুল হাসান বাপ্পিকে বেছে নিয়েছে। যিনি সম্প্রতি জেলা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সদস্য সচিব নিযুক্ত হয়েছেন।
মনোনয়নের কথা স্মরণ করে বাপ্পী বলেন, “আমি ৩৫ বছর ধরে এই দলে আছি। ছাত্রদল থেকে যুবদল ও বিএনপি। আমি সবসময় হাসিনা সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলনের জন্য রাস্তায় নেমেছি। দল আমার ত্যাগ স্বীকার করেছে। এই মনোনয়ন প্রমাণ করে যে নিষ্ঠা কখনও বৃথা যায় না।”
এদিকে, মনোনয়ন চূড়ান্ত হওয়ার পর মঙ্গলবার থেকে খুলনার নির্বাচনী এলাকায় এরইমধ্যে বিএনপির মনোনীত প্রার্থীরা প্রচারণা শুরু করেছেন।
খুলনা-৪ আসনের আজিজুল বারী হেলাল রূপসা ঘাটের ব্যাংক মোড়ে এক দোয়া মাহফিলের মাধ্যমে তার প্রচারণা শুরু করেন। তিনি বলেন, ‘‘ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে আবারো আমার জন্মস্থানের প্রতিনিধিত্ব করতে পারাটা অনেক সম্মানের।’’
খুলনা-৬ আসনের প্রার্থী মনিরুল হাসান বাপ্পী তার প্রচারণা শুরু করেন তার বাবার কবর জিয়ারত, হাসপাতালে অসুস্থ দলীয় নেতাদের সাথে দেখা করে এবং কয়রা ও পাইকগাছার উপজেলা নেতাদের সাথে কথা বলে।
তিনি বলেন, “বুধবার জেলা পর্যায়ের বর্ধিত সভা অনুষ্ঠিত হওয়ার মাধ্যমে প্রচারণা আরো জোরদার করা হবে।”
এদিকে, খুলনা-২ আসনের প্রার্থী নজরুল ইসলাম মঞ্জু বর্তমানে অসুস্থ থাকায় তার অনুসারীদের মাধ্যমে প্রচারণা কার্যক্রম শুরু করেছেন।
মঞ্জুর অনুসারি সাবেক ছাত্রনেতা আসাদুজ্জামান মুরাদ বলেন, “প্রার্থী ঘোষণার আগে থেকেই দলীয় কর্মীরা তার পক্ষে দিনব্যাপী প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছিলেন। এখনো চালাচ্ছেন।”
খুলনা-৩ আসনে রকিবুল ইসলামের পক্ষেও প্রচারণা কার্যক্রম অব্যাহত ছিল। বকুল সমর্থকরা দিনব্যাপী প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছিলেন।
ঢাকা/নুরুজ্জামান/এস