খুলনায় উদ্ধারকৃত অভিভাবকহীন দুটি নবজাতক পেয়েছে নাম ও পরিবার। নাম দেয়া হয়েছে সাফিরা মুমতাহিনা ও ফাতিমা জাহরা নূর। শিশু দুটিকে পাওয়ার জন্য ৫৩টি পরিবারের আবেদন যাচাই-বাছাই শেষে আজ বৃহস্পতিবার (৭ আগস্ট) বিকেলে খুলনা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে কন্যা নবজাতক দুটিকে তাদের নতুন অভিভাবকদের কাছে হস্তান্তর করা হয়।

নিঃসন্তান দুটি পরিবার নবজাতক কাছে পেয়ে কোলে তুলে নেন। এ সময় এক আবেগঘন পরিবেশের সৃষ্টি হয়। তারা সকল নিয়ম-নীতি অনুসরণ করে নিজেদের গর্ভজাত সন্তানের মতো করেই লালন-পালন করবেন এ অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন।

গত ২৭ জুলাই খুলনার ফুলতলা উপজেলার একটি সড়কের পাশ থেকে উদ্ধার করা হয় একটি নবজাতককে। জন্মের পরপরই কে বা কারা তাকে ফেলে যায় সেখানে। পরবর্তীতে উপজেলা প্রশাসনের হাত ঘুরে পরে তার স্থান হয় খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। অপর নবজাতকটি গত ২৯ জুলাই পাইকগাছা উপজেলায় এক মানসিক ভারসাম্যহীন নারী জন্ম দেয়। নবজাতকের বাবার পরিচয় মেলেনি।

আরো পড়ুন:

চুয়াডাঙ্গার ভৈরব নদীতে ডুবে ২ বন্ধুর ‍মৃত্যু

রাজশাহীতে ২ মাথা নিয়ে শিশুর জন্ম

গণমাধ্যম ও ফেসবুকে ফুটফুটে নবজাতক দুটির ছবি ছড়িয়ে পড়লে দত্তক নিতে আগ্রহী নিঃসন্তান ও কন্যাবিহীন দম্পতিরা সমাজসেবা অধিদপ্তরে আবেদন করেন। মোট ৫৩টি আবেদন জমা পড়ে। ৩ আগস্ট পর্যন্ত এ আবেদন গ্রহণ করা হয়। এরপর খুলনা জেলা শিশুকল্যাণ বোর্ড আবেদনকারীদের তথ্য যাচাই-বাছাই শেষে স্ট্যাম্পে লিখিত অঙ্গীকারের মাধ্যমে সকল নিয়ম-নীতি অনুসরণ করে নবজাতক দুটিকে দুটি পরিবারের হাতে হস্তান্তর করে। 

সমাজসেবা অধিদপ্তরের প্রবেশন কর্মকর্তা আবিদা আফরিন এ প্রতিবেদককে জানান, দুটি নবজাতককে দত্তক নিতে মোট ৫৩টি পরিবার আবেদন করে। আবেদনকারীদের অনেকগুলো শর্তের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ১৫টি শর্ত যাচাই-বাছাই করা হয়। এর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে, আর্থিক ও শারীরিক সক্ষমতা, শিক্ষাগত যোগ্যতা ইত্যাদি। এছাড়াও সংশ্লিষ্ট দম্পতিদের সম্পত্তির অংশীদারিত্ব এবং ভবিষ্যতে তাদের সন্তান ধারণের সক্ষমতা নেই, এ সব বিষয় দেখা হয়। যাতে করে নবজাতকরা শতভাগ অধিকার নিয়ে সংশ্লিষ্ট পরিবার দুটিতে বেড়ে উঠতে পারে এবং সন্তানের পরিচয় পরিপূর্ণভাবে পেতে পারে।

তিনি আরো জানান, প্রতিমাসে সংশ্লিষ্ট উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা শিশু দুটির পরিবারে খোঁজ নিয়ে তাদের অবস্থান সম্পর্কে অবগত হবেন। এছাড়া প্রতি তিন মাসে একবার জেলা সমাজসেবা দপ্তর তাদের খোঁজখবর নেবে। এভাবে প্রথম ছয় মাস তাদের পর্যবেক্ষণে রাখা হবে। এছাড়া যে কোনো সময় অসুস্থ হলে এ তথ্য অবশ্যই সমাজসেবা দপ্তরকে জানাতে হবে। তবে শর্ত লঙ্ঘন হলে বা নবজাতকদের লালন-পালনে ব্যাঘাত সৃষ্টি হলে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।

দুই নবজাতক গ্রহণ করে আবেগ আপ্লুত দুই অভিভাবক এ প্রতিবেদককে জানান, তাদের ৮-৯ বছরের বিবাহিত জীবনে সন্তান হয়নি। হওয়ার সম্ভাবনা নেই। এ কারণে তারা সন্তান পাওয়ার আশায় আবেদন করেছিলেন। এখন পাওয়ার পর তাদের অপূর্ণতা পূর্ণতা পেয়েছে। এ আনন্দের অনুভূতি ভাষায় প্রকাশ করা সম্ভব না।

নবজাতক দুটিকে নতুন পরিবারের কাছে হস্তান্তরের পর অনুভূতি প্রকাশ করে খুলনার জেলা প্রশাসক সাইফুল ইসলাম এ প্রতিবেদককে বলেন, ‘‘একটি মহৎ ও ভালো কাজের সাক্ষী হলাম। নবজতক দুটি তাদের পরিচয় পেল, অভিভাবক পেল, নতুন নাম পেল। আমরা সকলে তাদের কল্যাণ ও সুস্বাস্থ্য কামনা করি।’’ 

এ সময় সমাজসেবা অধিদপ্তরের উপপরিচালক কানিজ মোস্তফা ও মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা সুরাইয়া সিদ্দিকাসহ সংশ্লিষ্টরা উপস্থিত ছিলেন। 

ঢাকা/নুরুজ্জামান/বকুল

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর পর ব র উপজ ল

এছাড়াও পড়ুন:

চিহ্নিত গণহত্যাকারীদের ছবি প্রদর্শন করে ঢাবিকে কলঙ্কিত করেছে শিবির, বিবৃতিতে ছাত্র ইউনিয়ন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসিতে জুলাই গণ–অভ্যুত্থান দিবসে চিহ্নিত যুদ্ধাপরাধী ও গণহত্যাকারীদের ছবি প্রদর্শন করে জাতির গৌরবময় ইতিহাসকে ইসলামী ছাত্রশিবির বিকৃত করেছে বলে অভিযোগ করেছে ছাত্র ইউনিয়ন। অবিলম্বে মুক্তিযুদ্ধবিরোধী সংগঠন হিসেবে ক্যাম্পাসে শিবিরের কার্যক্রম নিষিদ্ধের দাবি জানিয়েছে সংগঠনটি।

বৃহস্পতিবার বিকেলে ছাত্র ইউনিয়নের একাংশের সভাপতি তামজিদ হায়দার ও সাধারণ সম্পাদক শিমুল কুম্ভকারের পাঠানো যৌথ বিবৃতিতে এ কথা বলা হয়। বিবৃতিতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের বিরুদ্ধে পক্ষপাতমূলক আচরণের অভিযোগ তুলে প্রক্টরের অপসারণ দাবি করেছে সংগঠনটি।

ছাত্র ইউনিয়নের বিবৃতিতে বলা হয়, ’৯০–এর সামাজিক চুক্তি অনুযায়ী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সাম্প্রদায়িক-ফ্যাসিস্ট সংগঠনের কার্যক্রম নিষিদ্ধ থাকলেও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন নির্লজ্জভাবে শিবিরকে নরমালাইজ করার চেষ্টা করেছে। ঢাবি প্রক্টরের পক্ষপাতমূলক আচরণ শিবিরের এই জঘন্য কাজকে উৎসাহিত করেছ। তাঁর এ রাজনৈতিক পক্ষপাতমূলক আচরণ আগামী দিনের সহাবস্থানের রাজনীতি তৈরিতে বাধা হয়ে দাঁড়াবে।

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ‘ঢাবি প্রক্টর ক্যাম্পাসের ভেতরে তোফাজ্জল ও সাম্য হত্যাকাণ্ড, শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে প্রতিবাদমূলক গ্রাফিতি মুছে ফেলা, চারুকলার ভেতরে ঢুকে শোভাযাত্রার মোটিফে আগুন দেওয়া, একাধিক যৌন নিপীড়নের অভিযোগ আমলে না নেওয়াসহ নানা অভিযোগের সুষ্ঠু বিচারে ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে। অতএব ঢাবি প্রক্টরকে অপসারণ না করলে ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগের মতোই শিবিরের দলীয় আধিপত্য কায়েম হবে।’

চব্বিশের নাম দিয়ে একাত্তরকে অবমূল্যায়নের মাধ্যমে ছাত্রশিবির জুলাই গণ–অভ্যুত্থান পরিপন্থী অবস্থান নিয়েছে বলে বলা হয়েছে ছাত্র ইউনিয়নের বিবৃতিতে। এতে বলা হয়, ‘জুলাই গণ–অভ্যুত্থানের মাধ্যমে রাজনীতিতে পুর্নবাসনের সুযোগ পেয়ে স্বাধীনতাবিরোধী গণহত্যকারীদের উদ্‌যাপনের চেষ্টা গণ–অভ্যুত্থানকে জনতার কাছ থেকে ছিনিয়ে নিয়ে নিজেদের পকেটস্থ করার অপচেষ্টা বলে আমরা মনে করি। এর আগেও ছাত্রশিবির মুক্তিযুদ্ধকে অসম্মান করে তাদের নিজস্ব প্রকাশনায় বিতর্কিত লেখা ছেপে বাংলাদেশবিরোধী রাজনীতি জনগণের ওপর চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেছে।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ