আদালতের নিষেধাজ্ঞার সুযোগ নিয়ে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদেরকে বাদ দিয়ে দলের কাউন্সিল ডেকেছেন দলটির সিনিয়র নেতারা।

শনিবার (৯ আগস্ট) সকাল ১১টায় রাজধানী গুলশানের ইমানুয়েলন্স পার্টি সেন্টারে পার্টির দশম জাতীয় কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হবে। কাউন্সিলে সভাপতিত্ব করবেন  দলটির এক সময়ের সিনিয়র কো চেয়ারম্যান ও বর্তমান ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ।

আদালতের আদেশ ও নির্বাচন কমিশনের বাধ্যবাধকতা মেনে দলের কাউন্সিল ডাকা হয়েছে দাবি করে ব্যারিষ্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ বলেন, “আগামীকাল সম্মেলন হবে, পল্লীবন্ধু এরশাদের হাতে গড়া জাতীয় পার্টির দশম জাতীয় কাউন্সিল। যার  নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধন নাম্বার ১২। আমরা আদালতের আদেশ ও গঠনতন্ত্র মোতাবেক এই কাউন্সিল  আয়োজন করেছি। নির্বাচন কমিশনকে আমরা অবহিত করেছি এবং কাউন্সিলে তাদের প্রতিনিধি আসার জন্য আমন্ত্রণ জানিয়েছি।”

আরো পড়ুন:

জিএম কাদেরের সাংগঠনিক কার্যক্রমে আদালতের অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা

‘নিষিদ্ধ করা যাচ্ছে না বলে জিএম কা‌দেরবিহীন জাপা গঠনের চেষ্টা চলছে’

শুক্রবার (৮ আগস্ট) রাজধানী গুলশানের হাওলাদার টাওয়ারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।

ব্যারিস্টার আনিস বলেন, “এই কাউন্সিলের মধ্য দিয়ে আমরা জাতীয় পার্টিতে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে চাই। কাউন্সিলের পরে আমরা গঠনতন্ত্রের বিতর্কিত ধারা বাতিল করে দেব। কোনো একক নেতৃত্বে নয়, জাতীয় পার্টি চলবে যৌথ নেতৃত্বের মধ্য দিয়ে। জাতীয় পার্টিতে আর কোনোদিন স্বৈরতন্ত্রের স্থান হবে না। গঠনতন্ত্র হবে সম্পূর্ণ গণতান্ত্রিক আর  দল পরিচালিত হবে নেতাকর্মীদের মতামতের ভিত্তিতে।”

কাউন্সিলের মধ্যদিয়ে ঐক্যবদ্ধ ও শক্তিশালী জাতীয় পার্টির নতুন যাত্রা শুরু হবে জানিয়ে দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, “শনিবার জাতীয় পার্টি সম্মেলন হবে ঐতিহাসিক। এই সম্মেলনের মধ্য দিয়ে পার্টির মধ্যে দীর্ঘদিনের যে বিভেদ রয়েছে, সে বিভেদের কবর রচিত হবে।”

বৃহত্তর ঐক্য করে  পল্লীবন্ধু এরশাদের স্বপ্নের জাতীয় পার্টিতে পরিণত হবে। কাউন্সিলে সারা দেশ থেকে জাতীয় পার্টির কয়েক হাজার কাউন্সিলর ও ডেলিগেটস অংশ নেবেন বলেও জানান তিনি। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন জাতীয় পার্টির মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু।

এ সময় দলের কো চেয়ারম্যান এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার, কো চেয়ারম্যান সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা, প্রেসিডিয়াম সদস্য নাসরিন জাহান রতনা, শফিকুল ইসলাম সেন্টু, জহিরুল ইসলাম জহির, মোস্তফা আল মাহমুদ, মাসরুর মওলা, জসিম উদ্দিন ভুইয়া, আরিফুর রহমান খান, সাবেক সংসদ সদস্য অধ্যাপক নূরুল ইসলাম মিলন, অ্যাডভোকেট জিয়া উল হক মৃধা, চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা সরদার শাহজাহান, খান মো.

ইসরাফিল খোকন, ইয়াকুব হোসেন, ভাইস চেয়ারম্যান মোবারক হোসেন আজাদ, শফিকুল ইসলাম শফিক, জামাল রানা, যুগ্ম মহাসচিব মো. বেলাল হোসেন, ফখরুল আহসান শাহজাদা, সাংগঠনিক সম্পাদক সোহেল রহমান, সমাজকল্যাণ সম্পাদক গোলাম মোস্তফা উপস্থিত ছিলেন।

এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার বলেন, “পল্লীবন্ধু হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ শুধু একজন রাজনীতিবিদ ছিলেন না, তিনি ছিলেন দূরদর্শী রাষ্ট্রনায়ক, সাহসী সংস্কারক এবং আধুনিক বাংলাদেশের অন্যতম কারিগর। জাতীয় পার্টি তার হাতে গড়া দল, একটি সংগঠিত শক্তি, একটি উন্নয়নদর্শী রাজনৈতিক প্ল্যাটফর্ম।তার শাসনামলে উপজেলা ব্যবস্থা প্রবর্তন, গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়ন, ইসলামিক ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠা, নারীর ক্ষমতায়ন, শিক্ষাক্ষেত্রে বিস্তৃতি, দারিদ্র্য বিমোচনের যুগান্তকারী পদক্ষেপ আজও বাংলাদেশের প্রশাসনিক ও সামাজিক ভিত্তিকে দৃঢ় করে রেখেছে।”

তিনি বলেন,“জাতীয় পার্টি সব সময়ই বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনার প্রতি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। ১৯৭১ সালের রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের মাধ্যমে অর্জিত স্বাধীনতা, গণতন্ত্র, সমতা ও ন্যায়বিচারের আদর্শ— জাতীয় পার্টি সেই আদর্শকে বুকে ধারণ করেই রাষ্ট্র গঠনে অংশ নিতে চায়। জাতীয় পার্টি আজ তারই স্বপ্নের বাংলাদেশ বাস্তবায়নের পথে—নতুন নেতৃত্ব, নতুন গতি এবং জনগণের নতুন প্রত্যাশা নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে।”

“আমরা এমন এক সময়ে দাঁড়িয়ে আছি, যখন দেশের মানুষ ২০২৪ সালের ছাত্র—জনতার অভ্যুত্থানে যে সাহস, যে সংগ্রাম, যে পরিবর্তনের প্রত্যাশা দেখেছিল— সেই আশাকেই বাস্তবতায় রূপ দিতে জাতীয় পার্টি নতুন অভিযাত্রায় নেমেছে।”

মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু বলেন, “আমি আপনাদের জানাতে চাই, নির্বাচন কমিশনের নির্ধারিত সময় অনুযায়ী জাতীয় পার্টির দশম জাতীয় কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হওয়ার সময়সীমা ছিল ৩০ জুন ২০২৫। আমরা সেই নির্দেশনার আলোকে ২৮ জুন কাউন্সিল অনুষ্ঠানের তারিখ নির্ধারণ করেছিলাম, কিন্তু উপযুক্ত ভেন্যু না পাওয়ায় তা স্থগিত করতে হয়। পরবর্তীতে নির্বাচন কমিশনের কাছে দুই মাসের সময় বৃদ্ধি চেয়ে আবেদন করা হয়, যা এখনো প্রক্রিয়াধীন। এই পরিস্থিতিতে গঠনতন্ত্র ও গণতান্ত্রিক চেতনার প্রতি শ্রদ্ধা রেখে, সময়ের স্বল্পতা এবং রাজনৈতিক বাস্তবতা বিবেচনায় দ্রুততার সঙ্গে কাউন্সিল আয়োজন করা হচ্ছে।”

আদালতের আদেশে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক কার্যক্রমে সাময়িক নিষেধাজ্ঞা জারি হয়। আদালতের এই আদেশের ফলে, পার্টির সাংগঠনিক কার্যক্রম এক অনিশ্চয়তা ও স্থবিরতার মুখে পড়ে জানিয়ে চুন্নু বলেন,  “এই প্রেক্ষাপটে—দেশের বর্তমান রাজনৈতিক বাস্তবতা, আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন, নির্বাচন কমিশনের সময়সীমার বিধিবিধান এবং জাতীয় পার্টির মতো একটি বৃহৎ ও জনগণনির্ভর রাজনৈতিক সংগঠনের নেতৃত্বশূন্য থাকা কোনোভাবেই দেশের গণতান্ত্রিক অগ্রযাত্রার পক্ষে সহায়ক নয়—এই বিবেচনায় দলীয় গঠনতন্ত্রের ২০(২)(খ) ধারা অনুযায়ী যথাযথ সাংগঠনিক উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়। এই ধারার  ক্ষমতাবলে, ৫ আগস্ট জাতীয় পার্টির সিনিয়র কো—চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদের সভাপতিত্বে পার্টির সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম সভায় জাতীয় কাউন্সিল আহ্বান করার সিদ্ধান্ত হয়।”

তিনি বলেন, “নির্বাচন কমিশনের নির্ধারিত সময়ের মধ্যে জাতীয় কাউন্সিল সম্পন্ন করার বাধ্যবাধকতা এবং জাতীয় নির্বাচনের প্রস্তুতির জন্য রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখা জরুরি। উপরন্তু, দলের সর্বস্তরের নেতাকর্মীদের মধ্যে যে আশাবাদ, উদ্দীপনা এবং পরিবর্তনের আকাঙ্ক্ষা জন্ম নিয়েছে—তাকে বাস্তবায়নে এটি সময়োচিত ও আবশ্যক পদক্ষেপ। এই সিদ্ধান্তের মাধ্যমে জাতীয় পার্টি আবারও প্রমাণ করেছে,  এই দল কেবল ব্যক্তি—কেন্দ্রিক নয়; এটি একটি প্রাতিষ্ঠানিক শক্তি, একটি আদর্শভিত্তিক গণতান্ত্রিক আন্দোলন।”

“বাংলাদেশের রাজনীতিতে যখন হতাশা, বিভ্রান্তি ও দিশেহারা ভাব বিরাজ করছে—তখন জাতীয় পার্টি দায়িত্বশীলতা, শৃঙ্খলা ও ঐক্যের বার্তা নিয়ে দেশবাসীর সামনে নতুন করে আত্মপ্রকাশ করছে।”

ঢাকা/নঈমুদ্দীন/সাইফ

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর জ এম ক দ র গণত ন ত র ক গঠনতন ত র র ক উন স ল ল ইসল ম ম র জন ত ক গঠন ক

এছাড়াও পড়ুন:

ব্রাকসুর গঠনতন্ত্র সংশোধনে পাঁচ প্রস্তাব

‎রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদের (ব্রাকসু) গঠনতন্ত্র ‘ত্রুটিপূর্ণ’ হিসেবে চিহ্নিত করে তা সংশোধনের জন্য পাঁচটি প্রস্তাব তুলে ধরেছেন শিক্ষার্থীরা।

বৃহস্পতিবার (‎৬ নভেম্বর) বেলা ৩টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের মিডিয়া চত্বরে সংবাদ সম্মেলনে এসে ব্রাকসু নিয়ে তাদের মতামত উপস্থাপন করে দ্রুত গঠনতন্ত্র সংশোধনের দাবি করেন।

‎সংবাদ সম্মেলনে গঠনততন্ত্র পরিমার্জন ও সংশোধন বিষয়ে পাঁচটি প্রস্তাব তুলে ধরেন শিক্ষার্থীরা। তারা চান এজিএস পদে একজন নারী প্রার্থী অথবা নারী বা ছাত্রীবিষয়ক সম্পাদক পদ সৃষ্টি করা হোক। মানবাধিকার ও আইনবিষয়ক সম্পাদক পদ গঠন করার প্রস্তাব রেখেছেন তারা। 

অন্য তিনটি প্রস্তাব হলো- ক্যাফেটেরিয়া ও কেন্দ্রীয় লাইব্রেরি-বিষয়ক সম্পাদক পদ সৃষ্টি করা, অনাস্থা প্রস্তাবের মতো স্বেচ্ছাচারী ক্ষমতা না রাখা এবং একই ব্যক্তির দুটি পদে থাকার সুযোগ বাতিল করা।

আরো পড়ুন:

ব্রাকসু নির্বাচনের জন্য ৬ সদস্যের কমিশন গঠন

‎বিধি সংশোধনের নামে ব্রাকসু নির্বাচন ঠেকানোর চেষ্টার অভিযোগ

ব্রাকসুর গঠনতন্ত্র অনুযায়ী, সভাপতি ও কোষাধ্যক্ষ পদে একই ব্যক্তি বসতে পারবেন। ক্ষমতাবলে উপাচার্য ছাত্রসংসদের সভাপতি হয়ে থাকেন। 

সংবাদ সম্মেলনে বেরোবি শিক্ষার্থী ‎রিফাত রাফি বলেন, “ত্রুটিপূর্ণ নীতিমালা দ্রুত সময়ের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ করা সম্ভব, যদি তাদের সদিচ্ছা থাকে। প্রশাসন চায় কম প্রতিনিধি নিয়ে শিক্ষার্থীদের নিয়ন্ত্রণ করতে।”

‎আরেক শিক্ষার্থী ইয়ামিন ইসলাম বলেন, “আমি মনে করি, ব্রাকসুতে পদ সংখ্যা আরো বেশি করা উচিত। অনাস্থা প্রস্তাব যদি আনতেই হয়, তাহলে সভাপতি বা কোষাধ্যক্ষের বিরুদ্ধে কেন নয়? তারাও তো অনাস্থা আনার মতো কাজ করতে পারেন। আমরা চাই সভাপতি পদে উপাচার্য, কোষাধ্যক্ষ পদে অন্য কেউ থাকুন।”

ঢাকা/সাজ্জাদ/রাসেল

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ব্রাকসুর গঠনতন্ত্র সংশোধনে পাঁচ প্রস্তাব