জিএম কাদের বাদ, জাপার কাউন্সিল শনিবার
Published: 8th, August 2025 GMT
আদালতের নিষেধাজ্ঞার সুযোগ নিয়ে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদেরকে বাদ দিয়ে দলের কাউন্সিল ডেকেছেন দলটির সিনিয়র নেতারা।
শনিবার (৯ আগস্ট) সকাল ১১টায় রাজধানী গুলশানের ইমানুয়েলন্স পার্টি সেন্টারে পার্টির দশম জাতীয় কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হবে। কাউন্সিলে সভাপতিত্ব করবেন দলটির এক সময়ের সিনিয়র কো চেয়ারম্যান ও বর্তমান ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ।
আদালতের আদেশ ও নির্বাচন কমিশনের বাধ্যবাধকতা মেনে দলের কাউন্সিল ডাকা হয়েছে দাবি করে ব্যারিষ্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ বলেন, “আগামীকাল সম্মেলন হবে, পল্লীবন্ধু এরশাদের হাতে গড়া জাতীয় পার্টির দশম জাতীয় কাউন্সিল। যার নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধন নাম্বার ১২। আমরা আদালতের আদেশ ও গঠনতন্ত্র মোতাবেক এই কাউন্সিল আয়োজন করেছি। নির্বাচন কমিশনকে আমরা অবহিত করেছি এবং কাউন্সিলে তাদের প্রতিনিধি আসার জন্য আমন্ত্রণ জানিয়েছি।”
আরো পড়ুন:
জিএম কাদেরের সাংগঠনিক কার্যক্রমে আদালতের অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা
‘নিষিদ্ধ করা যাচ্ছে না বলে জিএম কাদেরবিহীন জাপা গঠনের চেষ্টা চলছে’
শুক্রবার (৮ আগস্ট) রাজধানী গুলশানের হাওলাদার টাওয়ারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
ব্যারিস্টার আনিস বলেন, “এই কাউন্সিলের মধ্য দিয়ে আমরা জাতীয় পার্টিতে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে চাই। কাউন্সিলের পরে আমরা গঠনতন্ত্রের বিতর্কিত ধারা বাতিল করে দেব। কোনো একক নেতৃত্বে নয়, জাতীয় পার্টি চলবে যৌথ নেতৃত্বের মধ্য দিয়ে। জাতীয় পার্টিতে আর কোনোদিন স্বৈরতন্ত্রের স্থান হবে না। গঠনতন্ত্র হবে সম্পূর্ণ গণতান্ত্রিক আর দল পরিচালিত হবে নেতাকর্মীদের মতামতের ভিত্তিতে।”
কাউন্সিলের মধ্যদিয়ে ঐক্যবদ্ধ ও শক্তিশালী জাতীয় পার্টির নতুন যাত্রা শুরু হবে জানিয়ে দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, “শনিবার জাতীয় পার্টি সম্মেলন হবে ঐতিহাসিক। এই সম্মেলনের মধ্য দিয়ে পার্টির মধ্যে দীর্ঘদিনের যে বিভেদ রয়েছে, সে বিভেদের কবর রচিত হবে।”
বৃহত্তর ঐক্য করে পল্লীবন্ধু এরশাদের স্বপ্নের জাতীয় পার্টিতে পরিণত হবে। কাউন্সিলে সারা দেশ থেকে জাতীয় পার্টির কয়েক হাজার কাউন্সিলর ও ডেলিগেটস অংশ নেবেন বলেও জানান তিনি। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন জাতীয় পার্টির মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু।
এ সময় দলের কো চেয়ারম্যান এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার, কো চেয়ারম্যান সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা, প্রেসিডিয়াম সদস্য নাসরিন জাহান রতনা, শফিকুল ইসলাম সেন্টু, জহিরুল ইসলাম জহির, মোস্তফা আল মাহমুদ, মাসরুর মওলা, জসিম উদ্দিন ভুইয়া, আরিফুর রহমান খান, সাবেক সংসদ সদস্য অধ্যাপক নূরুল ইসলাম মিলন, অ্যাডভোকেট জিয়া উল হক মৃধা, চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা সরদার শাহজাহান, খান মো.
এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার বলেন, “পল্লীবন্ধু হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ শুধু একজন রাজনীতিবিদ ছিলেন না, তিনি ছিলেন দূরদর্শী রাষ্ট্রনায়ক, সাহসী সংস্কারক এবং আধুনিক বাংলাদেশের অন্যতম কারিগর। জাতীয় পার্টি তার হাতে গড়া দল, একটি সংগঠিত শক্তি, একটি উন্নয়নদর্শী রাজনৈতিক প্ল্যাটফর্ম।তার শাসনামলে উপজেলা ব্যবস্থা প্রবর্তন, গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়ন, ইসলামিক ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠা, নারীর ক্ষমতায়ন, শিক্ষাক্ষেত্রে বিস্তৃতি, দারিদ্র্য বিমোচনের যুগান্তকারী পদক্ষেপ আজও বাংলাদেশের প্রশাসনিক ও সামাজিক ভিত্তিকে দৃঢ় করে রেখেছে।”
তিনি বলেন,“জাতীয় পার্টি সব সময়ই বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনার প্রতি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। ১৯৭১ সালের রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের মাধ্যমে অর্জিত স্বাধীনতা, গণতন্ত্র, সমতা ও ন্যায়বিচারের আদর্শ— জাতীয় পার্টি সেই আদর্শকে বুকে ধারণ করেই রাষ্ট্র গঠনে অংশ নিতে চায়। জাতীয় পার্টি আজ তারই স্বপ্নের বাংলাদেশ বাস্তবায়নের পথে—নতুন নেতৃত্ব, নতুন গতি এবং জনগণের নতুন প্রত্যাশা নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে।”
“আমরা এমন এক সময়ে দাঁড়িয়ে আছি, যখন দেশের মানুষ ২০২৪ সালের ছাত্র—জনতার অভ্যুত্থানে যে সাহস, যে সংগ্রাম, যে পরিবর্তনের প্রত্যাশা দেখেছিল— সেই আশাকেই বাস্তবতায় রূপ দিতে জাতীয় পার্টি নতুন অভিযাত্রায় নেমেছে।”
মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু বলেন, “আমি আপনাদের জানাতে চাই, নির্বাচন কমিশনের নির্ধারিত সময় অনুযায়ী জাতীয় পার্টির দশম জাতীয় কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হওয়ার সময়সীমা ছিল ৩০ জুন ২০২৫। আমরা সেই নির্দেশনার আলোকে ২৮ জুন কাউন্সিল অনুষ্ঠানের তারিখ নির্ধারণ করেছিলাম, কিন্তু উপযুক্ত ভেন্যু না পাওয়ায় তা স্থগিত করতে হয়। পরবর্তীতে নির্বাচন কমিশনের কাছে দুই মাসের সময় বৃদ্ধি চেয়ে আবেদন করা হয়, যা এখনো প্রক্রিয়াধীন। এই পরিস্থিতিতে গঠনতন্ত্র ও গণতান্ত্রিক চেতনার প্রতি শ্রদ্ধা রেখে, সময়ের স্বল্পতা এবং রাজনৈতিক বাস্তবতা বিবেচনায় দ্রুততার সঙ্গে কাউন্সিল আয়োজন করা হচ্ছে।”
আদালতের আদেশে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক কার্যক্রমে সাময়িক নিষেধাজ্ঞা জারি হয়। আদালতের এই আদেশের ফলে, পার্টির সাংগঠনিক কার্যক্রম এক অনিশ্চয়তা ও স্থবিরতার মুখে পড়ে জানিয়ে চুন্নু বলেন, “এই প্রেক্ষাপটে—দেশের বর্তমান রাজনৈতিক বাস্তবতা, আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন, নির্বাচন কমিশনের সময়সীমার বিধিবিধান এবং জাতীয় পার্টির মতো একটি বৃহৎ ও জনগণনির্ভর রাজনৈতিক সংগঠনের নেতৃত্বশূন্য থাকা কোনোভাবেই দেশের গণতান্ত্রিক অগ্রযাত্রার পক্ষে সহায়ক নয়—এই বিবেচনায় দলীয় গঠনতন্ত্রের ২০(২)(খ) ধারা অনুযায়ী যথাযথ সাংগঠনিক উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়। এই ধারার ক্ষমতাবলে, ৫ আগস্ট জাতীয় পার্টির সিনিয়র কো—চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদের সভাপতিত্বে পার্টির সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম সভায় জাতীয় কাউন্সিল আহ্বান করার সিদ্ধান্ত হয়।”
তিনি বলেন, “নির্বাচন কমিশনের নির্ধারিত সময়ের মধ্যে জাতীয় কাউন্সিল সম্পন্ন করার বাধ্যবাধকতা এবং জাতীয় নির্বাচনের প্রস্তুতির জন্য রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখা জরুরি। উপরন্তু, দলের সর্বস্তরের নেতাকর্মীদের মধ্যে যে আশাবাদ, উদ্দীপনা এবং পরিবর্তনের আকাঙ্ক্ষা জন্ম নিয়েছে—তাকে বাস্তবায়নে এটি সময়োচিত ও আবশ্যক পদক্ষেপ। এই সিদ্ধান্তের মাধ্যমে জাতীয় পার্টি আবারও প্রমাণ করেছে, এই দল কেবল ব্যক্তি—কেন্দ্রিক নয়; এটি একটি প্রাতিষ্ঠানিক শক্তি, একটি আদর্শভিত্তিক গণতান্ত্রিক আন্দোলন।”
“বাংলাদেশের রাজনীতিতে যখন হতাশা, বিভ্রান্তি ও দিশেহারা ভাব বিরাজ করছে—তখন জাতীয় পার্টি দায়িত্বশীলতা, শৃঙ্খলা ও ঐক্যের বার্তা নিয়ে দেশবাসীর সামনে নতুন করে আত্মপ্রকাশ করছে।”
ঢাকা/নঈমুদ্দীন/সাইফ
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর জ এম ক দ র গণত ন ত র ক গঠনতন ত র র ক উন স ল ল ইসল ম ম র জন ত ক গঠন ক
এছাড়াও পড়ুন:
জবি প্রশাসনের ‘দায়সারা’ জবাবের প্রতিবাদ শিক্ষার্থীদের
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (জকসু) নির্বাচনের রোডম্যাপ প্রণয়ন, দ্বিতীয় ক্যাম্পাস ও দুটি হলের কাজের অগ্রগতি এবং সম্পূরক বৃত্তি কার্যকর না হওয়ার প্রতিবাদ ব্যতিক্রমী কর্মসূচি পালন করেছেন শিক্ষার্থীরা।
বুধবার (৬ আগস্ট) বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের কার্যালয়ের সামনে একটি চেয়ারে ‘প্রশাসন’ লিখে বসিয়ে এ প্রতীকী প্রতিবাদ জানান শিক্ষার্থীরা।
ওই চেয়ারের সামনে রাখা প্ল্যাকার্ডে তারা ‘ছাত্র সংসদ কবে হবে?’, ‘দ্বিতীয় ক্যাম্পাসের কাজ কবে শুরু হবে?’, ‘পুরান ঢাকায় দুটি হলের কাজ কবে হবে?’, ‘সম্পূরক বৃত্তি কবে হবে?’ লিখেছেন।
আরো পড়ুন:
রাবিতে বিজয় ফিস্টের খাবার খেয়ে অসুস্থ ৮৩ শিক্ষার্থী
চবি প্রশাসনকে নিয়ে পথনাটক ‘বহুতদিন অইয়ে আর মুলা ন ঝুলায়ো’
এসব প্রশ্নের উত্তরে শিক্ষার্থীরা প্রশাসনের বক্তব্যের অনুকরণে চেয়ারে লিখে দেন— ‘আলহামদুলিল্লাহ’, ‘চিঠি পাঠিয়েছি’, ‘বের হয়ে যাও’, ‘হচ্ছে, চলছে, চলমান’, ‘৮টা টু ৮টা’।
এ বিষয়ে আপ বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় সদস্য ও পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী মাসুদ রানা বলেন, “জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের নীরবতা শিক্ষার্থীদের প্রতি চরম অবহেলার প্রতিফলন। ন্যায্য অধিকার- সম্পূরক বৃত্তি প্রদান ও জকসু নির্বাচনের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে প্রশাসনের নির্লিপ্ত ভূমিকা প্রশ্নবিদ্ধ। আজকের প্রতীকী কর্মসূচির মাধ্যমে জানিয়ে দিচ্ছি— এই নীরবতা চলতে দেওয়া হবে না। প্রশাসন যদি দ্রুত সিদ্ধান্ত না নেয়, বৃহত্তর আন্দোলনে যেতে বাধ্য হব।”
অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন সিস্টেম বিভাগের ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী ফয়সাল আহমেদ বলেন, “এই জবাবদিহিতা কোনো আনুষ্ঠানিকতা নয়; অথর্ব ও মেরুদণ্ডহীন প্রশাসনের বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীদের প্রতিবাদ। গণঅভ্যুত্থানের পর যাদের ক্ষমতায় আনতে আমরা গেট লক কর্মসূচি পালন করেছিলাম, তারাই আজ মৌলিক অধিকার নিয়ে উদাসীন।”
তিনি বলেন, “আবাসন, ভাতা, ছাত্র সংসদ— সবখানেই ব্যর্থতা। দ্বিতীয় ক্যাম্পাস ও দুটি হলের কাজের কোনো দৃশ্যমান অগ্রগতি হয়নি। এই প্রতীকী জবাবদিহিতা প্রশাসনের ব্যর্থতা ও গাফিলতির নগ্ন মুখোশ খুলে দিতেই।”
সম্প্রতি জকসু নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ড. মো. শেখ গিয়াস উদ্দিনকে প্রশ্ন করলে তিনি দুই সাংবাদিকের ওপর চড়াও হন এবং জকসু ইস্যুতে কোনো মন্তব্য করতে অনিচ্ছা প্রকাশ করেন।
২০০৫ সালে প্রণীত জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় আইনে ছাত্র সংসদ গঠনের বিধান না থাকায় প্রতিষ্ঠার পর থেকে জকসু নির্বাচন হয়নি। গত ২ জানুয়ারি ৯৯তম সিন্ডিকেট সভায় জকসু গঠনতন্ত্র প্রণয়নের জন্য কমিটি গঠন করা হয়। ৭ মে ১০০তম বিশেষ সিন্ডিকেট সভায় আরো একটি উচ্চতর কমিটি গঠন করা হয়, যা বর্তমানে প্রাপ্ত মতামতের ভিত্তিতে গঠনতন্ত্রকে আইন আকারে প্রণয়নের প্রক্রিয়া চালাচ্ছে।
শিক্ষার্থীদের দাবি, গঠনতন্ত্র প্রণয়নের অজুহাত দেখিয়ে প্রশাসন সময়ক্ষেপণ করছে। ফলে শিক্ষার্থীদের অধিকার আদায়ের পথ আরো দীর্ঘ হচ্ছে।
ঢাকা/লিমন/মেহেদী