নিজের যত্ন শুধু শারীরিক স্বাস্থ্যের বিষয় নয়, বরং মানসিক, আধ্যাত্মিক ও সামাজিক সুস্থতার একটি অংশ, যা আমাদের আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতা ও দায়িত্ব পালনের মাধ্যম হিসেবে কাজ করে। নিজের যত্ন মানে নিজের শারীরিক, মানসিক ও আধ্যাত্মিক সুস্থতার জন্য সময় ও মনোযোগ দেওয়া।
একজন মা যদি শিশুর যত্ন নিতে গিয়ে নিজেকে ভুলে যান এবং যত্নের অভাবে মানসিক ও শারীরিকভাবে ক্লান্ত বোধ করেন, তাহলে তিনি একসময় ভালো মা হওয়ার সুযোগ হারাবেন। নিজের যত্ন তাঁকে আরও ভালো মুসলিম, মা, স্ত্রী, কর্মী এবং বন্ধু হতে সহায়তা করে। এটি তাঁকে শান্ত ও সুখী রাখবে, ফলে প্রকারান্তরে তাঁর সন্তান আরও ভালো থাকবে।
নিশ্চয় তোমার নিজের ওপর তোমার শরীরের হক আছে। তাই রোজা রাখো এবং রোজা ভাঙো, নামাজ পড়ো এবং ঘুমাও।সুনান আবু দাউদ, হাদিস: ১,৩৬৯ইসলামে নিজের যত্নকে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে, কারণ নিজের প্রতি যত্নশীল হওয়া আল্লাহর দেওয়া শরীর ও মনের আমানত রক্ষার অংশ। রাসুল (সা.
এই হাদিসটি স্পষ্টভাবে নিজের শারীরিক ও মানসিক চাহিদার প্রতি যত্নশীল হওয়ার নির্দেশ দেয়।
আরও পড়ুনহতাশা মানে কি ইমান দুর্বল হওয়া২৩ জুন ২০২৫নিজের যত্নের বিভিন্ন রূপযত্ন প্রত্যেকের জন্য ভিন্ন হতে পারে। যেমন:
পরিবারের সঙ্গে সময়মতো গরম খাবার খাওয়া।
বই পড়া, পডকাস্ট শোনা বা শিক্ষামূলক কিছু শেখা।
আরামদায়ক গোসল করা বা চা পান করা।
প্রকৃতির মাঝে হাঁটা, যেমন হ্রদের ধারে এবং আল্লাহর সৃষ্টির প্রশংসা করা।
এই কাজগুলো সাধারণ হলেও মানসিক ও আধ্যাত্মিক সুস্থতার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। এমনকি ব্যস্ত জীবনে ছোট ছোট সময় বের করে স্ব-যত্ন করা জীবনের জটিলতা মোকাবিলায় শক্তি জোগায়।
নিজের যত্ন নেওয়া কেন ইবাদত?ইসলামে নিজের যত্নকে ইবাদত হিসেবে বিবেচনা করা হয়। কারণ, এটি আল্লাহর দেওয়া আমানতের প্রতি দায়িত্ব পালনের অংশ। নিচে কিছু কারণ দেওয়া হলো:
নিজের যত্ন আরও ভালো মুসলিম, মা, স্ত্রী, কর্মী এবং বন্ধু হতে সহায়তা করে। এটা আমাদের শান্ত ও সুখী রাখে, ফলে প্রকারান্তরে সন্তান এতে আরও ভালো থাকবে।১. শরীর ও মনের আমানত রক্ষা
আল্লাহ আমাদের শরীর ও মন দিয়েছেন, যা একটি আমানত। এগুলোর প্রতি অবহেলা করা ইসলামে নিষিদ্ধ। কোরআনে বলা হয়েছে, ‘আমি যদি তোমাদের কাছে আমার নিয়ামতের কথা গণনা করতে বলি, তবে তোমরা তা গণনা করতে পারবে না।’ (সুরা ইবরাহিম, আয়াত: ৩৪)
নিজের যত্নের মাধ্যমে আমরা আল্লাহর দেওয়া শরীর ও মনের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করি।
২. আধ্যাত্মিক সংযোগ বৃদ্ধি
যত্ন আধ্যাত্মিক সংযোগ বাড়ায়। যেমন প্রকৃতিতে সময় কাটানো বা জিকর করা (আল্লাহর স্মরণ) মানসিক শান্তি দেয়। জিকরকে প্রায়ই ‘মননশীলতা’ (মাইন্ডফুলনেস) হিসেবে অনুবাদ করা হয়, যা যত্নের একটি রূপ। রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহর জিকিরে ব্যস্ত থাকে, তার হৃদয় জীবন্ত থাকে।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৬৪০৭)
আরও পড়ুনসুস্থ জীবনের জন্য নবীজি (সা.)–এর কয়েকটি সুন্নাহ২৯ জুন ২০২৫৩. সম্পর্কের উন্নতি
যত্ন শুধু ব্যক্তিগত নয়, এটি আমাদের সম্পর্ককেও উন্নত করে। বিষাক্ত সম্পর্ক থেকে নিজেকে দূরে রাখলে ইতিবাচক সম্পর্ক গড়ার পথ তৈরি হয়। আবু দারদা (রা.) বলেছেন, ‘একজন সৎ সঙ্গী একাকিত্বের চেয়ে উত্তম, আর একাকিত্ব খারাপ সঙ্গীর চেয়ে উত্তম।’ (ইবনে জাওযি, ২০০৩, মিনহাজুল কাসিদিন, বৈরুত: দারুল কুতুব আল-ইলমিয়্যাহ, পৃষ্ঠা ৪২৪)
স্বাস্থ্যকর সম্পর্ক বজায় রাখা যত্নের একটি অংশ এবং ইসলামে এটা ব্যাপকভাবে উৎসাহিত করা হয়েছে।
অনেকে নিজের প্রতি যত্নবান হওয়াকে স্বার্থপরতা হিসেবে দেখে, এটি একটি ভুল ধারণা। এই দৃষ্টিভঙ্গির বদল দরকার। যত্ন স্বার্থপরতা নয়, বরং নিজেকে শক্তিশালী করার মাধ্যম।৪. উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি
যত্ন আমাদের শক্তি ও দক্ষতা বাড়ায়, যা আমাদের দৈনন্দিন কাজ ও ইবাদতকে আরও কার্যকর করে। যেমন পর্যাপ্ত বিশ্রাম, সুষম খাদ্য ও ব্যায়াম আমাদের নামাজ, কাজ এবং পরিবারের প্রতি দায়িত্ব পালনে সহায়তা করে। রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘মুমিন যে শক্তিশালী, সে দুর্বল মুমিনের চেয়ে উত্তম এবং আল্লাহর কাছে প্রিয়।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস: ২,৬৬৪)
৫. যত্নের মাধ্যমে কৃতজ্ঞতা
কোরআনে বলা হয়েছে, ‘তোমরা যদি কৃতজ্ঞ হও, আমি তোমাদের জন্য আরও বাড়িয়ে দেব।’ (সুরা ইবরাহিম, আয়াত: ৭)
নিজের যত্ন নেওয়া আল্লাহর দেওয়া স্বাস্থ্য ও নিয়ামতের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশের একটি উপায়। নিজের যত্ন নেওয়া মানে আল্লাহর আমানতের প্রতি সম্মান দেখানো।
নিজের যত্ন নেওয়া সম্পর্কে ভুল ধারণাঅনেকে নিজের প্রতি যত্নবান হওয়াকে স্বার্থপরতা হিসেবে দেখে, এটি একটি ভুল ধারণা। এই দৃষ্টিভঙ্গির বদল দরকার। যত্ন স্বার্থপরতা নয়, বরং নিজেকে শক্তিশালী করার মাধ্যম, যাতে আমরা অন্যদের জন্য আরও ভালোভাবে কাজ করতে পারি। ইসলামে নিজের প্রতি দয়াশীল হওয়া এবং অন্যের প্রতি দায়িত্ব পালনের মধ্যে ভারসাম্য রক্ষার ওপর জোর দেওয়া হয়েছে।
আরও পড়ুনমহানবী (সা.) যেভাবে বয়োজ্যেষ্ঠদের যত্ন নিতেন২৯ জুলাই ২০২৫উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ন জ র যত ন ন আরও ভ ল যত ন র আল ল হ আম দ র বল ছ ন র জন য র একট ইসল ম
এছাড়াও পড়ুন:
নিজের যত্নও একটি ইবাদত
নিজের যত্ন শুধু শারীরিক স্বাস্থ্যের বিষয় নয়, বরং মানসিক, আধ্যাত্মিক ও সামাজিক সুস্থতার একটি অংশ, যা আমাদের আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতা ও দায়িত্ব পালনের মাধ্যম হিসেবে কাজ করে। নিজের যত্ন মানে নিজের শারীরিক, মানসিক ও আধ্যাত্মিক সুস্থতার জন্য সময় ও মনোযোগ দেওয়া।
একজন মা যদি শিশুর যত্ন নিতে গিয়ে নিজেকে ভুলে যান এবং যত্নের অভাবে মানসিক ও শারীরিকভাবে ক্লান্ত বোধ করেন, তাহলে তিনি একসময় ভালো মা হওয়ার সুযোগ হারাবেন। নিজের যত্ন তাঁকে আরও ভালো মুসলিম, মা, স্ত্রী, কর্মী এবং বন্ধু হতে সহায়তা করে। এটি তাঁকে শান্ত ও সুখী রাখবে, ফলে প্রকারান্তরে তাঁর সন্তান আরও ভালো থাকবে।
নিশ্চয় তোমার নিজের ওপর তোমার শরীরের হক আছে। তাই রোজা রাখো এবং রোজা ভাঙো, নামাজ পড়ো এবং ঘুমাও।সুনান আবু দাউদ, হাদিস: ১,৩৬৯ইসলামে নিজের যত্নকে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে, কারণ নিজের প্রতি যত্নশীল হওয়া আল্লাহর দেওয়া শরীর ও মনের আমানত রক্ষার অংশ। রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘নিশ্চয় তোমার নিজের ওপর তোমার শরীরের হক আছে। তাই রোজা রাখো এবং রোজা ভাঙো, নামাজ পড়ো এবং ঘুমাও।’ (সুনান আবু দাউদ, হাদিস: ১,৩৬৯)
এই হাদিসটি স্পষ্টভাবে নিজের শারীরিক ও মানসিক চাহিদার প্রতি যত্নশীল হওয়ার নির্দেশ দেয়।
আরও পড়ুনহতাশা মানে কি ইমান দুর্বল হওয়া২৩ জুন ২০২৫নিজের যত্নের বিভিন্ন রূপযত্ন প্রত্যেকের জন্য ভিন্ন হতে পারে। যেমন:
পরিবারের সঙ্গে সময়মতো গরম খাবার খাওয়া।
বই পড়া, পডকাস্ট শোনা বা শিক্ষামূলক কিছু শেখা।
আরামদায়ক গোসল করা বা চা পান করা।
প্রকৃতির মাঝে হাঁটা, যেমন হ্রদের ধারে এবং আল্লাহর সৃষ্টির প্রশংসা করা।
এই কাজগুলো সাধারণ হলেও মানসিক ও আধ্যাত্মিক সুস্থতার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। এমনকি ব্যস্ত জীবনে ছোট ছোট সময় বের করে স্ব-যত্ন করা জীবনের জটিলতা মোকাবিলায় শক্তি জোগায়।
নিজের যত্ন নেওয়া কেন ইবাদত?ইসলামে নিজের যত্নকে ইবাদত হিসেবে বিবেচনা করা হয়। কারণ, এটি আল্লাহর দেওয়া আমানতের প্রতি দায়িত্ব পালনের অংশ। নিচে কিছু কারণ দেওয়া হলো:
নিজের যত্ন আরও ভালো মুসলিম, মা, স্ত্রী, কর্মী এবং বন্ধু হতে সহায়তা করে। এটা আমাদের শান্ত ও সুখী রাখে, ফলে প্রকারান্তরে সন্তান এতে আরও ভালো থাকবে।১. শরীর ও মনের আমানত রক্ষা
আল্লাহ আমাদের শরীর ও মন দিয়েছেন, যা একটি আমানত। এগুলোর প্রতি অবহেলা করা ইসলামে নিষিদ্ধ। কোরআনে বলা হয়েছে, ‘আমি যদি তোমাদের কাছে আমার নিয়ামতের কথা গণনা করতে বলি, তবে তোমরা তা গণনা করতে পারবে না।’ (সুরা ইবরাহিম, আয়াত: ৩৪)
নিজের যত্নের মাধ্যমে আমরা আল্লাহর দেওয়া শরীর ও মনের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করি।
২. আধ্যাত্মিক সংযোগ বৃদ্ধি
যত্ন আধ্যাত্মিক সংযোগ বাড়ায়। যেমন প্রকৃতিতে সময় কাটানো বা জিকর করা (আল্লাহর স্মরণ) মানসিক শান্তি দেয়। জিকরকে প্রায়ই ‘মননশীলতা’ (মাইন্ডফুলনেস) হিসেবে অনুবাদ করা হয়, যা যত্নের একটি রূপ। রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহর জিকিরে ব্যস্ত থাকে, তার হৃদয় জীবন্ত থাকে।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৬৪০৭)
আরও পড়ুনসুস্থ জীবনের জন্য নবীজি (সা.)–এর কয়েকটি সুন্নাহ২৯ জুন ২০২৫৩. সম্পর্কের উন্নতি
যত্ন শুধু ব্যক্তিগত নয়, এটি আমাদের সম্পর্ককেও উন্নত করে। বিষাক্ত সম্পর্ক থেকে নিজেকে দূরে রাখলে ইতিবাচক সম্পর্ক গড়ার পথ তৈরি হয়। আবু দারদা (রা.) বলেছেন, ‘একজন সৎ সঙ্গী একাকিত্বের চেয়ে উত্তম, আর একাকিত্ব খারাপ সঙ্গীর চেয়ে উত্তম।’ (ইবনে জাওযি, ২০০৩, মিনহাজুল কাসিদিন, বৈরুত: দারুল কুতুব আল-ইলমিয়্যাহ, পৃষ্ঠা ৪২৪)
স্বাস্থ্যকর সম্পর্ক বজায় রাখা যত্নের একটি অংশ এবং ইসলামে এটা ব্যাপকভাবে উৎসাহিত করা হয়েছে।
অনেকে নিজের প্রতি যত্নবান হওয়াকে স্বার্থপরতা হিসেবে দেখে, এটি একটি ভুল ধারণা। এই দৃষ্টিভঙ্গির বদল দরকার। যত্ন স্বার্থপরতা নয়, বরং নিজেকে শক্তিশালী করার মাধ্যম।৪. উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি
যত্ন আমাদের শক্তি ও দক্ষতা বাড়ায়, যা আমাদের দৈনন্দিন কাজ ও ইবাদতকে আরও কার্যকর করে। যেমন পর্যাপ্ত বিশ্রাম, সুষম খাদ্য ও ব্যায়াম আমাদের নামাজ, কাজ এবং পরিবারের প্রতি দায়িত্ব পালনে সহায়তা করে। রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘মুমিন যে শক্তিশালী, সে দুর্বল মুমিনের চেয়ে উত্তম এবং আল্লাহর কাছে প্রিয়।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস: ২,৬৬৪)
৫. যত্নের মাধ্যমে কৃতজ্ঞতা
কোরআনে বলা হয়েছে, ‘তোমরা যদি কৃতজ্ঞ হও, আমি তোমাদের জন্য আরও বাড়িয়ে দেব।’ (সুরা ইবরাহিম, আয়াত: ৭)
নিজের যত্ন নেওয়া আল্লাহর দেওয়া স্বাস্থ্য ও নিয়ামতের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশের একটি উপায়। নিজের যত্ন নেওয়া মানে আল্লাহর আমানতের প্রতি সম্মান দেখানো।
নিজের যত্ন নেওয়া সম্পর্কে ভুল ধারণাঅনেকে নিজের প্রতি যত্নবান হওয়াকে স্বার্থপরতা হিসেবে দেখে, এটি একটি ভুল ধারণা। এই দৃষ্টিভঙ্গির বদল দরকার। যত্ন স্বার্থপরতা নয়, বরং নিজেকে শক্তিশালী করার মাধ্যম, যাতে আমরা অন্যদের জন্য আরও ভালোভাবে কাজ করতে পারি। ইসলামে নিজের প্রতি দয়াশীল হওয়া এবং অন্যের প্রতি দায়িত্ব পালনের মধ্যে ভারসাম্য রক্ষার ওপর জোর দেওয়া হয়েছে।
আরও পড়ুনমহানবী (সা.) যেভাবে বয়োজ্যেষ্ঠদের যত্ন নিতেন২৯ জুলাই ২০২৫