অবশেষে বহুল প্রতীক্ষিত সেই ক্ষণটা এসেই গেল। পরিচয়ের ৯ বছর পর প্রেমিকা জর্জিনা রদ্রিগেজকে বিয়ের প্রস্তাব দিয়েছেন ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো। গুচির এক শোরুম থেকে যে গল্পটা শুরু হয়েছিল, সেটিই এখন চূড়ান্ত পরিণতি পাওয়ার অপেক্ষায়।

শুরুটা হয়েছিল ২০১৬ সালে মাদ্রিদের এক শীতের বিকেলে। বিকেলটা তখন সন্ধ্যার দিকে গড়িয়ে পড়ছে। সাধারণ চোখে সাদামাটা একটা দিন। কিন্তু দিনের রংটা বদলে যায় যখন সানগ্লাস পরে ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো মাদ্রিদে গুচির শো রুমে প্রবেশ করেন। কাউন্টারের পেছনে দাঁড়িয়ে ছিলেন জর্জিনা রদ্রিগেজ নামের এক তরুণী।

রোনালদোর দুনিয়াবিস্তৃত খ্যাতির সামনে জর্জিনা নিন্তান্তই এক সাধারণ বিক্রয়কর্মী। কিন্তু প্রেম বা ভালোবাসা মাঝে বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারেনি কিছুই। সেদিন চোখে চোখ পড়তেই শুরু হলো নতুন এক প্রেমের গল্প।

আরও পড়ুনরোনালদো দিলেন ১ কোটি ২০ লাখ টাকার উপহার, বাকরুদ্ধ জর্জিনা১৬ অক্টোবর ২০২১

প্রথম দিনের দেখায় তেমন কোনো কথা না হলেও সেই মুহূর্তটা যে নতুন কিছুর জন্ম দিয়েছিল, তা বুঝতে বাকি রইল না কারোই। যাকে বলে প্রথম দেখায় প্রেম। এরপরই নানা ছুতোয় দেখা করতে শুরু করলেন তাঁরা। স্বাভাবিকভাবেই প্রথম দিকে প্রেমের কথাটা সবার কাছ থেকে গোপন রেখেছিলেন তাঁরা।

রোনালদো–জর্জিনাকে প্রথম একসঙ্গে প্রকাশ্যে দেখা যায় ২০১৭ সালের জানুয়ারিতে ফিফা দ্য বেস্টের পুরস্কার অনুষ্ঠানে। তখনই মূলত এ দুজনের প্রেমের গুঞ্জনটা বাস্তবতায় রূপ নেয়। একই বছরের নভেম্বরে জর্জিনার জীবন আলোকিত করে আলানা মার্তিনা নামের কন্যাসন্তান। সে সময় রোনালদোর অন্য সন্তানদেরও দায়িত্বও নেন জর্জিনা। ২০২২ সালে আবারও মা–বাবা হন জর্জিনা–রোনালদো। জন্ম নেয় বেলা এস্মেরলাদা নামের আরেকটি কন্যাসন্তান।

শুধু সন্তানদের লালন–পালনই নয়, তখনই থেকে রোনালদোর সুখ–দুঃখ, আনন্দ–বেদনার সঙ্গে জড়িয়ে আছে জর্জিনার নাম। রোনালদোর যেকোনো বিশেষ মুহূর্তে তাঁর পাশে দেখা গেছে জর্জিনাকে। পাশাপাশি এ সময়ের মধ্যে জর্জিনাও ফ্যাশন ও বিনোদনজগতে নিজের আলাদা জায়গা তৈরি করেছেন। তবে সবকিছু ঠিকমতো চললেও প্রেমটা পরিণয়ে রূপান্তরিত না হওয়ায় একটা আক্ষেপ যেন থেকেই গিয়েছিল। অবশেষে সেই আক্ষেপও মিটতে যাাচ্ছে এবার।

রোনালদোর বাগদত্তা হওয়ার খবরটি গতকাল নিজের ইনস্টাগ্রামে হ্যান্ডলে জর্জিনা নিজেই জানিয়েছেন। একটি হাতের ওপর হীরার আংটি পরা নিজের হাতের ছবি পোস্ট করে ক্যাপশনে জর্জিনা লেখেন, ‘হ্যাঁ, আমি রাজি। এই জীবনে এবং আমার অন্য সব জন্মেও।’

আরও পড়ুনরোনালদোর সঙ্গে সম্পর্কের অবনতির গুঞ্জন নিয়ে মুখ খুললেন জর্জিনা২৮ এপ্রিল ২০২৩

স্বাভাবিকভাবেই সবার ধারণা, অন্য হাতটি রোনালদোর। এই ছবিতে স্থান হিসেবে জর্জিনা ট্যাগ করেছেন সৌদি আরবের রিয়াদ শহরকে, যেখানকার ক্লাব আল নাসরে বর্তমানে খেলছেন রোনালদো।

এখন রোনালদো ও জর্জিনা কবে শুভ পরিণয়ে আবদ্ধ হবেন, সেদিকেই চোখ থাকবে সবার। তাঁদের বিয়ের অনুষ্ঠানটা নিশ্চিতভাবে মনে রাখার মতোই একটা ঘটনা হতে যাচ্ছে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: প রথম

এছাড়াও পড়ুন:

স্বৈরতন্ত্র উত্থানের দায় আসলে কাদের

প্রাচীন গ্রিসে ক্ষুদ্র অসংখ্য নগররাষ্ট্র ছিল। সেখানে নগরের অধিবাসীকেই বলা হতো নাগরিক, যাঁরা প্রত্যক্ষভাবে রাষ্ট্রীয় কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ করতেন। রাষ্ট্রবিজ্ঞানের জনক অ্যারিস্টটল নাগরিকের সংজ্ঞা দিতে গিয়ে বলেছেন, ‘আমরা সেই সব ব্যক্তিকে নাগরিক বলব, যাদের আইন প্রণয়ন ও বিচারিক কার্যাবলিতে অংশগ্রহণের ক্ষমতা আছে।’ তাঁর মতে, যে ব্যক্তি নগররাষ্ট্রের শাসনকাজে সক্রিয়ভাবে অংশ নিতে অক্ষম, তিনি প্রকৃত নাগরিক নন।

আধুনিক রাষ্ট্রবিজ্ঞানীরা নাগরিককে সংজ্ঞায়িত করেছেন এভাবে—যেকোনো রাষ্ট্রে স্থায়ীভাবে বসবাস করেন, রাষ্ট্রের প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করেন, রাষ্ট্র প্রদত্ত সামাজিক ও রাজনৈতিক অধিকার ভোগ করেন এবং দায়িত্ব ও কর্তব্য ন্যায়ের সঙ্গে পালন করেন, তাঁকেই নাগরিক বলা যায়। একই সঙ্গে নাগরিককে অবশ্যই অন্য মানুষের অধিকার ক্ষুণ্ন না করার ব্যাপারেও সজাগ থাকতে হবে।

প্রতিটি রাষ্ট্রের সবচেয়ে মূল্যবান সম্পদ হলো সৎ, যোগ্য ও নীতিবান নাগরিক। রাষ্ট্রের কাঠামো ও ভবিষ্যৎ নির্ভর করে নাগরিকের চরিত্র ও আচরণের ওপর। তাই রাষ্ট্রের অগ্রগতির জন্য প্রয়োজন সচেতন নাগরিক—যিনি নিজের অধিকার ও কর্তব্য সম্পর্কে অবহিত। এ জ্ঞান ও সচেতনতাই রাষ্ট্রকে তার কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছে দিতে পারে। আধুনিক রাষ্ট্রব্যবস্থায় গণতন্ত্রকে বলা হয় জনগণের অংশগ্রহণে, জনগণের দ্বারা এবং জনগণের কল্যাণে পরিচালিত শাসনব্যবস্থা; কিন্তু প্রশ্ন হলো যদি জনগণ নিজেদের অধিকার সম্পর্কে অসচেতন থাকেন, তবে কি গণতন্ত্রের প্রকৃত স্বরূপ অক্ষুণ্ণ থাকে? বাস্তবতা হলো নাগরিকের অজ্ঞতা ও উদাসীনতাই স্বৈরতন্ত্রকে জন্ম দেয়।

প্রথমত, যেখানে মানুষ নিজের মৌলিক অধিকার সম্পর্কে অজ্ঞ, সেখানে শাসকগোষ্ঠী সহজেই ক্ষমতার অপব্যবহার করতে পারে। ভোটাধিকার, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা, আইনের শাসন—এসব বিষয়ে নাগরিক উদাসীন থাকলে শাসকের জবাবদিহি বিলীন হয়ে যায়, তখন গণতান্ত্রিক কাঠামো টিকে থাকলেও এর প্রাণশক্তি নিঃশেষ হয়ে যায়।

দ্বিতীয়ত, নাগরিকেরা ভয়, অজ্ঞতা বা উদাসীনতার কারণে যখন অন্যায় ও অনিয়ম মেনে নেন, তখনই স্বৈরতন্ত্র শিকড় গাড়ে। শাসকের চাপিয়ে দেওয়া সিদ্ধান্ত তারা অন্ধভাবে মেনে নিলে সরকার জবাবদিহি এড়িয়ে স্বেচ্ছাচারী হয়ে ওঠে; কিন্তু ইতিহাস সাক্ষ্য দেয়—শক্তিশালী শাসকের শাসন দীর্ঘস্থায়ী হয় কেবল তখনই, যখন জনগণ ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধ গড়ে তুলতে ব্যর্থ হয়। জার্মানি থেকে পাকিস্তান কিংবা বাংলাদেশের অতীত—সবখানেই দেখা যায়, নাগরিক–সচেতনতার অভাবেই স্বৈরতন্ত্রের বিস্তার ঘটেছিল।

তৃতীয়ত, নাগরিক সমাজ দুর্বল হলে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান যেমন গণমাধ্যম, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, শ্রমিক সংগঠন কিংবা নাগরিক সংগঠনগুলোও কার্যকর ভূমিকা রাখতে ব্যর্থ হয়। তখন শাসকেরা সহজেই বিকল্প কণ্ঠরোধ করে ‘নিয়ন্ত্রিত গণতন্ত্র’ প্রতিষ্ঠা করতে পারে। অর্থাৎ, নাগরিকের নীরবতাই শাসকের জন্য সবচেয়ে কার্যকর অস্ত্রে পরিণত হয়।

অতএব, স্বৈরতন্ত্রের কবল থেকে দেশকে রক্ষা করতে হলে সর্বাগ্রে প্রয়োজন নাগরিক শিক্ষা ও রাজনৈতিক সচেতনতা। পরিবার থেকে রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ প্রতিষ্ঠান পর্যন্ত প্রতিটি স্তরে মানুষকে জানতে হবে তাদের অধিকার, কর্তব্য ও রাষ্ট্রের কাছে দাবি করার উপায়। গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম হতে হবে সত্য প্রকাশের প্ল্যাটফর্ম, তোষণ বা প্রোপাগান্ডার যন্ত্র নয়। মনে রাখতে হবে—অধিকার চর্চা না করলে অধিকার হারিয়ে যায়। তাই প্রত্যেক নাগরিকের কর্তব্য হলো নিজের অধিকার সম্পর্কে জানা ও তা প্রয়োগ করা।

সবশেষে বলা যায়, নাগরিকের অধিকার বিষয়ে অসচেতনতা কোনো ব্যক্তিগত দুর্বলতা নয়; বরং তা রাষ্ট্রের জন্য ভয়ংকর। সচেতন নাগরিক সমাজই পারে জবাবদিহিমূলক গণতন্ত্র গড়ে তুলতে আর অসচেতন নাগরিক সমাজই সৃষ্টি করে স্বৈরতন্ত্রের জন্মভূমি।

ইসরাত জাহান

শিক্ষার্থী, লোকপ্রশাসন বিভাগ, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ‘আমরা তখনই বিজয়ী হব, যখন এই লজ্জা বহন করা বন্ধ করব’
  • স্বৈরতন্ত্র উত্থানের দায় আসলে কাদের