রাশিয়ার চলমান ইউক্রেন আক্রমণের ফলে যে বিশাল শ্রমিক ঘাটতি দেখা দিয়েছে। তা পূরণের জন্য হাজার হাজার উত্তর কোরিয়ানকে রাশিয়ায় দাস-সদৃশ পরিবেশে কাজ করতে পাঠানো হচ্ছে। মঙ্গলবার বিবিসি এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে।

যুদ্ধে সহায়তা করার জন্য মস্কো বারবার পিয়ংইয়ংয়ের দিকে ঝুঁকেছে, তাদের ক্ষেপণাস্ত্র, কামানের গোলা এবং সেনাদের ব্যবহার করছে।

দক্ষিণ কোরিয়ার গোয়েন্দা কর্মকর্তারা বিবিসিকে বলেছেন, বর্তমানে রাশিয়ার অনেক পুরুষ হয় নিহত হয়েছে, অথবা যুদ্ধে জড়িয়ে পড়েছে - অথবা দেশ ছেড়ে পালিয়ে গেছে। এর ফলে মস্কো ক্রমবর্ধমানভাবে উত্তর কোরিয়ার শ্রমিকদের উপর নির্ভর করছে।

বিবিসি জানিয়েছে, তারা যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে রাশিয়া থেকে পালিয়ে আসা ছয়জন উত্তর কোরিয়ার শ্রমিকের সাথে, সরকারি কর্মকর্তা, গবেষক এবং শ্রমিকদের উদ্ধারে সহায়তাকারী ব্যক্তিদের সাক্ষাৎকার নিয়েছে। তারা বিস্তারিতভাবে বর্ণনা করেছেন যে কীভাবে পুরুষরা ‘অতিশয়’ কর্মপরিবেশের শিকার হচ্ছে এবং কীভাবে উত্তর কোরিয়ার কর্তৃপক্ষ শ্রমিকদের পালানো বন্ধ করার জন্য তাদের উপর নিয়ন্ত্রণ কঠোর করছে।

জিন নামে এক শ্রমিক বিবিসিকে বলেন, রাশিয়ার সুদূর প্রাচ্যে অবতরণ করার সময় উত্তর কোরিয়ার একজন নিরাপত্তা এজেন্ট তাকে বিমানবন্দর থেকে একটি নির্মাণস্থলে নিয়ে যান। ওই এজেন্ট তাকে কারো সাথে কথা না বলার বা কোনো কিছুর দিকে না তাকানোর নির্দেশ দেন।

এজেন্ট তাকে বলেন, “বাইরের পৃথিবী আমাদের শত্রু।”

জিনকে সরাসরি ১৮ ঘন্টারও বেশি সময় ধরে বহুতল অ্যাপার্টমেন্ট ব্লক নির্মাণের কাজে নিযুক্ত করা হয়েছিল।

বিবিসি যে ছয়জন শ্রমিকের সাথে কথা বলেছে তারা সবাই একই শাস্তিমূলক কর্মদিবসের বর্ণনা দিয়েছেন - সকাল ৬টায় ঘুম থেকে ওঠা এবং পরের দিন ভোর ২টা পর্যন্ত বহুতল অ্যাপার্টমেন্ট নির্মাণ করতে বাধ্য করা, বছরে মাত্র দুই দিন ছুটি।

আরেক নির্মাণ শ্রমিক বলেন, “ঘুম থেকে ওঠা ছিল ভয়াবহ, বুঝতে পারছিলাম যে আপনাকে একই দিনের পুনরাবৃত্তি করতে হবে।”

এই শ্রমিক গত বছর রাশিয়া থেকে পালাতে সক্ষম হয়েছিলেন। 

চ্যান নামের আরেক শ্রমিক বলেন, “কিছু লোক দিনের বেলা ঘুমাতে তাদের কাজ ছেড়ে যেত, অথবা দাঁড়িয়ে ঘুমিয়ে পড়ত, কিন্তু তত্ত্বাবধায়করা তাদের খুঁজে বের করে মারধর করত। এটা সত্যিই এমন ছিল যেন আমরা মারা যাচ্ছি।”

দক্ষিণ কোরিয়ার ডং-এ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক কাং ডং-ওয়ান উত্তর কোরিয়ার শ্রমিকদের সাক্ষাৎকার নিতে একাধিকবার রাশিয়া ভ্রমণ করেছেন।

তিনি বলেন, “পরিস্থিতি সত্যিই ভয়াবহ।”

ঢাকা/শাহেদ

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর

এছাড়াও পড়ুন:

ইবিতে অভয়ারণ্যের মেহেদি উৎসব

হারিয়ে যাওয়া ঐতিহ্য ফেরাতে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে (ইবি) মেহেদি ও নবান্ন উৎসবের আয়োজন করেছে পরিবেশবাদী সংগঠন অভয়ারণ্য।

সোমবার (১৭ নভেম্বর) বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলায় তারা এ আয়োজন করে। 

আরো পড়ুন:

খাগড়াছড়িতে চলছে রাস উৎসব ও মেলা

পুণ্যস্নান মধ্য দিয়ে কুয়াকাটায় শেষ হলো রাস উৎসব, মেলা চলবে ৫ দিন

সরেজমিনে দেখা যায়, মেহেদি ও নবান্ন উৎসব ঘিরে শিক্ষার্থীদের ব্যাপক উপস্থিতি। রঙিন কাগজের সাজে পুরো স্থানজুড়ে তৈরি হয়েছিল উৎসবের আমেজ। পরিবেশবান্ধব বার্তা বহনকারী ঝুলন্ত ডেকোরেশন, প্রাকৃতিক মেহেদি দেওয়ার স্টল এবং সাহিত্য–সংস্কৃতির বিভিন্ন উপস্থাপনা দর্শনার্থীদের আকর্ষণ করে।

শিক্ষার্থীরা জানান, অভয়ারণ্য সবসময়ই ব্যতিক্রমী উদ্যোগ নেয়। প্রাকৃতিক মেহেদি দেওয়ার হার কমে গেলেও এ আয়োজন সেই ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করছে।

ফাতিমা খাতুন নামে ইবির এক শিক্ষার্থী বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন সংগঠনগুলোর মধ্যে অভয়ারণ্য সবসময়ই ব্যতিক্রম। আজ মেহেদি উৎসবে এসে আমার অনেক ভালো লাগছে। আজকাল প্রাকৃতিক মেহেদি দেওয়ার সংস্কৃতি অনেকটাই কমে গেছে। তারা সেই সংস্কৃতিকে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করছে। তাছাড়া নবান্ন উৎসব যেখানে একদম বিলীনপ্রায়, সেখানে তারা এটারও আয়োজন করেছে। আশা করছি, এ রকম সুন্দর আয়োজন চলমান থাকবে।”

সংগঠনটির সভাপতি নাইমুল ফারাবী বলেন, “আমরা এবার দ্বিতীয়বারের মতো মেহেদি উৎসবের আয়োজন করছি। একসময় মেয়েদের হাত সর্বদা মেহেদীর রঙে রাঙা থাকত। কিন্তু প্রযুক্তির উন্নয়নের কারণে এ চর্চা এখন কমে গেছে। এটাকে স্মরণ করিয়ে দেওয়ার জন্যই আজকের এই আয়োজন।”

তিনি বলেন, “আজ যে মেহেদি দেওয়া হচ্ছে, সেটা আমাদের সংগঠনের রোপণ করা গাছের পাতা থেকে তৈরি। এর মাধ্যমে আমরা শুদ্ধতা ছাড়িয়ে দিতে চাই।”

তিনি আরো বলেন, “মেহেদি উৎসবের পাশাপাশি আমরা এবার প্রথমবারের মতো নবান্ন উৎসব আয়োজন করেছি। এর মাধ্যমে আমার বাংলার সংস্কৃতিকে পূনর্জ্জীবিত করতে চাচ্ছি। বাংলার বহুল প্রচলিত সংস্কৃতিকে যাতে করে শিক্ষার্থীরা পুনরায় ধারণ করতে পারে, সেজন্য আমাদের এই আয়োজন।”

ঢাকা/তানিম/মেহেদী

সম্পর্কিত নিবন্ধ