রাশিয়ায় দাসের মতো কাজ করানো হচ্ছে উত্তর কোরিয়ার নাগরিকদের
Published: 12th, August 2025 GMT
রাশিয়ার চলমান ইউক্রেন আক্রমণের ফলে যে বিশাল শ্রমিক ঘাটতি দেখা দিয়েছে। তা পূরণের জন্য হাজার হাজার উত্তর কোরিয়ানকে রাশিয়ায় দাস-সদৃশ পরিবেশে কাজ করতে পাঠানো হচ্ছে। মঙ্গলবার বিবিসি এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে।
যুদ্ধে সহায়তা করার জন্য মস্কো বারবার পিয়ংইয়ংয়ের দিকে ঝুঁকেছে, তাদের ক্ষেপণাস্ত্র, কামানের গোলা এবং সেনাদের ব্যবহার করছে।
দক্ষিণ কোরিয়ার গোয়েন্দা কর্মকর্তারা বিবিসিকে বলেছেন, বর্তমানে রাশিয়ার অনেক পুরুষ হয় নিহত হয়েছে, অথবা যুদ্ধে জড়িয়ে পড়েছে - অথবা দেশ ছেড়ে পালিয়ে গেছে। এর ফলে মস্কো ক্রমবর্ধমানভাবে উত্তর কোরিয়ার শ্রমিকদের উপর নির্ভর করছে।
বিবিসি জানিয়েছে, তারা যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে রাশিয়া থেকে পালিয়ে আসা ছয়জন উত্তর কোরিয়ার শ্রমিকের সাথে, সরকারি কর্মকর্তা, গবেষক এবং শ্রমিকদের উদ্ধারে সহায়তাকারী ব্যক্তিদের সাক্ষাৎকার নিয়েছে। তারা বিস্তারিতভাবে বর্ণনা করেছেন যে কীভাবে পুরুষরা ‘অতিশয়’ কর্মপরিবেশের শিকার হচ্ছে এবং কীভাবে উত্তর কোরিয়ার কর্তৃপক্ষ শ্রমিকদের পালানো বন্ধ করার জন্য তাদের উপর নিয়ন্ত্রণ কঠোর করছে।
জিন নামে এক শ্রমিক বিবিসিকে বলেন, রাশিয়ার সুদূর প্রাচ্যে অবতরণ করার সময় উত্তর কোরিয়ার একজন নিরাপত্তা এজেন্ট তাকে বিমানবন্দর থেকে একটি নির্মাণস্থলে নিয়ে যান। ওই এজেন্ট তাকে কারো সাথে কথা না বলার বা কোনো কিছুর দিকে না তাকানোর নির্দেশ দেন।
এজেন্ট তাকে বলেন, “বাইরের পৃথিবী আমাদের শত্রু।”
জিনকে সরাসরি ১৮ ঘন্টারও বেশি সময় ধরে বহুতল অ্যাপার্টমেন্ট ব্লক নির্মাণের কাজে নিযুক্ত করা হয়েছিল।
বিবিসি যে ছয়জন শ্রমিকের সাথে কথা বলেছে তারা সবাই একই শাস্তিমূলক কর্মদিবসের বর্ণনা দিয়েছেন - সকাল ৬টায় ঘুম থেকে ওঠা এবং পরের দিন ভোর ২টা পর্যন্ত বহুতল অ্যাপার্টমেন্ট নির্মাণ করতে বাধ্য করা, বছরে মাত্র দুই দিন ছুটি।
আরেক নির্মাণ শ্রমিক বলেন, “ঘুম থেকে ওঠা ছিল ভয়াবহ, বুঝতে পারছিলাম যে আপনাকে একই দিনের পুনরাবৃত্তি করতে হবে।”
এই শ্রমিক গত বছর রাশিয়া থেকে পালাতে সক্ষম হয়েছিলেন।
চ্যান নামের আরেক শ্রমিক বলেন, “কিছু লোক দিনের বেলা ঘুমাতে তাদের কাজ ছেড়ে যেত, অথবা দাঁড়িয়ে ঘুমিয়ে পড়ত, কিন্তু তত্ত্বাবধায়করা তাদের খুঁজে বের করে মারধর করত। এটা সত্যিই এমন ছিল যেন আমরা মারা যাচ্ছি।”
দক্ষিণ কোরিয়ার ডং-এ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক কাং ডং-ওয়ান উত্তর কোরিয়ার শ্রমিকদের সাক্ষাৎকার নিতে একাধিকবার রাশিয়া ভ্রমণ করেছেন।
তিনি বলেন, “পরিস্থিতি সত্যিই ভয়াবহ।”
ঢাকা/শাহেদ
.উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
ছাত্রীর শরীরে ভালোবাসার চিহ্ন এঁকে দেওয়ার প্রস্তাব খুবি শিক্ষকের
খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের (খুবি) বাংলা ডিসিপ্লিনের অধ্যাপক ড. রুবেল আনসারের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ উঠেছে।
ব্যক্তিগত প্রশ্ন, অশালীন প্রস্তাব, একান্ত সাক্ষাতের চাপ এবং যৌন সম্পর্কের ইঙ্গিত দেওয়ার অভিযোগ করেছেন ওই ডিসিপ্লিনের এক ছাত্রী।
গত বৃহস্পতিবার (৭ আগস্ট) বিশ্ববিদ্যালয়ের যৌন হয়রানি ও নিপীড়ন নিরোধ কেন্দ্রের সভাপতির কাছে লিখিতভাবে অভিযোগ জমা দেন তিনি।
আরো পড়ুন:
উপাচার্যের মায়ের মৃত্যুর কারণে অনশন ভাঙলেন শিক্ষার্থীরা
রাকসুতে ইসলামী ছাত্র আন্দোলনের প্যানেল ঘোষণা
মঙ্গলবার (১২ আগস্ট) অভিযোগের প্রেক্ষিতে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ৭ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। যৌন হয়রানি ও নিপীড়ন নিরোধ কেন্দ্রের সভাপতি মোছা. তাসলিমা খাতুনকে কমিটির প্রধান করা হয়েছে।
অভিযোগপত্রে ভুক্তভোগী ছাত্রী উল্লেখ করেন, দুর্ঘটনার কারণে নির্ধারিত সময়ে অ্যাসাইনমেন্ট জমা দিতে না পারায় শিক্ষক ড. রুবেল আনসারের সঙ্গে কথা বলতে যান তিনি। এ সময় ওই শিক্ষক তাকে নানা ব্যক্তিগত প্রশ্ন করেন এবং অস্বস্তিকর মন্তব্য করেন। ওই শিক্ষক বলেন ‘তোমার হাত যদি পরীক্ষার আগে ঠিক না হয়, আমি ফু দিয়ে ঠিক করে দেব।’ এছাড়া খুলনায় নতুন হওয়ায় তাকে ঘুরতে নিয়ে যাওয়ার প্রস্তাবও দেন।
ভুক্তভোগীর দাবি, ওই শিক্ষক পরবর্তীতে বারবার তাকে মেসেজ দিয়ে একসঙ্গে বাইরে যাওয়ার প্রস্তাব দেন। এক পর্যায়ে নিরালা মোড়ে দেখা করার সময় ওই শিক্ষক তাকে বলেন, ‘আমি তোমাকে চাই… যেমন একজন পুরুষ একজন নারীকে চায়।’ এছাড়া তিনি প্রস্তাব দেন, একটি পরিচিত বাসায় নিয়ে যাবেন, যেখানে অন্য কেউ থাকবে না।
অভিযোগপত্রে ভুক্তভোগী জানান, প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় ওই শিক্ষক গাড়ির ভেতর তার হাত চেপে ধরেন এবং বলেন, ‘আজ না হোক কাল তোমার সারা শরীরে আমার ভালোবাসার চিহ্ন এঁকে দেবই।’ এছাড়া তিনি ফলাফল বাড়িয়ে দেওয়ার প্রলোভনও দেন।
এ ঘটনার পর থেকে ছাত্রী মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েন। তিনি অভিযোগ করে বলেন, “ওই শিক্ষক অতীতেও এমন কর্মকাণ্ডে জড়িত ছিলেন। গত ৫ আগস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য তদন্ত কমিশন গঠনের ঘোষণা দিলে আমি আনুষ্ঠানিক অভিযোগ করার সাহস পাই।”
অভিযুক্ত শিক্ষক ড. রুবেল আনসার অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, “এমন কোনো ঘটনা ঘটেনি, এর সঙ্গে বাস্তবতার কোনো মিল নেই। ওই ছাত্রী অসুস্থ থাকায় তার বাবা আমাকে একবার কল দিয়েছিলেন। সব শিক্ষার্থীই আমার কাছে সমান।”
বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রবিষয়ক পরিচালক অধ্যাপক ড. নাজমুস সাদাত বলেন, “অভিযোগ ছাত্র বিষয়ক পরিচালকের দপ্তরের মাধ্যমে এসেছে। বিষয়টি তদন্তাধীন, তাই এর বেশি মন্তব্য করা সম্ভব নয়।”
তদন্ত কমিটির প্রধান মোছা. তাসলিমা খাতুন বলেন, “গত ৭ আগস্ট অভিযোগটি ছাত্রবিষয়ক পরিচালকের দপ্তরে দাখিল করা হয় এবং সেখান থেকে ১০ আগস্ট আমাদের যৌন হয়রানি ও নিপীড়ন নিরোধ কেন্দ্রে আসে। অভিযোগ পাওয়ার পর বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ দ্রুত ৭ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে, যার দায়িত্ব আমাকে দেওয়া হয়েছে।”
তিনি বলেন, “আমরা অভিযোগকারী ও অভিযুক্ত উভয়ের বক্তব্য নেব। প্রমাণ ও সাক্ষ্য যাচাই করব এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের বিধি অনুযায়ী নিরপেক্ষতা ও গোপনীয়তা বজায় রেখে তদন্ত শেষ করে প্রতিবেদন দাখিল করব।”
ঢাকা/হাসিবুল/মেহেদী