নবীজি (সা.) যেভাবে ঘরে সময় কাটাতেন
Published: 13th, August 2025 GMT
মানুষের প্রকৃত স্বরূপ তার ঘরের চার দেয়ালের ভেতরে প্রকাশ পায়। বাইরের ব্যস্ততা শেষে তিনি এখানে কোনো প্রকার ভণিতা ছাড়া ফিরে আসেন। স্ত্রী-সন্তান, মা-বাবা, ভাই-বোন অথবা গৃহকর্মীর সঙ্গে আচরণে তাঁর প্রকৃত চরিত্র প্রতিফলিত হয়।
নবীজি (সা.) বাইরের ব্যস্ততা শেষে অন্যান্য মানুষের মতো ঘরে ফিরতেন। ঘরে তাঁর চরিত্রের নির্মলতা ফুটে উঠত। তিনি পারিবারিক কাজে সহযোগিতা করতেন। কখনো নিজের কাজ অন্যের ওপর চাপিয়ে দিতেন না। নিজের কাজ নিজেই করতেন। এমনকি ঘরের ছোটখাটো কাজও নিজ হাতে করতেন। যেমন ছাগ দোহন করতেন ও পোশাকের উকুন তালাশ করতেন।
নবীজি (সা.) ছিলেন মানুষের মধ্যে একজন মানুষ। পোশাকের মধ্যে তিনি উকুন তালাশ করতেন, ছাগ দোহন করতেন ও নিজের কাজ নিজেই সম্পন্ন করতেন।হজরত আয়েশা (রা.), শামায়েলে তিরমিজি, হাদিস: ৩৪২
আয়েশা (রা.)-কে জিজ্ঞাসা করা হলো নবীজি ঘরে অবস্থানকালে কী করতেন? তিনি বললেন, নবীজি (সা.) ছিলেন মানুষের মধ্যে একজন মানুষ। পোশাকের মধ্যে তিনি উকুন তালাশ করতেন, ছাগ দোহন করতেন ও নিজের কাজ নিজেই সম্পন্ন করতেন। (শামায়েলে তিরমিজি, হাদিস: ৩৪২)
আরও পড়ুনসুস্থ জীবনের জন্য নবীজি (সা.)–এর কয়েকটি সুন্নাহ২৯ জুন ২০২৫নবীজির ঘর ছিল সবচেয়ে বরকতময়। এ ঘর থেকে ইসলামে আলো দিগ্বিদিক ছড়িয়ে পড়েছে। কিন্তু সে ঘরে তিনি প্রায় সময় অনাহারে থাকতেন। এমনকি তাঁর পরিবারের সদস্যদের উদর পূর্ণ করে খাওয়ার মতো খেজুরও থাকত না।
নুমান ইবন বাশির (রা.) বলেন, ‘আমি নবীজিকে দেখেছি, পেটভরে খাওয়ার মতো খারাপ খেজুরও তাঁর ঘরে থাকত না।’ (শামায়েলে তিরমিজি, হাদিস: ৩৬৯)
কখনো তাঁর ঘরের চুলায় পুরো মাস আগুন জ্বলত না। এ সময় তাঁদের দিন কাটত শুধু পানি ও খেজুর খেয়ে। আয়েশা (রা.) বলেন, ‘আমরা মুহাম্মদ (সা.)-এর পরিবার সারাটা মাসপূর্ণ এমনও কাটাতাম যে আমরা আগুনও জ্বালতাম না। শুধু খুরমা ও পানি খেয়ে কাটিয়ে দিতাম।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস: ৭,১৮০)
কখনো তাঁর ঘরের চুলায় পুরো মাস আগুন জ্বলত না। এ সময় তাঁদের দিন কাটত শুধু পানি ও খেজুর খেয়ে।ঘরে নবীজির বিভিন্ন ঘরোয়া ব্যস্ততা থাকত। কিন্তু যখন আজান শুনতেন, মসজিদের উদ্দেশে বেরিয়ে যেতেন। আসওয়াদ ইবনে ইয়াজিদ (রহ.) বলেন, ‘আয়েশাকে জিজ্ঞেস করলাম, নবীজি ঘরে কী করতেন? তিনি বললেন, তিনি ঘরোয়া কাজে ব্যস্ত থাকতেন, আর আজান শুনলে বেরিয়ে যেতেন।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৪,৯৭২)
আরও পড়ুনযে ৪টি পরীক্ষা নবীজি (সা.)–এর জীবনকে দৃঢ়তা দিয়েছে২২ জুলাই ২০২৫নবীজি (সা.) মসজিদে ফরজ নামাজ আদায় করতেন, অন্যদের মসজিদে ফরজ নামাজ আদায়ের জন্য বিশেষ গুরুত্ব প্রদান করতেন। মসজিদে অনুপস্থিত ব্যক্তিদের জন্য ধমকও দিয়েছেন।
আবু হুরায়রা (রা.) বর্ণিত একটি হাদিসে তিনি বলেছেন, ‘নামাজ দাঁড়িয়ে গেলে যে সম্প্রদায় নামাজে উপস্থিত হয় না, আমার ইচ্ছা হয় তাদের বাড়ি গিয়ে তা জ্বালিয়ে দিই।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস: ২২৫৯)
তবে তিনি নফল নামাজ আদায় করতেন ঘরে। ঘরে নফল আদায়ের জন্য নির্দেশও প্রদান করেছেন। তাহাজ্জুদের দীর্ঘ নামাজ ঘরে পড়ার অভ্যাস ছিল তাঁর।
আয়েশাকে জিজ্ঞাসা করলাম, নবীজি ঘরে কী করতেন? তিনি বললেন, তিনি ঘরোয়া কাজে ব্যস্ত থাকতেন, আর আজান শুনলে বেরিয়ে যেতেন।সহিহ বুখারি, হাদিস: ৪,৯৭২আবদুল্লাহ ইবন সাদ (রা.) বলেন, ‘আমি নবীজিকে জিজ্ঞাসা করলাম, নফল নামাজ আমার ঘরে পড়া উত্তম, নাকি মসজিদে পড়া উত্তম? তিনি বললেন, তুমি দেখছ না আমার ঘর মসজিদের কত কাছে, তারপরও ফরজ নামাজ মসজিদে পড়ে অন্যান্য নামাজ ঘরে পড়াটাই ভালো মনে করি।’ (শামায়েলে তিরমিজি, হাদিস: ২৯৭)
তিনি ঘরকে পুরোপুরি নামাজশূন্য রাখতে নিষেধ করতেন। যে ঘরে কোনো নামাজ পড়া হয়, সে ঘরকে কবরের সঙ্গে তুলনা করেছেন।
আবদুল্লাহ ইবন উমর (রা) বর্ণিত এক হাদিসে তিনি বলেছেন, ‘তোমরা তোমাদের কিছু নামাজ ঘরে আদায় করবে এবং তোমাদের ঘরকে কবরে পরিণত করো না।’ (মুসনাদে আহমদ, হাদিস: ৯৩৮)
নবীজির প্রতিদিন ছিল কর্মমুখর। এ কর্ম যেমন বাইরে ছিল, তেমনি ছিল ঘরের ভেতর। বাইরের এত ব্যস্ততা শেষে ঘরে ফিরে নিজের কাজ নিজ হাতে সম্পন্ন করতেন। এতে তাঁর মোটেও দ্বিধাবোধ ছিল না।
আরও পড়ুনএকটি মসজিদ নিয়ে নবীজি (সা.)–এর ব্যতিক্রমী নির্দেশ২৩ জুলাই ২০২৫উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ন করত ন র জন য থ কত ন বলল ন মসজ দ
এছাড়াও পড়ুন:
কুষ্টিয়ায় স্ত্রী হত্যার অভিযোগে স্বামী গ্রেপ্তার
কুষ্টিয়া শহরের হাউজিং এলাকার একটি ভাড়া বাসা থেকে গৃহবধূ উর্মি খাতুনের (৩০) মরদেহ উদ্ধারের অভিযোগে স্বামী আবু বক্কর সিদ্দিক রানাকে (৩৫) গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
তবে পুলিশের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তিনি হত্যার দায় স্বীকার করেছেন বলে জানিয়েছেন কুষ্টিয়া মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোশাররফ হোসেন।
মঙ্গলবার (১২ আগস্ট) দিবাগত রাত আড়াইটার দিকে শহরের মজমপুর গেট এলাকা থেকে রানাকে গ্রেপ্তার করে কুষ্টিয়া মডেল থানা পুলিশ।
আরো পড়ুন:
সিলেটে ছুকিরাঘাতে মাদরাসা শিক্ষক নিহত
চাঁদপুরে সন্ত্রাসীদের গুলিতে রিকশাচালক নিহত
এর আগে, শনিবার (৯ আগস্ট) রাত ১০টার দিকে হাউজিং এফ ব্লকের একটি ভাড়া বাসা থেকে উর্মির মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। পরে মরদেহ কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়।
নিহত উর্মি খাতুন কুষ্টিয়া সদর উপজেলার জিয়ারখী ইউনিয়নের গোপালপুর গ্রামের মহিম মন্ডলের মেয়ে। প্রায় ৫ বছর আগে কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলার পোড়াদহ এলাকার রানা খানের সঙ্গে তার দ্বিতীয় বিয়ে হয়। তারা কুষ্টিয়া শহরের হাউজিং এলাকায় ভাড়া বাসায় বসবাস করতেন এবং সিটি কলেজের সামনে একটি কাপড় ও খাবারের দোকান পরিচালনা করতেন।
নিহতের ভাই আবু সাইদ অভিযোগ করে বলেন, “বিয়ের পর থেকেই রানা মাদকাসক্ত ছিলেন এবং এ কারণে একাধিকবার কারাগারে যান। তাদের মধ্যে পারিবারিক কলহ লেগেই থাকত। এ থেকেই ঝগড়া-বিবাদের জেরে মারধর ও শ্বাসরোধ করে উর্মিকে হত্যা করা হয়েছে।”
ওসি মোশাররফ হোসেন জানান, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে রানা স্বীকার করেছেন, স্ত্রীর পরকীয়ার সন্দেহে তিনি ক্ষিপ্ত ছিলেন। এ নিয়ে বৃহস্পতিবার রাতে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে কথাকাটাকাটির একপর্যায়ে রানা উর্মিকে মারধর করে গলাটিপে শ্বাসরোধে হত্যা করেন। পরে তিনি বাইরে থেকে ঘরে তালা লাগিয়ে পালিয়ে যান।
ঢাকা/কাঞ্চন/মেহেদী