স্থানীয় প্রশাসন হয়তো যোগসাজশ করেছে, নতুবা নীরব থেকেছে বা দুটোই করেছে: পরিবেশ উপদেষ্টা
Published: 17th, August 2025 GMT
পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, সিলেটের ভোলাগঞ্জের সাদা পাথর লুটের বিষয়ে একটা ঐক্য গড়ে ওঠে, সেই ঐক্যের বিপরীতে স্থানীয় প্রশাসন হয়তো যোগসাজশ করেছে, নতুবা নীরব থেকেছে, বা দুটোই করেছে। সে জন্য প্রশাসনের ব্যাপারে ব্যবস্থা নেওয়া হবে কি না, তা দ্রুতই দেখা যাবে।
আজ রোববার সচিবালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে উপদেষ্টা এ কথা বলেন। তিনি বলেন, ‘আপনাকে এটা বুঝতে হবে, উপদেষ্টারা কোন পর্যন্ত যেতে পারেন। একটা সভায় কোন বক্তব্যগুলো যাবে, আমরা সেই পর্যন্ত কথা বলতে পারি। কিন্তু কোন প্লেট-গ্লাসে খাওয়া দেবে, আমরা সেই কথাটা বলি না। এটা আমাদের বলার কথা নয়। মাইক্রোম্যানেজমেন্ট আমাদের করার কথা নয়। কিন্তু আমরা পাথর লুটপাট যাতে বন্ধ হয়, সে জন্যই তো ফিল্ডে (সিলেটে) গিয়েছিলাম। ফিল্ডে যাওয়ার একমাত্র কারণ ছিল যারা লুটপাট করে, তাদের একটা বার্তা দেওয়া যে আমরা এটা করেছি। আপনি আমাকে বলেন তো, গত ১০–২০ বছরে পাথর লুটের বিরুদ্ধে কোন মন্ত্রীকে স্পটে যেতে দেখেছেন? একটা উদাহরণ আমাকে দেন। কোন মন্ত্রীকে আক্রান্ত হতে দেখেছেন, একটা উদাহরণ আমাকে দেন।’
সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, ‘তার মানে এখানে যে ঐক্যটা গড়ে উঠেছে, সেই ঐক্যের বিপরীতে প্রশাসন হয়তো যোগসাজশ করেছে, নতুবা নীরব থেকেছে বা দুটোই করেছে। সে জন্য প্রশাসনের ব্যাপারে আমরা ব্যবস্থা নেব কি না, দ্রুতই দেখতে পাবেন।’
উপদেষ্টা বলেন, ‘সরকারের কাজ নীতিমালা প্রণয়ন করা, আমরা কিন্তু সেই নীতিটি ঠিকই প্রণয়ন করেছি যে এই ১৭টিতে পাথর উত্তোলন করা যাবে না। পাথর আদৌ উত্তোলন হচ্ছে কি না, এটি দেখবে মাঠপর্যায়ের প্রশাসন। আমরা বারবার প্রশাসনকে বলেছি, লিখেছি।’
উপদেষ্টা আরও বলেন, ‘আমি যখন দেখলাম, প্রশাসন কার্যকর ভূমিকা নিতে পারছে না বা নিচ্ছে না, তাদেরকে সাহস দেওয়ার জন্য আমি এবং ফাওজুল ভাই (উপদেষ্টা ফাওজুল কবির খান) দুজনই ফিল্ডে গেলাম। যখন আমরা ফেরত আসলাম, তখন আমাদের গাড়ি ঘিরে যে অশ্লীল বিক্ষোভ প্রদর্শন করা হলো এবং পরবর্তী সময় সেই বিক্ষোভের জের ধরে একটি রাজনৈতিক দল নেতাদের বহিষ্কার এবং সাসপেন্ডও করল। সেই সময় যদি প্রতিবাদটা খুব জোরালো হতো, তাহলে আজকের পরিস্থিতি ভিন্ন হতো।’
সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, ‘যা–ই হোক, বেটার লেট দ্যান নেভার। আমি জনগণকে ধন্যবাদ জানাই, তারা যে লুটেরা গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ করেছে। যার ফলে আজকে যে অবস্থাটা সৃষ্টি হয়েছে, এতে ভবিষ্যতে পাথর লুটবার আগে দুইবার চিন্তা করবে।’
রিজওয়ানা হাসান আরও বলেন, ‘পাথর কতটুকু তুলল, লুট হলো, নিয়ে গেল—এটি আমার মন্ত্রণালয়ের দেখার কথা নয়। যেহেতু আমি একজন পরিবেশকর্মী এবং সরকারে আছি, আমি দায়িত্ব নেব, কিন্তু পাথর লুট হয়ে যাওয়ার দায়টা আমাকে দেবেন না।’
উপদেষ্টা বলেন, ‘এখন দেখা যাচ্ছে তারা মামলা করছে, সেখানে আদৌ যারা দোষী, তাদের কতটুকু তালিকাভুক্ত করছেন, সেটা আমাদেরকে দেখতে হবে।’
পরিবেশ ও বন উপদেষ্টা বলেন, ‘যখন আমরা দুই উপদেষ্টা সেখানে গেলাম এবং আক্রান্ত হলাম, তারপর আমরা চলে আসলাম। তারপর কিন্তু তিন দিনব্যাপী ব্যাপক অভিযান হলো। সব পাথর ভাঙার মেশিনের বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হলো। কিন্তু তার চার-পাঁচ দিন পর সব রাজনৈতিক দল এক হয়ে চাপ প্রয়োগ করল, তারা সেখানে ঘোষণা দিল যে পাথর তুলতে দিতে হবে। পরিবহনমালিকেরা বললেন যে তাঁরা ধর্মঘট করবেন। এই ধর্মঘট কিন্তু তাঁদের নতুন নয়। যখন ২০২০ সালে পাথর তোলা বন্ধ করে দেওয়া হলো, সেই সময় করোনার মধ্যে তাঁরা দুবার পরিবহন ধর্মঘট করেছেন। তাঁদের যদি সত্যিকার অর্থে জনগণের জন্য বিন্দুমাত্র মায়া থাকত, করোনার এমন সংকটের মুহূর্তে নিজের ব্যবসায়িক স্বার্থের জন্য ধর্মঘট ডাকতে পারতেন?’
উপদেষ্টা বলেন, ‘সেই সময় আমরাও সোচ্চার ছিলাম, প্রশাসনকে আমাদের সঙ্গে আনতে পেরেছিলাম। এবার হলো কি—সর্বদলীয় ঐক্যের কথা যে আমি বলেছিলাম, সর্বদলীয় ঐক্যের কারণে প্রশাসন নিশ্চয়ই যোগসাজশে ছিল। তাহলে তারা এখন বের করতে পারে কীভাবে, পাথরগুলো কোথায়? আবার নীরবতাও ছিল। তারা হয়তো অতটা ঝুঁকি নিতে পারছিল না।’
উপদেষ্টা বলেন, ‘আজকে মানুষ তার শক্তি দেখিয়েছে। লুটেরা চক্রের বিরুদ্ধে যখন মানুষ দাঁড়ায়, তখন যতই রাজনৈতিক শক্তি ওটাকে সাপোর্ট করুক না কেন, মানুষের শক্তিটাই আসলে জয়ী হয়ে আসবে।’
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: উপদ ষ ট পর ব শ আম দ র
এছাড়াও পড়ুন:
চাঁপাইনবাবগঞ্জে তেলবাহী ট্রেনের ৫টি ওয়াগন লাইনচ্যুত
চাঁপাইনবাবগঞ্জের আমনুরা স্টেশন এলাকায় তেলবাহী ট্রেনের পাঁচটি ওয়াগন লাইনচ্যুত হয়েছে। এতে আমনুরা-রহনপুর স্টেশনের মেইন রেললাইন ব্লক হয়ে গেছে।
আটকা পড়েছে রাজশাহীগামী একটি কমিউটার ও ঈশ্বরদীগামী আরেকটি যাত্রীবাহী ট্রেন। এতে বিপাকে পড়েছেন যাত্রীরা। রবিবার (১৭ আগস্ট) সন্ধ্যা পৌনে ৬টার দিকে এই দুর্ঘটনা ঘটে। তবে, এ ঘটনায় কোনো হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি।
রহনপুর রেলওয়ে স্টেশনের স্টেশন মাস্টার জুনায়েদ আল মামুন বলেন, ‘‘তেলবাহী ট্রেনটি খুলনা থেকে আমনুরা বিদ্যুৎ পাওয়ার প্লান্টে যাচ্ছিল। এতে মোট ৩০টি ওয়াগন ছিল, এর মধ্যে পাঁচটি লাইনচ্যুত হয়েছে।’’
আরো পড়ুন:
গাজীপুরে ট্রেন আটকে পলিটেকনিক শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ
৬ ঘণ্টা পর রেলপথ ছাড়লেন রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা
তিনি আরো বলেন, ‘‘ট্রেনটি আমনুরা স্টেশনে প্রবেশের সময় লাইনচ্যুত হয়। এতে আমনুরা-রহনপুর স্টেশনের মেইন রেললাইন ব্লক হয়ে দুটি ট্রেন আটকা পড়েছে। প্রাথমিকভাবে দুর্ঘটনার কারণ জানা যায়নি।’’
আমনুরা রেলওয়ে স্টেশনের স্টেশন মাস্টার হাবিবুল হোসেন বলেন, ‘‘মালবাহী ট্রেনের লাইনচ্যুত বগিগুলো উদ্ধার করে রেললাইন স্বাভাবিক করতে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানানো হয়েছে।’’
ঢাকা/শিয়াম/রাজীব