মুসলিম বিশ্বে আধুনিকতার ধারণা এল যেভাবে
Published: 20th, September 2025 GMT
আধুনিকতা এসেছে যেন ঝড়ের মতো—শিল্পের উত্থান, যুক্তির জয়গান, ধর্মনিরপেক্ষ চিন্তা আর বিশ্বায়নের ঢেউ নিয়ে। এই পরিবর্তনের মধ্যে মুসলিম বিশ্ব দাঁড়িয়ে আছে এক ত্রিমুখী পথের সামনে: পুরোনো ঐতিহ্য ধরে রাখা, পশ্চিমের পথ অনুসরণ করা, নাকি ঐতিহ্যের আলোকে নতুন করে পথ খোঁজা।
এই লেখায় আমরা দেখব কীভাবে মুসলিম চিন্তাবিদেরা তাঁদের বিশ্বাসের জায়গা থেকে আধুনিক জীবনের প্রশ্নের উত্তর খুঁজেছেন এবং ঐতিহ্যকে নতুন রূপে ফিরিয়ে আনতে চেয়েছেন।
আধুনিকতার ঢেউ আর ঐতিহ্যের টানাপোড়েনআধুনিকতা মানে পুরোনো জীবনযাত্রার সঙ্গে বিচ্ছেদ। এটি যুক্তি, ব্যক্তিস্বাধীনতা আর শিল্পের উন্নতিকে তুলে ধরে, কিন্তু প্রায়ই ধর্মীয় জীবনের পবিত্রতাকে দূরে ঠেলে দেয়।
সমাজবিজ্ঞানী ম্যাক্স ওয়েবার আধুনিকতাকে যুক্তির জয় আর মোহভঙ্গের গল্প বলেছেন, কার্ল মার্ক্স এতে দেখেছেন পুঁজিবাদের উত্থান, আর এমিল দুর্খাইম দেখেছেন শিল্পসমাজে ব্যক্তির নতুন জায়গা।
মুসলিম চিন্তাবিদদের সামনে দাঁড়িয়েছিল তিনটি পথ: ঐতিহ্যকে আঁকড়ে ধরা, পশ্চিমকে প্রত্যাখ্যান করা, নাকি ঐতিহ্যকে নতুন করে বোঝা।মুসলিম বিশ্বে, যেখানে ধর্ম আর সম্প্রদায় জীবনের মূল ছিল, আধুনিকতার এই ধারণাগুলো যেন হৃদয়ে ধাক্কা দিয়েছে। ব্যক্তিস্বাধীনতা, অধিকার আর শাসনের নতুন ধারণা ঐতিহ্যের সঙ্গে মিলতে চায়নি।
তাই মুসলিম চিন্তাবিদদের সামনে দাঁড়িয়েছিল তিনটি পথ: ঐতিহ্যকে আঁকড়ে ধরা, পশ্চিমকে প্রত্যাখ্যান করা, নাকি ঐতিহ্যকে নতুন করে বোঝা। (মোহাম্মদ শাতাতু, ‘মডার্নিটি অ্যান্ড দ্য মুসলিম ওয়ার্ল্ড’, পৃ.
এই দ্বন্দ্ব মুসলিম হৃদয়ে গভীর প্রশ্ন জাগিয়েছে: কীভাবে আমরা আমাদের বিশ্বাস ধরে রাখব, অথচ নতুন দিনের সঙ্গে পা মেলাব? এই প্রশ্নের উত্তরে মুসলিম পণ্ডিতেরা পথ খুঁজেছেন—না পশ্চিমের অন্ধ অনুকরণে, না ঐতিহ্যের জড়তায়, বরং একটি সৃজনশীল সমন্বয়ে।
আরও পড়ুনপূর্ব যুগে মুসলিম সমাজে প্রতিবাদের ধরন১০ মে ২০২৫‘ইসলামি আধুনিকতাবাদ’উনিশ শতকে ইউরোপীয় ঔপনিবেশিকতার মুখে ‘ইসলামি আধুনিকতাবাদ’ জন্ম নেয়। সংস্কারকেরা বলেছিলেন, ইসলাম গণতন্ত্র, যুক্তি, অগ্রগতি আর শিক্ষার সঙ্গে পুরোপুরি মিলে যায়।
তাঁরা নতুন ধরনের স্কুল চেয়েছিলেন, যেখানে ধর্মীয় আর আধুনিক শিক্ষা একসঙ্গে চলবে। সংবাদপত্রের মাধ্যমে সংলাপের পথ খুলতে চেয়েছিলেন, আর সাংবিধানিক শাসনের কথা বলেছিলেন, যা ইসলামি নীতির মধ্যে থেকে স্বৈরাচারকে সীমিত করবে।
মিসরে মুহাম্মদ আলী পাশা আর খেদিভ ইসমাইল শরিয়াকে আধুনিক রাষ্ট্রের সঙ্গে মেলানোর চেষ্টা করেছিলেন। তাঁরা শরিয়াকে নতুন আইনি কাঠামোয় ঢেলেছিলেন, যাতে এটি আধুনিক জাতীয়তাবাদের সঙ্গে পা মেলায়। তাঁদের স্বপ্ন ছিল ইসলামি পরিচয় আর আধুনিক শাসনের একটি মেলবন্ধন। (মোহাম্মদ শাতাতু, ‘মডার্নিটি অ্যান্ড দ্য মুসলিম ওয়ার্ল্ড’, পৃ. ২২, মরক্কো ওয়ার্ল্ড নিউজ, রাবাত, ২০২৫)
মিসরের আল-আজহার বিশ্ববিদ্যালয় তখনকার সেই সমন্বয় সাধনের একটি উদাহরণ। এখানে ধর্মীয় শিক্ষার পাশাপাশি বিজ্ঞান, সমাজবিজ্ঞান আর দর্শন পড়ানো হয়, যেন তা ইসলাম নতুন সময়ের সঙ্গে হাত মিলিয়ে চলতে পারে।
মিসরে মুহাম্মদ আলী পাশা আর খেদিভ ইসমাইল শরিয়াকে আধুনিক রাষ্ট্রের সঙ্গে মেলানোর চেষ্টা করেছিলেন। তাঁরা শরিয়াকে নতুন আইনি কাঠামোয় ঢেলেছিলেন।কোরআনের নতুন ব্যাখ্যাআধুনিকতাবাদের পাশাপাশি কিছু সংস্কারক কোরআনের নতুন ব্যাখ্যার মাধ্যমে ঐতিহ্যকে জাগিয়ে তোলার চেষ্টা করে। স্যার সৈয়দ আহমদ খান ও মুহাম্মদ আবদুহু পুরোনো ফিকহের শ্রেণিবিন্যাসের বদলে কোরআনের নৈতিক বার্তাকে কেন্দ্রে আনায় উদ্যোগী হন। তাঁরা স্বাধীন ইজতিহাদের মাধ্যমে আধুনিক প্রশ্নের উত্তর খুঁজেছিলেন।
মুহাম্মদ আবদুহু বিশ্বাস করতেন, কোরআন সব যুগের জন্য প্রাসঙ্গিক, যদি এটি সময়ের প্রেক্ষিতে বোঝা যায়। তিনি শিক্ষা সংস্কারের মাধ্যমে যুক্তি ও বিশ্বাসের মেলবন্ধন ঘটাতে চেয়েছিলেন। (মুহাম্মদ আবদুহু, তাফসির আল-মানার, ১/৪৫, দার আল-কুতুব, কায়রো, ১৯০৫)
কিন্তু এই প্রচেষ্টা কখনো কখনো পদ্ধতিগত গভীরতার অভাবে ঐতিহ্য থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়ার ঝুঁকি তৈরি করেছে। (মোহাম্মদ শাতাতু, ‘মডার্নিটি অ্যান্ড দ্য মুসলিম ওয়ার্ল্ড’, পৃ. ২৫, মরক্কো ওয়ার্ল্ড নিউজ, রাবাত, ২০২৫)
নৈতিকতার নতুন পথফজলুর রহমানের মতো নব্য-আধুনিকতাবাদী চিন্তাবিদেরা যুক্তি, নৈতিকতা আর সময়ের প্রেক্ষিতে ইসলামকে নতুন করে বুঝতে চেয়েছেন। তিনি বলেছিলেন, কোরআনকে তার ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট আর আধুনিক জীবনের আলোকে একসঙ্গে দেখতে হবে।
তিনি নৈতিকতাকে আইনের ওপরে স্থান দিয়েছেন। ফলে দেখা যায়, তিনি শোষণমূলক সুদ নিষিদ্ধ করলেও যুক্তিসংগত সুদের অনুমোদন দেওয়ার কথা বলেছেন, যেন তা আধুনিক অর্থনীতির চাহিদা পূরণ করে। (ফজলুর রহমান, ইসলাম অ্যান্ড মডার্নিটি, পৃ. ১২৩, ইউনিভার্সিটি অফ শিকাগো প্রেস, শিকাগো, ১৯৮২)
মরক্কোর দার্শনিক তাহা আব্দুর রাহমান ইসলামি নৈতিকতার ওপর ভিত্তি করে একটি মানবিক আধুনিকতার কথা বলেছেন। তিনি পশ্চিমের একমুখী মডেল প্রত্যাখ্যান করে বহুমুখী আধুনিকতার পক্ষে কথা বলেন।
তাঁর চিন্তা যুক্তি, ভাষা, নৈতিকতা আর আধ্যাত্মিকতার মিশেলে গড়া, যা আধুনিক প্রয়োজনের সঙ্গে মিলে, কিন্তু ইসলামি মূল্যবোধের প্রতি বিশ্বস্ত থাকে। (তাহা আব্দুর রাহমান, দ্য স্পিরিট অব মডার্নিটি, পৃ. ৮৭, দার আল-ফিকর, রাবাত, ২০০৬)
কিন্তু এই প্রচেষ্টা কখনো কখনো পদ্ধতিগত গভীরতার অভাবে ঐতিহ্য থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়ার ঝুঁকি তৈরি করেছে।আরও পড়ুনভালো মুসলিম হওয়ার ১০ উপায়১০ আগস্ট ২০২৫নারীর কণ্ঠস্বরফাতিমা মেরনিসি ও লায়লা আহমেদের মতো নারীবাদী পণ্ডিতেরা ইসলামের মধ্যে নারীর কণ্ঠস্বরকে নতুন করে সামনে এনেছেন। মেরনিসির মতে, কোরআন–হাদিসের পবিত্র পাঠের পিতৃতান্ত্রিক ব্যাখ্যা নারীর অধিকারকে সীমিত করেছে। তিনি নারীর অভিজ্ঞতা ও অধিকারকেন্দ্রিক ব্যাখ্যার পক্ষে কথা বলেছেন। (ফাতিমা মেরনিসি, দ্য ভেইল অ্যান্ড দ্য মেল এলিট, পৃ. ৬৪, পার্সিয়াস বুকস, মাসাচুসেটস, ১৯৯১)
লায়লা আহমেদ তাঁর উইমেন অ্যান্ড জেন্ডার ইন ইসলাম বইয়ে মুসলিম সমাজে লিঙ্গ ভূমিকার ঐতিহাসিক গতিপথ দেখিয়েছেন, যা পশ্চিমের সরলীকৃত চিত্রের বিপক্ষে অবস্থান গ্রহণ করে। (পৃ. ১০২, ইয়েল ইউনিভার্সিটি প্রেস, নিউ হ্যাভেন, ১৯৯২)
এই নারীবাদী চিন্তাবিদদের যুক্তি ছিল, কোরআন সব মানুষের সমান মর্যাদার কথা বলে (সুরা হুজুরাত, আয়াত: ১৩) এবং প্রথম যুগের মুসলিম নারীরা পণ্ডিত, ব্যবসায়ী ও নেত্রী হিসেবে উজ্জ্বল ভূমিকা রেখেছেন।
স্বর্ণযুগের জ্ঞানের এতিহ্যইসলামি স্বর্ণযুগ (অষ্টম-চতুর্দশ খ্রিষ্টাব্দ) আমাদের জন্য একটি উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। ইবনে সিনা আর ইবনে রুশদের মতো পণ্ডিতেরা বিশ্বাস আর যুক্তির মেলবন্ধন ঘটিয়েছিলেন। বাগদাদের বাইত আল-হিকমা ছিল জ্ঞানের মিলনমেলা, যেখানে বিভিন্ন ধর্ম ও সংস্কৃতির মানুষ একসঙ্গে জ্ঞান চর্চা করত।
এই যুগ দেখিয়েছে, ধর্মীয় ঐতিহ্য যখন জ্ঞান, যুক্তি আর উন্মুক্ততাকে আলিঙ্গন করে, তখন সৃজনশীলতার ফুল ফোটে। (সৈয়দ হোসাইন নসর, সায়েন্স অ্যান্ড সিভিলাইজেশন ইন ইসলাম, পৃ. ৫৬, হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটি প্রেস, কেমব্রিজ, ১৯৬৮)
আধুনিক সময়ে ইসলামআধুনিকতা আর ইসলামি ঐতিহ্য পরস্পরের বৈরি নয় বটে এবং ইসলামি স্বর্ণযুগ দেখিয়েছে, বিশ্বাস আর যুক্তি একসঙ্গে ফুল ফুটিয়ে তুলতে পারে কিন্তু ‘ইসলামি আধুনিকতাবাদ’ বহু ক্ষেত্রে আধুনিক নৈতিকতাকে প্রাধান্য দিতে গিয়ে ইসলামের মৌলিক ধারণাকে এড়িয়ে গিয়েছে বলে মনে হয়।
ধর্মীয় ঐতিহ্য যখন জ্ঞান, যুক্তি আর উন্মুক্ততাকে আলিঙ্গন করে, তখন সৃজনশীলতার ফুল ফোটে। সৈয়দ হোসাইন নসর, সায়েন্স অ্যান্ড সিভিলাইজেশন ইন ইসলামযেমন, সুদ যেখানে মানবজাতির জন্য ধ্বংসের কারণ হিসেবে উল্লেখ করেছেন আল্লাহ, সেখানে আধুনিক সময়ের প্রয়োজনে সুদের অনুমোদন দেওয়ার কথা বলা কোরআনের ব্যাখ্যার সঙ্গে সাংঘর্ষিক বলার অবকাশ আছে।
বরং আধুনিকতা মুসলিম বিশ্বের জন্য একটি মঞ্চ, যেখানে ঐতিহ্য তার সবচেয়ে সুন্দর রূপে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করা যেতে পারে। পশ্চিমের অনুকরণে নয়, বরং ইসলামি মূল্যবোধে নিহিত একটি নিজস্ব আধুনিকতা দরকার। কোরআনের আলো, নবীজির শিক্ষা আর ঐতিহ্যের গভীরতা আমাদেরকে পথ দেখাতে পারে—এমন পথ যা ন্যায়, করুণা আর মানবিকতার, যা হৃদয়ে শান্তি এনে দেয়।
আরও পড়ুনআধুনিক এই প্রবণতার শিকড় ইসলামে২০ মে ২০২৫উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ম হ ম মদ ক রআন র ন ইসল ম একসঙ গ র নত ন র জন য বল ছ ন ন ত কত জ বন র মরক ক
এছাড়াও পড়ুন:
সাদপন্থীদের ইজতেমা আয়োজন করতে না দেওয়ার দাবি
টঙ্গীর বিশ্ব ইজতেমা ময়দানে মাওলানা সাদ কান্ধলভী অনুসারীদের (সাদপন্থী) ইজতেমা আয়োজন করতে না দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন তাবলিগ জামাতের শুরায়ে নেজাম (জুবায়েরপন্থী) অনুসারীরা। পাশাপাশি তাঁরা সরকারের প্রস্তাবে রাজি হয়ে আগামী বছরের মার্চ মাসে টঙ্গীতে বিশ্ব ইজতেমা করার কথাও বলেছেন। গত আয়োজনে ইজতেমা মাঠে হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের গ্রেপ্তার ও সাজা নিশ্চিতের দাবিও জানান তাঁরা।
আজ সোমবার জাতীয় প্রেসক্লাবের আব্দুস সালাম হলে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব দাবি জানানো হয়। ‘হযরত ওলামায়ে কেরাম ও দাওয়াত ও তাবলিগের সাথীবৃন্দের’ উদ্যোগে এ সংবাদ সম্মেলন আয়োজন করা হয়।
এর আগে গত রোববার সচিবালয়ে এক ব্রিফিংয়ে ধর্ম উপদেষ্টা আ ফ ম খালিদ হোসেন বলেন, তাবলিগ জামাতের দুই পক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে নির্বাচনের পর বিশ্ব ইজতেমা আয়োজনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
এক প্রশ্নের জবাবে তাবলিগের শুরায়ে নেজামের সাথী মুফতি আমানুল হক বলেন, ‘কোরআন ও হাদিসের কথা যারা বিকৃতভাবে উপস্থাপন করে, তাদের ইসলামি দাওয়াতের এই ময়দানে জায়গা দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। রাসুল (সা.)-এর তরিকা, সুন্নাহ ও হাদিসের অনুসরণে যারা তাবলিগি কার্যক্রম পরিচালনা করে, কেবল তারাই ইজতেমা করার অধিকার রাখে।’
মুফতি আমানুল হক আরও বলেন, ‘সরকারের ২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে জারি করা প্রজ্ঞাপনে সাদপন্থীরা শেষবারের মতো টঙ্গী ময়দানে ইজতেমা করার অনুমতি পেয়েছিল। সেই প্রজ্ঞাপনে তাদের স্বাক্ষরও রয়েছে। সরকার তখনই বুঝেছিল—একই মাঠে দুই পক্ষের ইজতেমা আয়োজন দেশের নিরাপত্তার জন্য হুমকি।’
২০২৪ সালের ডিসেম্বরের ইজতেমা মাঠে সংঘটিত হত্যাকাণ্ডের প্রসঙ্গ টেনে মুফতি আমানুল হক বলেন, ‘গত বছরের ১৮ ডিসেম্বরের রাতে সাদপন্থীদের অনুসারীরা অতর্কিত হামলা চালায়। তাদের বাংলাদেশি নেতা ওয়াসিফ সাহেবের চিঠিতে উল্লেখ ছিল, “যুগটা ব্যতিক্রমী, সবাই প্রস্তুতি নিয়ে আসবে”—এই প্রস্তুতির অংশ হিসেবেই তারা হামলার পরিকল্পনা করেছিল। ঘুমন্ত মুসল্লিদের ওপর টর্চলাইট নিয়ে হামলা চালানো হয়, যা একতরফা সন্ত্রাসী কার্যক্রম ছিল।’ তিনি দাবি করেন, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বৈঠকেও প্রমাণিত হয়েছে, ‘এ হামলা একতরফাভাবে সাদপন্থীদের পক্ষ থেকেই হয়েছিল।’
মুফতি কেফায়েত উল্লাহ আজহারী তাঁর লিখিত বক্তব্যে বলেন, কিছু স্বার্থান্বেষী ও ইসলামবিরোধী মহলের প্ররোচনায় তাবলিগ জামাতে বিভেদ সৃষ্টি হয়েছে। ভারতের মাওলানা সাদ সাহেবের অনুসারীরা বেআইনি পথে টঙ্গী ইজতেমা মাঠ ও কাকরাইল মসজিদে প্রবেশের চেষ্টা করেন। এমনকি তাঁরা সরকারকে বিব্রত করতে ‘যমুনা ভবন ঘেরাও’ কর্মসূচি ঘোষণা করেন।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় গত বছরের ২৪ ডিসেম্বর বিশৃঙ্খলাকারীদের কাকরাইল মসজিদে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা দেয় এবং শুরায়ে নেজামপন্থীদের কাকরাইলে দাওয়াত কার্যক্রম চালানোর অনুমতি দেয় বলে জানান মুফতি কেফায়েত উল্লাহ আজহারী। তিনি বলেন, ২০২৫ সালের ৪ ফেব্রুয়ারির ৬৩ নম্বর স্মারকে বলা হয়, সাদপন্থীরা শেষবারের মতো ২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে টঙ্গীতে ইজতেমা করতে পারবে, এরপর আর নয়। তারা স্বাক্ষর দিয়ে সেই শর্ত মেনে নিয়েছিল।
শুরায়ে নেজামপন্থীরা বলেন, ‘আমরা সরকারের সিদ্ধান্তকে শ্রদ্ধার সঙ্গে গ্রহণ করছি। আগামী বছরের মার্চে ইজতেমা আয়োজনের জন্য প্রস্তুতি শুরু করা হবে।’
সংবাদ সম্মেলন থেকে সরকারের কাছে ৪ দফা দাবি পেশ করেন তাবলিগ জামাতের শুরায়ে নেজাম (জুবায়েরপন্থী) অনুসারীরা। তাঁদের দাবিগুলো হলো ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহের মধ্যে ইজতেমার তারিখ ঘোষণা, টঙ্গী ইজতেমা মাঠকে অস্থায়ীভাবে ‘কেপিআই’ হিসেবে ঘোষণা, বিদেশি মেহমানদের ভিসা সহজীকরণের পরিপত্র নভেম্বরের শেষ সপ্তাহে প্রকাশ ও গত বছরের ইজতেমা মাঠে সংঘটিত হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের গ্রেপ্তার ও বিচার।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন মাওলানা শাহরিয়ার মাহমুদ, মতিন উদ্দিন আনোয়ার, রুহুল আমিন এবং তাবলিগ জামাত বাংলাদেশের (শুরায়ে নেজাম) মিডিয়া সমন্বয়ক হাবিবুল্লাহ রায়হান।