খুলনায় চাঁদাবাজির অভিযোগে বাড়ি থেকে ধরে এনে পিটুনি, যুবক নিহত
Published: 21st, September 2025 GMT
খুলনায় চাঁদাবাজির অভিযোগে গণপিটুনিতে আলমগীর হোসেন (৩৮) নামের এক যুবক নিহত হয়েছেন। গতকাল শনিবার বিকেলে ফুলতলা উপজেলার জামিরা বাজারে এ ঘটনা ঘটে।
নিহত আলমগীর ডুমুরিয়া উপজেলার টোলনা গ্রামের হায়দার আলী মোল্লার ছেলে। তাঁর মরদেহ খুলনা মেডিকেল কলেজের মর্গে রাখা হয়েছে। আজ রোববার সকাল পর্যন্ত ঘটনায় কোনো মামলা হয়নি। কাউকে আটকও করা হয়নি।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্র জানায়, গতকাল বিকেলে পাঁচ–ছয়জন মুখোশধারী মোটরসাইকেলে করে জামিরা বাজারের দুটি দোকানে গিয়ে চাঁদা দাবি করে হুমকি দিয়ে চলে যায়। পরে তারা বাজারের মাদ্রাসা রোডে জামিরা বাজার বণিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন কবির মোল্লাকে খুঁজতে থাকে। এ সময় তাঁকে না পেয়ে প্রাণনাশের হুমকি দিয়ে গালাগাল করে। ঘটনার সময় হুমায়ুন কবির বাজারের মাছ আড়তে অবস্থান করছিলেন। খবর পেয়ে তাঁর অনুসারীরা দোকানপাট বন্ধ করে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু করেন।
স্থানীয় লোকজন জানান, বিক্ষুব্ধ ওই ব্যক্তিরা বিকেলে পাশের টোলনা গ্রামের বাড়ি থেকে আলমগীরকে ধরে জামিরা চৌরাস্তা মোড়ে নিয়ে যান এবং গণপিটুনি দেন। খবর পেয়ে ফুলতলা থানা–পুলিশ ঘটনাস্থলে যায়। একপর্যায়ে আলমগীর কিছু বলতে শুরু করলে পুলিশের সামনেই আবারও তাঁকে পিটুনি দেওয়া হয়।
ফুলতলা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জেল্লাল হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘আলমগীরকে বাড়ি এনে গণপিটুনি দেওয়া হয় বলে জেনেছি। অসংখ্য মানুষ তাঁকে মারপিট করছিল। সংবাদ পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে যায়। রক্তাক্ত অবস্থায় তাঁকে উদ্ধার করে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়ছিল।’
ওসি জেল্লাল হোসেন আরও বলেন, ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, নিহত ব্যক্তি তাঁদের কাছে চাঁদা দাবি করেছিলেন। বিষয়টি পুলিশ তদন্ত করছে। তবে এখনো কোনো মামলা হয়নি। কাউকেও আটক করা হয়নি। গণপিটুনি ঠেকানো গেল না কেন—এমন প্রশ্নের জবাবে ওসি বলেন, ‘আমরা কয়েকজন পুলিশ আর তারা হাজার হাজার মানুষ। ঘটনা শোনার সঙ্গে সঙ্গেই আমরা গিয়েছি। এরই মধ্যে ঘটনাটি ঘটে যায়। আমরা তাঁকে রক্তাক্ত অবস্থায় উদ্ধার করেছি।’
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
রাউজানে যুবদল কর্মীকে গুলি করে হত্যার ঘটনায় তাঁর সহযোগী গ্রেপ্তার
চট্টগ্রামের রাউজানে মোটরসাইকেলে বাড়ি ফেরার পথে যুবদল কর্মী আলমগীর আলমকে গুলি করে হত্যার ঘটনায় এক যুবককে পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে। গ্রেপ্তার যুবক আলমগীর আলমের সহযোগী ছিলেন। গতকাল শনিবার রাতে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়।
গ্রেপ্তার যুবকের নাম মুহাম্মদ রাজু (২৮)। তিনি পৌরসভার ৯ নম্বর ওয়ার্ডের রহমতপাড়ার মৃত নুর নবীর ছেলে। পুলিশ জানিয়েছে, আলমগীর আলমকে গুলি করার সময় তাঁর পেছনে একটি মোটরসাইকেলে ছিলেন মুহাম্মদ রাজু।
গত ২৫ অক্টোবর বিকেলে রাউজান পৌরসভার ৯ নম্বর ওয়ার্ডের চারাবটতল বাজারসংলগ্ন কায়কোবাদ জামে মসজিদের সামনে গুলি করে হত্যা করা হয় আলমকে। এ সময় তাঁর স্ত্রী ও সন্তান পেছনে একটি অটোরিকশায় ছিলেন। পাশের গ্রামের এক আত্মীয়ের বাড়ি থেকে দাওয়াত খেয়ে বাড়িতে ফিরছিলেন তাঁরা। আলমের বাড়ি পার্শ্ববর্তী ঢালারমুখ এলাকায়।
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, কবরস্থানে লুকিয়ে থাকা আটজন অস্ত্রধারী আলমকে লক্ষ্য করে গুলি ছোড়েন। এ সময় মোটরসাইকেলে থাকা আলম ঘটনাস্থলেই নিহত হন। অস্ত্রধারীরা তাঁকে হত্যার পর রাঙামাটি সড়ক দিয়ে অটোরিকশা ও মোটরসাইকেলে পালিয়ে গেছেন। নিহত আলমের শরীরে পাঁচটি গুলির চিহ্ন পাওয়া যায়।
রাউজান থানা-পুলিশ জানায়, আলম নিহত হওয়ার দুই দিন পর তাঁর বাবা আবদুস সাত্তার বাদী হয়ে ২১ জনের নামোল্লেখ এবং অজ্ঞাতনামা আরও ৬ থেকে ৭ জনকে আসামি করে রাউজান থানায় মামলা করেন। মামলার এজাহারে রাজুর নাম নেই। তবে ঘটনার তদন্তে হত্যাকাণ্ডে তাঁর সম্পৃক্ততার তথ্য পাওয়া গেছে।
এর আগে এ মামলায় এজাহারভুক্ত দুই আসামি গ্রেপ্তার হয়েছেন। তাঁরা হলেন রাউজান কলেজ ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি মুহাম্মদ রাসেল খান (৩২) ও পৌরসভার ৯ নম্বর ওয়ার্ডের রহমতপাড়ার বাসিন্দা ও যুবদল কর্মী মুহাম্মদ হৃদয় (৩০)।
রাউজান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মনিরুল ইসলাম ভূঁইয়া প্রথম আলোকে বলেন, যখন অস্ত্রধারীরা আলমগীর আলমকে গুলি করার জন্য কবরস্থানে লুকিয়ে ছিলেন, তখন আলমগীর আলমের পেছনে একটি মোটরসাইকেলে ছিলেন রাজু। তিনি আলমগীরের সহযোগী হিসেবে পরিচিত। তবে হত্যাকাণ্ডে তাঁর সম্পৃক্ততার তথ্য পাওয়া গেছে। রোববার তাঁকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে অস্ত্র-মাদকসহ বিভিন্ন মামলায় ১২ বছর কারাগারে ছিলেন আলম। তিনি গত বছরের ৫ আগস্টের পর জামিনে মুক্তি পান। চট্টগ্রাম উত্তর জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি গোলাম আকবর খন্দকারের অনুসারী হিসেবে পরিচিত তিনি।