দখলের দায় পৌর কর্তৃপক্ষ এড়াতে পারে না
Published: 24th, September 2025 GMT
জলাবদ্ধতা এখন শুধু বড় শহরগুলোর সমস্যা নয়, জেলা-উপজেলা শহরেও এ সমস্যা এখন প্রকট হয়ে উঠেছে। সেখানকার খালগুলোও একের পর এক দখল ও দূষণের শিকার হতে থাকার কারণে এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। মুন্সিগঞ্জ শহরের পাশ দিয়ে একসময় প্রবাহিত ছিল শতবর্ষী একটি খাল। শহরের পানিনিষ্কাশনের প্রধান একটি মাধ্যম ছিল এটি। আজ সেই খাল প্রভাবশালী মহলের ব্যক্তিগত স্বার্থের বলি হয়ে তার অস্তিত্ব হারাচ্ছে। আর পৌরসভা কর্তৃপক্ষের দায়িত্বহীনতার কারণে এ ঘটনা ঘটছে, যা খুবই দুঃখজনক।
প্রথম আলোর প্রতিবেদন জানাচ্ছে, মুন্সিগঞ্জ শহরের পাশ দিয়ে প্রবাহিত শতবর্ষী একটি খাল ভরাট করে নালা নির্মাণ করা হয়েছে। এতে খালটি একটি অংশ অস্তিত্ব হারিয়েছে। অবশিষ্ট অংশও দখল হওয়ার পথে। অভিযোগ উঠেছে, জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সহসভাপতি ও সদর উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান নাজমুল হাসান খালের একটি অংশ দখল করে বহুতল বাড়ি নির্মাণ করেছেন। সে বাড়ি রক্ষা করতেই পৌরসভা কর্তৃপক্ষ খালটি ভরাট করে নালা নির্মাণ করে। ২০২৪ সালের ৪ এপ্রিল ৮৪ লাখ ৮৮ হাজার ৯৪০ টাকা ব্যয়ে খালটির ওপর ১৫০ মিটার আরসিসি নালা নির্মাণ করা শুরু হয়। সরকারি টাকা ব্যবহার করে ব্যক্তিবিশেষের সুবিধার জন্য পরিবেশের এমন ক্ষতি করা এক চরম দায়িত্বহীনতার পরিচয়।
খালটি দিয়ে একসময় বড় বড় নৌকা চলত। খালের পানি গোসল, রান্নাবান্নাসহ গৃহস্থালির সব ধরনের কাজে ব্যবহৃত হতো। খালটি দিয়ে মুন্সিগঞ্জ শহর ও কলেজপাড়া এলাকার বন্যা-বৃষ্টির পানি নামত। দুই বছর আগেও বর্ষায় কাদাযুক্ত ঘোলা জোয়ারে পানি ঢুকত খালটিতে। তবে খালের উৎসমুখসহ বিভিন্ন স্থান দখলে খালটি এখন ডোবায় পরিণত হয়েছে। যে যার মতো ভরাট ও দখল করেছে। খালটি ভরাট ও দখল হওয়ার কারণে সামান্য বৃষ্টিতেই শহরের প্রধান সড়কগুলোতে হাঁটুসমান পানি জমে যায়। সুপারমার্কেট, বাজার, হাসপাতাল, থানা সড়কসহ সব গুরুত্বপূর্ণ এলাকা জলাবদ্ধতার শিকার হচ্ছে।
সহকারী প্রকৌশলী মোশাররফ হোসেনের বক্তব্য, এ প্রকল্পের কাজ বিগত সরকারের আমলে সবার সিদ্ধান্তে শুরু হয়েছিল এবং তাঁর কাজ শুধু সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করা। কিন্তু দেখা গেল, বিগত সরকার ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পরও প্রকল্পের কাজ বাস্তবায়ন করে গেছেন তাঁরা। প্রকল্পটি বাতিল করার কোনো সদিচ্ছাও প্রকাশ পায়নি।
মুন্সিগঞ্জের মতো একটি ঐতিহ্যবাহী শহরের শতবর্ষী খাল এভাবে হারিয়ে যাবে, তা কোনোভাবে মানা যায় না। আমরা আশা করব, নালাসহ সব অবৈধ ও পরিবেশবিরোধী স্থাপনা উচ্ছেদ করে খালটি পুনরুদ্ধার করা হবে। শহরের পানিনিষ্কাশনের ব্যবস্থা সচল করা হবে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ন র ম ণ কর শহর র প
এছাড়াও পড়ুন:
আসাম-টাইপ শতবর্ষী জমিদারবাড়ি, ভেতরে ভুতুড়ে অনুভূতি
চারপাশে অসংখ্য গাছগাছালি। কোনো কোনো গাছের বয়স ১০০ পেরিয়েছে। আছে রংবেরঙের নানা প্রজাতির ফুলের গাছও। উঠানে শুকাতে দেওয়া ধান খুঁটে খাওয়ার চেষ্টা করছে দোয়েল, চড়ুই, কাক। বাতাসের শোঁ শোঁ শব্দ আর মাঝেমধ্যে পাখির ডাক ছাড়া কোনো শব্দই নেই। একেবারেই নীরব, নির্জন, নিস্তব্ধ পরিবেশ।
দৃশ্যটি সিলেটের ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলার মাইজগাঁও ইউনিয়নের রাজাপুর গ্রামের। এমনই এক স্থানে ঐতিহ্যের স্মারক হয়ে দাঁড়িয়ে আছে আসাম-টাইপ স্থাপত্যরীতিতে তৈরি করা কাঠের শতবর্ষী এক দোতলা বাড়ি। এখন থেকে ১০১ বছর আগে, ১৩৩১ বঙ্গাব্দে বাড়িটি তৈরি করেছিলেন জমিদার জয়নারায়ণ দেব চৌধুরী। পরবর্তী সময়ে এ বাড়ি জয়নারায়ণ দেব চৌধুরীর ছেলে জিতেন্দ্র নারায়ণ দেব চৌধুরী কামাখ্যার নামে ‘কামাখ্যা বাবুর বাড়ি’ আর ‘বাবুর বাড়ি’ হিসেবে স্থানীয়ভাবে পরিচিতি পায়।
বয়স শত বছর পেরোলেও বাড়িটি এখনো বসবাসের উপযোগী। উত্তরসূরিদের প্রায় সবাই প্রবাসে থাকলেও মাঝেমধ্যে দেশে আসেন। কিছুদিন পূর্বপুরুষদের তৈরি বাড়িতে সময় কাটিয়ে আবার তাঁরা প্রবাসে চলে গেলে যথারীতি বাড়ির দরজা-জানালা আবারও বন্ধ থাকে। এতে ঘরজুড়ে সারাক্ষণ থাকে গুমোট অবস্থা। সুযোগ বুঝে দুয়েকটি কক্ষে বাদুড়ও আবাস গেড়ে নেয়। বিভিন্ন কক্ষের দখল নেয় ইঁদুর, টিকটিকি আর তেলাপোকারাও।
জমিদারবাড়ির দ্বিতীয় তলায় ওঠানামা করতে আছে কাঠের সিঁড়ি