প্রতিবছর ২৬ সেপ্টেম্বর বিশ্বজুড়ে পালিত হয় ‘বিশ্ব গর্ভনিরোধ দিবস’। দিনটি মূলত গর্ভনিরোধের প্রয়োজনীয়তা, সচেতনতা এবং সবার জন্য নিরাপদ ও কার্যকর গর্ভনিরোধের পদ্ধতি নিশ্চিত করার লক্ষ্যে উদ্যাপিত হয়। এটি কেবল একটি স্বাস্থ্য ইস্যুই নয়, বরং নারীর অধিকার, শিশুর সুস্থ ভবিষ্যৎ, পরিবার পরিকল্পনা এবং টেকসই উন্নয়নের সঙ্গেও গভীরভাবে যুক্ত।
গর্ভনিরোধ শুধু জন্মনিয়ন্ত্রণের হাতিয়ার নয়, এটি নারী ও পুরুষ উভয়ের জন্য স্বাস্থ্য, অধিকার এবং স্বাধীনতার প্রতীক। বিশ্ব গর্ভনিরোধ দিবস পালনের মূল উদ্দেশ্য হলো সমাজের প্রতিটি স্তরে গর্ভনিরোধের সঠিক ও বৈজ্ঞানিক তথ্য ছড়িয়ে দেওয়া, যাতে প্রত্যেকেই নিজের পছন্দ ও শারীরিক চাহিদা অনুযায়ী উপযুক্ত পদ্ধতি বেছে নিতে পারে।
আরও পড়ুনজীবনসঙ্গীর কি শারীরিক সম্পর্কে আগ্রহ নেই২৯ আগস্ট ২০২৫বৈশ্বিক প্রেক্ষাপট
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ডব্লিউএইচওর তথ্য অনুযায়ী, প্রায় ২১.
গর্ভনিরোধের বিভিন্ন পদ্ধতি
আজকের যুগে গর্ভনিরোধের বহু বিকল্প রয়েছে—ওরাল পিল, কনডম, ইনজেকশন, ইমপ্লান্ট, আইইউডি, নির্বীজন অস্ত্র ইত্যাদি।
স্বাস্থ্য পেশাদারদের ভূমিকা
চিকিৎসক, প্রসূতিবিশেষজ্ঞ, কাউন্সেলর এবং কমিউনিটি হেলথ ওয়ার্কারদের অবদান অপরিসীম। তাঁরা শুধু ওষুধ বা যন্ত্র সরবরাহ করেন না, বরং সঠিক তথ্য, মানসিক সমর্থন এবং নিরাপদ পরামর্শের মাধ্যমে মানুষকে সক্ষম করেন। বিশেষ করে গ্রামীণ ও পিছিয়ে পড়া এলাকায় এই ভূমিকা আরও গুরুত্বপূর্ণ।
শিক্ষা ও সচেতনতা
অনেক সময় ভুল ধারণা, সামাজিক ট্যাবু বা ধর্মীয় বিশ্বাসের কারণে মানুষ গর্ভনিরোধ নিয়ে কথা বলতে ভয় পান। স্কুল-কলেজে যৌনশিক্ষা, মিডিয়া প্রচারণা এবং কমিউনিটি আলোচনার মাধ্যমে তরুণ-তরুণীদের মধ্যে সচেতনতা গড়ে তোলা হয়।
বিশ্ব গর্ভনিরোধ দিবস শুধু একটি প্রচারণা নয়, এটি একটি আহ্বান। আহ্বান সমাজ, সরকার ও ব্যক্তিকে একত্রে এগিয়ে আসার, যাতে প্রতিটি মানুষ, বিশেষ করে নারী—নিজের শরীর ও জীবনের ওপর নিয়ন্ত্রণ রাখতে পারে। গর্ভনিরোধ মানে শুধু গর্ভধারণ রোধ করা নয়, বরং স্বাস্থ্য, শিক্ষা, অর্থনৈতিক স্বাধীনতা এবং মর্যাদার পথ প্রশস্ত করা। আসুন, সবাই মিলে ভুল ধারণা ভাঙি, সচেতনতা বাড়াই এবং নিশ্চিত করি, প্রতিটি ব্যক্তির হাতে থাকুক নিজের ভবিষ্যৎ গঠনের ক্ষমতা।
অধ্যাপক ডা. মুনিরা ফেরদৌসী, সাবেক বিভাগীয় প্রধান, স্ত্রীরোগ ও প্রসূতি বিভাগ, শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল
আরও পড়ুনসম্পর্কে জড়ানোর আগে এই পাঁচ বিষয় অবশ্যই ভেবে দেখবেন১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
ইবিতে অভয়ারণ্যের মেহেদি উৎসব
হারিয়ে যাওয়া ঐতিহ্য ফেরাতে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে (ইবি) মেহেদি ও নবান্ন উৎসবের আয়োজন করেছে পরিবেশবাদী সংগঠন অভয়ারণ্য।
সোমবার (১৭ নভেম্বর) বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলায় তারা এ আয়োজন করে।
আরো পড়ুন:
খাগড়াছড়িতে চলছে রাস উৎসব ও মেলা
পুণ্যস্নান মধ্য দিয়ে কুয়াকাটায় শেষ হলো রাস উৎসব, মেলা চলবে ৫ দিন
সরেজমিনে দেখা যায়, মেহেদি ও নবান্ন উৎসব ঘিরে শিক্ষার্থীদের ব্যাপক উপস্থিতি। রঙিন কাগজের সাজে পুরো স্থানজুড়ে তৈরি হয়েছিল উৎসবের আমেজ। পরিবেশবান্ধব বার্তা বহনকারী ঝুলন্ত ডেকোরেশন, প্রাকৃতিক মেহেদি দেওয়ার স্টল এবং সাহিত্য–সংস্কৃতির বিভিন্ন উপস্থাপনা দর্শনার্থীদের আকর্ষণ করে।
শিক্ষার্থীরা জানান, অভয়ারণ্য সবসময়ই ব্যতিক্রমী উদ্যোগ নেয়। প্রাকৃতিক মেহেদি দেওয়ার হার কমে গেলেও এ আয়োজন সেই ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করছে।
ফাতিমা খাতুন নামে ইবির এক শিক্ষার্থী বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন সংগঠনগুলোর মধ্যে অভয়ারণ্য সবসময়ই ব্যতিক্রম। আজ মেহেদি উৎসবে এসে আমার অনেক ভালো লাগছে। আজকাল প্রাকৃতিক মেহেদি দেওয়ার সংস্কৃতি অনেকটাই কমে গেছে। তারা সেই সংস্কৃতিকে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করছে। তাছাড়া নবান্ন উৎসব যেখানে একদম বিলীনপ্রায়, সেখানে তারা এটারও আয়োজন করেছে। আশা করছি, এ রকম সুন্দর আয়োজন চলমান থাকবে।”
সংগঠনটির সভাপতি নাইমুল ফারাবী বলেন, “আমরা এবার দ্বিতীয়বারের মতো মেহেদি উৎসবের আয়োজন করছি। একসময় মেয়েদের হাত সর্বদা মেহেদীর রঙে রাঙা থাকত। কিন্তু প্রযুক্তির উন্নয়নের কারণে এ চর্চা এখন কমে গেছে। এটাকে স্মরণ করিয়ে দেওয়ার জন্যই আজকের এই আয়োজন।”
তিনি বলেন, “আজ যে মেহেদি দেওয়া হচ্ছে, সেটা আমাদের সংগঠনের রোপণ করা গাছের পাতা থেকে তৈরি। এর মাধ্যমে আমরা শুদ্ধতা ছাড়িয়ে দিতে চাই।”
তিনি আরো বলেন, “মেহেদি উৎসবের পাশাপাশি আমরা এবার প্রথমবারের মতো নবান্ন উৎসব আয়োজন করেছি। এর মাধ্যমে আমার বাংলার সংস্কৃতিকে পূনর্জ্জীবিত করতে চাচ্ছি। বাংলার বহুল প্রচলিত সংস্কৃতিকে যাতে করে শিক্ষার্থীরা পুনরায় ধারণ করতে পারে, সেজন্য আমাদের এই আয়োজন।”
ঢাকা/তানিম/মেহেদী