Prothomalo:
2025-11-17@10:46:25 GMT

ট্রেন

Published: 28th, September 2025 GMT

ট্রেনটি কেবল যাত্রী আর মালপত্রে ঠাসা ছিল না, ভরা ছিল উত্তেজনায়, আবেগে। এটি একটি পুরোনো ট্রেন, সেই সব ট্রেনের মতো যেগুলো সৈন্যদের বহন করে, আমরা যুদ্ধের সিনেমায় যেমন ট্রেনে দেখি।

‘যখন থেকে ট্রেনটা বানানো হয়েছে, তখন থেকে আমাদের নিয়ে ছুটছে,’ পাশে বসা পঞ্চাশোর্ধ্ব ডাক্তার প্রতিবেশী আমাকে বললেন। তার কথায় সন্দেহ করার কারণ ছিল না। ট্রেনে ওঠার আগের কিছুই আমার স্পষ্ট মনে পড়ে না। ট্রেনের গর্জনের মধ্যে আমার জাগরণ, তার ঝংকারের মধ্যে আমার বেড়ে ওঠা। ছুটছে অবশ্য দ্রুতই, সময় যেন আমাদের পেছনে ফেলে ধীরে ধীরে এগোচ্ছে।

আমার পাশের সঙ্গীর সঙ্গে আমি খুব কমই কথা বলতাম। চামড়ার সিটে পাশাপাশি বসে আমরা কেবল তীব্র ঝাঁকুনির সময় দৃষ্টি বিনিময় করতাম। চারপাশের হট্টগোল, কথার গুঞ্জন আমার কথা বলার ইচ্ছাকে গ্রাস করে নিত। বেশ কয়েকবার বলতে গিয়েও দেখেছি আমার মুখ খোলার আগেই আলো নিভে যায়। অন্ধকারে কথা বলতে পারতাম, নিশ্চয়ই। জোরে কথা বললে তিনি শুনতেনও। কিন্তু অন্ধকারে কথার প্রভাব আলোর মতো হয় না। হঠাৎ অন্ধকার নেমে এলে আমার চিন্তা বিক্ষিপ্ত হয়ে যায়। তা ছাড়া এমন সময়ে কে বলতে পারে, কেউ কোনো অপরাধ ঘটাবে না?

সামনের দুই প্রতিবেশী—একজন খাটো মোটা, আরেকজন লম্বা টাকওয়ালা—তারা সবকিছু থেকে বিচ্ছিন্ন। লাভ-ক্ষতি, ব্যবসার নীতি, হাতছাড়া না হওয়া সুযোগ, কী করা উচিত, কী উচিত নয়—এসব নিয়ে তাদের কথা থামে না। উচ্চৈঃস্বরে, উত্তপ্ত নিশ্বাসে তারা কথা বলে; পরস্পরের সমঝোতা দৃশ্যমান। তাদের কথায় ছেদ পড়ে না—না হঠাৎ অন্ধকারে, না হট্টগোলে।

তবু আমাকে কথা বলতে হতো। পাশের সঙ্গী ছিলেন সাধারণ ধরনের মানুষ, আমার নীরবতার জবাবে নীরবতা, কথার জবাবে কথা।

‘টানেল,’ তিনি ফিসফিস করে বললেন, ‘টানেলে ঢোকার সময় আলো নিভে যায়। এগুলো এত দীর্ঘ যে.

..’

‘আমি কি এমন সময়ই কথা বলার জন্য বেছে নিলাম?’ আমি বললাম।

‘না, তুমি বেছে নাওনি। এটাই ঘটে।’

প্রতিবার টানেলের কাছাকাছি এলে আমার কথা বলার তাগিদ বেড়ে যায়, যদিও জানতাম না আমরা টানেলের কাছে কি না। যদিও এগুলো টানেলমাত্র, যাত্রীরা তবু এটাকে সহজভাবে নিত না। প্রথমে গুঞ্জন, তারপর চিৎকার, তারপর আলো নিভে যাওয়ার প্রতিবাদ। আমিও সাহস পেয়ে কথা বলতাম। আর তেমনই চলতে লাগল।

ট্রেনটি ছিল বিশাল, একটি শহরের মানুষ ধরার মতো। দৃষ্টিসীমা যত দূর যায়, তত বড়। গ্রামের শীতের রাতের চেয়েও দীর্ঘ। বগি অসংখ্য। প্রতিটা বগি একটা আস্ত ট্রেনের মতো ভারী। যাত্রীরা একে অপরকে চিনত, আর যারা চিনত না—যেমন আমি আর ডাক্তার—তারাও এই যাত্রায় পরিচিত হয়েছে। এ এক কঠিন, দীর্ঘ যাত্রা, আমাদের কল্পনার চেয়েও দীর্ঘ। কখন পৌঁছাব, তা আমরা জানতাম না। শুধু জানতাম, আমাদের ট্রেন তার পথে চলছে। যতক্ষণ চলছে, ততক্ষণ আমরা এগিয়ে যাচ্ছি।

মাহমুদ রিমাভি

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: আম দ র

এছাড়াও পড়ুন:

ইবিতে অভয়ারণ্যের মেহেদি উৎসব

হারিয়ে যাওয়া ঐতিহ্য ফেরাতে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে (ইবি) মেহেদি ও নবান্ন উৎসবের আয়োজন করেছে পরিবেশবাদী সংগঠন অভয়ারণ্য।

সোমবার (১৭ নভেম্বর) বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলায় তারা এ আয়োজন করে। 

আরো পড়ুন:

খাগড়াছড়িতে চলছে রাস উৎসব ও মেলা

পুণ্যস্নান মধ্য দিয়ে কুয়াকাটায় শেষ হলো রাস উৎসব, মেলা চলবে ৫ দিন

সরেজমিনে দেখা যায়, মেহেদি ও নবান্ন উৎসব ঘিরে শিক্ষার্থীদের ব্যাপক উপস্থিতি। রঙিন কাগজের সাজে পুরো স্থানজুড়ে তৈরি হয়েছিল উৎসবের আমেজ। পরিবেশবান্ধব বার্তা বহনকারী ঝুলন্ত ডেকোরেশন, প্রাকৃতিক মেহেদি দেওয়ার স্টল এবং সাহিত্য–সংস্কৃতির বিভিন্ন উপস্থাপনা দর্শনার্থীদের আকর্ষণ করে।

শিক্ষার্থীরা জানান, অভয়ারণ্য সবসময়ই ব্যতিক্রমী উদ্যোগ নেয়। প্রাকৃতিক মেহেদি দেওয়ার হার কমে গেলেও এ আয়োজন সেই ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করছে।

ফাতিমা খাতুন নামে ইবির এক শিক্ষার্থী বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন সংগঠনগুলোর মধ্যে অভয়ারণ্য সবসময়ই ব্যতিক্রম। আজ মেহেদি উৎসবে এসে আমার অনেক ভালো লাগছে। আজকাল প্রাকৃতিক মেহেদি দেওয়ার সংস্কৃতি অনেকটাই কমে গেছে। তারা সেই সংস্কৃতিকে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করছে। তাছাড়া নবান্ন উৎসব যেখানে একদম বিলীনপ্রায়, সেখানে তারা এটারও আয়োজন করেছে। আশা করছি, এ রকম সুন্দর আয়োজন চলমান থাকবে।”

সংগঠনটির সভাপতি নাইমুল ফারাবী বলেন, “আমরা এবার দ্বিতীয়বারের মতো মেহেদি উৎসবের আয়োজন করছি। একসময় মেয়েদের হাত সর্বদা মেহেদীর রঙে রাঙা থাকত। কিন্তু প্রযুক্তির উন্নয়নের কারণে এ চর্চা এখন কমে গেছে। এটাকে স্মরণ করিয়ে দেওয়ার জন্যই আজকের এই আয়োজন।”

তিনি বলেন, “আজ যে মেহেদি দেওয়া হচ্ছে, সেটা আমাদের সংগঠনের রোপণ করা গাছের পাতা থেকে তৈরি। এর মাধ্যমে আমরা শুদ্ধতা ছাড়িয়ে দিতে চাই।”

তিনি আরো বলেন, “মেহেদি উৎসবের পাশাপাশি আমরা এবার প্রথমবারের মতো নবান্ন উৎসব আয়োজন করেছি। এর মাধ্যমে আমার বাংলার সংস্কৃতিকে পূনর্জ্জীবিত করতে চাচ্ছি। বাংলার বহুল প্রচলিত সংস্কৃতিকে যাতে করে শিক্ষার্থীরা পুনরায় ধারণ করতে পারে, সেজন্য আমাদের এই আয়োজন।”

ঢাকা/তানিম/মেহেদী

সম্পর্কিত নিবন্ধ