জুলাই হত্যা মামলা প্রত্যাহারে পিপি সুপারিশ করেননি বলে দাবি
Published: 5th, October 2025 GMT
ফেনীতে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে শহীদ ওয়াকিল আহমেদ শিহাব হত্যা মামলাটি প্রত্যাহারে সরকারি কৌঁসুলি (পিপি) সুপারিশ করেননি। এটি জালিয়াতি হতে পারে। আজ রোববার ফেনী আদালতের পিপি মেজবাহ উদ্দিন খান জেলা রিপোর্টার্স ইউনিটি মিলনায়তনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এই দাবি করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে পিপি মেজবাহ উদ্দিন খান বলেন, একটি জাতীয় দৈনিক জুলাই শহীদ ওয়াকিল হত্যা মামলাটি প্রত্যাহারে মন্ত্রণালয়ে পিপি সুপারিশ করেছেন বলা হয়েছে, যা সত্য নয়। ওয়াকিল হত্যা মামলার নম্বরের সঙ্গে সুপারিশ হওয়া মামলাগুলোর মিল নেই। যেখানে ফেনীর-৩ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও জাতীয় পার্টির সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মাসুদ উদ্দিন চৌধুরী, ফেনী-২ আসনে সাবেক সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নিজাম উদ্দিন হাজারী, ফেনী-১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও সাবেক প্রধানমন্ত্রীর সাবেক প্রটোকল অফিসার আলাউদ্দিন আহমেদ চৌধুরী নাসিমকে আসামি করা হয়। এই মামলা প্রত্যাহার করতে পিপি কোনো সুপারিশ করেননি। আইন মন্ত্রণালয়ের আবেদনে মামলাটি প্রত্যাহারের যদি কোনো সুপারিশ করা হয়ে থাকে, সেটি তার সই করা নয়। মামলা প্রত্যাহারের তালিকায় ওয়াকিল হত্যা মামলাটি যদি থেকে থাকে, তাহলে কোনো পক্ষ জালিয়াতির আশ্রয় নিয়ে করতে পারে। এর সঙ্গে তিনি জড়িত নন।
মামলা প্রত্যাহারের সুপারিশের আসামিদের মধ্যে আলোচিত কারও নাম না লিখে আবদুল্লাহ আল মহসিন ও আবুল কালাম নামের অন্য দুজন আসামির নাম লেখা হয়েছে সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে পিপি বলেন, তিনি এ বিষয়ে কিছু জানেন না। আইন মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে পিপির কাছে লিখিত ব্যাখ্যা চেয়েছে। পিপি তাঁর লিখিত বক্তব্য মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছেন। সেখান থেকে পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।
পিপি আরও বলেন, বিগত ফ্যাসিস্ট সরকারের আমলে ২০০৯ থেকে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট পর্যন্ত তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকারের দায়ের করা বিএনপি ও জামায়াতের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে মিথ্যা হয়রানি ষড়যন্ত্রমূলক মামলা প্রত্যাহারের মন্ত্রণালয়ের চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে জেলা থেকে ৫৮০টি মামলার সুপারিশ করা হয়েছে। সেই তালিকা অনুযায়ী ইতিমধ্যে ২২৩টি মামলা প্রত্যাহার করা হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে ফেনী জজকোর্টের আইনজীবী পার্থ পাল চৌধুরী, হুমায়ুন কবির বাদল, রেজাউল করিম তুহিন ভূঞা প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: স প র শ কর উদ দ ন সদস য
এছাড়াও পড়ুন:
জকসু: ছাত্রদলের প্যানেল থেকে লড়বেন জুলাইয়ে গুলিবিদ্ধ অনিক
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় শিক্ষার্থী সংসদ (জকসু) নির্বাচনে ছাত্র রাজনীতির অঙ্গনে আলোচিত এক নাম অনিক কুমার দাস। ২০২৪ সালের জুলাই গণঅভ্যুত্থানে গুলিবিদ্ধ হয়ে ৩ মাস জীবন-মৃত্যুর লড়াই পেরিয়ে ওঠা এই শিক্ষার্থী মুক্তিযুদ্ধ ও গণতন্ত্র বিষয়ক সম্পাদক পদে প্রার্থী হয়েছেন ছাত্রদল সমর্থিত ‘ঐক্যবদ্ধ নির্ভীক জবিয়ান’ প্যানেল থেকে।
অনিক ছিলেন জুলাই গণঅভ্যুত্থানের অন্যতম সম্মুখসারির কর্মী। ১৬ জুলাই ঢাকার সিএমএম কোর্টের সামনে আওয়ামী সন্ত্রাসীদের গুলিতে তিনি গুরুতর আহত হন। গুলিটি তার খাদ্যনালী ভেদ করে শরীরের অন্য পাশ দিয়ে বের হয়ে যায়। প্রথমে ন্যাশনাল মেডিকেলে, পরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে অস্ত্রোপচার হয়।
আরো পড়ুন:
তারেক রহমানের জন্মদিনে ছাত্রদলের ব্যতিক্রমী উদ্যোগ
জবি ছাত্র জোবায়েদ হত্যা মামলায় ২ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ
কিন্তু ৩১ জুলাই তাকে হাসপাতাল থেকে জোর করে বের করে দেওয়া হলে অবস্থার আরো অবনতি হয়। ১১ আগস্ট ভর্তি করা হয় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি সেমিস্টার ফাইনাল পরীক্ষায় অংশ নেন।
জুলাই গণঅভ্যুত্থানে নিজের ভূমিকা সম্পর্কে অনিক বলেন, “আন্দোলনের প্রথমদিন থেকেই উন্মুক্ত লাইব্রেরি থেকে আমরা কার্যক্রম শুরু করি। পরে ১১ জুলাই সিনিয়রদের সরে যাওয়ার ঘোষণার পর আমরা কয়েকজন নেতৃত্ব দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান গেট ভেঙে শাহবাগে পৌঁছাই। ১৪ ও ১৫ জুলাই পুলিশের ব্যারিকেড পেরিয়ে টিএসসিতে অবস্থান নিই, সেদিন ছাত্রলীগ সন্ত্রাসীদের হামলারও শিকার হই।”
তিনি বলেন, “১৬ জুলাই বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে থেকে মিছিল নিয়ে এগোতেই সিএমএম আদালতের সামনে আওয়ামী সন্ত্রাসীরা বন্দুক দিয়ে হামলা করে। পাল্টা ধাওয়া দিতে গেলে একটি গুলি এসে আমার পেটে লাগে। এরপর টানা ৩ মাস মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করেছি।”
ছাত্রদলের প্যানেলে যুক্ত হওয়ার কারণ হিসেবে তিনি জানান, ছাত্রদলের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ততা, জবিকে নিয়ে তাদের ইতিবাচক চিন্তা এবং শিক্ষার্থীদের অধিকার আদায়ের অঙ্গীকার তাকে অনুপ্রাণিত করেছে।
নির্বাচনে জয়-পরাজয় নিয়ে অনিক বলেন, “এটা সম্পূর্ণ শিক্ষার্থীদের বিশ্বাসের বিষয়। আমি সবসময় তাদের ন্যায্য দাবির পাশে ছিলাম, ভবিষ্যতেও থাকব। শিক্ষার্থীদের কাছে পৌঁছানোর চেষ্টা করছি, বাকিটা তারা সিদ্ধান্ত নেবেন।”
বিজয়ী হলে করণীয় সম্পর্কে তিনি বলেন, “শিক্ষাঙ্গনকে সন্ত্রাসমুক্ত করে শিক্ষার্থীদের মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করাই হবে প্রথম দায়িত্ব। ৭১-এর মহান মুক্তিযুদ্ধ, ৯০-এর গণ-অভ্যুত্থান এবং ২০২৪-এর ফ্যাসিস্ট হাসিনাবিরোধী গণঅভ্যুত্থান সম্পর্কে শিক্ষার্থীদের জানাবো, যেন ভবিষ্যতে কোনো স্বৈরাচারী শক্তি শিক্ষাজীবন বিপন্ন করতে না পারে।”
গত ৫ নভেম্বর ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী ১২ নভেম্বর প্রকাশিত হয়েছে চূড়ান্ত ভোটার তালিকা। নির্বাচনে কেন্দ্রীয় ও হল সংসদ মিলিয়ে মোট ২৪৯ জন প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন।
১৯–২০ নভেম্বর ছিল বাছাই, ২৩ নভেম্বর প্রাথমিক প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করা হবে। ২৪–২৬ নভেম্বর আপত্তি গ্রহণ ও নিষ্পত্তি, ২৭ ও ৩০ নভেম্বর প্রার্থীদের ডোপ টেস্ট অনুষ্ঠিত হবে। ৩ ডিসেম্বর চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশের পর ৪, ৭ ও ৮ ডিসেম্বর মনোনয়ন প্রত্যাহারের সুযোগ থাকবে।
৯ থেকে ১৯ ডিসেম্বর চলবে প্রচারণা। ২২ ডিসেম্বর ভোটগ্রহণ ও গণনা শেষে ২২–২৩ ডিসেম্বরের মধ্যে প্রকাশ করা হবে ফলাফল।
ঢাকা/লিমন/মেহেদী