পশ্চিমবঙ্গের কারাগারে ৮৯ শতাংশ বাংলাদেশি
Published: 5th, October 2025 GMT
পুরো ভারতে যত বিদেশি জেলবন্দি কয়েদী আছে সেই তালিকায় সবচেয়ে বেশি অর্থাৎ এক নম্বরে অবস্থান করছে পশ্চিমবঙ্গ। আবার পশ্চিমবঙ্গে বিদেশি জেলবন্দীদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি রয়েছেন বাংলাদেশি। সম্প্রতি ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ডস ব্যুরো (এনসিআরবি) কর্তৃক প্রকাশিত রিপোর্টে এমন তথ্য উঠে এসেছে।
(এনসিআরবি) কর্তৃক প্রকাশিত ‘ভারতের প্রিজন স্ট্যাটিস্টিকস ২০২৩’ অনুযায়ী, ভারতের বিভিন্ন কারাগারে বন্দি ৬ হাজার ৯৫৬ জন বিদেশি নাগরিকের মধ্যে ২ হাজার ৫০৮ জন অর্থাৎ ৩৬ শতাংশ পশ্চিমবঙ্গের কারাগারে রয়েছেন। শুধু তাই নয়, রাজ্যটির কারাগারে আটক বিদেশি বন্দিদের মধ্যে অধিকাংশই (৮৯ শতাংশ) আবার বাংলাদেশি নাগরিক। অবৈধভাবে ভারতে প্রবেশের অভিযোগে বিভিন্ন সময়ে তাদের আটক করা হয়।
স্ট্যাটিসটিকস অনুসারে, বাংলাদেশি বন্দিদের মধ্যে দণ্ডপ্রাপ্ত ৭৭৮ জন। বিচারাধীন রয়েছেন ১ হাজার ৪৪০ জন। রাজ্যে বিদেশি বন্দির দিক থেকে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে মিয়ানমার। দেশটির বিচারাধীন বন্দিদের বেশির ভাগের বয়স ১৮ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে।
রিপোর্ট বলছে, পশ্চিমবঙ্গের কারাগারে থাকা ৭৯৬ জন বিদেশি দণ্ডিত বন্দির মধ্যে ২০৪ জন নারী। তবে সাজাপ্রাপ্ত বিদেশি বন্দির থেকে বিচারাধীন বন্দির সংখ্যা বেশি, সংখ্যাটা ১ হাজার ৪৯৯ জন। তার আগের বছর ২০২২ সালে পশ্চিমবঙ্গের কারাগারে সাজাপ্রাপ্ত বিদেশি বন্দির সংখ্যা ছিল ৪৭১ জন, বিচারাধীন বন্দির সংখ্যা ছিল ১ হাজার ৪২৪ জন। ২০২১ সালে সাজাপ্রাপ্ত বিদেশি বন্দির সংখ্যা ছিল ৩২৯ জন এবং বিচারাধীন বন্দির সংখ্যা ছিল ১ হাজার ১৭৯ জন।
এনসিআরবির দেওয়া এই তথ্যেই পরিস্কার যে, ভারতের কারাগারগুলোতে বিচারাধীন বন্দির সংখ্যা ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে। পশ্চিমবঙ্গের অনেক পরে রয়েছে মহারাষ্ট্র, যেখানে ২০২৩ নালে বিদেশি বন্দির সংখ্যা ৭৭৩ জন, দিল্লিতে ৭৫১ জন এবং উত্তর প্রদেশে ৪৮১ জন।
ভারতের সাথে বাংলাদেশের ৪ হাজার ৯০৬ কিলোমিটার দীর্ঘ সীমান্ত রয়েছে। আবার এর অর্ধেকেরও বেশি সীমান্ত রয়েছে পশ্চিমবঙ্গের সাথে। এই বিস্তীর্ণ সীমান্তের কিছু এলাকা অরক্ষিত হওয়ার কারণে অনুপ্রবেশের ঘটনাও ঘটে। স্বাভাবিক কারণেই পশ্চিমবঙ্গে বাংলাদেশি নাগরিকদের বন্দি থাকার ঘটনাটিও বেশি।
আইনজীবীদের অভিমত, পশ্চিমবঙ্গে বিচারাধীন বন্দির সংখ্যা বৃদ্ধির একাধিক কারণ রয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে অভিযুক্ত ব্যক্তিদের পক্ষে আইনজীবী জোগাড় করতে না পারা, বিচার বিভাগীয় বেঞ্চের অনুপস্থিতি এবং বিচার আদালতের অতিরিক্ত চাপ।
মূলত, পশ্চিমবঙ্গের কারাগারে সাজার মেয়াদ শেষ হওয়ার পরই ‘বিদেশি আঞ্চলিক নিবন্ধন অফিস’-এর (এফআরআরও) নির্দেশে অবৈধ বন্দিদের সেদেশে ফেরত পাঠানো হয়। কিন্তু রাজ্যের এক সিনিয়র কর্মকর্তা বলেন, “তবে, আমাদের বারবার আবেদন সত্ত্বেও, রাজ্য থেকে বাংলাদেশিদের ফেরত পাঠানোর হার অত্যন্ত কম।”
এনসিআরবির ২০২৩ সালের রিপোর্ট অনুযায়ী, পশ্চিমবঙ্গের কারাগারগুলোর প্রতিটিতেই অতিরিক্ত বন্দিদের চাপে অবস্থা খুব শোচনীয়। এছাড়াও কারাগারে নারীদের জন্য কম সুযোগ-সুবিধা, কারা কর্মীদের উপর ক্রমবর্ধমান চাপের ঘটনাও প্রকাশ পেয়েছে।
রিপোর্ট অনুযায়ী, বন্দিদের দখলে কারাগারের শতকরা ১২০ ভাগ। রাজ্যটির ৬০টি কারাগারে যেখানে ভারতীয় ও বিদেশি মিলিয়ে ধারণক্ষমতা মোট ২১ হাজার ৪৭৬ জন বন্দির, সেখানে গাদাগাদি করে ২৫ হাজার ৭৭৪ জন বন্দি অবস্থান করছে।
ঢাকা/সুচরিতা/ফিরোজ
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ব চ র ধ ন বন দ র স খ য বন দ দ র
এছাড়াও পড়ুন:
বছরে বিশ্বের এক–তৃতীয়াংশ নারী সঙ্গীর হাতে নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন: ডব্লিউএইচওর প্রতিবেদন
বিশ্বের প্রায় এক-তৃতীয়াংশ নারী জীবনে কোনো না কোনো সময়ে স্বামী বা ঘনিষ্ঠ সঙ্গীর হাতে শারীরিক অথবা যৌন সহিংসতার শিকার হয়েছেন—সংখ্যার হিসাবে এর পরিমাণ প্রায় ৮৪ কোটি।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) নতুন এক প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে। গতকাল বুধবার এই প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত এক বছরে ১৫ বছর বা তার বেশি বয়সের প্রায় ৩১ কোটি ৬০ লাখ নারী ও মেয়েশিশু নিজের একজন ঘনিষ্ঠ সঙ্গীর হাতে শারীরিক বা যৌন সহিংসতার শিকার হয়েছেন।
২০০০ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে ১৬৮টি দেশের সংগৃহীত তথ্য বিশ্লেষণ করে ডব্লিউএইচও এই প্রতিবেদন প্রস্তুত করেছে।এই সংখ্যা বিশ্বজুড়ে এই বয়সসীমার নারী ও মেয়েশিশুদের প্রায় ১১ শতাংশের সমান।
বুধবার প্রকাশিত এই প্রতিবেদনের সঙ্গে ডব্লিউএইচওর মহাপরিচালক তেদরোস আধানোম গেব্রেয়াসুস একটি বিবৃতি দিয়েছেন।
বিবৃতিতে ডব্লিউএইচও মহাপরিচালক বলেন, ‘নারীর প্রতি সহিংসতা মানবজাতির ওপর হওয়া প্রাচীনতম এবং সর্বব্যাপী অন্যায়। অথচ এখন পর্যন্ত এ নিয়ে সবচেয়ে কম পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।’
গেব্রেয়াসুস আরও বলেন, ‘কোনো সমাজই নিজেকে ন্যায্য, নিরাপদ বা সুস্থ বলতে পারে না, যখন তার অর্ধেক জনসংখ্যা ভয়ের মধ্যে বাস করে। এই সহিংসতা শেষ করা কেবল নীতিগত বিষয় নয়; এটি মর্যাদা, সমতা এবং মানবাধিকার–সংক্রান্ত বিষয়। প্রতিটি পরিসংখ্যানের পেছনে এমন একজন নারী বা মেয়ে রয়েছেন, যাঁর জীবন চিরতরে বদলে গেছে।’
নারীর প্রতি সহিংসতা মানবজাতির ওপর হওয়া প্রাচীনতম এবং সর্বব্যাপী অন্যায়, অথচ এখন পর্যন্ত এ নিয়ে সবচেয়ে কম পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।তেদরোস আধানোম গেব্রেয়াসুস, ডব্লিউএইচও মহাপরিচালকআগামী ২৫ নভেম্বর আন্তর্জাতিকভাবে নারীর বিরুদ্ধে সহিংসতার অবসান দিবস পালিত হবে।
জাতিসংঘের ‘নারী ও মেয়েশিশুদের প্রতি সহিংসতা নির্মূলের আন্তর্জাতিক দিবস’–কে সামনে রেখে ডব্লিউএইচও এই প্রতিবেদনটি প্রকাশ করেছে।
২০০০ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে ১৬৮টি দেশের সংগৃহীত তথ্য বিশ্লেষণ করে ডব্লিউএইচও এই প্রতিবেদন প্রস্তুত করেছে।
ছবি: প্রথম আলো গ্রাফিকস