প্রতিবছর সাহিত্যের জগতে যে পুরস্কারের দিকে সবার নজর থাকে, তা হলো—‘নোবেল প্রাইজ ইন লিটারেচার’। ১৯০১ সালে শুরু হওয়া এ সম্মাননা দেওয়া হয় সেসব লেখক, কবি বা নাট্যকারকে, যাঁরা ‘মানবতার কল্যাণে অসাধারণ সাহিত্যিক অবদান রেখেছেন’। এ ক্ষেত্রে শুধু জীবিত লেখকেরাই বিবেচনায় আসেন; মৃত ব্যক্তিকে এ পুরস্কার দেওয়া হয় না। সাধারণত যাঁরা ভাষার সীমা অতিক্রম করে মানব অভিজ্ঞতাকে নতুন আলোয় হাজির করেন, ইতিহাস ও সমাজের কঠিন প্রশ্নগুলোকে ভিন্ন দৃষ্টিতে দেখতে শেখান, তাঁরাই আসেন আলোচনায়।

২০১৫: সলতিয়েনা আলেক্সিয়েভিচ

বেলারুশি লেখক ও সাংবাদিক সলতিয়েনা আলেক্সিয়েভিচ মৌখিক ইতিহাসকে সাহিত্যে রূপ দেওয়ার জন্য ২০১৫ সালে নোবেল পান। যুদ্ধ, চেরনোবিল বিপর্যয় কিংবা সোভিয়েত জীবনের পতন—তিনি সংগ্রহ করেছেন সাধারণ মানুষের কণ্ঠস্বর, সাক্ষাৎকার আর স্মৃতি। ভয়েসেস ফ্রম চেরনোবিল, দ্য আনওম্যানলি ফেস অব ওয়ার কিংবা সেকেন্ডহ্যান্ড টাইম দেখিয়েছে, ইতিহাস কেবল রাজনীতিকদের দলিল নয়; বরং মানুষের কান্না, ভাঙা স্বপ্ন আর বেঁচে থাকার সংগ্রামের সমষ্টি।

২০১৬: বব ডিলান

অপ্রত্যাশিতভাবেই ২০১৬ সালে নোবেল পান মার্কিন সংগীতশিল্পী ও গীতিকার বব ডিলান। কারণ, তাঁর গানগুলো কেবল সুর নয়, একেকটা সময়ের ইতিহাস। ‘ব্লোইন’ ইন দ্য উইন্ড’ কিংবা ‘দ্য টাইমস দে আর আ চেঞ্জিং’ সত্তরের দশকের সামাজিক আন্দোলনের কণ্ঠস্বর হয়ে ওঠে। নোবেল কমিটি স্বীকৃতি দেয়—গানও সাহিত্য হতে পারে এবং সাহিত্যের প্রভাব রাখতে পারে সমাজ পরিবর্তনের আন্দোলনে। বব ডিলানের পুরস্কার জেতা অনেক বিতর্কও তোলে, কিন্তু একই সঙ্গে সাহিত্যের সীমানাকে বিস্তৃত করে।

২০১৭: কাজুও ইশিগুরো

জাপানে জন্ম নেওয়া ব্রিটিশ লেখক কাজুও ইশিগুরো নোবেল পান ২০১৭ সালে। তাঁর লেখার প্রধান বিষয় স্মৃতি, ভ্রান্তি ও আত্মপ্রবঞ্চনা। দ্য রিমেইনস অব দ্য ডে উপন্যাসে এক বাটলারের জীবনে দায়িত্ব ও ব্যক্তিগত অনুভূতির দ্বন্দ্ব উঠে আসে। আর নেভার লেট মি গো ভবিষ্যতের এক ডিস্টোপিয়ান পৃথিবীতে মানুষ হওয়ার অর্থ নিয়ে প্রশ্ন তোলে। ইশিগুরো নীরব, সংযত গদ্যে মানুষের অস্তিত্বের গভীরতর দিকগুলো খুঁজে বের করেন।

২০১৮: ওলগা তোকারচুক

পোল্যান্ডের লেখক ওলগা তোকারচুক পান ২০১৮ সালের নোবেল। ইতিহাস, পুরাণ ও ভ্রমণের অভিজ্ঞতাকে মিশিয়ে তিনি রচনা করেন এমন সব বই, যা একই সঙ্গে জ্ঞানভিত্তিক ও কল্পনাশক্তিতে সমৃদ্ধ। ফ্লাইটস (যা ম্যান বুকার ইন্টারন্যাশনাল জয় করে) ভ্রমণ ও শরীরকে কেন্দ্র করে নানা গল্প একত্র করে। আর দ্য বুকস অব জ্যাকব ইউরোপের আঠারো শতকের ধর্মীয় আন্দোলনের পটভূমিতে বিস্তৃত এক কাহিনি। তাঁর সাহিত্য মানুষকে দেখায়, আমরা সবাই এক দীর্ঘ, চিরন্তন যাত্রার অংশ।

২০১৯: পিটার হান্ডকে

অস্ট্রিয়ান লেখক পিটার হান্ডকে তাঁর পরীক্ষামূলক গদ্য ও নাটকের জন্য ২০১৯ সালে নোবেল পান। ভাষা ও অভিজ্ঞতার ভেতরের সীমান্ত ভাঙাই তাঁর প্রধান লক্ষ্য। এ সোরো বিয়ন্ড ড্রিমস বইয়ে তিনি নিজের মায়ের আত্মহত্যার কাহিনি লিখেছেন। আর শর্ট লেটার, লং ফেয়ারওয়েল উপন্যাসে বিচ্ছিন্নতা ও যাত্রার প্রতীকী রূপ মেলে। তাঁর কাজ পাঠককে মানুষের ভেতরের নীরবতা, দুঃখ ও ভাঙনের গভীরে নিয়ে যায়।

২০২০: লুইস গ্লুক

মার্কিন কবি লুইস গ্লুক ২০২০ সালে নোবেল পান। তাঁর কাব্যধারা সংযত অথচ তীক্ষ্ণ। দ্য ওয়াইল্ড আইরিস বইয়ে তিনি প্রকৃতিকে মানুষের অন্তর্দ্বন্দ্বের প্রতীক করেছেন। আর এ ভিলেজ লাইফ ও ফেইথফুল অ্যান্ড ভার্চ্যুয়াস নাইট-এ উঠে আসে পারিবারিক স্মৃতি, ব্যক্তিগত যন্ত্রণা ও নীরব আশা। গ্লুকের কবিতায় দেখা যায়, ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা কীভাবে হয়ে ওঠে সর্বজনীন।

২০২১: আবদুলরাজাক গুরনাহ

তাঞ্জানিয়ায় জন্ম নেওয়া ব্রিটিশ লেখক আবদুলরাজাক গুরনাহ উপনিবেশ-পরবর্তী আফ্রিকার অভিজ্ঞতা নিয়ে লিখেছেন। ২০২১ সালে তিনি নোবেল পান। প্যারাডাইস, বাই দ্য সি এবং আফটারলাইভস উপন্যাসগুলোতে শরণার্থীজীবনের যন্ত্রণা, উপনিবেশের দাগ ও পরিচয়ের টানাপোড়েন উঠে আসে। গুরনাহর লেখায় ইতিহাসের কষ্টকেই দেখা যায় মানবিকতার দৃষ্টিতে।

২০২২: অ্যানি আর্নো

ফরাসি লেখক অ্যানি আর্নো ২০২২ সালের নোবেল পান। তাঁর লেখায় ব্যক্তিগত স্মৃতি হয়ে ওঠে সমষ্টিগত ইতিহাস। দ্য ইয়ারস বইটি একদিকে আত্মজীবনী, অন্যদিকে ফ্রান্সের সমাজ পরিবর্তনের দলিল। শ্রেণি, লিঙ্গ, ভালোবাসা, বিচ্ছিন্নতা—সবকিছু তিনি লেখেন নির্মোহ ভঙ্গিতে। তাঁর শক্তি হলো ব্যক্তিগতকে সর্বজনীনে রূপান্তর করা।

২০২৩: ইয়োন ফসে

নরওয়ের লেখক ইয়োন ফসে সমসাময়িক নাট্যকারদের মধ্যে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ কণ্ঠস্বর। ২০২৩ সালে তিনি নোবেল পান। তাঁর নাটকগুলোতে নীরবতা, মৃত্যু, বিশ্বাস ও মানবিক একাকিত্ব বারবার ফিরে আসে। আর ‘সেপ্টোলজি’ সিরিজে বিশ্বাস ও অস্তিত্বের প্রশ্নকে তিনি ভাষার মিতব্যয়ী ছন্দে প্রকাশ করেছেন। ফসে দেখান, শব্দ কম হলেও সাহিত্যের গভীরতা অসীম হতে পারে।

২০২৪: হান কাং

২০২৪ সালে প্রথম কোরিয়ান হিসেবে নোবেল পান হান কাং। তাঁর উপন্যাস দ্য ভেজিটেরিয়ান ইতিমধ্যেই বিশ্বজুড়ে আলোচিত ছিল এবং ২০১৬ সালে ম্যান বুকার ইন্টারন্যাশনাল পুরস্কারও পেয়েছিল। পাশাপাশি হিউম্যান অ্যাক্টস কোরিয়ার গণ–আন্দোলন ও সহিংসতার পটভূমিতে এক শোকগাথা। আর গ্রিক লেসনস মানবিক সম্পর্কের ভঙ্গুরতা নিয়ে লেখা। হন কাংয়ের লেখায় শরীর, সহিংসতা, ইতিহাস ও করুণা একসঙ্গে মিশে যায়, যা তাঁকে সমকালীন সাহিত্যে এক অনন্য কণ্ঠ দিয়েছে।

গত দশকের নোবেলজয়ী লেখকদের কাজ আমাদের মনে করিয়ে দেয়, সাহিত্য কেবল গল্প বলাই নয়; বরং মানুষের অস্তিত্ব, ইতিহাস ও সমাজের প্রতিচ্ছবি। কেউ আমাদের নিয়ে যান ভ্রমণের ভেতরে, কেউ শোনান নীরবতার ভাষা, কেউবা সুরকে রূপ দেন সাহিত্যে।

২০২৫ সালের নোবেল সাহিত্য পুরস্কার আর কিছুদিনের মধ্যেই ঘোষণা করা হবে। এবার কার হাতে উঠবে এ সম্মান? আপনাদের কী মনে হয়, কে হতে পারেন পরবর্তী নোবেলজয়ী সাহিত্যিক?

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: প রস ক র উপন য স

এছাড়াও পড়ুন:

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা: আবেদন শুরু, নির্দেশিকা প্রকাশ

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০২৫-২০২৬ শিক্ষাবর্ষে ১ম বর্ষ স্নাতক ও স্নাতক (সম্মান) শ্রেণিতে ভর্তির আবেদন আজ বৃহস্পতিবার (২০ নভেম্বর) দুপুর ১২টা থেকে শুরু হবে। আবেদনের সুযোগ ৭ ডিসেম্বর রাত ১১টা ৫৯ মিনিট পর্যন্ত। এদিকে অনলাইনে আবেদনের নির্দেশিকা প্রকাশ করেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের আইসিটি সেন্টার। লিখিত অথবা অফলাইনে কোনো আবেদন গ্রহণযোগ্য হবে না বলে জানিয়েছেন কর্তৃপক্ষ।

অনলাইনে আবেদনের নির্দেশিকা—

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ১ম বর্ষ স্নাতক/স্নাতক (সম্মান) ভর্তি পরীক্ষা ২০২৫-২৬ এর আবেদনের জন্য প্রার্থীদের বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইট (admission.ru.ac.bd)-এর মাধ্যমে অনলাইনে ২০ নভেম্বর ২০২৫ তারিখ দুপুর ১২টা ১ মিনিট থেকে শুরু হয়ে ৭ ডিসেম্বর ২০২৫ তারিখ রাত ১১ টা ৫৯ মিনিটের মধ্যে আবেদন সম্পন্ন করতে হবে। কোনো লিখিত অথবা অফলাইন আবেদন গ্রহণযোগ্য নয়। নিচের পদ্ধতি অনুসরণ করে অনলাইনে আবেদন করা যাবে।

১. অনলাইন রেজিস্ট্রেশন (মোবাইল নম্বর যাচাই)

ওয়েবসাইটের হোম পেজে রেজিস্টার (Register) বাটনে ক্লিক করলে পরবর্তী পেজে প্রার্থীকে তার এইচএসসি/সমমান এবং এসএসসি/সমমান উভয় পরীক্ষার রোল, শিক্ষা বোর্ড ও পাসের বছর প্রদান করতে হবে। সেই সঙ্গে পেজে প্রদত্ত একটি ছবিতে দৃশ্যমান সংখ্যা ও অক্ষর (Captcha) যথাস্থানে ইনপুট দিয়ে সাবমিট (Submit) বাটনে ক্লিক করে পরবর্তী পেজে অগ্রসর হতে হবে।

সঠিক এইচএসসি/সমমান এবং এসএসসি/সমমান উভয় পরীক্ষার রোল, শিক্ষা বোর্ড ও পাসের বছর দৃশ্যমান হলে ‘Mobile No. Verification’ এর জন্য উক্ত তথ্যের নিচে প্রার্থীর মোবাইল নম্বর প্রদান করতে হবে। মোবাইল নম্বর প্রদানের পর ‘Send OTP’ বাটনে ক্লিক করলে প্রদত্ত মোবাইল ফোনে একটি OTP পাঠানো হবে। প্রাপ্ত OTP নম্বরটি নির্ধারিত বক্সে লিখে ‘Verify OTP’ বাটনে ক্লিক করলে মোবাইল নম্বরটি নিশ্চিত হবে। প্রদত্ত মোবাইল নম্বরে প্রার্থীর ইউজারনেম ও পাসওয়ার্ড প্রেরণ করা হবে। উক্ত ইউজারনেম ও পাসওয়ার্ড ব্যবহার করে পরবর্তী সকল কার্যক্রম সম্পন্ন করতে হবে।

কোনো কারণে ভুল এইচএসসি/সমমান এবং এসএসসি/সমমান উভয় পরীক্ষার রোল, শিক্ষা বোর্ড ও পাসের বছর দৃশ্যমান হলে ‘Reset’ বাটনে ক্লিক করে পূর্বের পেজে ফিরে যেতে হবে।

গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশনা—

মোবাইল নম্বরটি অবশ্যই প্রার্থীর নিজের অথবা অভিভাবকের হতে হবে। একই মোবাইল নম্বর একাধিক প্রার্থীর জন্য ব্যবহার করা যাবে না। প্রার্থীর ভর্তি সংক্রান্ত সকল প্রকার তথ্য প্রদানের জন্য প্রদত্ত নম্বরে যোগাযোগ করা হবে। মোবাইল নম্বর সতর্কতার সঙ্গে প্রদান করা প্রয়োজন। ভুল নম্বর প্রদান করলে প্রার্থীর সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হবে না এবং এ জন্য কর্তৃপক্ষ দায়ী থাকবে না।

কারিগরি বোর্ডের শিক্ষার্থীরা শিক্ষা বোর্ডের স্থলে প্রযোজ্য ক্ষেত্রে Technical-Vocational/BM/DCOM সিলেক্ট করবেন।

GCE, BFA ও ডিপ্লোমা ইন ইঞ্জিনিয়ারিং এর শিক্ষার্থীরা (Important: GEC-A Level, Diploma, BFA, and BOU students must enter their data here) লিংকে ক্লিক করে আবেদনকারীর তথ্যাবলি প্রদান করবেন। আবেদনকারীর প্রদত্ত তথ্য যাচাইয়ের পর প্রদত্ত মোবাইল নম্বরে প্রার্থীর ইউজারনেম ও পাসওয়ার্ড প্রেরণ করা হবে। উক্ত ইউজারনেম ও পাসওয়ার্ড ব্যবহার করে পরবর্তী সকল কার্যক্রম সম্পন্ন করতে হবে।

ছবি: প্রথম আলো

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • উপকূলে বিপর্যস্ত নারীর জীবন
  • রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা: আবেদন শুরু, নির্দেশিকা প্রকাশ
  • ফুটবলে এই বছরটা কেমন কাটলো ব্রাজিল ও আর্জেন্টিনার
  • ঢাবির ৩০ শিক্ষার্থীকে ডিনস অ্যাওয়ার্ড ও বৃত্তি প্রদান
  • কুবিতে ফুটবল খেলায় মারামারির ঘটনায় ৫ শিক্ষার্থীকে শাস্তি
  • এনজিওর ৬০০ কোটি টাকা প্রতারণা, সিআইডির অভিযানে তনু গ্রেপ্তার 
  • সংবিধান সংশোধনীর পর পাকিস্তানের সেনাপ্রধানের হাতে কত ক্ষমতা গেল
  • বিশ্বের কোন দেশগুলোয় মৃত্যুদণ্ড আছে, কারা বাদ দিয়েছে
  • চলতি বছরে যেসব সিনেমার প্রস্তাব ফেরান আমির
  • জকসু নির্বাচনে ‘মওলানা ভাসানী ব্রিগেড’ নামে প্যানেল ঘোষণা বাম ছাত্রসংগঠনগুলোর