বরগুনায় গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে দুজনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে বরগুনা জেলায় ডেঙ্গুতে মারা গেলেন ৬০ জন।
রবিবার (৫ অক্টোবর) সন্ধ্যা ৭টার দিকে বরগুনা জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান বরগুনা পৌরসভার পরিচ্ছন্নতাকর্মী সেলিম মিয়া (৫৫)। এর আগে রবিবার ভোররাতে তোফায়েল আহমেদ (৫০) নামের একজনের মৃত্যু হয়েছে বরিশাল শেরেবাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। তিনি বরগুনা সদর উপজেলার ৭ নম্বর ঢলুয়া ইউনিয়নের ডালভাঙা গ্রামের বাসিন্দা।
বরগুনার সিভিল সার্জন ডা.
এদিকে, গত ২৪ ঘন্টায় বরগুনা জেলায় ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হয়েছে ৬৪ জন। তাদের মধ্যে শুধু বরগুনা সদর হাসপাতালে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে ভর্তি রোগীর সংখ্যা ৩৩ জন। আমতলী উপজেলায় ৪ জন, তালতলী উপজেলায় ২ জন, বেতাগী উপজেলায় ৩ জন, বামনা উপজেলায় ৮ জন এবং পাথরঘাটা উপজেলায় ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা ১৪ জন।
বর্তমানে বরগুনার বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা ১৫৫ জন। এ বছর এখন পর্যন্ত জেলায় ৭ হাজার ৭০০ জন ডেঙ্গু রোগী হাসপাতালে চিকিৎসাসেবা নিয়েছেন। তাদের মধ্যে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ৭ হাজার ৫৪৫ জন।
ঢাকা/ইমরান/রফিক
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর উপজ ল য় বরগ ন
এছাড়াও পড়ুন:
প্রথম বিশ্বকাপের নায়ক বার্নার্ড জুলিয়েন আর নেই
ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেট আবার হারালো তার এক সোনালি সন্তানকে। ১৯৭৫ সালের প্রথম ওয়ানডে বিশ্বকাপজয়ী দলের অন্যতম নায়ক, ক্যারিবীয় ক্রিকেটের সেই স্টাইলিশ অলরাউন্ডার বার্নার্ড জুলিয়েন চলে গেলেন না ফেরার দেশে। ট্রিনিদাদের ভ্যালসাইনে ৭৫ বছর বয়সে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি।
তার প্রস্থান যেন এক যুগের অবসান; সেই এক সময়ের, যখন ওয়েস্ট ইন্ডিজ শুধু ক্রিকেট খেলত না, ক্রিকেট অধিকার করত। আর সেই দাপুটে সূচনার গল্পে জুলিয়েন ছিলেন এক অবিচ্ছেদ্য নাম।
আরো পড়ুন:
ভোট দেননি তামিম
বিসিবি নির্বাচনের ভোট গ্রহণ শেষ
১৯৭৫, যে বছর ইতিহাস লিখেছিলেন জুলিয়েন:
বিশ্বকাপের প্রথম আসর, ১৯৭৫ সাল। কেউ জানত না এই নতুন ফরম্যাটের ক্রিকেট ভবিষ্যতে এমন ইতিহাস রচনা করবে। কিন্তু বার্নার্ড জুলিয়েন জানতেন, এটি তার নিজের পরিচয় তুলে ধরার মঞ্চ। বাঁহাতি এই সিমার বলকে নাচাতে পারতেন দু’দিকেই, হাতে ছিল দারুণ ব্যাটিং সেন্স আর ফিল্ডিংয়ে ছিলেন একদম চঞ্চল।
গ্রুপ পর্বে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে তার পরিসংখ্যান- ৪ উইকেট ২০ রানে। এরপর সেমিফাইনালে নিউ জিল্যান্ডকে ভস্ম করে শিকার করেন ৪ উইকেট ২৭ রানে। দুটি ম্যাচই ছিল ক্লাইভ লয়েডের দলের ফাইনালে ওঠার ভিত্তি।
আর লর্ডসে ফাইনালে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে, জুলিয়েনের ব্যাট থেকে আসে মূল্যবান ২৬ রান, যা দলের চ্যালেঞ্জিং স্কোর গড়তে বড় ভূমিকা রাখে। সেদিনের জয় দিয়েই শুরু হয়েছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজ সাম্রাজ্যের উত্থান। যে সাম্রাজ্যের প্রথম সৈনিকদের একজন ছিলেন বার্নার্ড জুলিয়েন।
ক্লাইভ লয়েডের আবেগঘন স্মৃতিচারণ:
সহযোদ্ধা ও অধিনায়ক ক্লাইভ লয়েড তাকে স্মরণ করলেন গভীর ভালোবাসায়, “ও সবসময় শতভাগ দিতো, দায়িত্ব থেকে কখনো পিছু হটেনি। ব্যাট হাতে বা বল হাতে আমি সবসময় তার ওপর নির্ভর করতে পারতাম। সে ছিল প্রকৃত অর্থেই এক সম্পূর্ণ ক্রিকেটার।”
লয়েড আরও বলেন, “ওর মধ্যে ছিল আনন্দ, ছিল বিনয়। লর্ডসে একবার টেস্ট জেতার পর ঘণ্টার পর ঘণ্টা দর্শকদের সঙ্গে দাঁড়িয়ে ছিলাম, অটোগ্রাফ দিয়েছিলাম। সেই আনন্দে সবার আগে ছিল জুলিয়েন। মানুষ তাকে ভালোবাসতো, সম্মান করতো, যেখানেই গেছি।”
ক্ষণজীবী কিন্তু উজ্জ্বল এক ক্যারিয়ার:
জুলিয়েনের আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার ছিল মাত্র চার বছরের, ১৯৭৩ থেকে ১৯৭৭ পর্যন্ত। এই সময়ে তিনি খেলেছেন ২৪ টেস্ট ও ১২ ওয়ানডে। টেস্টে ৮৬৬ রান ও ৫০ উইকেট, ওয়ানডেতে ৮৬ রান ও ১৮ উইকেট; সংখ্যায় হয়তো বিশাল নয়, কিন্তু প্রভাব ছিল বিশুদ্ধ স্বর্ণের মতো।
তিনি ছিলেন সেই যুগের অংশ, যখন ক্যারিবিয়ান ক্রিকেটে ছন্দ, সাহস আর গর্ব এক হয়ে উঠেছিল। যে সময়ের ওয়েস্ট ইন্ডিজ ছিল বিশ্ব ক্রিকেটের অপ্রতিরোধ্য প্রতীক।
শ্রদ্ধা জানাল ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেট বোর্ড:
ক্রিকেট ওয়েস্ট ইন্ডিজের সভাপতি কিশোর শ্যালো বলেন, “বার্নার্ড জুলিয়েনকে সম্মান জানাতে গিয়ে আমরা শুধু একজন ক্রিকেটার নয়, এক অধ্যায়ের প্রতিফলনকেও স্মরণ করছি। তার জীবন প্রমাণ করে, উদ্দেশ্যনিষ্ঠ জীবন কখনো শেষ হয় না।”
তিনি আরও যোগ করেন, “তার পরিবার, বন্ধুবান্ধব এবং প্রিয়জনদের প্রতি আমাদের গভীর সমবেদনা। জুলিয়েন আমাদের ক্রিকেট ইতিহাসের অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে থাকবেন, যে উত্তরাধিকার কখনো ম্লান হবে না।”
এক উত্তরাধিকারের নাম- বার্নার্ড জুলিয়েন:
বার্নার্ড জুলিয়েনের গল্প কেবল একজন ক্রিকেটারের নয়, এটি এক জাতির জেগে ওঠার গল্প। তিনি খেলেছিলেন এমন এক সময়, যখন ক্যারিবিয়ান ক্রিকেট শিখছিল নিজের ছন্দে নাচতে। আর সেই সুরে তিনি ছিলেন প্রথম তালবাদক।
আজ তিনি নেই, কিন্তু তার বলের সুইং, ব্যাটের দৃঢ়তা, মাঠে ছুটে যাওয়া সেই প্রাণচঞ্চল হাসি; সবই রয়ে যাবে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেটের স্মৃতির পাতায়।
ঢাকা/আমিনুল