পশ্চিমবঙ্গের ভারী বৃষ্টি ও পাহাড়ধসে নিহতের সংখ্যা বেড়ে ৩০
Published: 6th, October 2025 GMT
ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের উত্তরাঞ্চলের পাঁচ জেলা ভারী বর্ষণ ও পাহাড়ধসে বিপর্যস্ত হয়েছে। প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, পাহাড়ের বিভিন্ন জায়গায় ৩০ জনের মৃত্যু হয়েছে। সোমবার সকাল থেকে আবহাওয়ার খানিকটা উন্নতি হলেও পাহাড়ের নানা জায়গায় ধ্বংসের ছবি। দার্জিলিংয়ের পাহাড়ের পাশাপাশি ডুয়ার্সসহ জলপাইগুড়ি, কোচবিহার ও আলিপুরদুয়ারের বিস্তীর্ণ এলাকা পানিতে ডুবে রয়েছে। প্রায় ৪৪ হাজার মানুষ পানিবন্দী হয়ে রয়েছেন। পাহাড় ও ডুয়ার্সের পর্যটনকেন্দ্রগুলোতে কয়েক হাজার পর্যটক আটকে রয়েছেন।
নিহত ৩০ জনের মধ্যে মিরিকে ১১ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে পাঁচ নেপালি নাগরিকেরও মৃত্যু হয়েছে। জলপাইগুড়ির নাগরা কাটায় টম্বু চা–বাগান এলাকা থেকে ৫ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে।
প্রশাসন সূত্রে জানানো হয়েছে, জাতীয় ও রাজ্যের বিপর্যয় মোকাবিলায় বাহিনী উদ্ধারকাজ চালাচ্ছে। বৃষ্টি থামায় পর্যটকেরা নামতে শুরু করেছেন। তবে ধসের কারণে অনেক রাস্তা অবরুদ্ধ রয়েছে।
তোর্সা, জলঢাকা নদীর পানিতে ভেসে গেছে জলদাপাড়া ও গরুমারা বনাঞ্চল। বিপন্ন হয়েছে বহু বন্য প্রাণী। পানির প্রবল স্রোতে ভেসে গেছে গন্ডার, বাইসন, হরিণ, চিতা বাঘ। ময়নাগুড়ির কাছে একটি গন্ডারের দেহ উদ্ধার হয়েছে। বহু বন্য প্রাণী লোকালয়ে আশ্রয় নিয়েছে।
এদিকে আজ দুপুরে শিলিগুড়ি পৌঁছান মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি সেখানে পরিস্থিতি পর্যালোচনা করবেন। পরে তাঁর এক্স পোস্টে উত্তরাঞ্চলের মানুষের দুর্দশা নিয়ে মমতা লেখেন, ‘তাঁদের কষ্ট আমরা গভীরভাবে অনুভব করছি।’ সবাইকে ধৈর্য ধরে পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে বলেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি লেখেন, ‘এই কঠিন সময়েও আমাদের মনে রাখতে হবে, একতা ও ধৈর্যই আমাদের সবচেয়ে বড় শক্তি।’
এদিকে আজ রাজ্যপাল সি ভি আনন্দ বোস পরিস্থিতি সরেজমিনে দেখতে উত্তরবঙ্গ সফরের যাচ্ছেন বলে কলকাতায় রাজভবন সূত্রে জানানো হয়েছে।
দার্জিলিংয়ের দুর্যোগে মৃত ব্যক্তিদের পরিবারকে পাঁচ লাখ টাকা করে দেওয়া হবে বলে ঘোষণা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই সঙ্গে পরিবারের একজন করে সদস্যকে দেওয়া হবে হোমগার্ডের চাকরি। আজ সোমবার উত্তরবঙ্গের উদ্দেশে রওনা হওয়ার আগে কলকাতা বিমানবন্দর থেকে মমতা এ কথা জানিয়েছেন।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: জন র ম
এছাড়াও পড়ুন:
দার্জিলিংয়ে প্রবল বৃষ্টি, মৃত্যু ১৭ জনের
প্রবল বর্ষণে পশ্চিমবঙ্গের পাহাড়ি জনপদ দার্জিলিং ও এর কাছের এলাকাগুলো বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। পাহাড়ের অন্তত ৭টি জায়গায় ধস নেমেছে। আজ রোববার সন্ধ্যা পর্যন্ত ১৭ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। মৃতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে প্রশাসন সূত্রে আশঙ্কা করা হয়েছে। জানা গেছে, মিরিকে লোহার সেতু ভেঙে অন্তত নয়জনের মৃত্যু হয়েছে। সুখিয়ায় মারা গেছেন সাতজন। এ ছাড়া বিজনবাড়িতে একজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে।
উত্তরবঙ্গের পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে আগামীকাল সোমবারই সেখানে যাচ্ছেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আপাতত কলকাতায় প্রশাসনিক সদর দপ্তর নবান্নের কন্ট্রোল রুমে রয়েছেন তিনি। মমতা বলেন, ‘১২ ঘণ্টা ধরে টানা তুমুল বৃষ্টি হয়েছে। মোট সাতটি জায়গায় ধস নেমেছে। আমি পরিস্থিতির দিকে নজর রাখছি।’
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আরও বলেন, ‘ভুটানে প্রবল বর্ষণের কারণে উত্তরবঙ্গের পরিস্থিতি ভয়াবহ হয়ে উঠেছে। এই বিপর্যয় দুর্ভাগ্যজনক। দুর্যোগ তো আমাদের কারও হাতে নেই। আমরা মর্মাহত।’
প্রশাসন সূত্রে জানানো হয়েছে, একাধিক রাস্তায় ধস নেমে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। আটকে পড়েছেন পর্যটকেরা। সিকিম ও কালিম্পংয়ের সঙ্গে যোগাযোগ সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে বলে জানিয়েছে প্রশাসন। বিভিন্ন অবরুদ্ধ জায়গা থেকে পর্যটকদের উদ্ধারকাজ চলছে।
শনিবার সন্ধ্যা থেকে টানা বৃষ্টি শুরু হয়েছে দার্জিলিং, কালিম্পংয়ে। তাতেই বিধ্বস্ত পাহাড়ের বহু জায়গা। বহু জায়গায় ধস নেমে রাস্তা বন্ধ হয়ে গেছে। সবচেয়ে নাজুক অবস্থা হয়েছে মিরিক অঞ্চলে। রাতের টানা বৃষ্টিতে দুধিয়া ও মিরিকের মাঝামাঝি একটি লোহার সেতু ভেঙে পড়ে নদীতে। স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, তখনই সেতুর ওপর দিয়ে কিছু মানুষ চলাচল করছিলেন। মিরিকে প্রবল স্রোতে ভেসে যায় অন্তত ৯ জনেরও বেশি। তাঁদের মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। আরও কয়েকজন নিখোঁজ, তাঁদের সন্ধানে চলছে তল্লাশি অভিযান।
স্থানীয়দের সূত্রে জানা গেছে, তিস্তার পানি বেড়ে উঠে এসেছে জাতীয় সড়কে। তিস্তাবাজারের কাছে ২৯ মাইল ভালুখোলায় তিস্তার পানি উঠে বন্ধ হয়ে গেছে ১০ নম্বর জাতীয় সড়ক। এ ছাড়া রাতে মিরিক ও দুধিয়ার মাঝের লোহার সেতুর একাংশ বৃষ্টিতে ভেঙে গেছে। ফলে শিলিগুড়ি থেকে মিরিকের যোগাযোগ বন্ধ। এমনকি দার্জিলিং শহরের সঙ্গেও যোগাযোগ ব্যাহত হয়েছে।
স্থানীয় প্রশাসন সূত্রে খবর, দিলারামের কাছে রাস্তায় ধস নেমেছে। দার্জিলিংয়ে যাতায়াতের প্রধান সড়ক সে কারণে অবরুদ্ধ। এ ছাড়া কালিম্পং ও সিকিমের দিকে যাওয়ার রাস্তা সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে গেছে। দুর্যোগে দিশাহারা বন্য প্রাণীরাও। জঙ্গল থেকে গ্রামের দিকে চলে আসছে তারা। দুটি হরিণ উদ্ধার করা হয়েছে। একাধিক নদী বইছে বিপৎসীমার ওপর দিয়ে।
এদিকে দার্জিলিংয়ের বিপর্যয় নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। আজ রোববার নিজের এক্স হ্যান্ডলে এ বিষয়ে পোস্ট করেছেন তিনি। দার্জিলিংয়ে মৃতদের পরিবারের প্রতি শোক প্রকাশ করেছেন মোদি। যাঁরা আহত, তাঁদের দ্রুত সুস্থতা কামনা করেছেন। জানিয়েছেন, দার্জিলিংয়ের পরিস্থিতির দিকে কেন্দ্র সব সময় নজর রাখছে। সব রকম সাহায্যের জন্য প্রস্তুত কেন্দ্র।