রাজশাহীতে পূর্বশত্রুতার জেরে এক ব্যক্তিকে হত্যার ঘটনায় হওয়া মামলাকে ‘রাজনৈতিক’ দেখিয়ে প্রত্যাহারের চেষ্টা চলছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। নিহত ব্যক্তির ভাই ও হত্যা মামলার বাদী রঞ্জু আহমেদ সংবাদ সম্মেলন করে এই অভিযোগ তুলেছেন। তিনি বলছেন, মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে রাজশাহী জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আবু সাঈদ (চাঁদ) আওয়ামী লীগ-সমর্থক আসামিদের মামলা থেকে অব্যাহতি দেওয়ার জন্য সুপারিশও করেছেন।

আজ সোমবার দুপুরে রাজশাহী সিটি প্রেসক্লাবে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে রঞ্জু আহমেদ এই অভিযোগ করেন। লিখিত বক্তব্যে তিনি নিজের ও পরিবারের নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কার কথাও জানান।

তবে অভিযোগের বিষয়ে জানতে জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আবু সাঈদের মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তাঁর মুঠোফোন বন্ধ পাওয়া গেছে। হোয়াটসঅ্যাপে এই বিষয়ে বক্তব্য চেয়ে বার্তা দেওয়া হলেও তিনি সাড়া দেননি।

সংবাদ সম্মেলনে রঞ্জু আহমেদ বলেন, ২০০৯ সালের ৬ অক্টোবর রাজশাহীর চারঘাট উপজেলার রায়পুর বাজারে যাওয়ার পথে প্রতিপক্ষের হামলার শিকার হন তিনি। এ সময় তাঁর চিৎকারে ভাই মনিরুল ইসলাম (মন্টু) ও বাবা শামসুল হক এগিয়ে এলে হামলাকারীরা তাঁদের ওপরও চড়াও হয়। হামলাকারীদের ধারালো অস্ত্রের আঘাতে আহত মনিরুলকে হাসপাতালে নেওয়ার পথে মারা যান। ওই দিনই তিনি বাদী হয়ে ২২ জনকে আসামি করে চারঘাট থানায় একটি হত্যা মামলা করেন। মামলাটি বর্তমানে রাজশাহীর অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ-৩ আদালতে বিচারাধীন। মামলার সাক্ষ্য গ্রহণ শেষে ১৪ অক্টোবর যুক্তিতর্কের জন্য দিন ধার্য রয়েছে।

মামলাটি যখন চূড়ান্ত নিষ্পত্তির দিকে এগোচ্ছে, ঠিক তখনই আসামিরা এটিকে রাজনৈতিক মামলা হিসেবে প্রত্যাহারের জন্য অপচেষ্টা শুরু করেছেন বলে অভিযোগ রঞ্জু আহমেদের। তিনি বলেন, ১ নম্বর আসামি এমদাদুল হক ওরফে আবু তালেবসহ আটজন আসামি মামলাটি প্রত্যাহারের জন্য জেলা প্রশাসকের কাছে আবেদন করেছেন। অথচ এ মামলা পুরোপুরি দুটি পরিবারের পূর্বশত্রুতার জের। এজাহার বা অভিযোগপত্র, কোথাও রাজনৈতিক কোনো বিষয় উল্লেখ নেই।

রঞ্জু আহমেদ আরও বলেন, দুঃখের বিষয় হলো, রাজশাহী জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আবু সাঈদ প্রত্যেক আসামির আবেদনপত্রে ‘জোর সুপারিশ করছি’ লিখে স্বাক্ষর করেছেন। অথচ আসামিরা সবাই স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা ও ভায়ালক্ষ্মীপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল মজিদের অনুসারী।

রঞ্জু আহমেদ নিজেকে ও তাঁর পরিবারকে বিএনপির সমর্থক দাবি করে বলেন, ‘আমি নিজে বিএনপি করার কারণে দীর্ঘ ১৫ বছর জেল-জুলুম হুলিয়ার মধ্যে জীবন পার করেছি। ৫ আগস্টের পর এখনো যদি ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত করার জন্য আবু সাঈদের মতো নেতারা কাজ করেন, তাহলে দল ও দেশ কোথায় যাবে আমরা জানি না।’

সংবাদ সম্মেলনে মামলার বাদী দাবি করেন, প্রথমে স্থানীয় আওয়ামী লীগ–সমর্থিত চেয়ারম্যান ৯ বিঘা জমির বিনিময়ে মামলাটি আপসের প্রস্তাব দেন। তাতে রাজি না হওয়ায় সম্প্রতি আবু সাঈদ নিজে তাঁদের বাড়িতে এসে ৫০ লাখ টাকার বিনিময়ে মামলা তুলে নিতে চাপ দেন। রাজি না হওয়ায় তাঁর সমর্থকেরা তাঁকে হুমকি-ধমকি দিচ্ছে, যার কারণে তিনি এখন নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন।

আরও পড়ুনরাজনৈতিক মামলা প্রত্যাহারে দুটি কমিটি গঠন২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪

এ ঘটনায় রঞ্জু আহমেদ জেলা প্রশাসক ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে লিখিত আপত্তি জানিয়েছেন। তাঁর এই আবেদনে রাজশাহী মহানগর বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক এরশাদ আলী সুপারিশ করেছেন বলেও তিনি জানান। এ ছাড়া আবু সাঈদের বিরুদ্ধে দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব বরাবর লিখিত অভিযোগও দিয়েছেন তিনি।

ভাই হত্যার সুষ্ঠু বিচার দাবি করে রঞ্জু আহমেদ বলেন, ‘সরকারের কাছে আমার আবেদন, এই হত্যা মামলা যেন কোনোভাবেই রাজনৈতিক বিবেচনায় প্রত্যাহার করা না হয়।’

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: র জন ত ক ব এনপ র কর ছ ন র জন য সমর থ আহম দ

এছাড়াও পড়ুন:

একক ভিসায় ভ্রমণ করা যাবে জিসিসিভুক্ত ছয় দেশ, চালু হচ্ছে শিগগিরই

উপসাগরীয় সহযোগিতা পরিষদ (জিসিসি) চলতি বছরের শেষ প্রান্তিকে, অর্থাৎ অক্টোবর থেকে ডিসেম্বর—একক পর্যটন ভিসা চালু করতে যাচ্ছে। প্রাথমিকভাবে পরীক্ষামূলকভাবে এই ভিসা চালু করা হবে। এর নাম জিসিসি গ্র্যান্ড ট্যুরিস্ট ভিসা। সংযুক্ত আরব আমিরাতের (ইউএই) অর্থ ও পর্যটনমন্ত্রী এবং আমিরাত পর্যটন কাউন্সিলের চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ বিন তৌক আল মারি সম্প্রতি এ খবর জানিয়েছেন।

তৌক আল মারি বলেন, জিসিসির একক পর্যটন ভিসাটি ইউরোপের শেনজেন ভিসার আদলে করা হচ্ছে। এ ভিসা নিয়ে পর্যটকেরা জিসিসির ছয়টি দেশে ভ্রমণ করতে পারবেন। আঞ্চলিক সমন্বয় আরও গভীর করার কৌশলগত পদক্ষেপ হিসেবে এই ভিসা চালু করা হচ্ছে। এতে একক পর্যটন গন্তব্য হিসেবে উপসাগরীয় অঞ্চলের আকর্ষণ বৃদ্ধি করবে।’

আমিরাতের সংবাদ সংস্থা ওয়ামকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তৌক আল মারি বলেন, পরীক্ষামূলক পর্ব শেষে দ্বিতীয় ধাপে জিসিসি গ্র্যান্ড ট্যুরিস্ট ভিসা পর্যায়ক্রমে পূর্ণাঙ্গভাবে বাস্তবায়ন করা হবে। তবে ঠিক কবে থেকে জিসিসি গ্র্যান্ড ট্যুরিস্ট ভিসা চালু হবে, তা তিনি স্পষ্ট করেননি।

গত ১৬ জুন তৌক আল মারি খালিজ টাইমসকে জানিয়েছিলেন, জিসিসি গ্র্যান্ড ট্যুরিস্ট ভিসার অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। শিগগির তা চালু হতে যাচ্ছে।

জিসিসি গ্র্যান্ড ট্যুরিস্ট ভিসা চালু হলে বিদেশি পর্যটকেরা একক ভিসায় সংযুক্ত আরব আমিরাত, সৌদি আরব, বাহরাইন, কাতার, ওমান ও কুয়েতে ভ্রমণ করতে পারবেন। কত দিনের জন্য এই ভিসা দেওয়া হবে বা খরচ কত পড়বে, তা-ও এখনো প্রকাশ করা হয়নি।

পর্যটন ও ভ্রমণশিল্পের নেতারা মনে করছেন, এই ভিসা আঞ্চলিক পর্যটনশিল্প ও অর্থনীতিতে বড় পরিবর্তন আনবে। হাজার হাজার নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি করবে এবং মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) বৃদ্ধিতেও সহায়তা করবে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ