বাগেরহাটে বিএনপি নেতা ও সাংবাদিক এ এস এম হায়াত উদ্দিন হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার দুই তরুণ আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। গতকাল সোমবার বিকেলে কঠোর গোপনীয়তার মধ্য দিয়ে বাগেরহাটের অতিরিক্ত চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট হারুন অর রশিদের আদালতে তাঁরা জবানবন্দি দেন। বাগেরহাট জেলা ও দায়রা জজ আদালতের রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলি (পিপি) এস এম মাহবুব মোর্শেদ বিষয়টি প্রথম আলোকে নিশ্চিত করেছেন।

পুলিশ জানিয়েছে, হায়াত উদ্দিন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে নিয়মিত লেখালেখি করায় স্থানীয় কয়েকজনের সঙ্গে তাঁর বিরোধ তৈরি হয়। সেই বিরোধের জেরে পূর্বপরিকল্পিতভাবে তাঁকে হত্যা করা হয়। গ্রেপ্তার দুই তরুণ হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন। তবে কাদের সঙ্গে বিরোধ ছিল, তদন্তের স্বার্থে পুলিশ সেটা জানাতে চায়নি।

স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেওয়া দুই আসামি হলেন বাগেরহাট সদর উপজেলার গোটাপাড়া ইউনিয়নের গোপালকাঠি গ্রামের ওমর ফারুক ওরফে ইমন হাওলাদার (২৫) এবং একই গ্রামের আশিকুল ইসলাম (২৫)। গত রোববার রাতে ঢাকার আশুলিয়া এলাকার একটি আবাসিক হোটেলে অভিযান চালিয়ে তাঁদের গ্রেপ্তার করে বাগেরহাট জেলা পুলিশের গোয়েন্দা শাখা (ডিবি)। তবে তাঁরা কেউই হত্যা মামলার এজাহারনামীয় আসামি নন।

নিহত হায়াত উদ্দিন (৪২) দৈনিক ভোরের চেতনা পত্রিকার নিজস্ব প্রতিবেদক ছিলেন। তাঁর বাড়ি বাগেরহাট পৌর শহরের উত্তর হাড়িখালী এলাকায়। সম্প্রতি অনুষ্ঠিত বাগেরহাট পৌর বিএনপির সম্মেলনে তিনি সাংগঠনিক সম্পাদক পদে নির্বাচন করে পরাজিত হন। এর আগে তিনি পৌর বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য ছিলেন।

গত শুক্রবার সন্ধ্যায় শহরের হাড়িখালী এলাকায় একটি চায়ের দোকানে বসে ছিলেন হায়াত উদ্দিন। তখন মোটরসাইকেলে আসা কিছু ব্যক্তি ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে ও হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়ে তাঁকে ফেলে যায়। গুরুতর আহত অবস্থায় তাঁকে প্রথমে বাগেরহাট জেলা হাসপাতালে নেওয়া হয়। পরে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পথে তিনি মারা যান। এ ঘটনায় নিহত হায়াতের মা হাসিনা বেগম বাদী হয়ে স্থানীয় বিএনপি কর্মী মো.

ইসরাইল মোল্লাকে প্রধান আসামি করে সাতজনের নাম উল্লেখ করে ও অজ্ঞাতনামা ১০ থেকে ১২ জনের বিরুদ্ধে একটি মামলা করেন।

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও ডিবির উপপরিদর্শক স্নেহাশিষ দাশ প্রথম আলোকে বলেন, গ্রেপ্তার দুই আসামি বিস্তারিতভাবে জানিয়েছেন, কীভাবে ও কেন তাঁরা হত্যাকাণ্ডে অংশ নেন। হায়াত উদ্দিন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে মাদক, লুটপাট ও চাঁদাবাজি নিয়ে নিয়মিত লেখালেখি করায় স্থানীয় কিছু লোকের সঙ্গে তাঁর বিরোধ তৈরি হয়। সেই বিরোধের জেরে গ্রেপ্তার দুজন পূর্বপরিকল্পিতভাবে হত্যাকাণ্ডে অংশ নেন বলে জবানবন্দি দিয়েছেন। জবানবন্দি মাথায় রেখে তদন্ত এগিয়ে চলছে। এজাহারনামীয় আসামিদের গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত আছে। গ্রেপ্তার দুজন বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়েছেন। তদন্তের স্বার্থে বিস্তারিত তথ্য বলতে চাননি মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: হ য় ত উদ দ ন ব গ রহ ট ব এনপ তদন ত

এছাড়াও পড়ুন:

রাজশাহীতে হিমাগারে নারী ও কিশোরীকে পিন ফুটিয়ে নির্যাতন

রাজশাহীর একটি হিমাগারে এক তরুণ, নারী ও কিশোরীকে অমানবিক নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনার পর ক্ষুব্ধ জনতা ওই হিমাগারের অফিসকক্ষে ভাঙচুর চালিয়েছেন। মঙ্গলবার সকালে রাজশাহীর পবা উপজেলার বায়া এলাকায় সরকার কোল্ডস্টোরেজের অফিসকক্ষে এ ঘটনা ঘটে।

ওই হিমাগারের মালিক রাজশাহী জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেতা মোহাম্মদ আলী সরকার। ক্ষুব্ধ এলাকাবাসী মোহাম্মদ আলী সরকারের ছেলে আহসান উদ্দিন সরকার ওরফে জিকো (৪৫), মেয়ে আঁখি (৩৫) ও হাবিবাকে (৪০) অফিসকক্ষে অবরুদ্ধ করে রাখেন। পরে সেনাবাহিনীর সহায়তায় এয়ারপোর্ট থানা-পুলিশ তাঁদের আটক করে নিয়ে যায়। এর আগে পুলিশ আহত তিনজনকে উদ্ধার করে চিকিৎসার জন্য রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে পাঠায়।

ভুক্তভোগীদের বাড়ি পবা উপজেলার কুঠিপাড়া গ্রামে। নির্যাতনের শিকার তরুণ (২৭) রাজশাহীর একটি বেসরকারি মেডিকেল কলেজের পঞ্চম বর্ষের শিক্ষার্থী। আর নারী (৩০) ও কিশোরী (১৩) ওই তরুণের খালাতো বোন। তাঁদের নির্যাতনের ঘটনায় ওই তরুণের ভাই বাদী হয়ে থানায় মামলা করেছেন। মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, হিমাগারের অফিসকক্ষে ডেকে নিয়ে তিনজনকে লাঠি, বাঁশ, হাতুড়ি দিয়ে পেটানো হয়। একপর্যায়ে শরীরে সেফটি পিন ফুটিয়ে নির্যাতন করা হয়।

দুপুরে হিমাগারে বসে থাকার সময় নির্যাতনের শিকার ওই নারীর কোলে শিশুসন্তান দেখা যায়। তিনি খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে হাঁটছিলেন। তাঁর কান দিয়ে রক্ত বের হচ্ছিল। আহত মেডিকেল শিক্ষার্থীর দুই হাতে জখম দেখা যায়। পিঠে আঘাতের চিহ্ন দেখা যায়। আর ওই কিশোরীর ঠোঁটে রক্ত দেখা যায়।

নির্যাতনের শিকার নারী জানান, জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আলী সরকারের সঙ্গে তাঁদের পরিবারের সুসম্পর্ক ছিল। বিষয়টি তাঁর ছেলেমেয়েরা ভালোভাবে নিতেন না। তাঁদের সন্দেহ, মোহাম্মদ আলীর সঙ্গে তাঁর (ওই নারী) অনৈতিক সম্পর্ক রয়েছে। ওই নারী বলেন, মঙ্গলবার সকালে তাঁকে ফোন করে হিমাগারে ডাকা হয়। তখন তিনি তাঁর খালাতো ভাই ও ছোট বোনকে নিয়ে আসেন। এখানে আসার পর মোহাম্মদ আলীর ছেলে ও মেয়েরা তাঁদের ধাক্কা দিতে দিতে অফিসকক্ষের ভেতরে নিয়ে যান। এরপর কর্মচারীদের সহায়তায় নির্যাতন করা হয়। নির্যাতনের সময় দরজা বন্ধ করে রাখা হয়েছিল। মুঠোফোন কেড়ে নেওয়া হয়েছিল। স্থানীয় লোকজন চিৎকার শুনতে পেয়ে এগিয়ে আসেন। তাঁরা অফিসের দরজা খুলতে বললেও খোলা হচ্ছিল না। একপর্যায়ে দরজা খোলা হয়। ওই কিশোরীর দাবি, তাঁকে ও তাঁর খালাতো বোনকে মোহাম্মদ আলী সরকারের দুই মেয়ে সারা শরীরে সেফটি পিন দিয়ে ফুটিয়ে নির্যাতন করেছেন।

এ ঘটনা জানাজানি হলে বেলা ১১টা থেকে স্থানীয় বিক্ষুব্ধ লোকজন হিমাগারের ভেতর মোহাম্মদ আলী সরকারের ছেলেমেয়েদের অবরুদ্ধ করে গ্রেপ্তার করার দাবি জানান। বের করলেই হামলার শঙ্কায় পুলিশ তাঁদের নিয়ে যাচ্ছিল না। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে দুপুর দুইটার দিকে স্থানীয়রা অফিসকক্ষের সিসিটিভি ক্যামেরা ও কাচের জানালাগুলো ভেঙে ফেলেন। পরে সেনাবাহিনীর সহায়তা নেওয়া হয়। তারা আসার পর তিনজনকে থানায় নিয়ে যায় পুলিশ।

এ বিষয়ে এয়ারপোর্ট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ফারুক হোসেন জানান, তিনজনের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। তিনজনকেই গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাঁদেরকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হবে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ