খাগড়াছড়ির সহিংসতা তদন্তে বিচার বিভাগীয় তদন্তের দাবি এইচআরএফবির
Published: 7th, October 2025 GMT
খাগড়াছড়িতে সাম্প্রতিক সহিংসতার ঘটনায় বিচার বিভাগীয় তদন্ত ও অপরাধীদের জবাবদিহি নিশ্চিতের দাবি জানিয়েছে হিউম্যান রাইটস ফোরাম বাংলাদেশ (এইচআরএফবি)।
মঙ্গলবার সংগঠনটির সাত সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করে এই দাবি জানান। সাক্ষাৎ শেষে মানবাধিকার সংগঠনটির পক্ষ থেকে এ সংক্রান্ত একটি সংবাদ বিজ্ঞপ্তি পাঠানো হয়।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এইচআরএফবি জানায়, খাগড়াছড়ি জেলায় এক মারমা কিশোরীকে গণধর্ষণের অভিযোগের ঘটনায় শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি চলাকালে বলপ্রয়োগ ও সংঘর্ষের সময় তিনজন আদিবাসী তরুণ নিহত হন। পাশাপাশি স্থানীয় আদিবাসী নাগরিকদের বাড়িঘর ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে অগ্নিসংযোগের ঘটনার বিষয়ে প্রতিনিধিদল স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার কাছে উদ্বেগ প্রকাশ করেন। এ ছাড়া প্রতিনিধিদল সহিংসতার ঘটনায় বিচার বিভাগীয় তদন্তের পাশাপাশি অপরাধীদের জবাবদিহি এবং অতিরিক্ত বলপ্রয়োগকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ, ভুক্তভোগীর ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা, ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণ ও পুনর্বাসন, গুইমারায় শান্তি ও আস্থা পুনঃপ্রতিষ্ঠা, আদিবাসীদের জীবন ও সাংস্কৃতিক অধিকার রক্ষার বিষয়ে আলোচনা করেন।
বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, প্রতিনিধিদল ওই এলাকার পরিস্থিতির উন্নয়নের জন্য অবিলম্বে সরকারের কার্যকর হস্তক্ষেপ ও পদক্ষেপ গ্রহণের দাবি জানান। পাশাপাশি প্রধান উপদেষ্টার উদ্যোগ ও নেতৃত্বে সংশ্লিষ্ট সব অংশীজনকে নিয়ে পার্বত্য চট্টগ্রামের দীর্ঘদিনের সমস্যাগুলোর টেকসই সমাধানের উপায় খোঁজার জন্য একটি জাতীয় সম্মেলন আয়োজনের আহ্বান জানান।
সাত সদস্যের প্রতিনিধিদলে ছিলেন হিউম্যান রাইটস ফোরাম বাংলাদেশের (এইচআরএফবি) স্টিয়ারিং কমিটির সদস্য এবং বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্রাস্টের (ব্লাস্ট) নির্বাহী পরিচালক সারা হোসেন, ব্লাস্টের পরিচালক মাহবুবা আখতার, টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ও এইচআরএফবির সদস্য ইফতেখারুজ্জামান, কাপেং ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক ও এইচআরএফবির সদস্য পল্লব চাকমা, নাগরিক উদ্যোগের প্রধান নির্বাহী ও এইচআরএফবির স্টিয়ারিং কমিটির সদস্য জাকির হোসেন, মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের পরিচালক ও এইচআরএফবির সদস্য বনশ্রী মিত্র নিয়োগী, আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) উপদেষ্টা মাবরুক মোহাম্মদ।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ও এইচআরএফব র স উপদ ষ ট র সদস য তদন ত র ঘটন
এছাড়াও পড়ুন:
ট্রাম্পের আহ্বানের পরও গাজায় থামেনি ইসরায়েলি হামলা
ফিলিস্তিনের গাজায় যুদ্ধ বন্ধে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের দেওয়া ২০ দফা প্রস্তাবের কিছু শর্তে রাজি হয়েছে হামাস। হামাসের এই ঘোষণার পর গাজায় হামলা বন্ধ করতে ইসরায়েলের প্রতি আহ্বান জানান ট্রাম্প। তবে ওই আহ্বানের পরও শনিবার ইসরায়েলি হামলায় গাজায় অন্তত ৫৫ জন নিহত হয়েছেন। যদিও শনিবার রাতে ট্রাম্প দাবি করেন, ইসরায়েল সাময়িকভাবে গাজায় বোমা হামলা বন্ধ করেছে।
ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র সংগঠন হামাস গত শুক্রবার রাতে জানায়, সংগঠনের শীর্ষ নেতৃত্ব, ফিলিস্তিনিদের নানা অংশ ও মধ্যস্থতাকারীদের সঙ্গে ‘সলাপরামর্শের’ পর সব জিম্মিকে ছেড়ে দেওয়া ও কিছু শর্ত মেনে নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। তবে বাকি শর্তগুলো নিয়ে আলোচনা চায় তারা।
হামাসের ঘোষণা ও ট্রাম্পের নির্দেশকে গাজায় হত্যাযজ্ঞ বন্ধের ক্ষেত্রে ‘বড় অগ্রগতি’ বলে স্বাগত জানায় বিভিন্ন দেশ ও সংস্থা।
কিছু শর্তে হামাসের রাজি থাকার ঘোষণার পর ট্রাম্পের প্রস্তাবের শর্তগুলো নিয়ে আলোচনায় বসতে প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন ইসরায়েলের বিরোধীদলীয় নেতা ইয়ার লাপিদ। অবিলম্বে আলোচনা শুরু করতে নেতানিয়াহুর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন হামাসের কাছে থাকা জিম্মিদের স্বজনেরাও।
কী বলছেন ট্রাম্পইসরায়েল গাজায় হামলা বন্ধ না করলেও গতকাল রাতে ট্রুথ সোশ্যালে এক পোস্টে ট্রাম্প লেখেন, ‘ইসরায়েল সাময়িকভাবে বোমাবর্ষণ বন্ধ করেছে। আমি তাদের সাধুবাদ জানাই। জিম্মি মুক্তি ও শান্তিচুক্তি চূড়ান্ত করার সুযোগ দিতে তারা এটা করেছে। হামাসকে এখন দ্রুত এগোতে হবে, নয়তো সব হিসাব-নিকাশ বাতিল হয়ে যাবে। আমি আর কোনো বিলম্ব সহ্য করব না এবং গাজা আবারও হুমকি হয়ে উঠবে—এমন কোনো পরিস্থিতিও মেনে নেব না।’
এর আগে গত শুক্রবার রাতে হামাসের পক্ষ থেকে কিছু শর্ত মানার ঘোষণা আসার পরপরই তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় ডোনাল্ড ট্রাম্প ট্রুথ সোশ্যালে লিখেছিলেন, ‘হামাসের বিবৃতির ওপর ভিত্তি করে বলা যায় দীর্ঘ মেয়াদে শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য তারা প্রস্তুত। ইসরায়েলকে অবশ্যই অবিলম্বে গাজায় বোমাবর্ষণ বন্ধ করতে হবে, যাতে আমরা দ্রুত ও নিরাপদে জিম্মিদের ফিরিয়ে আনতে পারি। এটা শুধু গাজার বিষয় নয়, এটা মধ্যপ্রাচ্যে বহু আকাঙ্ক্ষিত শান্তি প্রতিষ্ঠার একটি বিষয়।’
আল–জাজিরার খবরে বলা হয়, গতকাল রাতে নেতানিয়াহু জেরুজালেমে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন। তিনি জানান, জিম্মিদের কবে ও কীভাবে ফিরিয়ে আনা হবে, তা চূড়ান্ত করতে ইসরায়েলি আলোচকেরা কাজ করবেন। নেতানিয়াহু হুমকি দিয়ে বলেন, হামাসকে নিরস্ত্র করা হবে, সেটা ট্রাম্পের প্রস্তাবিত শর্ত অনুসারে হোক কিংবা ইসরায়েলি বাহিনীর অভিযানের মাধ্যমে।
ট্রাম্পের ২০ দফার বিষয়ে হামাসের অবস্থানগাজা যুদ্ধ বন্ধে নেতানিয়াহুকে নিয়ে গত ২৯ সেপ্টেম্বর হোয়াইট হাউসে ২০ দফা প্রস্তাব ঘোষণা করেন ট্রাম্প। তাঁর প্রস্তাবের মধ্যে গাজা থেকে ইসরায়েলি সেনা প্রত্যাহার, হামাসের কাছে থাকা জিম্মিদের মুক্তি, হামাসের অস্ত্র সমর্পণ, গাজার শাসনব্যবস্থায় হামাসের ভূমিকা না থাকা এবং ট্রাম্পের নেতৃত্বে একটি আন্তর্জাতিক ‘বোর্ড অব পিস’ গঠন ও এর তত্ত্বাবধানে একটি ‘অরাজনৈতিক ফিলিস্তিনি কমিটির’ মাধ্যমে গাজা উপত্যকার ভবিষ্যৎ শাসনব্যবস্থা পরিচালনা করার মতো বিষয়গুলো রয়েছে।
হামাস ট্রাম্পের দেওয়া প্রস্তাবটি পর্যালোচনা করছিল। এর মধ্যে গত শুক্রবার ট্রাম্প হুমকি দিয়ে বলেন, রোববারের মধ্যে হামাসকে প্রস্তাব মেনে নিতে হবে। পরে হামাস বেশ কিছু শর্তে রাজি থাকার ঘোষণা দেয়।
ট্রাম্পের প্রস্তাব অনুযায়ী হামাস সব জিম্মি মুক্তি ও বিনিময়ে ইসরায়েলে থাকা ফিলিস্তিনি বন্দীদের মুক্তির বিষয়ে রাজি হয়েছে। যুদ্ধ বন্ধ ও গাজা থেকে ইসরায়েলি সেনা প্রত্যাহারে ট্রাম্প যে প্রস্তাব দিয়েছেন, তার সঙ্গেও সংগঠনটি একমত পোষণ করেছে। যুদ্ধবিরতির সঙ্গে গাজায় ত্রাণ সরবরাহ বৃদ্ধির প্রস্তাবকেও স্বাগত জানিয়েছে হামাস। গাজা পুনর্গঠন নিয়ে ট্রাম্পের প্রস্তাবেও কোনো দ্বিমত নেই সংগঠনটির।
হামাস গাজার শাসনভার একটি স্বাধীন ফিলিস্তিনি সংস্থার কাছে হস্তান্তর করতেও রাজি। তবে তাতে বিদেশিদের অংশগ্রহণ মানা হবে না বলে জানিয়েছে সংগঠনটি। হামাস বলছে, স্বাধীন ফিলিস্তিনি সংস্থা গঠিত হতে হবে ফিলিস্তিনিদের জাতীয় ঐকমত্য এবং আরব ও ইসলামি বিশ্বের সমর্থনের ভিত্তিতে।
গাজার নিরাপত্তায় ট্রাম্প যে একটি অস্থায়ী আন্তর্জাতিক স্থিতিশীলতা রক্ষাকারী বাহিনী (স্ট্যাবিলাইজেশন ফোর্স) গঠনের প্রস্তাব দিয়েছেন, সে বিষয়ে হামাস কিছু বলেনি। ট্রাম্পের প্রস্তাব অনুযায়ী গাজার শাসনব্যবস্থায় প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ কোনোভাবেই হামাসের কোনো ভূমিকা থাকবে না। এ বিষয়ে হামাস বলেছে, তারা নিজেদের ‘সমগ্র ফিলিস্তিনি জাতীয় কাঠামোর অংশ’ হিসেবে দেখে। যুদ্ধ বন্ধের শর্ত হিসেবে হামাসের অস্ত্র সমর্পণ করার যে প্রস্তাব ট্রাম্প দিয়েছেন, সে বিষয়েও সংগঠনটি কোনো কিছু বলেনি।
অস্ত্রসমর্পণের বিষয়ে হামাস নেতা মুসা আবু মারজুক আল–জাজিরাকে বলেন, ইসরায়েলি দখলদারত্ব পুরোপুরি শেষ না হওয়া পর্যন্ত তাঁরা অস্ত্র সমর্পণ করবেন না।
আরেক হামাস নেতা ওসামা হামদান বলেন, গাজায় বিদেশি শাসন মেনে নেবে না হামাস। সেখানকার শাসনভারও ফিলিস্তিনিদের দিয়েই পরিচালিত হতে হবে; এমনকি অন্তর্বর্তী সময়ের জন্য হলেও।
হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ইসারয়েলহামাসের ঘোষণা ও এরপর গাজায় বোমাবর্ষণ বন্ধে ট্রাম্পের আহ্বানের পর ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় এক বিবৃতিতে বলে, শান্তির জন্য প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের পরিকল্পনা বাস্তবায়নে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কাজ করবে ইসরায়েল।
নেতানিয়াহু বিবৃতিতে বলেন, ‘হামাসের প্রতিক্রিয়ার আলোকে ইসরায়েল সব জিম্মির অবিলম্বে মুক্তির জন্য ট্রাম্পের পরিকল্পনার প্রথম ধাপ তাৎক্ষণিক বাস্তবায়নের প্রস্তুতি নিচ্ছে। আমরা যুদ্ধের অবসানে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে পূর্ণ সহযোগিতা দিয়ে যাব।’
তবে এরপরও গতকাল গাজায় হামলা চালায় ইসরায়েলি বাহিনী। প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেন, ইসরায়েলি ট্যাংকগুলো গাজা নগরীতে গোলাবর্ষণ চালিয়ে যাচ্ছে। পাশাপাশি বিমান হামলাও চালায়। হামলা চালানো হয় দক্ষিণের খান ইউনিসেও।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানায়, গতকাল ইসরায়েলের হামলায় ৫৫ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে ইসরায়েলি বাহিনীর হামলায় গাজায় নিহতের সংখ্যা ৬৭ হাজার ছাড়িয়েছে।
‘এই সুযোগ কাজে লাগাতে হবে’ট্রাম্পের প্রস্তাবে হামাসের রাজি হওয়ার বিষয়টিকে উৎসাহব্যঞ্জক বলেছেন জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস। রক্তক্ষয়ী এ সংঘাত বন্ধের জন্য ‘এই সুযোগকে কাজে লাগাতে’ সব পক্ষকে আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
গাজায় যুদ্ধ বন্ধে শুরু থেকেই মধ্যস্থতা করে আসছে কাতার ও মিসর। হামাসের ঘোষণা আসার পর দেশ দুটি বলেছে, এর মধ্য দিয়ে সংঘাত বন্ধের পথ প্রশস্ত হলো। পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দার বিবৃতিতে বলেছেন, ইসরায়েলকে অবশ্যই অবিলম্বে হামলা বন্ধ করতে হবে।
ট্রাম্পের প্রস্তাবে হামাসের রাজি থাকাকে ‘শান্তি প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে একটি বড় পদক্ষেপ’ বলে উল্লেখ করেছেন ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাখোঁ, জার্মান চ্যান্সেলর ফ্রিডরিখ মের্ৎস ও যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার। হামাসের ইতিবাচক অবস্থানের পর একটি শান্তিচুক্তি নাগালের মধ্যে বলে মনে করেন ইউরোপীয় কমিশনের প্রধান উরসুলা ভন ডার লেন।
ইসরায়েলি হত্যাযজ্ঞ বন্ধে হামাস সাধ্যের সবটুকু দিয়ে চেষ্টা করছে বলে মনে করেন তুরস্কের ইস্তাম্বুল জাইম বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সামি আল–আরিয়ান। তিনি বলেন, ট্রাম্প যদি সত্যিই যুদ্ধের ইতি টানতে আন্তরিক হন, তবে তাঁর পরিকল্পনায় সেই পথে এগোনোর সুযোগ আছে।