আজ থেকে ৬ বছর আগে ২০১৯ সালের ৫ আগস্ট রাজ্য হিসেবে জম্মু ও কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা বাতিল করে দিয়েছে ভারতের কেন্দ্রীয় মোদি সরকার। সেই রাতে অভিযান চালিয়ে শত শত কাশ্মীরিকে গ্রেপ্তার করে ভারতীয় নিরাপত্তা বাহিনী।

সেদিন লাদাখের বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ, প্রকোশলী ও পরিবেশবাদী আন্দোলনের নেতা সোনম ওয়াংচুক ভারত সরকারের এ সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে ধন্যবাদ জানিয়েছিলেন।

তৎকালীন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম টুইটারে (বর্তমান নাম এক্স) এক পোস্টে ওয়াংচুক লিখেছিলেন, ‘লাদাখের দীর্ঘদিনের স্বপ্ন পূরণ করার জন্য প্রধানমন্ত্রী আপনাকে ধন্যবাদ।’

ওয়াংচুক লাদাখের একজন উদ্ভাবক ও শিক্ষা সংস্কারক। নানা বৈজ্ঞানিক উদ্ভাবন ও শিক্ষা সংস্কারমূলক কাজের জন্য ভারতজুড়ে তাঁর সুনাম ছড়িয়ে পড়ে। বলিউডের ব্লকবাস্টার সিনেমা ‘থ্রি ইডিয়টস’-এর ‘র‍্যাঞ্চো’ চরিত্র তাঁকে ঘিরেই তৈরি করা হয়েছে। এ চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন বলিউডের জনপ্রিয় অভিনেতা আমির খান।

ওয়াংচুক সেদিন লাদাখবাসীর হয়ে নরেন্দ্র মোদিকে ধন্যবাদ দিয়েছিলেন। তিনি বলেছিলেন, লাদাখের অনেক মানুষের বহু দশকের দাবি জম্মু ও কাশ্মীর থেকে তাঁদের অঞ্চলটিকে আলাদা করার। মোদি তাঁদের সেই স্বপ্ন পূরণ করেছেন।

জম্মু ও কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা প্রত্যাহারের পর রাজ্যটিকে জম্মু ও কাশ্মীর এবং লাদাখ নামে দুটি আলাদা কেন্দ্রশাসিত প্রশাসনিক অঞ্চলে ভাগ করা হয়। এর আগপর্যন্ত চীন সীমান্তসংলগ্ন প্রাকৃতিক সৌন্দর্যমণ্ডিত লাদাখ জম্মু ও কাশ্মীর রাজ্যের অংশ ছিল।

কিন্তু রাজ্য থেকে কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে রূপান্তরিত হলেও জম্মু ও কাশ্মীর স্থানীয় নির্বাচন আয়োজন এবং নিজেদের আলাদা আইনসভা গঠনের অনুমতি পেয়েছে। লাদাখকে সেই অনুমতি দেওয়া হয়নি। ফলে আলাদা অঞ্চল হলেও নিজেদের ভবিষ্যৎ নিয়ে কথা বলার সুযোগ লাদাখবাসীর কাছে অধরাই থেকে যায়।

নিজেদের ভবিষ্যৎ নির্ধারণে নিজেদের অংশগ্রহণের সুযোগ না থাকায় ধীরে ধীরে শান্ত লাদাখ রাজনৈতিকভাবে অস্থির হয়ে ওঠে। লাদাখবাসীর হতাশা প্রতিবাদ-বিক্ষোভে রূপ নিতে থাকে। তাঁদের এ আন্দোলনে নেতৃত্ব দেন ওয়াংচুক।

গত মাসের শেষ দিকে লাদাখে তরুণেরা নিজেদের দাবির পক্ষে ব্যাপক আন্দোলন শুরু করেন। ভারতের আধা সামরিক বাহিনীর সঙ্গে সংঘাতে চার আন্দোলনকারী নিহত হন। ওয়াংচুকের বিরুদ্ধে আন্দোলনে উসকানি দেওয়ার অভিযোগ ওঠে।

লাদাখে তরুণদের আন্দোলন দমাতে ২৬ সেপ্টেম্বর ভারতের নিরাপত্তা বাহিনী ওয়াংচুককে গ্রেপ্তার করে। তাঁকে লাদাখের বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে হাজার মাইল দূরে রাজস্থানের যোধপুর কারাগারে রাখা হয়েছে।

রাজ্য থেকে কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে রূপান্তরিত হলেও জম্মু ও কাশ্মীর স্থানীয় নির্বাচন আয়োজন এবং নিজেদের আলাদা আইনসভা গঠনের অনুমতি পায়। লাদাখকে সে অনুমতি দেওয়া হয়নি।

ওয়াংচুকের বিরুদ্ধে ‘রাষ্ট্রবিরোধী’ কার্যক্রম এবং ‘সরকার উৎখাতের ষড়যন্ত্র’ করার অভিযোগ আনা হয়েছে।

অথচ বিজেপি ও মোদি সরকার এর আগে লাদাখে তাদের প্রচারে ওয়াংচুককে ব্যবহার করেছিল। ভারতের অন্যান্য রাজ্যে বিজেপি নেতৃত্বাধীন সরকারগুলো স্থানীয় শিক্ষাব্যবস্থায় সংস্কার আনতে একজন শিক্ষাবিদ হিসেবে ওয়াংচুকের পরামর্শ নিয়েছে।

ওয়াংচুককে সামনে রেখে মোদি সরকার নিজেদের পক্ষে প্রচারণা চালিয়েছে। আজ সেই ওয়াংচুক মোদি সরকারের চোখে একজন ‘দেশদ্রোহী’। ওয়াংচুক লাদাখের পক্ষে যে আন্দোলন করছেন, তার পেছনে ভারত সরকার প্রতিবেশী দেশ পাকিস্তানের ‘ইন্ধন’ খুঁজছে।

এ নিয়ে আল-জাজিরাকে ওয়াংচুকের স্ত্রী গীতাঞ্জলি আংমো বলেন, যে সরকার তাঁকে (ওয়াংচুক) সম্মানে ভূষিত করেছিল, হঠাৎ এক মাসের মধ্যে সেই একই সরকার তাঁকে রাষ্ট্রদ্রোহী বলছে।

গীতাঞ্জলি আরও বলেন, ‘এ সংকেত স্পষ্ট: তাঁকে চুপ করাতে, ভয় দেখাতে এটি করা হচ্ছে। কারণ, তাঁকে তারা অর্থ দিয়ে কিনতে পারেনি।’

গত ২৪ সেপ্টেম্বর এভাবেই বিক্ষোভে আগুনে জ্বলে উঠেছিল লাদাখ.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

সৌদি যুবরাজের সমালোচক জামাল খাশোগি যেভাবে মারা হয়েছিলো

জামাল খাশোগি ছিলেন একজন বিশিষ্ট সৌদি সাংবাদিক, কলামিস্ট এবং লেখক। একসময়ের রাজপরিবারের ঘনিষ্ঠ ব্যক্তি ছিলেন। পরে রাজপরিবারের একজন সমালোচক হিসেবে পরিচিতি পান। সৌদি রাজপরিবারের বৃত্তি নিয়ে জামাল খাশোগি যুক্তরাষ্ট্রে সাংবাদিকতা বিষয়ে পড়াশোনা করেছিলেন। তিনি আল-আরাব নিউজ চ্যানেল-এর মহাব্যবস্থাপক ছিলেন এবং ওয়াশিংটন পোস্ট-এর একজন নিয়মিত কলামিস্ট ছিলেন। কিন্তু খাশোগির লেখায় ক্রমাগত স্থান পাচ্ছিলো সৌদি রাজতন্ত্রের নানা  নেতিবাচক দিক। বিশেষ করে যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের। 

২০১৭ সালের জুনে যুবরাজ মোহাম্মদ ক্রাউন প্রিন্স হওয়ার পর কড়া সমালোচক হিসেবে খাশোগি তার রোষানলে পড়েন। অবস্থা বুঝতে পেরে নিজেকে বাঁচাতে ওই বছরের সেপ্টেম্বরে সৌদি আরব ছেড়ে যুক্তরাষ্ট্রে স্বেচ্ছানির্বাসনে চলে যান। এরপর যুক্তরাষ্ট্র থেকে চলে যান তুরস্কে।

আরো পড়ুন:

খাশোগি হত্যাকাণ্ডের কিছুই জানতেন না সৌদি যুবরাজ: ট্রাম্প

সৌদি আরবকে এফ-৩৫ যুদ্ধবিমান দিতে রাজি ট্রাম্প

২০১৮ সালে সৌদি আরব থেকে ১৫ সদস্যদের দল উড়ে গিয়ে তুরস্কের ইস্তাম্বুলে সৌদি কনস্যুলেট ভবনের ভেতরে গত ২ অক্টোবর তাকে হত্যা করে লাশ গুম করে ফেলে। সে সময়  আন্তর্জাতিক পত্রিকাগুলোতে স্থান পায় খাশোগির মৃত্যুর খবর। সমালোচনায় বলা হয়,  রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতা ছাড়া এমন উচ্চ নিরাপত্তার স্থানে হত্যাকাণ্ড ঘটানো অসম্ভব।

তুরস্ক ও যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর দেওয়া বিবৃতির ভিত্তিতে স্পষ্ট হয়, রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষক মূলত সৌদি আরবের ক্ষমতাধর ব্যক্তি ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমান।

খাশোগিকে হত্যার পর আন্তর্জাতিক মহলে এ নিয়ে সমালোচনার ঝড় উঠলে প্রথমে এ হত্যাকাণ্ডের কথা অস্বীকার করে সৌদি আরব। কিন্তু সমালোচনা আরও বাড়তে থাকে। পরে আন্তর্জাতিক চাপের মুখে কনস্যুলেট ভবনে হত্যার কথা স্বীকার করে সৌদি আরব। তবে এ হত্যার পেছনে যুবরাজ মোহাম্মদের সংশ্লিষ্টতা জোরের সঙ্গে প্রত্যাখ্যান করেছে সৌদি আরব।

ঢাকা/লিপি

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • কুষ্টিয়ায় মুখোশধারী দুর্বৃত্তদের গুলিতে কৃষক নিহত
  • পাবনা-৩: ‘বিএনপির প্রার্থী পরিবর্তন না করলে চাচা-ভাতিজার একজন স্বতন্ত্র হব’
  • চট্টগ্রামে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে থেকে প্রাইভেট কার ছিটকে পড়ে একজনের মৃত্যু
  • ফেনীতে পৃথক ঘটনায় ৩ জনের মৃত্যু
  • কামাল সিদ্দিকী: আমলাতন্ত্রের ঘেরাটোপ ভাঙা একজন দেশপ্রেমী
  • চট্টগ্রামে ডেঙ্গুতে একজনের মৃত্যু
  • গাজার ফিলিস্তিনিদের দক্ষিণ আফ্রিকায় নিয়ে যাওয়া প্রতিষ্ঠানটি আসলে কারা চালাচ্ছে
  • যুক্তরাষ্ট্রের নতুন প্রস্তাব, জমি ছাড়তে হবে ইউক্রেনকে
  • এলোমেলো শিক্ষা খাত, বাড়ছে সংকট
  • সৌদি যুবরাজের সমালোচক জামাল খাশোগি যেভাবে মারা হয়েছিলো