ক্রেডিট কার্ড নিতে আয়কর রিটার্নের প্রমাণপত্র দেখাতে হবে না
Published: 9th, October 2025 GMT
ক্রেডিট কার্ড নিতে হলে এত দিন বার্ষিক আয়কর বিবরণী বা রিটার্ন জমার প্রমাণপত্র বা প্রুফ অব সাবমিশন অব রিটার্ন (পিএসআর) লাগত। এখন আর সেই পিএসআর লাগবে না।
শুধু কর শনাক্তকরণ নম্বরধারীদের (টিআইএন) সিস্টেম জেনারেটেড প্রত্যয়নপত্র দাখিল করলেই হবে। ফলে ক্রেডিট কার্ড নিতে ঝক্কিঝামেলা কমল। শিক্ষার্থীসহ করযোগ্য নন, এমন করদাতাদের ক্রেডিট কার্ড নিতে জটিলতা ছিল।
চলতি অর্থবছরের বাজেটে ক্রেডিট কার্ড গ্রহণ ও নবায়নে রিটার্ন জমার প্রমাণপত্র দেখানোর বাধ্যবাধকতা তুলে দেওয়া হয়। এটি অনেক দিনের দাবি ছিল। কারণ, এখন টিউশন ফিসহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় লেনদেনের জন্য বহু শিক্ষার্থী ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করেন। কিন্তু তাঁদের করযোগ্য আয় নেই। তাই এ ছাড় দেওয়া হয় বলে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) সূত্রে জানা গেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, এ পর্যন্ত ৫৪ লাখ ক্রেডিট কার্ড ইস্যু করা হয়েছে। প্রতি মাসে গড়ে ৩ হাজার কোটি টাকার বেশি ক্রেডিট কার্ড লেনদেন করা হয়। বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাব অনুসারে, গত জুলাই মাসে ৩ হাজার ৫০৮ কোটি টাকা লেনদেন করা হয়েছে।
ক্রেডিট কার্ড ধীরে ধীরে জনপ্রিয় হচ্ছে। কারণ, ক্রেডিট কার্ড লেনদেনে জীবনকে সহজ করে। এখন দেখা যাক, কীভাবে ক্রেডিট কার্ড নেবেন, কারা পাবেন ক্রেডিট কার্ড।
কীভাবে নেবেনএখন প্রতিটি ব্যাংক অনলাইনে ক্রেডিট কার্ডের জন্য আবেদন জমা নেয়। আপনি আবেদন করলে ক্রেডিট কার্ড বিক্রয়কর্মীরা আপনার ঠিকানায় এসে কার্ডের ফরম পূরণ করে নিয়ে যাবেন। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে আপনার কাছে কুরিয়ারে চলে আসবে ক্রেডিট কার্ড ও পিন। কার্ড নিতে ব্যাংকে আলাদা হিসাব খোলা বাধ্যতামূলক নয়। কার্ডের আবেদনে জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি), দুই কপি পাসপোর্ট সাইজের ছবি, বর্তমান ঠিকানার প্রমাণ, যেমন বিদ্যুৎ, গ্যাস বিল, পুরোনো ব্যাংক স্টেটমেন্ট (সাধারণত ছয় মাসের), নমিনির পরিচয়পত্র ও ছবি ও রেফারেন্স দিতে হবে। রেফারেন্সে সাধারণত ওই সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের গ্রাহকের নাম দিতে হয়।
ব্যাংক যাচাই করে দেখবে আপনি যথাযথ ক্রেডিট স্কোর, লেনদেন সক্ষমতা ও নিয়মিত আয়-ব্যয়ের প্রমাণ দেখাতে পারছেন কি না। এরপর আপনাকে ক্রেডিট কার্ড দেবে এবং সেই কার্ডের খরচের সীমা কত হবে, তা-ও নির্ধারণ করা হবে ক্রেডিট স্কোরের ওপর।
কারা পাবেন ক্রেডিট কার্ডএবার দেখা যাক, কারা ক্রেডিট কার্ড পাবেন
১.
২. চাকরিজীবীদের ক্ষেত্রে ৩০ হাজার টাকা বেতন হলেই ব্যাংক ক্রেডিট কার্ড দিয়ে থাকে। আর ব্যবসায়ীদের ক্ষেত্রে ব্যাংকে বছরে ১০ লাখ টাকা লেনদেন হলেই কার্ড দেয়।
৩. এর বাইরে ক্রেডিট কার্ডের জন্য যোগ্য পরিবারের ওপর নির্ভরশীল শিক্ষার্থীরা ক্রেডিট কার্ড পেতে পারেন।
উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
জয়পুরহাটে ভাইয়ে-ভাইয়ে দ্বন্দ্ব, ‘বেরিয়ে এল’ দুর্নীতির তথ্য
দীর্ঘদিন ধরে দুই ভাইয়ের মধ্যে জমিজমা নিয়ে দ্বন্দ্ব চলছিল। এ নিয়ে একাধিক মামলা-মোকদ্দমাও হয়েছে। এর মধ্যে এক ভাইয়ের দুর্নীতির বিষয়টি প্রকাশ্যে এসেছে। দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) অনুসন্ধান করে তাঁর বিরুদ্ধে জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের প্রমাণ পায়। দুদকের সমন্বিত নওগাঁ জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক নওশাদ আলী বাদী হয়ে গত বছর তাঁর বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করেন।
আদালত সেই সম্পদের রক্ষণাবেক্ষণে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে (ইউএনও) রিসিভার হিসেবে নিয়োগ দেন। আদালতের নির্দেশে আজ বৃহস্পতিবার সকালে আক্কেলপুরের কানুপুর গ্রামে অভিযুক্ত ফজলুর রহমানের ৩ বিঘা ২৫ শতাংশ আবাদি জমির দখল বুঝে নেন ইউএনও।
অভিযুক্ত ফজলুর রহমান যৌথ মূলধন কোম্পানি ও ফার্মগুলোর পরিদপ্তরের খুলনা বিভাগীয় কার্যালয়ে এক্সামিনার অব অ্যাকাউন্টস পদে কর্মরত ছিলেন। চলতি বছরের জানুয়ারিতে তিনি অবসরে যান। তাঁর বিরুদ্ধে দুদকের মামলা চলমান।
ফজলুর রহমানের দাবি, তিনি বৈধ আয়ে সম্পদ অর্জন করেছেন। আয়কর রিটার্ন ফাইল দাখিলের সময় জমিগুলোর তথ্য ভুলে উল্লেখ করা হয়নি। জমিজমা নিয়ে দ্বন্দ্বে তাঁর বড় ভাই শফিউল ইসলাম এমন কাজ করছেন বলে তিনি অভিযোগ করেন। তবে শফিউল আলম বিষয়টি অস্বীকার করেন।
দুদকের সমন্বিত নওগাঁ কার্যালয়ের উপপরিচালক মেহেবুবা খাতুন বলেন, ফজলুর রহমান চাকরিতে কর্মরত থাকা অবস্থায় ১৯ লাখ ৭১ হাজার ৯৯৬ টাকার স্থাবর সম্পত্তি ও ৮০ লাখ ১৫ হাজার ২৬ টাকার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জন করেন। এ নিয়ে দুদক কর্মকর্তা নওশাদ আলী বাদী হয়ে আদালতে মামলা করেন।
আদালত ফজলুর রহমানের হেফাজতে থাকা জয়পুরহাট শহরের সরদারপাড়া মহল্লার ছয় শতাংশের একটি বাড়ি ও আক্কেলপুর উপজেলার কানুপুর গ্রামের ৩ বিঘা ২৫ শতক আবাদি জমি ক্রোক করার আদেশ দেন। ওই সম্পত্তি রক্ষণাবেক্ষণে ইউএনওকে রিসিভার হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। আজ ইউএনও কানুপুর মাঠের জমিগুলোর দখল বুঝে নিয়েছেন। তখন তিনি নিজেও সেখানে উপস্থিত ছিলেন। দ্রুত মামলার অভিযোগপত্র আদালতে দাখিল করা হবে।
আক্কেলপুরের ইউএনওর দায়িত্বে থাকা সহকারী কমিশনার (ভূমি) আবিদা খানম বলেন, ফজলুর রহমানের জ্ঞাত আয়বহির্ভূত স্থাবর সম্পত্তি রক্ষণাবেক্ষণে আদালত তাঁকে রিসিভার নিয়োগ করেন। আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী আজ সকালে তফসিলভুক্ত ৩ বিঘা ২৫ শতক জমির দখল বুঝে নিয়ে লাল ঝান্ডা পুঁতে দেওয়া হয়েছে। তবে তাঁর এলাকার বাইরে হওয়ায় জয়পুরহাট সদরে থাকা ছয় শতাংশের বাসাটির দখল বুঝে নেওয়া হয়নি।
তবে জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগ অস্বীকার করে ফজলুর রহমান বলেন, ‘আমার সব সম্পদ বৈধ। আয়কর রিটার্ন দাখিলের সময় ভুলক্রমে জমিগুলো ফাইলে তোলা হয়নি। আমাদের ভাইদের মধ্যে জমিজমা নিয়ে দ্বন্দ্ব আছে। এই সুযোগে বড় ভাই শফিউল আলম আমার ক্ষতি করেছে।’
শফিউল আলম বলেন, ‘ছোট ভাইয়ের সঙ্গে জমিজমা নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে দ্বন্দ্ব চলছে, সত্য। তবে আমার পরিবারের কেউ দুদকে অভিযোগ করেনি। দুদক আমার ছোট ভাই ফজলুর রহমানের জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ পেয়েছে বলে জেনেছি।’