মৌলবাদী শক্তির স্থান এ দেশে হবে না: বাসদ
Published: 10th, November 2025 GMT
দেশে যাঁরা এখন ক্ষমতায় যেতে খুবই আগ্রহী, তাঁদের মধ্যে কিছু মৌলবাদী শক্তি রয়েছে। কিন্তু মৌলবাদী শক্তির স্থান এ দেশে হবে না। এ দেশের সাধারণ মানুষ গ্রহণ করবে না। পাকিস্তান অনেক চেষ্টা করেছে এই দেশের ভেতরে মৌলিবাদী শক্তি স্থাপন করার জন্য। কিন্তু তারা তা পারেনি।
সোমবার বিকেলে রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী মিলনায়তনে বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দলের (বাসদ) নেতা আ ফ ম মাহবুবুল হকের অষ্টম মৃত্যুবার্ষিকীতে আয়োজিত আলোচনা সভায় দলের নেতারা এ কথা বলেন।
সাধারণ মানুষের দল বা সাধারণ মানুষের প্রতিনিধি এই সরকারের মধ্যে নেই বলে মন্তব্য করেন বাসদের সাধারণ সম্পাদক হারুনুর রশিদ ভূঁইয়া। তিনি বলেন, বর্তমানে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত এই দেশের সাধারণ মানুষ। এই সরকারের আমলে এক লাখ পোশাকশ্রমিকের চাকরি নেই। চা–দোকানগুলো বন্ধ। হোটেল–রেস্তোরাঁয় বেচাবিক্রি কমে গেছে। মানুষ কম খায়। খুবই কম খরচ করে। মানুষের আয়রোজগার কমে গেছে।
বাংলাদেশের সাধারণ মানুষ ভারতের বিরুদ্ধে নয়—এ কথা উল্লেখ করে হারুনুর রশিদ বলেন, ভারতের সঙ্গে সম্পর্কের টানাপোড়েনের কারণে ভিসা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় দেশের সাধারণ মানুষ, বিশেষ করে নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্ত, যাঁরা চিকিৎসার জন্য ভারতে যেতেন, তাঁরা এখন বিপাকে পড়েছেন। অথচ মন্ত্রী-আমলারা ও উচ্চবিত্তরা চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুর, ব্যাংকক কিংবা লন্ডনে যাচ্ছেন নির্দ্বিধায়। তিনি বলেন, ভারতে ভিসা বন্ধ হয়ে যাওয়ার ফলে দেশের সাধারণ মানুষ, বিশেষ করে চিকিৎসার ওপর নির্ভরশীল ব্যক্তিরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। কিন্তু এ পরিস্থিতিতে সরকার কোনো বিকল্প ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি।
হারুনুর রশিদ আরও বলেন, রাজনীতিতে সাধারণ মানুষ, গরিব মানুষ ও জনসাধারণের ভূমিকা থাকা উচিত। অথচ এখন কিছু মৌলবাদী শক্তি কেবল ক্ষমতা দখলের প্রতিযোগিতায় নেমেছে। তিনি আরও বলেন, মৌলবাদী শক্তির এই দেশে কোনো স্থান হবে না—এ দেশের সাধারণ মানুষ তা কখনোই গ্রহণ করবে না। পাকিস্তান অতীতে বহুবার এই মৌলবাদী শক্তিকে বাংলাদেশে প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা করেছে, কিন্তু সফল হয়নি।
আলোচনা সভায় অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ, নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সাবেক সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিমসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা, লেখকসহ অন্যরা উপস্থিত ছিলেন।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
ভালোবাসা ও শ্রদ্ধায় ঢাবিতে মানবেন্দ্র লারমাকে স্মরণ
সাবেক আইনপ্রণেতা ও বিপ্লবী নেতা মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমার ৪২তম মৃত্যুবার্ষিকীতে তাঁকে শ্রদ্ধা ও ভালোবাসায় স্মরণ করা হয়েছে। সোমবার বিকেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলায় এক স্মরণসভায় তাঁর স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানানো হয়।
স্মরণসভার শুরুতে শোক প্রস্তাব পাঠ করেন এম এন লারমার ৪২তম মৃত্যুবার্ষিকী পালন জাতীয় কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাপক রেজওয়ানা করিম স্নিগ্ধা।
মানবেন্দ্র লারমা গরিব মেহনতি মানুষের নেতা উল্লেখ করে স্মরণসভায় সাংবাদিক সোহরাব হাসান বলেন, ‘তিনি কেবল পাহাড়ি মানুষের নেতা ছিলেন না। বিপ্লবী মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমা সমগ্র নিপীড়িত মানুষের কথা বলেছেন। তিনি বাহাত্তরের সংবিধানে আদিবাসী, শ্রমিক ও মেহনতি মানুষের কথা তুলে ধরেছেন। তিনি সে সময় সংসদে দাড়িয়ে দৃঢ় কণ্ঠে প্রতিবাদ করেছিলেন যে তিনি একজন চাকমা, একজন চাকমা কোনো দিন বাঙালি হতে পারেন না।’
পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির সদস্য দীপায়ন খীসা বলেন, ‘জুলাই সনদে আজকে আদিবাসী মানুষের কথা বলা নেই। অথচ কেবল মুখে বহুত্ববাদী, অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশের কথা বলা হচ্ছে। বিগত সময়ের দলীয় সরকার নাহয় আদিবাসী জনগোষ্ঠীর অধিকার প্রতিষ্ঠা করেনি। কিন্তু গণ–অভ্যুত্থান–পরবর্তী বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের সময় পাহাড়ি আদিবাসীরা কমপক্ষে দুটি সাম্প্রদায়িক হামলার শিকার হয়েছেন। অন্যদিকে পার্বত্য চট্টগ্রামের সমস্যাকে রাজনৈতিভাবে সমাধানের লক্ষ্যে স্বাক্ষরিত পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়নের কথা অন্তর্বর্তীকালীন সরকার এখনো উচ্চারণ করেনি।’
ঐক্য ন্যাপের সাধারণ সম্পাদক আসাদুল্লাহ তারেক বলেন, ‘চব্বিশের গণ–অভ্যুত্থান যে চেতনা নিয়ে শুরু হয়েছিল, আজ সেই চেতনা মৌলবাদী শক্তির কাছে লুট হয়ে গেছে। সত্তরের দশকে নতুন বাংলাদেশে মহান নেতা মানবেন্দ্র লারমা সেই স্বপ্ন দেখছিলেন, যে স্বপ্ন একটি অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়ার, গরিব মেহনতি তথা নিপীড়িত পাহাড়ি আদিবাসীদের অধিকার প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন বুনেছিলেন।’
বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দলের (বাসদ) সহসাধারণ সম্পাদক রাজেকুজ্জামান রতন বলেন, বাহাত্তরের সংবিধানে নিপীড়িত মানুষের অধিকারের কথা বলা হয়নি, নারী-পুরুষের বৈষম্য বিলোপ এবং মেহনতি মানুষের মৌলিক অধিকারের কথা তুলে ধরা হয়নি। সে সময় শোষিত মানুষের বন্ধু মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমা তাঁদের হয়ে কথা বলেছেন। তিনি সংবিধান প্রণয়নের সময় শ্রমিক, গরিব ও আদিবাসী নিপীড়িত মানুষের কথা বলেছিলেন।
সাবেক সংসদ সদস্য ও বাংলাদেশ জাসদের সাধারণ সম্পাদক নাজমুল হক প্রধান বলেন, ‘স্বাধীনতার পর থেকে এ দেশের যত রাজনৈতিক দল আছে, তারা অন্য জনগোষ্ঠীকে অন্তর্ভুক্ত করার মতো মানসিকতা এখনো তৈরি করতে পারেনি। ভোটের আগে মুখে বললেও তা বাস্তবে বাস্তবায়ন করে না।’
বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সাধারণ সম্পাদক আবদুল্লাহ আল কাফি রতন বলেন, ‘মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমা জুম্ম জাতির জন্য ছাত্রজীবন থেকে অধিকারের কথা বলেছিলেন। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের সংবিধান যখন বাঙালি বলে আদিবাসী মানুষের পরিচয় করে দিতে চেয়েছিল, সেই সময় গণপরিষদে এম এন লারমা প্রতিবাদ করেছিলেন।’
স্মরণসভায় আরও বক্তব্য দেন লেখক ও সাংবাদিক এহসান মাহমুদ, সাংবাদিক সাইফুর রহমান, এএলআরডির নির্বাহী পরিচালক শামসুল হুদা ও নারীনেত্রী শিরিন হক। স্মরণসভা শেষে গান, কবিতা পাঠ ও প্রদীপ প্রজ্বালনের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠান শেষ হয়।