বিএনপি-জামায়াতের আজকের এই ভেদাভেদের মূল কারণ হচ্ছে ক্ষমতার দ্বন্দ্ব: মজিবুর রহমান
Published: 10th, November 2025 GMT
বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামী ১৫ বছর ধরে একে অপরের কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে লড়াই করেছে, জেল-জুলুম সহ্য করেছে, অসংখ্য কর্মী আহত ও পঙ্গু হয়েছেন, এমনকি অনেকে জীবন উৎসর্গ করেছেন। অথচ আজ বিএনপি–জামায়াতের মধ্যে বিভেদ ও ঘৃণার দেয়াল কেন? বিএনপি–জামায়াতের আজকের এই ভেদাভেদের মূল কারণ হচ্ছে ক্ষমতার দ্বন্দ্ব। ক্ষমতাকে কেন্দ্র করেই তারা আজ মুখোমুখি দাঁড়িয়ে গেছে।
সোমবার রাজধানীর আইডিইবি মিলনায়তনে ‘দক্ষ জনশক্তি, দেশ গঠনের মূল ভিত্তি’ শীর্ষক সেমিনারে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে এবি পার্টির চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান এ কথা বলেন। অনুষ্ঠানটির আয়োজন করে ইনস্টিটিউশন অব ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স বাংলাদেশ (আইডিইবি)।
মজিবুর রহমান বলেন, ‘আমরা এক কঠিন রাজনৈতিক সময় অতিক্রম করছি। বিএনপি-জামায়াতের মধ্যে যে ক্ষমতার লড়াই চলছে, তা বন্ধ করে ঐক্যের পথে আসতে হবে। আগামী পাঁচ বছর বিএনপি ও জামায়াতকে ঐক্যবদ্ধভাবে সংসদে ও সরকারে থাকার জন্য আমি আহ্বান জানাই। হাসিনা যদি পালিয়ে না গিয়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন দিতেন, তাহলে বিএনপি-জামায়াত ঐক্যবদ্ধভাবেই নির্বাচনে অংশ নিত। এখন একে অপরের বিরুদ্ধে দোষারোপ না করে ঐক্যবদ্ধ রাজনীতিতে ফেরার সময় এসেছে।’
রাজনৈতিক দলের প্রতি জনগণের আস্থাহীনতার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘জনগণ এখন রাজনৈতিক দলের ইশতেহার বিশ্বাস করে না। কারণ, আমরা প্রতিশ্রুতি দিই, কিন্তু তা রাখি না। এ জন্য আমাদের নেতাদের মধ্যে সততা, জবাবদিহি ও আস্থার পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে হবে।’
সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন আইডিইবির অন্তর্বর্তী কেন্দ্রীয় কমিটির আহ্বায়ক প্রকৌশলী মো.
উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
ভালোবাসা ও শ্রদ্ধায় ঢাবিতে মানবেন্দ্র লারমাকে স্মরণ
সাবেক আইনপ্রণেতা ও বিপ্লবী নেতা মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমার ৪২তম মৃত্যুবার্ষিকীতে তাঁকে শ্রদ্ধা ও ভালোবাসায় স্মরণ করা হয়েছে। সোমবার বিকেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলায় এক স্মরণসভায় তাঁর স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানানো হয়।
স্মরণসভার শুরুতে শোক প্রস্তাব পাঠ করেন এম এন লারমার ৪২তম মৃত্যুবার্ষিকী পালন জাতীয় কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাপক রেজওয়ানা করিম স্নিগ্ধা।
মানবেন্দ্র লারমা গরিব মেহনতি মানুষের নেতা উল্লেখ করে স্মরণসভায় সাংবাদিক সোহরাব হাসান বলেন, ‘তিনি কেবল পাহাড়ি মানুষের নেতা ছিলেন না। বিপ্লবী মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমা সমগ্র নিপীড়িত মানুষের কথা বলেছেন। তিনি বাহাত্তরের সংবিধানে আদিবাসী, শ্রমিক ও মেহনতি মানুষের কথা তুলে ধরেছেন। তিনি সে সময় সংসদে দাড়িয়ে দৃঢ় কণ্ঠে প্রতিবাদ করেছিলেন যে তিনি একজন চাকমা, একজন চাকমা কোনো দিন বাঙালি হতে পারেন না।’
পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির সদস্য দীপায়ন খীসা বলেন, ‘জুলাই সনদে আজকে আদিবাসী মানুষের কথা বলা নেই। অথচ কেবল মুখে বহুত্ববাদী, অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশের কথা বলা হচ্ছে। বিগত সময়ের দলীয় সরকার নাহয় আদিবাসী জনগোষ্ঠীর অধিকার প্রতিষ্ঠা করেনি। কিন্তু গণ–অভ্যুত্থান–পরবর্তী বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের সময় পাহাড়ি আদিবাসীরা কমপক্ষে দুটি সাম্প্রদায়িক হামলার শিকার হয়েছেন। অন্যদিকে পার্বত্য চট্টগ্রামের সমস্যাকে রাজনৈতিভাবে সমাধানের লক্ষ্যে স্বাক্ষরিত পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়নের কথা অন্তর্বর্তীকালীন সরকার এখনো উচ্চারণ করেনি।’
ঐক্য ন্যাপের সাধারণ সম্পাদক আসাদুল্লাহ তারেক বলেন, ‘চব্বিশের গণ–অভ্যুত্থান যে চেতনা নিয়ে শুরু হয়েছিল, আজ সেই চেতনা মৌলবাদী শক্তির কাছে লুট হয়ে গেছে। সত্তরের দশকে নতুন বাংলাদেশে মহান নেতা মানবেন্দ্র লারমা সেই স্বপ্ন দেখছিলেন, যে স্বপ্ন একটি অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়ার, গরিব মেহনতি তথা নিপীড়িত পাহাড়ি আদিবাসীদের অধিকার প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন বুনেছিলেন।’
বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দলের (বাসদ) সহসাধারণ সম্পাদক রাজেকুজ্জামান রতন বলেন, বাহাত্তরের সংবিধানে নিপীড়িত মানুষের অধিকারের কথা বলা হয়নি, নারী-পুরুষের বৈষম্য বিলোপ এবং মেহনতি মানুষের মৌলিক অধিকারের কথা তুলে ধরা হয়নি। সে সময় শোষিত মানুষের বন্ধু মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমা তাঁদের হয়ে কথা বলেছেন। তিনি সংবিধান প্রণয়নের সময় শ্রমিক, গরিব ও আদিবাসী নিপীড়িত মানুষের কথা বলেছিলেন।
সাবেক সংসদ সদস্য ও বাংলাদেশ জাসদের সাধারণ সম্পাদক নাজমুল হক প্রধান বলেন, ‘স্বাধীনতার পর থেকে এ দেশের যত রাজনৈতিক দল আছে, তারা অন্য জনগোষ্ঠীকে অন্তর্ভুক্ত করার মতো মানসিকতা এখনো তৈরি করতে পারেনি। ভোটের আগে মুখে বললেও তা বাস্তবে বাস্তবায়ন করে না।’
বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সাধারণ সম্পাদক আবদুল্লাহ আল কাফি রতন বলেন, ‘মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমা জুম্ম জাতির জন্য ছাত্রজীবন থেকে অধিকারের কথা বলেছিলেন। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের সংবিধান যখন বাঙালি বলে আদিবাসী মানুষের পরিচয় করে দিতে চেয়েছিল, সেই সময় গণপরিষদে এম এন লারমা প্রতিবাদ করেছিলেন।’
স্মরণসভায় আরও বক্তব্য দেন লেখক ও সাংবাদিক এহসান মাহমুদ, সাংবাদিক সাইফুর রহমান, এএলআরডির নির্বাহী পরিচালক শামসুল হুদা ও নারীনেত্রী শিরিন হক। স্মরণসভা শেষে গান, কবিতা পাঠ ও প্রদীপ প্রজ্বালনের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠান শেষ হয়।