প্রয়াত সাংবাদিক মিজানুর রহমান খান একজন ক্ষণজন্মা ব্যক্তিত্ব। তিনি কেবল সাংবাদিক ও লেখকই ছিলেন না, তিনি সংস্কারকও। অন্তর্বর্তী সরকার যেসব কমিশন গঠন করেছে, সেগুলোর দু-একটি ছাড়া প্রায় সব কমিশনই তাঁর লেখা থেকে নির্দেশনা পেতে পারে।

সাংবাদিক মিজানুর রহমান খানের চতুর্থ মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত স্মরণসভায় বক্তারা এ মত দেন। আজ শনিবার সকালে রাজধানীর মগবাজারে দৈনিক আমাদের বার্তা মিলনায়তনে এই স্মরণসভা অনুষ্ঠিত হয়।

স্মরণসভায় স্বাগত বক্তব্য দেন মিজানুর রহমানের ভাই দৈনিক আমাদের বার্তার প্রধান সম্পাদক ও শিক্ষাডটকমের সম্পাদক সিদ্দিকুর রহমান খান। তিনি স্মরণসভায় উপস্থিত সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। প্রথম আলোর প্রয়াত যুগ্ম সম্পাদক মিজানুর রহমান খানের জীবনী পাঠ করেন দৈনিক আমাদের বার্তার জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক সাবিহা সুমি।

স্মরণসভায় মিজানুর রহমান খানকে ক্ষণজন্মা পুরুষ বলে উল্লেখ করেন সাবেক শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী আ ন ম এহছানুল হক মিলন। তিনি বলেন, মিজানুর রহমান নিজে নিজেকে তৈরি করেছেন। তিনি আইনের ছাত্র না হয়েও আইন নিয়ে গভীরভাবে লিখেছেন। রাজনৈতিক সমস্যা তিনি এমনভাবে বিশ্লেষণ করতেন, সেটা সর্বজন গ্রহণযোগ্য হতো।

আইন-আদালত ও সংবিধান বিষয়ে সাংবাদিকতায় মিজানুর রহমান খান স্মৃতি পুরস্কার প্রবর্তন করা হবে বলে ঘোষণা দেন এহছানুল হক মিলন।

স্মরণসভায় বক্তব্য দেন সাবেক ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল জহুরুল ইসলাম। মিজানুর রহমান খানের লেখায় কখনো রাজনৈতিক সম্পৃক্ততা প্রকাশ পায়নি উল্লেখ করে তিনি বলেন, অন্তর্বর্তী সরকার যেসব কমিশন গঠন করেছে, দু-একটি ছাড়া প্রায় সব কমিশন তাঁর লেখা থেকেই নির্দেশনা পেতে পারে। এসব বিষয়ে তাঁর গভীর অনুসন্ধানী লেখা আছে। আজ তিনি বেঁচে থাকলে আরও অনেক বিষয়ে লেখার ছিল।

মিজানুর রহমান খান শৈশবে কেমন ছিলেন তা বর্ণনা করেছেন তাঁর ঘনিষ্ঠ বন্ধু খালিদুর রহমান খান। তিনি বলেন, ব্যক্তি মিজান ছিলেন অত্যন্ত সহজ, সরল, সৎ, ব্যক্তিস্বার্থহীন নির্লোভ একজন মানুষ। ছোটবেলা থেকেই কোনো সময়ে কোনো ধরনের স্বার্থপরতার কাজ তাঁর ছিল না। তারই ধারাবাহিকতায় মিজান তাঁর কর্মজীবনে যে স্বপ্ন দেখতেন, সে স্বপ্ন বাস্তবায়নের কাজ করেছেন।

মিজানুর রহমানের সব লেখা নিয়ে সংকলন ও স্মারকগ্রন্থ প্রকাশ করার পরামর্শ দিয়েছেন খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক মাজহারুল হান্নান।

ক্যাডেট কলেজের সাবেক শিক্ষক মাছুম বিল্লাহ বলেন, মিজানুর রহমান খান সত্যিকার অর্থেই একজন সংস্কারক ছিলেন। তিনি এমন একটি পরিবেশে লিখেছেন, যখন সাংবাদিকদের অনেক দুর্দিন ছিল।

মিজানুর রহমান খানের দীর্ঘদিনের সহকর্মী প্রথম আলোর আলোকচিত্র সাংবাদিক জিয়া ইসলাম বলেন, ‘মিজান ভাইকে “ঈর্ষা” করতাম। কারণ, প্রথম আলোতে তাঁর তোলা একটা ছবি লিড ছবি (প্রধান ছবি) হিসেবে ছাপানো হয়েছিল। দুই বাসের চাপায় একজনের হাত বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়ার সেই ছবি মিজান ভাইয়ের তোলা। আসলে সব বিষয়েই তাঁর বোঝার ক্ষমতা ছিল বেশি। তাঁর কাজের গতিও ছিল অসাধারণ।’

অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন টিচার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ট্যাব) সভাপতি অধ্যাপক মুহম্মদ মতিউর রহমান গাজ্জালী, সাংবাদিক বোরহানুল হক সম্রাট, নোমানুল হক, শাহনাজ শারমীন, দৈনিক আমাদের বার্তার ফটো এডিটর বুলবুল আহমেদ, শিক্ষকনেতা গোলাম রসুল, চিকিৎসক নন্দিতা খান প্রমুখ।

.

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

ফরিদপুর জেলা এনসিপি’র কমিটি গঠনের দায়িত্বে মহিলা আ’লীগ সভাপতি মেয়ে

ফরিদপুরে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) এর কমিটি গঠনের দায়িত্ব পেয়েছেন জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মাহ্মুদা বেগমের মেয়ে সৈয়দা নীলিমা দোলা।গত মঙ্গলবার এনসিপির সদস্যসচিব আক্তার হোসেন ও মুখ্য সংগঠক (দক্ষিণাঞ্চল) হাসনাত আব্দুল্লাহ স্বাক্ষরিত এক চিঠি থেকে এ তথ্য জানা গেছে। ওই চিঠিতে ফরিদপুর অঞ্চলের তত্ত্বাবধায়ক করা হয়েছে মো. আব্দিুর রহমানকে এবং সংগঠক করা হয়েছে মো. রাকিব হোসেনকে।
 
এছাড়া ফরিদপুর অঞ্চলের পাঁচটি জেলা, ফরিদপুর, গোপালগঞ্জ, মাদারীপুর, শরীয়তপুর, রাজবাড়ী জেলার দু’জন করে ব্যক্তিকে কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।  

ফরিদপুর জেলার কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য হিসেবে যে দু’জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে তাদের একজন হলেন সৈয়দা নীলিমা দোলা। তিনি জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মাহ্মুদা বেগমের মেয়ে এবং জেলা শ্রমিক লীগের সাধারণ সম্পাদক গোলাম মোহাম্মদ নাসিরের ভাগনি। দোলার বাবা সৈয়দ গোলাম দস্তগীর পেশায় ব্যবসায়ী।

সৈয়দা নীলিমা ২০১৭ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সংগীত বিভাগে মাস্টার্স সম্পন্ন করেন। এরপর তিনি কিছুদিন একটি মোবাইল ফোন কোম্পানিতে চাকরি করেন। বর্তমানে ‘সিনে কার্টেল’ নামে একটি চলচ্চিত্র নির্মাতা প্রতিষ্ঠানের সত্ত্বাধিকারী।
 
এ বিষয়ে সৈয়দা নীলিমা দোলা বলেন, ‘আমার পরিবারের সদস্যদের আওয়ামী রাজনীতি করা সংক্রান্ত কিছু পোস্ট আপনাদের সামনে আসতে পারে। আমি নিজে এর একটা ব্যাখ্যা রাজপথের সহযোদ্ধাদের দিয়ে রাখতে চাই। আমি ১০ বছর ধরে আওয়ামী ফ্যাসিবাদ বিরোধী আন্দোলন করছি। নো মেট্রো অন ডিইউ মুভমেন্ট, রামপাল বিরোধী আন্দোলন, ডিএসএ বাতিলের আন্দোলন, সুফিয়া কামাল হলকে ছাত্রলীগ মুক্ত করাসহ অন্যান্য সকল আন্দোলনে আমি পরিচিত মুখ। ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে আমার লেখালেখিও পুরনো। ২০১২ সালে পরিবার ছাড়ার পর রাজপথই আমার আসল পরিবার। জুলাইয়ে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া অন্যতম মামলা তাহির জামান প্রিয় হত্যা মামলার একজন প্রত্যক্ষদর্শী আমি।’

তিনি আরও বলেন, ‘সরাসরি ছাত্রলীগ করে অনেকে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে যুক্ত হয়েছেন। আমি কখনও ছাত্রলীগের সঙ্গে যুক্ত ছিলাম না, তাই আমার নাগরিক কমিটির সদস্য হতে বাধা কোথায়? এনসিপির কেন্দ্রীয় নেতারা জেনে-বুঝে এবং আমি ‘লিটমাস’ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার পরই আমাকে কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য করা হয়েছে।’ 

আওয়ামী লীগ নেত্রীর মেয়ে দায়িত্ব পেয়েছেন জেলার এনসিপি কমিটি গঠনে-এ বিষয়ে জানতে চাইলে ফরিদপুর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সদস্যসচিব সোহেল রানা বলেন, ‘তার (সৈয়দা নীলিমা) পারিবারিক ব্যাকগ্রাউন্ড আওয়ামী লীগ। আমরা দেখেছি, গত জুলাই-আগস্ট আন্দোলনে তার মামা গোলাম নাসির কিভাবে আমাদের ওপর নির্বিচার গুলি ছুড়েছিল। তার মায়ের কর্মকাণ্ডও আমাদের অজানা নয়।’ 

সৈয়দা নীলিমা দোলার সঙ্গে আমাদের পরিচয় পর্যন্ত নেই মন্তব্য করে সোহেল রানা বলেন, ‘আসলে দায়িত্ব দেওয়ার আগে সঠিকভাবে যাচাই-বাছাই করে নেওয়া হলে ভাল হতো। যাচাই-বাছাই করা হলে এ রকম পরিস্থিতির সৃষ্টি হতো না।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • নবীজির (সা.) অদ্ভুত দোয়া
  • অর্থ আত্মসাত: খুলনায় নারী ব্যাংক কর্মকর্তা গ্রেপ্তার
  • বগুড়ায় সারজিসের উপস্থিতিতে মারামারির ঘটনায় বৈষম্যবিরোধী ৪ নেতা হাসপাতালে
  • অমিতাভের চিরকুট কিংবা ফ্যাশন নিয়ে রাধিকার ১০ প্রশ্নের জবাব, ১০ ছবি
  • মাঠ নিয়ে শ্রাবণের আফসোস
  • একজন চা শ্রমিকের দিনে আয় ১৭৮ টাকা
  • বড় বন্দরে ভারী কাজ করেও চলে না সংসার 
  • নাটোরে ছুরিকাঘাতে প্রাণ গেল একজনের
  • ফরিদপুর জেলা এনসিপি’র কমিটি গঠনের দায়িত্বে মহিলা আ’লীগ সভাপতির মেয়ে
  • ফরিদপুর জেলা এনসিপি’র কমিটি গঠনের দায়িত্বে মহিলা আ’লীগ সভাপতি মেয়ে