মহানবী (সা.) হিজরতের আগে মক্কায় মুসলমানদের ওপর অত্যাচার-নির্যাতনের অসম্ভব কঠিন এক পরিস্থিতি। তাকে উপেক্ষা করে মক্কার বায়তুল্লাহ প্রাঙ্গণে মহানবী (সা.)–এর সাহাবি হজরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) প্রকাশ্যে কোরআন তিলাওয়াত করার সিদ্ধান্ত নেন। তিনি কাবা শরিফে মাকামে ইবরাহিমের কাছে দাঁড়িয়ে উচচ স্বরে সুরা আর রহমানের কিছু অংশ তিলাওয়াত করেন। কুরাইশ নেতারা তা শুনে হতবাক হয়ে যায়। সঙ্গে সঙ্গে তারা তাঁর দিকে ছুটে গিয়ে নির্দয়ভাবে তাঁর মুখে আঘাত করতে থাকে। নির্যাতনের পরও তিনি বলেছিলেন, আল্লাহর শত্রুরা আমার কাছে খুবই তুচ্ছ। আমি আবারও গিয়ে তাদের সামনে কোরআন তিলাওয়াত করব। তিনিই প্রথম মুসলমান যিনি প্রকাশ্যে কোরআন তিলাওয়াত করেছিলেন।

হজরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.

)–র আবেগময় কোরআন তিলাওয়াতের প্রশংসা করে রাসুল (সা.) বলেছেন, কোরআর যেভাবে নাজিল হয়েছে, কেউ যদি সে অনুসারে সুন্দরভাবে তা তিলাওয়াত করে আনন্দ পেতে চায়, তাহলে সে যেন আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) এর মতো করে কোরআন তিলাওয়াত করে।

আরও পড়ুনইয়াজুজ–মাজুজের আশ্চর্য কাহিনি ০৪ ডিসেম্বর ২০২৩

আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.)–র জন্ম মক্কায়। খুব অল্প বয়সে ইসলাম গ্রহণের সৌভাগ্য অর্জন করেন তিনি। ইসলাম গ্রহণের তালিকায় তাঁর নাম ষষ্ঠ। মক্কার অবিশ্বাসীদের অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে একসময় তিনি হাবশায় হিজরত করেন। পরে সেখান থেকে ফিরে আসেন মক্কায়। কিছুদিন মক্কায় থাকার পর অনুমতি পেয়ে হিজরত করে চলে যান মদিনায়।

আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) ইসলাম গ্রহণের পর নিজেকে রাসুলুল্লাহর একজন খাদিম হিসেবে উৎসর্গ করেন।

আবদুল্লাহ (রা.) রাসুল (সা.)–কে ছায়ার মতো অনুসরণ করতেন। সফরে, ইকামাতে, ঘরের ভেতর বা বাইরে সব সময়ই রাসুলের (সা.) সঙ্গে তিনি থাকতেন। রাসুল (সা.) যখন নিজের ঘরে অবস্থান করতেন, সে সময়ও আবদুল্লাহ (রা.)–র সেখানে প্রবেশের অনুমতি ছিল। এ কারণে তাঁকে ‘সাহিবুস সির’, অর্থাৎ রাসুল (সা.)–এর গোপন বিষয়ের অধিকারী বলা হয়।

আরও পড়ুনমেহমান হয়ে কতদিন থাকব২৫ নভেম্বর ২০২৩

নবী (সা.)–এর ঘরেই তিনি লালিত–পালিত হন। সাহাবিদের মধ্যে যাঁরা কোরআনের ভালো পাঠক, এর ভাব ও অর্থ বোঝার ক্ষেত্রে খুব পারদর্শী এবং আল্লাহর আইন ও বিধানের ব্যাপারে অভিজ্ঞ ছিলেন, আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) তাঁদের একজন। তাঁর অসাধারণ তিলাওয়াতের জন্য রাসুল (সা.) অন্যান্য সাহাবাদের তাঁর কাছ থেকে কোরআন শেখার নির্দেশ দিতেন।

রাসুল (সা.)–এর সঙ্গে সব গুরুত্বপূর্ণ যুদ্ধে তিনি অংশ নেন। বদর, উহুদ, হুদাইবিয়া, খাইবারসহ মক্কা বিজয়েও তিনি রাসুলুল্লাহর (সা.)–এর সঙ্গী ছিলেন। হুনাইন যুদ্ধে কাফিরদের অতর্কিত আক্রমণে দশ হাজারের মুসলিম বাহিনী বিক্ষিপ্ত হয়ে পড়লে মাত্র ৮০ জন নিজের জীবন বাজি রেখে রাসুল (সা.)–এর চারদিকে অটল প্রাচীর তৈরি করে থাকেন। আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ সেই বিরল ৮০ জনের একজন। এ যুদ্ধে রাসুল (সা.) বিরোধী পক্ষের বাহিনীকে লক্ষ্য করে একমুঠো ধুলো নিক্ষেপ করেছিলেন। সে ধুলো রাসুল (সা.)–এর হাতে তুলে দিয়েছিলেন আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.)।

আরও পড়ুনদোয়া কুনুত: বাংলা উচ্চারণ, অর্থ, ফজিলত ও পড়ার নিয়ম০১ জানুয়ারি ২০২৪

হিজরি ২০ সনে উমর (রা.) তাঁকে কুফার প্রধান বিচারপতি নিয়োগ করেন। এ পদে তিনি ১০ বছর দক্ষতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেন। আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.)–কে ঘিরে ইরাকের কুফায় কোরআন শিক্ষা কেন্দ্র গড়ে উঠে।

আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) তাঁর জীবনের বেশির ভাগ সময়ই কাটিয়েছেন কোরআন গবেষণায়। তাঁর কোরআন শেখার পদ্ধতি ছিল খুবই চমৎকার! তিনি একটি আয়াত পড়ে তা আমল না করা পর্যন্ত অন্য আয়াত শিখতেন না। এভাবে সুরা বাকারা শেষ করতে তাঁর তিন বছরের বেশি সময় লেগেছিল।

একদিন রাসুল (সা.) দেখতে পেলেন, আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) বসে বসে দোয়া করছেন। তাঁকে লক্ষ্য করে রাসুল (সা.) বললেন, চাও, দেওয়া হবে! চাও, দেওয়া হবে!

৩২ হিজরিতে আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) মদিনায় ইন্তেকাল করেন। মৃত্যুর আগে তিনি তাঁর মেয়েদের নির্দেশ দেন যাতে তাঁরা প্রতি রাতে সুরা ওয়াকিয়া পাঠ করে। কারণ তিনি রাসুল (সা.)–কে বলতে শুনেছেন, ‘প্রতি রাতে যে সুরা ওয়াকিয়া পাঠ করে, দারিদ্র্য কখনো তাকে স্পর্শ করবে না।’

আরও পড়ুনফজরের নামাজ পড়লে ১০ পুরস্কার পাওয়া যায়২২ নভেম্বর ২০২৩

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

সমালোচিত হলেও কেন জনপ্রিয়তা পেল ‘মিসিং ইউ’?

নতুন বছরের প্রথম দিন নেটফ্লিক্সে মুক্তি পেয়েছে লিমিটেড সিরিজ ‘মিসিং ইউ’। হারলান কোবানের উপন্যাস অবলম্বনে সিরিজটি বানিয়েছেন নির্মাতা ভিক্টোরিয়া আসারি-আর্চার। মুক্তির পর থেকেই সিরিজটি ঘিরে চলছে নানা আলোচনা-সমালোচনা। তবে মুক্তির ১১ দিন পেরিয়ে গেলেও সিরিজটি এখনো দাপিয়ে বেড়াচ্ছে নেটফ্লিক্সের সবচেয়ে বেশি দেখা সিরিজের তালিকায়।

একজন নিখোঁজ অধ্যাপককে খুঁজে বের করার কেস পায় ডিটেকটিভ ইন্সপেক্টর ক্যাট ডোনোভান (রোসালিন্ড এলেজার)। সাহসী ও দৃঢ়প্রতিজ্ঞ একজন অফিসার ক্যাট। তবে ব্যক্তিজীবনে সে এখনো একা। বন্ধু একোয়া (ম্যারি ম্যালোন) ও স্টেসির (জেসিকা প্লামার) কথায় সে এক ডেটিং অ্যাপে যোগ দেয়। কিন্তু ঘটনা অন্যদিকে মোড় নেয় যখন ক্যাট তার প্রাক্তন প্রেমিক ও বাগ্‌দত্তা জশের (অ্যাশলে ওয়াল্টার্স) প্রোফাইল সেই অ্যাপে খুঁজে পায়।

একনজরে
সিরিজ: ‘মিসিং ইউ’
পরিচালক: ভিক্টোরিয়া আসারি-আর্চার
গল্প: হারলান কোবান
স্ট্রিমিং: নেটফ্লিক্স
পর্ব সংখ্যা: ৫
অভিনয়ে: রোসালিন্ড এলেজার, অ্যাশলে ওয়াল্টার্স, লেনি হেনরি, মার্ক ওয়ারেন, রিচার্ড আরমিটেজ, জেসিকা প্লামার, ম্যারি ম্যালোন

জশ কিছু না বলেই ১১ বছর আগে হারিয়ে যায় ক্যাটের জীবন থেকে। ক্যাট যখন জশের ব্যাপারে দ্বিধাদ্বন্দ্বে ভুগতে থাকে, তখনই অন্য আরেক তথ্য তার ভাবনার মোড় ঘুরিয়ে দেয়। ক্যাট জানতে পারে, তার বাবার খুনি মন্টে লেবার্নে (মার্ক ওয়ারেন) ক্যানসারে আক্রান্ত, আর বেশি দিন বাঁচবে না। ক্যাট জানতে মারিয়া হয়ে ওঠে কেন মন্টে খুন করেছিল তার বাবা ক্লিন্ট ডোনোভানকে (লেনি হেনরি)। কিন্তু তা জানতে গিয়ে ঘটনা দ্রুত মোড় নিতে থাকে অন্যদিকে। ক্যাট কি পারে তার বাবার মৃত্যুরহস্য জানতে? নাকি ব্যক্তিজীবনের সঙ্গে সাংঘর্ষিক হয়ে ওঠে তার কর্মজীবন?

‘মিসিং ইউ’–এর দৃশ্য। নেটফ্লিক্স

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ‘মায়ের চরিত্রে অভিনয় করার পরেও দর্শক ক্রাশ খেয়েছেন’
  • গাজায় যুদ্ধবিরতির আলোচনা চূড়ান্ত পর্যায়ে, কয়েক ঘণ্টার মধ্যে হতে পারে চুক্তি
  • বিএনপি-যুবদলের সংঘর্ষে একজন নিহত, গ্রেপ্তার ৪
  • উত্তর কোরিয়ার আত্মঘাতী সেনারা ইউক্রেনের নতুন আতঙ্ক
  • বুদ্ধিমান এক বালকের ঘটনা
  • আইফোন চার্জ করার সময় স্পর্শ করলেই ইলেকট্রিক শক করছে, অভিযোগ একাধিক ব্যবহারকারীর
  • রাজাপুরের অরুণের রসগোল্লা মানেই ‘অথেনটিক মিষ্টি’
  • বাণিজ্য মেলায় যুবদলের দু’গ্রুপের সংঘর্ষে একজন নিহত, আহত ১০
  • দাম্পত্য কলহের জেরে জুলাই হত্যা মামলার আসামি স্বামী!
  • সমালোচিত হলেও কেন জনপ্রিয়তা পেল ‘মিসিং ইউ’?