প্রথম প্রকাশ্যে কোরআন তিলাওয়াত করেন তিনি
Published: 11th, January 2025 GMT
মহানবী (সা.) হিজরতের আগে মক্কায় মুসলমানদের ওপর অত্যাচার-নির্যাতনের অসম্ভব কঠিন এক পরিস্থিতি। তাকে উপেক্ষা করে মক্কার বায়তুল্লাহ প্রাঙ্গণে মহানবী (সা.)–এর সাহাবি হজরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) প্রকাশ্যে কোরআন তিলাওয়াত করার সিদ্ধান্ত নেন। তিনি কাবা শরিফে মাকামে ইবরাহিমের কাছে দাঁড়িয়ে উচচ স্বরে সুরা আর রহমানের কিছু অংশ তিলাওয়াত করেন। কুরাইশ নেতারা তা শুনে হতবাক হয়ে যায়। সঙ্গে সঙ্গে তারা তাঁর দিকে ছুটে গিয়ে নির্দয়ভাবে তাঁর মুখে আঘাত করতে থাকে। নির্যাতনের পরও তিনি বলেছিলেন, আল্লাহর শত্রুরা আমার কাছে খুবই তুচ্ছ। আমি আবারও গিয়ে তাদের সামনে কোরআন তিলাওয়াত করব। তিনিই প্রথম মুসলমান যিনি প্রকাশ্যে কোরআন তিলাওয়াত করেছিলেন।
হজরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.
আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.)–র জন্ম মক্কায়। খুব অল্প বয়সে ইসলাম গ্রহণের সৌভাগ্য অর্জন করেন তিনি। ইসলাম গ্রহণের তালিকায় তাঁর নাম ষষ্ঠ। মক্কার অবিশ্বাসীদের অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে একসময় তিনি হাবশায় হিজরত করেন। পরে সেখান থেকে ফিরে আসেন মক্কায়। কিছুদিন মক্কায় থাকার পর অনুমতি পেয়ে হিজরত করে চলে যান মদিনায়।
আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) ইসলাম গ্রহণের পর নিজেকে রাসুলুল্লাহর একজন খাদিম হিসেবে উৎসর্গ করেন।
আবদুল্লাহ (রা.) রাসুল (সা.)–কে ছায়ার মতো অনুসরণ করতেন। সফরে, ইকামাতে, ঘরের ভেতর বা বাইরে সব সময়ই রাসুলের (সা.) সঙ্গে তিনি থাকতেন। রাসুল (সা.) যখন নিজের ঘরে অবস্থান করতেন, সে সময়ও আবদুল্লাহ (রা.)–র সেখানে প্রবেশের অনুমতি ছিল। এ কারণে তাঁকে ‘সাহিবুস সির’, অর্থাৎ রাসুল (সা.)–এর গোপন বিষয়ের অধিকারী বলা হয়।
আরও পড়ুনমেহমান হয়ে কতদিন থাকব২৫ নভেম্বর ২০২৩নবী (সা.)–এর ঘরেই তিনি লালিত–পালিত হন। সাহাবিদের মধ্যে যাঁরা কোরআনের ভালো পাঠক, এর ভাব ও অর্থ বোঝার ক্ষেত্রে খুব পারদর্শী এবং আল্লাহর আইন ও বিধানের ব্যাপারে অভিজ্ঞ ছিলেন, আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) তাঁদের একজন। তাঁর অসাধারণ তিলাওয়াতের জন্য রাসুল (সা.) অন্যান্য সাহাবাদের তাঁর কাছ থেকে কোরআন শেখার নির্দেশ দিতেন।
রাসুল (সা.)–এর সঙ্গে সব গুরুত্বপূর্ণ যুদ্ধে তিনি অংশ নেন। বদর, উহুদ, হুদাইবিয়া, খাইবারসহ মক্কা বিজয়েও তিনি রাসুলুল্লাহর (সা.)–এর সঙ্গী ছিলেন। হুনাইন যুদ্ধে কাফিরদের অতর্কিত আক্রমণে দশ হাজারের মুসলিম বাহিনী বিক্ষিপ্ত হয়ে পড়লে মাত্র ৮০ জন নিজের জীবন বাজি রেখে রাসুল (সা.)–এর চারদিকে অটল প্রাচীর তৈরি করে থাকেন। আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ সেই বিরল ৮০ জনের একজন। এ যুদ্ধে রাসুল (সা.) বিরোধী পক্ষের বাহিনীকে লক্ষ্য করে একমুঠো ধুলো নিক্ষেপ করেছিলেন। সে ধুলো রাসুল (সা.)–এর হাতে তুলে দিয়েছিলেন আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.)।
আরও পড়ুনদোয়া কুনুত: বাংলা উচ্চারণ, অর্থ, ফজিলত ও পড়ার নিয়ম০১ জানুয়ারি ২০২৪হিজরি ২০ সনে উমর (রা.) তাঁকে কুফার প্রধান বিচারপতি নিয়োগ করেন। এ পদে তিনি ১০ বছর দক্ষতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেন। আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.)–কে ঘিরে ইরাকের কুফায় কোরআন শিক্ষা কেন্দ্র গড়ে উঠে।
আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) তাঁর জীবনের বেশির ভাগ সময়ই কাটিয়েছেন কোরআন গবেষণায়। তাঁর কোরআন শেখার পদ্ধতি ছিল খুবই চমৎকার! তিনি একটি আয়াত পড়ে তা আমল না করা পর্যন্ত অন্য আয়াত শিখতেন না। এভাবে সুরা বাকারা শেষ করতে তাঁর তিন বছরের বেশি সময় লেগেছিল।
একদিন রাসুল (সা.) দেখতে পেলেন, আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) বসে বসে দোয়া করছেন। তাঁকে লক্ষ্য করে রাসুল (সা.) বললেন, চাও, দেওয়া হবে! চাও, দেওয়া হবে!
৩২ হিজরিতে আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) মদিনায় ইন্তেকাল করেন। মৃত্যুর আগে তিনি তাঁর মেয়েদের নির্দেশ দেন যাতে তাঁরা প্রতি রাতে সুরা ওয়াকিয়া পাঠ করে। কারণ তিনি রাসুল (সা.)–কে বলতে শুনেছেন, ‘প্রতি রাতে যে সুরা ওয়াকিয়া পাঠ করে, দারিদ্র্য কখনো তাকে স্পর্শ করবে না।’
আরও পড়ুনফজরের নামাজ পড়লে ১০ পুরস্কার পাওয়া যায়২২ নভেম্বর ২০২৩উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
জ্ঞান চর্চার ছয় স্তর: ইবনুল কাইয়িমের দিকনির্দেশনা
ইসলামে জ্ঞান অর্জন প্রত্যেক মুসলিমের উপর আবশ্যক করা হয়েছে। তবে কিভাবে, কোন ধারাবাহিকতার মধ্য দিয়ে জ্ঞান অর্জন ও চর্চা করতে হবে, যা স্পষ্টভাবে জানা প্রয়োজন। কারণ, ইসলামের দৃষ্টিতে নিছক তথ্য সংগ্রহই জ্ঞান নয়, বরং এর রয়েছে নির্দিষ্ট সোপান ও স্তর।
ক্লাসিক ইসলামি পণ্ডিত ইবনুল কাইয়িম (রহ.) জ্ঞান চর্চাকে ছয় স্তরে বিভক্ত করেছেন। তাঁর মতে, জ্ঞান চর্চার এই পর্যায়গুলো হলো: ১. উত্তম প্রশ্ন করা, ২. মনোযোগ দিয়ে শোনা ৩. ভালোভাবে বোঝা, ৪. আত্মস্থ করা, ৫. জ্ঞান অন্যকে জানানো এবং ৬. সবশেষে জ্ঞান অনুযায়ী আমল করা, যা এই প্রক্রিয়ার চূড়ান্ত ফল। (ইবনুল কাইয়িম, মিফতাহু দারিস সাআদাহ, পৃ. ৪৮২-৪৮৩)
এই স্তরগুলো একজন মুসলিমের জন্য পরিপূর্ণ জ্ঞান চর্চা ও সাধনার রূপরেখা প্রদান করে, যা একজন জ্ঞানান্বেষীকে তত্ত্ব থেকে বাস্তবতায় পৌঁছে দেয়।
এই ছয় স্তর নিছক তথ্য আহরণের পরিবর্তে জ্ঞান সম্পর্কে কৌতুহল, জ্ঞানকে ধারণ, অনুধাবন, সংরক্ষণ, বিতরণ এবং সবশেষে জীবনে বাস্তবায়ন করার একটি পূর্ণাঙ্গ রূপরেখা।প্রথম স্তর: কৌতুহল ও উত্তম প্রশ্নজ্ঞান চর্চার প্রবেশদ্বার হলো কৌতুহল ও প্রশ্ন। বলা হয়, ভালো প্রশ্ন করা জ্ঞানের অর্ধেক। প্রশ্ন করার মাধ্যমে মানুষ তার অজানা বিষয় সম্পর্কে জানতে পারে এবং মনের কৌতুহল মেটাতে পারে।
প্রশ্ন মানুষের ভেতরের জিজ্ঞাসা এবং জানার আগ্রহকে প্রকাশ করে। নিষ্ক্রিয় শিক্ষাকে সক্রিয় করে তোলে। মূলত, বিভিন্ন বিষয়ে কৌতুহলই মানুষকে জানতে উদ্বুদ্ধ করে। সঠিক প্রশ্ন করতে পারার সক্ষমতাই জ্ঞান চর্চার সূচনা ঘটায়।
পবিত্র কোরআনে জ্ঞানীদের প্রশ্ন করার প্রতি উৎসাহিত করা হয়েছে। আল্লাহ বলেন, “জ্ঞানীদের জিজ্ঞাসা কর, যদি তোমরা না জানো।” (সুরা নাহল, আয়াত: ৪৩)
রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর সাহাবীগণ বিভিন্ন সময়ে তাঁকে প্রশ্ন করতেন এবং তিনি তার উত্তর দিতেন। ইসলামের বহু বিধান সাহাবীদের প্রশ্নের জবাবেই স্পষ্ট হয়েছে। হযরত ইবনে আব্বাস (রা.)-কে তাঁর জ্ঞানের রহস্য সম্পর্কে জানতে চাওয়া হলো, “এই জ্ঞান আপনি কেমন করে পেলেন?” তিনি জবাবে বললেন, “আমার ছিল জিজ্ঞাসু জবান এবং অনুধাবনে সক্ষম হৃদয়।” (ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল, ফাজাইলুস সাহাবা, ২/৯৭০)
এখান থেকে বোঝা যায়, কৌতুহল ও প্রশ্ন করাই ছিল তার জ্ঞানের অন্যতম চাবিকাঠি। মুসলিম মনীষীগণ জ্ঞান অর্জনের জন্য প্রশ্ন করাকে অত্যন্ত গুরুত্ব দিতেন। তাঁরা মনে করতেন, যে প্রশ্ন করতে লজ্জা পায়, সে জ্ঞানার্জন থেকে বঞ্চিত থাকে। তাদের কাছে প্রশ্ন করা ছিল জ্ঞানচর্চার একটি অপরিহার্য অংশ।
আরও পড়ুনজ্ঞান বৃদ্ধির জন্য মহানবী (সা.) যে দুটি দোয়া শিখিয়েছেন৮ ঘণ্টা আগেদ্বিতীয় স্তর: মনোযোগ সহকারে শোনা ও পাঠ করাজ্ঞানের দ্বিতীয় সোপান হলো শিক্ষকের কথা বা জ্ঞানের উৎস থেকে যা বলা হচ্ছে, তা পূর্ণ মনোযোগ ও নীরবতার সঙ্গে শ্রবণ করা। সক্রিয় শ্রবণ বেশ গুরুত্বপূর্ণ।
আল্লাহ কোরআন তিলাওয়াতের সময় মনোযোগ দিয়ে শোনার নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি বলেন, “আর যখন কোরআন পাঠ করা হয়, তখন তা মনোযোগ দিয়ে শোন এবং চুপ থাক, যাতে তোমরা রহমত লাভ কর।” (সুরা আরাফ, আয়াত: ২০৪)
জ্ঞানীদের জিজ্ঞাসা কর, যদি তোমরা না জানো।কোরআন, সুরা নাহল, আয়াত: ৪৩সাহাবিগণ যখন রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর মজলিসে বসতেন, তখন তারা এমনভাবে চুপ থাকতেন যেন তাদের মাথার উপর পাখি বসে আছে। তারা নবীজি (সা.)-এর প্রতিটি কথা অত্যন্ত মনোযোগ দিয়ে শুনতেন। এই গভীর মনোযোগই তাদেরকে কোরআনের বাণী ও রাসুল (সা.)-এর সুন্নাহ সঠিকভাবে সংরক্ষণ করতে সাহায্য করেছিল।
মনোযোগ সহকারে পাঠ করাও এই স্তরের অন্তর্গত বলা যায়। জ্ঞান যেমন শুনে শুনে অর্জন হয়, তেমনি পাঠ করেও।
তৃতীয় স্তর: ভালোভাবে বোঝাশ্রবণের পর তৃতীয় এবং অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ স্তর হলো জ্ঞানকে ভালোভাবে বোঝা। কেবল শোনা বা পড়া যথেষ্ট নয়, বরং এর গভীরে গিয়ে মর্মার্থ অনুধাবন করা জরুরি।
পবিত্র কোরআনে একাধিক জায়গায় চিন্তা-ভাবনা ও তাদাব্বুর করার প্রতি উৎসাহিত করা হয়েছে। আল্লাহ বলেন, “তবে কি তারা কোরআন নিয়ে গভীর চিন্তা-ভাবনা করে না? নাকি তাদের অন্তর তালাবদ্ধ?” (সুরা মুহাম্মাদ, আয়াত: ২৪)
গভীর বোঝাপড়া তথ্যকে জ্ঞানে রূপান্তরিত করে। এর জন্য প্রয়োজন চিন্তা, গবেষণা এবং বিশ্লেষণ। কোনো বিষয়কে বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে দেখা এবং তার অন্তর্নিহিত উদ্দেশ্য উপলব্ধি করার মাধ্যমেই প্রকৃত বোঝাপড়া অর্জিত হয়।
চতুর্থ স্তর: আত্মস্থ করাউত্তমরূপে বোঝার পর অর্জিত জ্ঞানকে স্মৃতিতে ধারণ করা বা আত্মস্থ করা হলো চতুর্থ স্তর। আত্মস্থ করা জ্ঞানকে সংরক্ষণ করে এবং প্রয়োজনের সময় তা ব্যবহার করার সুযোগ করে দেয়।
একজন জ্ঞানী ব্যক্তির জ্ঞান ও শাস্ত্র সংক্রান্ত প্রয়োজনীয় মূলনীতিগুলো আত্মস্থ থাকা অপরিহার্য। এটি তাকে নির্ভুলভাবে এবং আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে কথা বলার সক্ষমতা দেয়।
স্বয়ং আল্লাহ তা'আলা কোরআন সংরক্ষণের দায়িত্ব নিয়েছেন, এবং এর অন্যতম মাধ্যম হলো হাফেজদের স্মৃতি। তিনি বলেন, “আমিই কোরআন অবতীর্ণ করেছি এবং আমিই এর সংরক্ষক।” (সুরা হিজর, আয়াত: ৯)
ইমাম শাফেয়ী (রহ.) একবার তার শিক্ষককে তার দুর্বল স্মরণশক্তির ব্যাপারে অভিযোগ করলে, তার শিক্ষক তাকে পাপ কাজ থেকে বিরত থাকার উপদেশ দেন এবং বলেন, “জ্ঞান হলো আল্লাহর নূর, আর আল্লাহর নূর কোনো পাপীকে দান করা হয় না।”কোরআন মুখস্থ করার এই ধারা চৌদ্দশ বছর ধরে মুসলিম উম্মাহর মধ্যে চলে আসছে, যা এক জীবন্ত মুজিযা।
ইমাম শাফেয়ী (রহ.) একবার তার শিক্ষককে তার দুর্বল স্মরণশক্তির ব্যাপারে অভিযোগ করলে, তার শিক্ষক তাকে পাপ কাজ থেকে বিরত থাকার উপদেশ দেন এবং বলেন, “জ্ঞান হলো আল্লাহর নূর, আর আল্লাহর নূর কোনো পাপীকে দান করা হয় না।” (মাজমাউল হিকাম ওয়াল-আমসাল ফিশ শিরিল আরাবি, আহমাদ কাবিশ, ৭/৩১৭)
আরও পড়ুনজ্ঞান ও বিনয়: ইমান দৃঢ় করার দুই উপাদান২১ আগস্ট ২০২৫পঞ্চম স্তর: জ্ঞান অন্যকে জানানোজ্ঞানার্জনের পঞ্চম স্তর হলো সেই জ্ঞান অন্যের কাছে পৌঁছে দেওয়া। সেটা হতে পারে শিক্ষা দেওয়া, কথা বলা বা লেখার মাধ্যমে।
জ্ঞান বিতরণের মাধ্যমে বৃদ্ধি পায় এবং স্থায়ী হয়। শিক্ষকতা ও লেখালেখির মাধ্যমে নিজের অর্জিত জ্ঞান আরও পরিষ্কার ও সুসংহত হয়। জ্ঞানকে নিজের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখা একটি স্বার্থপরতা, যা ইসলামের শিক্ষার পরিপন্থী।
যারা সত্য জ্ঞান গোপন করে, তাদের প্রতি আল্লাহ কঠোর সতর্কবাণী উচ্চারণ করেছেন। তিনি বলেন, “নিশ্চয় যারা আমার অবতীর্ণ স্পষ্ট নিদর্শনাবলি ও হিদায়াতকে গোপন করে, মানুষের জন্য কিতাবে তা বর্ণনা করার পরও, তাদের উপর আল্লাহ অভিসম্পাত করেন এবং অন্য অভিসম্পাতকারীরাও অভিসম্পাত করে।” (সুরা বাকারাহ, আয়াত: ১৫৯)
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, “তোমাদের মধ্যে সর্বোত্তম সে ব্যক্তি, যে নিজে কোরআন শেখে এবং অন্যকে শেখায়।” (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৫০২৭)
অন্য এক হাদিসে তিনি বলেন, “আমার পক্ষ থেকে একটি আয়াত হলেও তা পৌঁছে দাও।” (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৩৪৬১)
এই হাদিসগুলো জ্ঞান বিতরণের বিশাল গুরুত্ব ও ফজিলত বর্ণনা করে। যে ব্যক্তি জ্ঞান শিক্ষা দেয়, তার সওয়াব মৃত্যুর পরেও জারি থাকে।
আমি রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর থেকে কোনো হাদিস শোনার পর অন্তত একবার হলেও সে অনুযায়ী আমল করার চেষ্টা করেছি। ইমাম আহমদ বিন হাম্বল (রহ.)ষষ্ঠ স্তর: জ্ঞান অনুযায়ী আমল করাএটি হলো জ্ঞানার্জনের সর্বশেষ এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ স্তর, যা জ্ঞানের চূড়ান্ত ফল ও পরিণতি। কর্মবিহীন জ্ঞান অর্থহীন এবং তা কিয়ামতের দিন ব্যক্তির বিরুদ্ধে প্রমাণ হিসেবে দাঁড়াবে। জ্ঞান তখনই উপকারী হয়, যখন তা ব্যক্তির চরিত্র, আচরণ ও কর্মে প্রতিফলিত হয়। আমলই হলো জ্ঞানের প্রাণ। আমলের মাধ্যমেই জ্ঞান পূর্ণতা পায় এবং সমাজে তার ইতিবাচক প্রভাব পড়ে।
আল্লাহ তাদের নিন্দা করেছেন, যারা কথা অনুযায়ী কাজ করে না। তিনি বলেন, “হে মুমিনগণ, তোমরা এমন কথা কেন বল, যা কর না? আল্লাহর কাছে এ বিষয়টা অতি অপছন্দনীয় যে, তোমরা এমন কথা বলবে, যা তোমরা কর না।” (সুরা সাফ, আয়াত: ২-৩)
ইমাম আহমদ বিন হাম্বল (রহ.) বলেছেন, “আমি রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর থেকে কোনো হাদিস শোনার পর অন্তত একবার হলেও সে অনুযায়ী আমল করার চেষ্টা করেছি।”
শেষকথাইমাম ইবনুল কাইয়িম (রহ.)-এর বর্ণিত এই ছয়টি স্তর জ্ঞান চর্চাকে একটি সামগ্রিক ও জীবনমুখী প্রক্রিয়ায় পরিণত করে। এটি নিছক তথ্য আহরণের পরিবর্তে জ্ঞান সম্পর্কে কৌতুহল, জ্ঞানকে ধারণ, অনুধাবন, সংরক্ষণ, বিতরণ এবং সবশেষে জীবনে বাস্তবায়ন করার একটি পূর্ণাঙ্গ রূপরেখা।
এই পর্যায়গুলো একে অপরের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। কৌতুহল ও উত্তম প্রশ্ন ছাড়া মনোযোগী পাঠ ও শ্রবণ হয় না। মনোযোগী পাঠ ও শ্রবণ ছাড়া উত্তম বোঝাপড়া সম্ভব নয়। বোঝাপড়া ছাড়া আত্মস্থ করা অর্থহীন। আর এগুলোর ওপর ভিত্তি করেই শিক্ষাদান, লেখালেখি ও আমলের সৌধ নির্মিত হয়।
একজন প্রকৃত জ্ঞানান্বেষীর জন্য এই ছয়টি স্তর বাতিঘরের মতো, যা তাকে জ্ঞানের বিশাল সমুদ্রে পথ দেখিয়ে চূড়ান্ত লক্ষ্যে—আল্লাহর সন্তুষ্টি ও মানবতার কল্যাণে—পৌঁছে দেবে।
[email protected]
আবদুল্লাহিল বাকি : লেখক, আলেম ও সফটওয়্যার প্রকৌশলী