Prothomalo:
2025-11-03@13:46:03 GMT

বুনো জামের মায়াভরা বনে

Published: 12th, January 2025 GMT

শীতের পড়ন্ত বিকেলে বান্দরবানের থানচি উপজেলায় সাঙ্গু নদের পাড়ে এক প্রত্যন্ত এলাকায় তাঁবু গেড়েছিলাম। এক জনমানবহীন বনপথ। কেবল নদের পানির চলার শব্দ ও বুনো প্রাণীদের ডাকাডাকি। এমন নির্জন রাত শেষে কুয়াশাময় শীতের সকালে ডিমভাজি ও খিচুড়ি খেয়ে আমাদের আবার পথচলা।

বনের নদীর পথে কত-না প্রাণবৈচিত্র্য! অচেনা অনেক গাছপালার সমাহার। বুনো ফুলের ঘ্রাণ, পাখির গান, নদীর জলে ভাসা অচেনা বুনো ফুলের রং দেখে বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের আরণ্যক উপন্যাসের জগতে আছি বলে মনে হলো। এখানে হারিয়ে গেলে আমাদের খুঁজে পাওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই। গভীর বন।

সেদিন সকালে কয়েক কিলোমিটার পথ অতিক্রম করার পরে নদীর তীরে দেখা হলো এক শুভ্র রঙের জাম ফুলের সঙ্গে। একটা মায়াবী টান তার রঙে ও গাছের পাতায়। মনে হলো এ কোন মায়াভরা বুনো জামের বনে এলাম। ফুলগুলো দেখতে আমাদের চিরচেনা জামরুল ফুলের মতো। কিন্তু এটি বৃক্ষ নয়, পাতাও জামরুলের মতো চ্যাপটা ও বড় নয়। তবে ভেবেছি, কোনো বুনো জাম হবে। আমাদের পাহাড়ি বনে অনেক প্রজাতির জাম আছে। এ গাছের পাতা দেখে মনে হয়েছিল, সিলেটের জাফলংয়ে ডাউকি নদীর তীরে একবার দেখেছি।

সাঙ্গু নদের দুই তীরে লম্বা সারিতে গাছগুলো। প্রাকৃতিকভাবেই তারা সারি বেঁধে জন্মেছে। অনেকটা ঝোপালো গুল্ম। প্রতিটি উদ্ভিদেই ফুল। ফুল সুগন্ধী। ফুলে মৌমাছি আসছে। ফুলের ও গাছের ছবি তুলি। ঢাকায় গিয়ে বইপত্র ঘেঁটে বৈজ্ঞানিক পরিচিত জানতে চেষ্টা করি। পরে একটি জার্নালে আর্টিকেল পড়ে উদ্ভিদটি সম্পর্কে জানাতে পারি। এটির বৈজ্ঞানিক নাম Syzygium polypetalum। খুব কম পরিচিত লিথোফাইটিক ও রিপারিয়ান (পাথুরে ও নদীর তীরের পরিবেশে জন্মে) বিরল উদ্ভিদ। এটি ভারতের মেঘালয়, মিজোরাম, আসাম, ত্রিপুরা; বাংলাদেশের বান্দরবান, সিলেট এবং মিয়ানমারের নদীতীরের শিলাময় পরিবেশে পাওয়া যায় কেবল। প্রধানত নদীর তীর বরাবর শিলার ফাটলের মধ্যে জন্মে। ফুল ফোটে ফেব্রুয়ারি থেকে এপ্রিল পর্যন্ত। ফল ধরে মে মাস থেকে।

দোলা জামের ফুল.

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

কাশ্মীর ওয়ার্ল্ড ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে ‘নয়া মানুষ’

নদীমাতৃক বাংলাদেশের প্রান্তিক চরের মানুষের জীবনযাপন, মানবিকতা ও ধর্মীয় সহাবস্থানের চিত্র নিয়ে নির্মিত চলচ্চিত্র ‘নয়া মানুষ’। প্রশংসিত এই চলচ্চিত্র জায়গা করে নিয়েছে ‘কাশ্মীর ওয়ার্ল্ড ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল’-এর পঞ্চম আসরে। ভারতের জম্মু ও কাশ্মীরের শ্রীনগরে আজ থেকে শুরু হওয়া এই উৎসবে অংশ নিচ্ছে বাংলাদেশের এই আলোচিত চলচ্চিত্রটি। 

৭ দিনব্যাপী এ উৎসবে মিসর, জার্মানি, সংযুক্ত আরব আমিরাত, ইরান ও ভারতের নির্বাচিত চলচ্চিত্রের সঙ্গে প্রদর্শিত হবে ‘নয়া মানুষ’, যা বাংলাদেশের একমাত্র প্রতিনিধি হিসেবে অংশ নিচ্ছে উৎসবে। 

আরো পড়ুন:

দুই গায়িকার পাল্টাপাল্টি অভিযোগ, দ্বন্দ্ব চরমে

সমালোচনা নিয়ে মুখ খুললেন ভাবনা

২০২৪ সালের ৬ ডিসেম্বর মুক্তি পাওয়া ‘নয়া মানুষ’ দর্শক ও সমালোচকদের কাছ থেকে প্রশংসা কুড়ায়। আ. মা. ম. হাসানুজ্জমানের লেখা ‘বেদনার বালুচরে’ উপন্যাস অবলম্বনে চলচ্চিত্রটির সংলাপ ও চিত্রনাট্য লিখেন মাসুম রেজা। 

চলচ্চিত্রটিতে অভিনয় করেছেন রওনক হাসান, মৌসুমী হামিদ, আশীষ খন্দকার, ঝুনা চৌধুরী, শিখা কর্মকার, নিলুফার ওয়াহিদ, বদরুদ্দোজা, মাহিন রহমান, নাজমুল হোসেন, স্মরণ সাহা, সানজানা মেহরান ও শিশুশিল্পী ঊষশী। 

উৎসবে অংশগ্রহণ প্রসঙ্গে গল্পকার ও অভিনেতা আ. মা. ম. হাসানুজ্জমান বলেন, “আমি যখন গল্পটি লিখি, তখন এত কিছু ভাবিনি। কিন্তু চলচ্চিত্রটি দর্শক দেখার পর যে ভালোবাসা পাচ্ছি, তা সত্যিই অকল্পনীয়। ‘নয়া মানুষ’ ধর্মীয় উন্মাদনার বিরুদ্ধে সচেতনতা তৈরি করছে, শান্তির বার্তা দিচ্ছে, ধর্মের প্রকৃত দর্শন তুলে ধরছে—এটাই সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি।” 

চলচ্চিত্রটির নির্মাতা সোহেল রানা বয়াতি বলেন, “আমার প্রথম পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র ‘নয়া মানুষ’ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক উৎসবে অংশ নিচ্ছে—এটা আমার জন্য গর্বের বিষয়। কাশ্মীর ফেস্টিভ্যালে বাংলাদেশের একমাত্র প্রতিনিধি হিসেবে ‘নয়া মানুষ’ অংশ নিচ্ছে, যা দেশের চলচ্চিত্রের জন্যও একটি বড় সাফল্য।” 

চাঁদপুরের দুর্গম কানুদীর চরে চিত্রগ্রহণ করা হয়েছে চলচ্চিত্রটির। চিত্রগ্রহণ পরিচালনা করেছেন কমল চন্দ্র দাস। সিনেমাটির সংগীতে কণ্ঠ দিয়েছেন বাউল শফি মণ্ডল, চন্দনা মজুমদার, বেলাল খান, অনিমেষ রয়, মাসা ইসলাম ও খাইরুল ওয়াসী। সংগীত পরিচালনা করেছেন ইমন চৌধুরী, মুশফিক লিটু ও শোভন রয়। 

মানবতার বার্তা, ধর্মীয় সহনশীলতা ও জীবনবোধের অনন্য মেলবন্ধন নিয়ে ‘নয়া মানুষ’ এবার বাংলাদেশের হয়ে আন্তর্জাতিক মঞ্চে পৌঁছে দিচ্ছে শান্তি ও সহমর্মিতার বার্তা।

ঢাকা/রাহাত/শান্ত

সম্পর্কিত নিবন্ধ