কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে নিষিদ্ধঘোষিত সংগঠন ছাত্রলীগের এক কর্মীকে প্রক্টরের দপ্তর থেকে টেনেহিঁচড়ে বের করে মারধরের পর পুলিশে সোপর্দ করেছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থীরা। রোববার বিকেল পাঁচটার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ফটকে তাঁকে পুলিশের কাছে সোপর্দ করা হয়।

মারধরের শিকার অর্ণব সিংহ রায় বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিত বিভাগের স্নাতকোত্তর ২০২২-২৩ বর্ষের শিক্ষার্থী। তিনি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার মামলায় এজাহারভুক্ত আসামি বলে জানিয়েছে পুলিশ। সন্ধ্যায় তাঁকে জেলা পুলিশের গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) সদস্যদের কাছে হস্তান্তর করেছে কুমিল্লা সদর দক্ষিণ মডেল থানার পুলিশ। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থীদের ভাষ্য, আন্দোলন চলাকালে অর্ণব সিংহ রায় সরাসরি শিক্ষার্থীদের ওপর হামলায় অংশ নিয়েছিলেন।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্র জানায়, অর্ণব সিংহ রায় রোববার সেমিস্টার ফাইনাল পরীক্ষা দিতে আসেন। পরীক্ষা শেষে বের হতেই অপেক্ষারত বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থীরা তাঁকে আটক করেন। পরে তাঁকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরের উপস্থিতিতে প্রক্টর কার্যালয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। একপর্যায়ে প্রক্টর কার্যালয় থেকে ছাত্রলীগের ওই কর্মীকে টেনেহিঁচড়ে বের করেন ছাত্র আন্দোলনের বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী। এরপর তাঁকে মারধর করতে করতে নিয়ে যাওয়া হয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ফটকে। সেখানে অবস্থানরত পুলিশ সদস্যদের কাছে সোপর্দ করেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বিশ্ববিদ্যালয় সমন্বয়কেরা।

ছাত্র আন্দোলন চলাকালে বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় শিক্ষার্থীদের ওপর সশস্ত্র সন্ত্রাসী হামলা, ককটেল বিস্ফোরণসহ বিভিন্ন অভিযোগে গত ১৮ সেপ্টেম্বর কুমিল্লা সদর দক্ষিণ মডেল থানায় বাদী হয়ে একটি মামলা করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মেসি বিভাগের সাবেক শিক্ষার্থী মো.

শাখাওয়াত হোসেন। মামলায় নিজেকে তিনি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমন্বয়ক বলে দাবি করেন। এ মামলায় ৩৫ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা আরও ৫০-৬০ জনকে আসামি করা হয়েছে। মামলাটিতে ১২ নম্বর আসামি করা হয়েছে অর্ণব সিংহ রায়কে। এ মামলায় প্রধান আসামি করা হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য এ এফ এম আবদুল মঈনকে।

কুমিল্লা সদর দক্ষিণ মডেল থানার কোটবাড়ী পুলিশ ফাঁড়ির উপপরিদর্শক মো. বোরহান উদ্দিন বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের সমন্বয়কদের মধ্য থেকে একজন বিকেলে ফোন করে জানান, এক আসামিকে আটকে রাখা হয়েছে। পরবর্তী সময়ে যাচাই করে দেখা যায় তিনি ওই মামলার ১২ নম্বর আসামি। পরে তাঁকে ডিবি পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন কুমিল্লা মহানগরের আহ্বায়ক মো. আবু রায়হান প্রথম আলোকে বলেন, অর্ণব সিংহ রায় ছাত্রলীগের নেতা। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালিয়েছেন তিনি। মেয়েদের ওপরও হামলা চালিয়েছিলেন অর্ণব। এ ছাড়া সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেশবিরোধী বিভিন্ন গুজব ছড়াচ্ছেন। এ জন্য শিক্ষার্থীরা তাঁকে আটক করে পুলিশে দিয়েছেন। অর্ণব মামলার আসামি।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক মো. আবদুল হাকিম প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমাদের অফিসে ডেকে তার (অর্ণব) সঙ্গে কথা বলতে চেয়েছিলাম। এমন সময় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থীরা তাকে টেনে নিয়ে পুলিশের হাতে তুলে দেয়। তার বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার মামলা আছে। তবে এমন ঘটনা অপ্রত্যাশিত। আমরা ভিডিও দেখে যারা তাকে এভাবে টেনে নিয়ে গেছে, তাদের কাছ থেকে ব্যাখ্যা চাইব। তবে মারধরের বিষয়টি আমি জানি না।’

কুমিল্লা জেলা ডিবির ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সাজ্জাদ করিম খান প্রথম আলাকে বলেন, ডিবির দায়িত্বে থাকা আন্দোলনে হামলার ঘটনায় হওয়া একটি মামলার এজাহারভুক্ত আসামি অর্ণব সিংহ রায়। তিনি এখন ডিবি হেফাজতে আছেন। সোমবার তাঁকে কুমিল্লার আদালতে পাঠানো হবে।

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

ফতুল্লায় প্রয়াসের ২২তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপন

ফতুল্লার লামাপাড়ায় মাদকাসক্ত পূনর্বাসন ও সহায়তা কেন্দ্র প্রয়াসের ২২তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী অনুষ্ঠিত হয়েছে। প্রয়াসের ২২তম প্রতিষ্ঠাবাষির্কী উপলক্ষ্যে আলোচনা সভা, কোর্স সমাপনী সনদ প্রদান, বিভিন্ন মেয়াদে সুস্থতার বর্ষপূর্তি ও খেলাধূলার আয়োজন করা হয়।

বৃহস্পতিবার দিনব্যাপী অনুষ্ঠানে প্রয়াসের জেনারেল ম্যানেজার দেলোয়ার হোসেনের সভাপতিত্বে এ প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালন করা হয়।

মাদকাসক্ত পূনর্বাসন ও সহায়তা কেন্দ্র প্রয়াসের জেনারেল ম্যানেজার দেলোয়ার হোসেন তার বক্তব্যে বলেন, নারায়ণগঞ্জ জেলায় মাদকাসক্তদের চিকিৎসা সেবা প্রদানে প্রয়াস বিগত ২২ বছর যাবত নিরবিচ্ছিন্নভাবে সেবা করে যাচ্ছে।

সব ধরনের আইন ও বিধি-বিধান মেনে সেবার মানোন্নয়ন প্রয়াসের বর্তমান লক্ষ্য। শুধু চিকিৎসা সেবা প্রদান নয়, বরং মানসম্পন্ন টেকসই সেবা নিশ্চিত করার জন্য চিকিৎসা পরবর্তী বিভিন্ন কার্যক্রম কেন্দ্রটি পরিচালনা করে থাকে।

জেনারেল ম্যানেজার দেলোয়ার হোসেন বলেন, প্রয়াসে চিকিৎসা কোর্স সম্পন্নকারীদের সার্টিফিকেট প্রদান, প্রাক্তন সদস্যদের মনিটরিং, বিভিন্ন মেয়াদে সুস্থ থাকার স্বীকৃতি ও জনসচেতনতামূলক প্রচার-প্রচারনায় অংশগ্রহণ প্রয়াসের টেকসই চিকিৎসা পরিকল্পনার অংশ।

তিনি আরো বলেন, আমরাই প্রথম নারায়ণগঞ্জে ৪০ বেডে লাইসেন্স প্রাপ্ত মাদকাসক্ত চিকিৎসা কেন্দ্র। প্রয়াসের প্রতিষ্ঠা ২০০৩ সালে হলেও আমরা লাইসেন্স পেয়েছি ২০০৬ সালে। গত ২০২১ সাল থেকে আমরা প্রতিবছর সরকারি অনুদানের জন্য নির্বাচিত হয়ে আসছি।

এসময় তিনি অভিভাবক প্রতিনিধি ও প্রাক্তন সদস্যদের প্রয়াসের সামগ্রিক কার্যক্রমে সংযুক্ত থাকার জন্য ধন্যবাদ জানান।

এসময় আরো উপস্থিত ছিলেন, মাদকাসক্ত পূনর্বাসন ও সহায়তা কেন্দ্র প্রয়াসের কাউন্সিলর মোঃ সাইফুল ইসলাম, অফিসার এডমিন সাজ্জাদ হোসেন, প্রোগ্রাম অফিসার শেখ ফরিদ উদ্দিন ও মেডিকেল অফিসার ডা. রিয়াজ উদ্দিন আহমেদ। অন্যান্যদের মধ্যে আরো উপস্থিত ছিলেন, শওকত হোসেন, লিটন, আমজাদ, বাবুসহ  রিকোভারীবৃন্দ।
 

সম্পর্কিত নিবন্ধ