কনকনে শীত ও মৌসুমের সর্বনিম্ন তাপমাত্রায় যখন চারদিকে জবুথবু অবস্থা, তখন ঈশ্বরদীর সুহৃদরা দারুণ এক মিলনমেলার আয়োজন করে। তীব্র শীতকে বরণ করতে উদযাপন করেন ‘শীত উৎসব’। সেই সঙ্গে শীতার্তদের পাশে দাঁড়ানোর প্রত্যয় ব্যক্ত করেন। সম্প্রতি ঈশ্বরদী প্রেস ক্লাব মিলনায়তনে এ উপলক্ষে ঈশ্বরদীর সুহৃদরা শীত উৎসব, সাংগঠনিক সভা, আলোচনা সভা ও নৈশভোজে মিলিত হন। এ সময় সাংগঠনিক সভায় প্রতি বছরের মতো এবারও বর্ণাঢ্য আয়োজনে সুহৃদ উৎসব ও বার্ষিক বনভোজনের আয়োজন করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। আয়োজিত অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন সুহৃদ সমাবেশ ঈশ্বরদী ইউনিটের সভাপতি আরকে বাবু। সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক মাসুদুল ইসলাম মাসুদের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন– ঈশ্বরদী প্রেস ক্লাবের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আব্দুল মান্নান টিপু, সহসভাপতি হাসানুজ্জামান, সাধারণ সম্পাদক এসএম ফজলুর রহমান, সুহৃদ উপদেষ্টা বীর মুক্তিযোদ্ধা ইমদাদুল হক আমান, সমকাল প্রতিনিধি সেলিম সরদার। সমন্বয় করেন সাংগঠনিক সম্পাদক দুর্জয় ইসলাম লিমন মণ্ডল। উপস্থিত ছিলেন– উপদেষ্টা মনিরুল ইসলাম বাবু, আব্দুস সামাদ, আনোয়ার হোসেন খান আল-আমিন, উপাধ্যক্ষ সাইয়েদ কামরুল হাসান শিমুল, কার্যকরী সভাপতি আব্দুল আলীম বিশ্বাস মিঠু, জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি খন্দকার তৌফিক আলম সোহেল, সহসভাপতি তানহা ইসলাম শিমুল, প্রচার সম্পাদক হাসান চৌধুরী, সুহৃদ সানি হোসেন পলাশ, ফিরোজ আহমেদ, সাবিত হাসান মুহিম, রাকিবুল ইসলাম রূপম, আশরাফ হোসেন, পরিতোষ পাল, নাজমুল হক রঞ্জন, আল-আমিন হোসেন রাজীব, খায়রুল ইসলাম সবুজ, দীপ্ত আল ফারাবি প্রমুখ। আরও উপস্থিত ছিলেন সাংবাদিক মাহাবুবুল হক দুদু, ওয়াহেদ আলী সিন্টু, শেখ মেহেদী হাসান, মহিদুল ইসলাম প্রমুখ।
সমন্বয়ক সুহৃদ সমাবেশ, ঈশ্বরদী
উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
ফসলের ক্ষেতে আশার আলো
বৈশাখ মাস, চারদিকে উৎসবের আমেজ। সেই উৎসবের ঢেউ লেগেছে শহর-বন্দর, গ্রাম-গঞ্জে। নতুন ধান ঘরে তোলার ধুম লেগেছে হাওর অঞ্চলে; বিশেষ করে সুনামগঞ্জ, ময়মনসিংহসহ কয়েকটি এলাকায়। হাওরের পুবালি বাতাসে এখন পাকা ধানের ম-ম গন্ধ। বৈশাখ এলেই সুনামগঞ্জের হাওরাঞ্চলে চিরচেনা এ রূপ চোখে পড়ে। ঠা-ঠা রোদ মাথায় নিয়ে ক্ষেতে ধান কাটেন কৃষক। অন্যদিকে চলে মাড়াই। কিষানিরা মনের আনন্দে মাড়াই করা ধান শুকান। বিকেলের শান্ত রোদে শুকনো ধান মাথায় নিয়ে ঘরে ফেরেন।
ধান কাটা উৎসবে শুধু কিষান-কিষানি নন, সব বয়সী মানুষই যোগ দেন। হাওরে এটি এক অনন্য উৎসব। চলে বৈশাখজুড়ে। এ উৎসবের কাছে কাঠফাটা রোদ, ঝড়-বৃষ্টি যেন তুচ্ছ। ধানের সবুজ শীষের রং যখন লালচে হতে শুরু করে, তখন কৃষকের মনের রং বদলায়। চোখ-মুখ খুশিতে ভরে ওঠে। লোকমুখে প্রচলিত– বছরের প্রথম দিনে ঘরে ফসল তুললে সারাবছর অভাব থাকে না। তাই তো হাওরে চলছে পাকা ধান কাটার উৎসব। তবে চলতি মৌসুমে বৃষ্টিতে সৃষ্ট জলাবদ্ধতায় ধান তলিয়ে যায়। যাতে অনেক কৃষক নিঃস্ব হয়ে পড়েন।
আনন্দ-বেদনার এ বৈশাখে প্রকৃতি নতুন বিন্যাসে সাজে। বসন্তে প্রকৃতিতে যে রং লাগে, তা পূর্ণতা পায় বৈশাখে। অসীম আকাশে নানা বর্ণের মেঘের আনাগোনা আমাদের মনে সঞ্চারিত করে সঞ্জীবনী মন্ত্র। চোখে প্রশান্তি এনে দেয় সর্ববিস্তৃত প্রকৃতি। এ সময় চারদিকে আগুন ছড়ানো কৃষ্ণচূড়া, পলাশ, জারুল, বাগানবিলাসসহ প্রকৃতিতে রঙের ছড়াছড়ি। দেখা মেলে আম, কাঁঠাল, লিচু, জামরুলসহ মধুমাসের বিভিন্ন ফলের। কৃষিনির্ভর গ্রামবাংলা মেতে ওঠে উৎসব আমেজে। বৈচিত্র্যময় সমারোহে বসে বৈশাখী মেলা। এতে লোকগান, পুতুলনাচ, বায়োস্কোপ, নাগরদোলা, সার্কাস ইত্যাদি আকর্ষণ করে সবাইকে।
ঋতুবৈচিত্র্যের এ দেশে রুদ্রমূর্তির বৈশাখে প্রকৃতিতে থাকে ভিন্ন চেহারা। কালবৈশাখী আসে তীব্রবেগে। উড়িয়ে নিয়ে যায় অভাগীর জীর্ণ কুটির। উপকূলে বিপদ হয়ে আসে সামুদ্রিক ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাস। গ্রীষ্মের তাপদাহে তটস্থ হয় মানুষ। এ সময় আবহমান গ্রামবাংলার ছোট নদী, খালবিল, ডোবা শুকিয়ে যায়। কৃষকরা পড়েন বিপাকে। আবার এ সময়ে প্রকৃতি সাজে নতুন করে। তীব্র গরমে হাঁসফাঁস করা মানুষ একটু স্বস্তি পেতে আশ্রয় নেয় সবুজ প্রকৃতির শীতল ছায়ায়। একদিকে বৈশাখ খরতাপ ছড়ায়, অন্যদিকে প্রকৃতির প্রশান্তির শীতল ছোঁয়া দেয় পরম আনন্দ। বৈশাখ আসে নতুন করে সব গড়তে। শীর্ণ-জীর্ণতায় সবুজ সতেজ করে তুলতে। ‘নূতনের কেতন উড়ে’ কালবৈশাখীতে। একরাশ স্বপ্ন বুকে নিয়ে শুরু হয় নবজীবনের হিসাবনিকাশ। স্বপ্নমুখর বৈশাখের রং তাই একটু বেশিই উজ্জ্বল। প্রকৃতি সজীব সতেজ আর মানুষেরা প্রাণচঞ্চল।
সুহৃদ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়