ইবিতে শিবিরের ৫ দিনব্যাপী প্রকাশনা উৎসব শুরু
Published: 13th, January 2025 GMT
ইংরেজি নববর্ষ উপলক্ষে ইসলামী ছাত্রশিবিরের ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় (ইবি) শাখার উদ্যোগে পাঁচ দিনব্যাপী প্রকাশনা উৎসব শুরু হয়েছে।
সোমবার (১৩ জানুয়ারি) বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলায় এ উৎসব শুরু হয়েছে। চলবে আগামী ১৭ জানুয়ারি পর্যন্ত।
আয়োজক সূত্রে জানা গেছে, প্রকাশনা উৎসবে মোট ছয়টি স্টল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এতে প্রায় দুই শতাধিক প্রকাশনা স্থান পেয়েছে। শিবিরের সমর্থক, কর্মী, সাথী, সদস্য ও উচ্চতর ক্যাটাগরির জন্য এতে পৃথক কর্ণার রয়েছে। যার মাধ্যমে সাধারণ শিক্ষার্থরা শিবিরের কার্যক্রম সম্পর্কে জানতে পারবে। এছাড়াও উৎসবে শিবিরের সমর্থক হওয়া ও বই পড়ার জন্য পৃথক কর্ণার রয়েছে।
এদিন উৎসবস্থল পরিদর্শন করেন উপাচার্য অধ্যাপক ড.
উৎসবে আসা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষার্থী মেহেদী হাসান বলেন, “সব শিক্ষার্থীরা এখানে আসায় একটি উৎসবমুখর পরিবেশ তৈরি হয়েছে। আমার সবচেয়ে ভালো লেগেছে, উৎসবে জুলাই বিপ্লবের সামগ্রিক বিষয়ের উপরে বই রয়েছে এবং শহীদদের পরিচিতি তুলে ধরা হয়েছে। এখানে ইসলামী চিন্তা চেতনার বইও রয়েছে।”
তিনি বলেন, “আমাদের বিভিন্ন স্টিকার ও পরিচিতি উপহার দেওয়া হয়েছে, যা আমাদের আনন্দিত করেছে। আসলে এতদিন আমাদের শিবির সম্পর্কে ভুল বুঝানো হয়েছে। কিন্তু এখন দেখছি তারা খুব ভালো কাজ করছেন।”
স্থল পরিদর্শন শেষে উপাচার্য অধ্যাপক ড. নকীব মোহাম্মদ নসরুল্লাহ বলেন, “শিবির খুবই চমৎকার একটি আয়োজন করেছে। আমি তাদের আয়োজনকে সাধুবাদ জানাই। বিশ্ববিদ্যালয়ে এমন সৃজনশীল আয়োজন বেশি বেশি হওয়া প্রয়োজন।”
শাখা ছাত্রশিবিরের সভাপতি মাহমুদুল হাসান বলেন, “এ উৎসব আমাদের কেন্দ্রের একটি কর্মসূচি। এর মাধ্যমে আমাদের পরিচিত শিক্ষার্থীদের সামনে তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। উৎসবে আসা শিক্ষার্থীরা শিবির সম্পর্কে জানতে ও চিনবে এবং তারা আমাদের আদর্শের বিষয়ে বুঝতে পারবে।”
তিনি আরো বলেন, “ছাত্রশিবির একটি আদর্শিক প্রতিষ্ঠান। আর আদর্শ চর্চা ও প্রচারের অন্যতম মাধ্যম হলো প্রকাশনা। বিগত সরকারের সময়ে আমাদের বইকে জঙ্গিবাদী বই হিসেবে প্রচার করা হত। কিন্তু এ উৎসবের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা বুঝতে পারবে, এ বইগুলো আসলে কোন জঙ্গিবাদী বই নয়।”
ঢাকা/তানিম/মেহেদী
উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
লাঙ্গলবন্দে মন্দিরের কমিটি দখলে সন্ত্রাসী হামলা, মামলায় আসামী ১৭
বন্দরের লাঙ্গলবন্দে মন্দিরের কমিটি দখলে হামলার ঘটনা ঘটেছে। মন্দিরের বর্তমান পরিচালনা কমিটির সাধারণ সম্পাদক বিপ্লব সাহা ও তার পরিবারের উপরে অতর্কিত হামলা চালিয়ে 'মব' সৃষ্টি করে কমিটি দখলের চেষ্টা করছে এডভোকেট রাজীব মন্ডলের নেতৃত্বে একটি পক্ষ।
এ ঘটনায় বিপ্লব সাহার পিতা সুরেশ সাহা বাদী হয়ে ১১ জনের নাম উল্লেখ করে এবং আরো ৫-৬ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করে বন্দর থানায় একটি মামলা দায়ের করেছেন। মামলা নং ১১, তারিখ ০৭-০৭-২০২৫।
মামলায় আসামি করা হয়েছে এডভোকেট রাজিব মন্ডল, রিপন দাস, বিজয় দাস কাব্য, কার্তিক ঘোষ, সুফল সাহা, সুকেন দাস, রঞ্জন দাস, খোকন দাস, সাগর দাস, সুভাষ দাস ও অপু মালাকারসহ অজ্ঞাতনামা আরো ৫-৬ জনকে।
মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করে বন্দর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তরিকুল ইসলাম গণমাধ্যমকে জানান, লাঙ্গলবন্দে হামলার ঘটনায় একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। এখনো আসামী গ্রেফতার হয়নি তবে আসামিদের গ্রেফতারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
মামলার বিবরণে উল্লেখ করা হয়, বিবাদীরা আমার প্রতিবেশী বাসিন্দা এবং পূর্ব পরিচিত। আমার ছেলে বিপ্লব সাহা বন্দর থানাধীন লাঙ্গলবন্দ বাজার গৌরাঙ্গ মহাপ্রভু রাজঘাট মন্দিরের কমিটিতে সাধারণ সম্পাদক হিসেবে মন্দির পরিচালনা করিয়া আসিতেছে। যার কারনে এক নং বিবাদী আমার ছেলেকে বিভিন্ন সময়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে হুমকি প্রদান করতো।
১নং বিবাদী গত ১২-০৬-২৫ তারিখে রাত সাড়ে নয়টায় তার ব্যবহৃত ফোন নাম্বার হতে আমার ব্যবহৃত ফোন নাম্বারে ফোন করিয়া অকথ্য ভাষায় গালাগালি করে এবং আমি যাতে মন্দিরের কমিটিতে না থাকি সে বিষয়ে আমাকে হুমকি প্রদান করে।
গত ৪-৭-২০২৫ তারিখে সন্ধ্যা অনুমান সাড়ে ছয়টায় নারায়ণগঞ্জ জেলার বন্দর থানাধীন লাঙ্গলবন্দ বাজার গৌরাঙ্গ মহাপ্রভু রাজঘাট মন্দিরে জগন্নাথ রথযাত্রা অনুষ্ঠান চলাকালীন সময় বিবাদীরা পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী আমার ছেলেকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে।
আমার ছেলে প্রতিবাদ করায় বিবাদীরা তাকেও অতর্কিত মারপিট করিয়া শরীরের বিভিন্ন স্থানে রক্তাক্ত যখন সহ হত্যার চেষ্টা করে। তার ডাক চিৎকারে অন্তর দাস ও তপন মালাকার আগাইয়া আসিলে বিবাদীগণ তাদেরকেও মারপিট করে শরীরের বিভিন্ন স্থানে রক্তাক্ত নীলা ফুলা জখম করে।
তখন আমার ছেলের স্ত্রী পপি দাস প্রতিবাদ করায় ১, ৪ ও ৫ নং বিবাদীগণ আমার ছেলের স্ত্রীকে চড় থাপ্পড় মারিয়া নীলা ফুলা যখম করে এবং ১০ হাজার টাকা এমন একটি স্বর্ণের চেইন ছিনিয়ে নেয়।
সকলের ডাক চিৎকারে আশেপাশের লোকজন এগিয়ে এলে বিবাদীগণ আমার ছেলেসহ আমার পরিবারের লোকজনকে প্রকাশ্যে খুন করার হুমকি প্রদান করে। স্থানীয় লোকজন আমার ছেলেসহ আহতদের বন্দর উপজেলা হাসপাতালে নিয়ে চিকিৎসা করায়।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গত ৫ আগস্টের পর লাঙ্গলবন্দের বিভিন্ন কমিটি দখলের জন্য একটি পক্ষ সক্রিয় হয়ে ওঠে। তারা লাঙ্গলবন্দের পূণ্য স্নান উদযাপন কমিটিসহ স্থানীয় বিভিন্ন মন্দিরের পরিচালনা কমিটিগুলোতে আধিপত্য বিস্তারের লক্ষ্যে 'মব' সৃষ্টির চেষ্টা করে। চলতি বছরে লাঙ্গলবন্দের পূণ্য স্নান আয়োজনের পূর্বে এরকম 'মব' সৃষ্টি করে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের হামলার ঘটনা ঘটিয়েছে।
লাঙ্গলবন্দের সনাতন সম্প্রদায়ের লোকজনের সাথে কথা বলে জানা যায়, নারায়ণগঞ্জের ঐতিহ্যবাহী লাঙ্গলবন্দ পূণ্য স্নান উৎসব আয়োজনে একটি কমিটি রয়েছে যা দীর্ঘদিন যাবত অত্যন্ত সফলভাবে এই আয়োজনটি করে আসছে। এই কমিটির সভাপতি সরোজ কুমার সাহা এবং সাধারণ সম্পাদক অশোক কর্মকার।
এই কমিটি আর সাথে পূজা উদযাপন পরিষদ এবং হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ মিলেমিশে এই স্নান উৎসব আয়োজন করে আসছে অনেক বছর যাবত। কিন্তু হঠাৎ করে কিছুদিন আগে আরেকটি পক্ষ এই পূণ্য স্নান আয়োজনে স্বঘোষিত একটি কমিটি ঘোষণা করে আর এরপর থেকেই শুরু হয় বিভক্তি আর উত্তেজনা।
সনাতন ধর্মাবলম্বীরা মনে করেন, নারায়ণগঞ্জের সনাতন সম্প্রদায়ের মাঝে দীর্ঘদিন যাবত যে ঐক্য বিরাজ করছিলো তা ভেঙ্গে বিভক্তি সৃষ্টির চেষ্টা হচ্ছে । ৫ আগষ্টের রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর একটি মহল এই বিভক্তির বিষবাস্প ছড়িয়ে ঘোলা পানিতে মাছ শিকারের চেষ্টা করছে যা নারায়ণগঞ্জের সনাতন সম্প্রদায়ের লোকজন ভালো চোখে দেখছে না।
এরই অংশ হিসেবে গত ৪ জুলাই লাঙ্গলবন্দ বাজার গৌরাঙ্গ মহাপ্রভু রাজঘাট মন্দিরে জগন্নাথ দেবের রথ উৎসবের অনুষ্ঠান শেষে 'মব' সৃষ্টি করে মন্দির পরিচালনা কমিটির সাধারণ সম্পাদক বিপ্লব সাহার উপরে সন্ত্রাসী হামলার ঘটনা ঘটেছে।
সূত্র জানায়, নারায়ণগঞ্জের মানুষ সব সময়ই শান্তিপ্রিয়। সকল ধর্মের মানুষ এখানে মিলেমিশে বসবাস করে আসছে। সেইসাথে সকল ধর্মের উৎসব পার্বনও এখানে ধর্মীয় সম্প্রীতি বজায় রেখে পালন করা হয়ে থাকে। এখানে পবিত্র রমজান মাসে শারদীয় দূর্গাপূজা পালিত হয়েছে, কোথাও কোনো ধরনের অপ্রিতিকর ঘটনা ঘটেনি। সাম্প্রদায়ীক সম্প্রীতির এই অনন্য নজির নারায়ণগঞ্জে চলে আসছে সুদীর্ঘকাল যাবত।
নারায়ণগঞ্জের সনাতন সম্প্রদায়ের সমস্যা সমাধানে দুটি সংগঠন সবসময় সক্রিয় ভূমিকা পালন করে এসেছে। এর একটি হলো পূজা উদযাপন পরিষদ আরেকটি হলো হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদ। বিভিন্ন ধর্মীয় অনুষ্ঠান আয়োজন থেকে শুরু করে হিন্দু সম্প্রদায়ের নানা সমস্যা সমাধানে প্রশাসন ও সরকারের সাথে সমন্বয় সাধনের কাজটি সব সময়ই অত্যন্ত দক্ষতার সাথে করে এসেছে এই সংগঠন দুটি।
এছাড়া নারায়ণগঞ্জের বন্দর থানয় অবস্থিত হিন্দু সম্প্রদায়ের অন্যতম প্রধান তীর্থস্থান লাঙ্গলবন্দের অষ্টমী স্নান উদযাপনের জন্যেও একটি কমিটি রয়েছে যা দীর্ঘকাল যাবত এই স্নান কাজ পরিচালিত করে আসছে। সকল সরকারের আমলেই তারা মিলে মিশে তাদের দায়িত্ব পালন করে আসছে।
গত ৫ আগষ্টের পরপর পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে নারায়ণগঞ্জের হিন্দু সম্প্রদায়ের মাঝে যে আতঙ্ক বিরাজ করছিলো তা দুর করতে পূজা উদযাপন পরিষদ ও হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের নেতৃবৃন্দ নিরলসভাবে কাজ করেছেন।
নারায়ণগঞ্জ বিএনপি, জমায়াত, হেফাজতে ইসলাম, ইসলামী আন্দোলনসহ সমমনা রাজনৈতিক দলগুলো নেতৃবৃন্দের সাথে সমন্বয় করে হিন্দু ধর্মের উপাসনালয় ও তাদের বাড়িঘর পাহারা দেওয়ার বন্দোবস্ত করেছেন যাতে করে তাদের মন থেকে সেই আতঙ্ক দুর হয়েছে এবং তারা স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে পেরেছেন।
তাদের মতে, ৫ আগষ্টের পর একটি নতুন চক্র সক্রিয় হয়ে উঠেছে নারায়ণগঞ্জের হিন্দু সম্প্রদায়ের এই ঐক্য বিনষ্ট করার জন্যে। তাদেরকে ইতিপূর্বে কখনো মাঠে দেখা যায়নি। হিন্দু সম্প্রদায়ের প্রান্তিক জনগোষ্ঠি তাদের দু:সময়ে এদেরকে কখনো পাশে পাননি।
এসব ভূইফোড় নেতাদের ৫ আগষ্টের পর উদ্ভব হয়েছে। তারা নিজেদের স্বার্থ হাসিলের জন্যে আমাদের মাঝে বিভক্তি সৃষ্টির চেষ্টা করছে। যার প্রমাণ পাওয়া গেছে ইতিমধ্যে।
গত কিছুদিন পূর্বে লাঙ্গলবন্দের স্নান উৎসব উদযাপনের জন্যে নতুন একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে অথচ এখানে আগেরই একটি কমিটি রয়েছে যারা বিগত সময়গুলোতে অত্যন্ত সফলভাবে স্নান উৎসব আয়োজন করে আসছে।
বিভক্তি কখনো কল্যাণ বয়ে আনেনা। আর যারা বিভক্তি সৃষ্টি করছে তাদেরকে বিগত সময়ে কখনো আমাদের সুখ দু:খে পাওয়া যায়নি। তারা পেশী শক্তি ব্যবহার করে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের মাঝে আধিপত্য বিস্তারের চেষ্টা করছে কিন্তু সনাতন সম্প্রদায়ের লোকজন তা হতে দেবে না বলে জানিয়েছেন এবং যেকোনো মূল্যে তাদের প্রতিরোধ করার ঘোষণা দিয়েছেন।