Samakal:
2025-05-01@03:25:52 GMT

ই-সিগারেটে স্বাস্থ্যঝুঁকি

Published: 13th, January 2025 GMT

ই-সিগারেটে স্বাস্থ্যঝুঁকি

গত বছরের ডিসেম্বরের প্রথম দিন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে আবাসিক হলের শিক্ষার্থীদের ডোপ টেস্ট (মাদক পরীক্ষা) কার্যক্রম শুরু হয়। ডোপ টেস্টে জানা যাচ্ছে, কে মাদকে আসক্ত বা কে নয়। কিন্তু মাদক থামানোর কোনো উপায় আছে কি? সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন বলছে, মাদকসেবীদের অর্ধেকের বেশি সংখ্যক কিশোর-তরুণ। তরুণদের মাদকাসক্তির দিকে ঝুঁকি বাড়াচ্ছে ই-সিগারেট। সাধারণভাবে ই-সিগারেট নিকোটিনের সঙ্গে বিভিন্ন ফলের ফ্লেভার মিশিয়ে তৈরি করা হয়। এটি তরুণদের মধ্যে এক নতুন আসক্তির ঝোঁক তৈরি করেছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এর ক্ষতিকর প্রভাব সাধারণ সিগারেটের চেয়েও ভয়াবহ। রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন অভিজাত এলাকার দোকান ও অনলাইন প্ল্যাটফর্মে ই-সিগারেটের সহজলভ্যতা তরুণদের জন্য বড় উদ্বেগের কারণ হয়ে উঠেছে। ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশনের এক গবেষণা জানায়, ই-সিগারেটের দ্বৈত ব্যবহার হৃদরোগের ঝুঁকি ৫০০ শতাংশ বাড়িয়ে দেয়।

শখের বশে ই-সিগারেট ব্যবহার শুরু করলেও পরে এটি ধূমপানের প্রবণতা বাড়িয়ে দেয়। বাংলাদেশে ই-সিগারেটের বিক্রি নিয়ন্ত্রণে সুনির্দিষ্ট কোনো আইন নেই। অনলাইন প্ল্যাটফর্ম ই-সিগারেট বিক্রির একটি বড় ক্ষেত্র হয়ে উঠেছে। বিশ্বের ১০৯টি দেশে ই-সিগারেট বিক্রি নিষিদ্ধ বা কঠোর নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। ই-সিগারেট, সিগারেটসহ বিভিন্ন মাদক তরুণদের যক্ষ্মাসহ ফুসফুস-সংক্রান্ত বিভিন্ন রোগের সংক্রমণ করছে। প্রতিবেশী ভারত, নেপালসহ অস্ট্রেলিয়া, শ্রীলঙ্কা এই নিষেধাজ্ঞার মধ্যে রয়েছে। তবে বাংলাদেশে এমন আইন না থাকায় তামাক কোম্পানিগুলো এ সুযোগ নিচ্ছে। ই-সিগারেটের অন্যতম উপাদান নিকোটিন, যা একটি উচ্চমাত্রার আসক্তি সৃষ্টিকারী পদার্থ। নিকোটিন সিগারেটের মতো ই-সিগারেটেও কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রকে উদ্দীপিত করে এবং মস্তিষ্কের সেরোটোনিন ও ডোপামিন নিঃসরণে প্রভাব ফেলে। এটি বিশেষত তরুণদের জন্য বিপজ্জনক। কারণ তাদের মস্তিষ্ক তখনও পূর্ণাঙ্গভাবে বিকশিত হয়নি। ফলে নিকোটিনের কারণে মস্তিষ্কের বিকাশ প্রক্রিয়া ব্যাহত হয় এবং স্মৃতি, মনোযোগ ও শেখার সক্ষমতা ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। তরুণদের মধ্যে ই-সিগারেট ব্যবহারের প্রবণতা বৃদ্ধি পাওয়ায় তাদের নিকোটিনের প্রতি আসক্ত হওয়ার ঝুঁকি আরও বাড়ে। যে জিনিস ঝুঁকি বাড়ায়, তা বন্ধে সরকারের পদক্ষেপ নেই কেন?

ই-সিগারেটের তরল দ্রবণ সাধারণত প্রোপেলিন গ্লাইকল, গ্লিসারিন এবং বিভিন্ন স্বাদযুক্ত রাসায়নিক বা ফ্লেভার দিয়ে তৈরি। এগুলো গরম হয়ে বাষ্পে রূপান্তরিত হয়, যা ব্যবহারকারীরা গ্রহণ করে। তবে এই দ্রবণগুলোর বেশ কিছু উপাদান শ্বাসযন্ত্রের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। প্রোপেলিন গ্লাইকল ও গ্লিসারিন শ্বাসতন্ত্রের কোষে প্রদাহ সৃষ্টি করতে পারে। যার ফলে শ্বাসকষ্ট, ফুসফুসের ক্ষতি এবং দীর্ঘমেয়াদি অসুস্থতার ঝুঁকি বেড়ে যায়। কিছু ফ্লেভারযুক্ত ই-সিগারেটে ডায়াসেটাইল নামে একটি রাসায়নিক পাওয়া গেছে, যা ফুসফুসে ‘পপকর্ন লাং’ নামে পরিচিত এক ধরনের বিরল ও ক্ষতিকারক রোগ সৃষ্টি করতে পারে। এই পদার্থ ই-সিগারেটের তরল গরম করার সময় উৎপন্ন হয় এবং ফুসফুসের টিস্যুতে মারাত্মক ক্ষতি করতে পারে। 

আমেরিকান স্ট্রোক অ্যাসোসিয়েশনের তথ্য অনুযায়ী, ই-সিগারেট ব্যবহারের ফলে শ্বাসনালিতে প্রদাহ এবং কণ্ঠনালির সংক্রমণের সমস্যা দেখা দিতে পারে। দীর্ঘমেয়াদি ব্যবহারে এটি ফুসফুসের কার্যক্ষমতা হ্রাস করে, শ্বাসকষ্টের ঝুঁকি বাড়ায় এবং গুরুতর শ্বাসযন্ত্রজনিত রোগের কারণ হতে পারে। এসব তথ্য ইঙ্গিত দেয়; ই-সিগারেট কেবল সাধারণ সিগারেটের বিকল্প নয়, বরং তা শারীরিক স্বাস্থ্যের ওপর নতুন ধরনের ক্ষতিকর প্রভাব ফেলতে পারে।

ই-সিগারেট ‘কম ক্ষতিকর’ পণ্য নয়, বরং অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। ই-সিগারেট ব্যবহারে কিশোর-তরুণদের ধূমপানের প্রবণতা দুই থেকে ছয় গুণ হয়েছে। ২০০৫ সালের তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনে ই-সিগারেট বিষয়ে কিছু উল্লেখ নেই। আইন হালনাগাদ করে ই-সিগারেট আমদানি ও বিক্রি নিষিদ্ধ করা প্রয়োজন। ই-সিগারেটের সহজলভ্যতা এবং এর বিপজ্জনক প্রভাব নিয়ে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া না হলে তরুণ প্রজন্ম আরও বড় স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পড়বে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন। ই-সিগারেটের ব্যবহার নিয়ে তরুণদের মধ্যে সচেতনতা বাড়ানো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এর ক্ষতিকর প্রভাব সম্পর্কে প্রচার চালানো এবং আইনি নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে এর ব্যবহার সীমিত করা প্রয়োজন।

জাহিদ হোসাইন খান: গবেষক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
zahid.

pen@gmail.com

উৎস: Samakal

এছাড়াও পড়ুন:

পুঁজিবাজারে ধারাবাহিক পতনের কারণ অনুসন্ধানে তদন্ত কমিটি

পুঁজিবাজারে সাম্প্রতিক সময়ে ধারাবাহিক নিম্নমুখী প্রবণতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে, যা পর্যবেক্ষণে অস্বাভাবিক এবং সন্দেহজনক বলে মনে করছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)।

তাই বিষয়টি বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ রক্ষার্থে তদন্ত করে খতিয়ে দেখা প্রয়োজন বলে করে কমিশন। ফলে সাম্প্রতিক সময়ে পুঁজিবাজার নিম্নমুখী প্রবণতার কারণ খতিয়ে দেখতে বেশ কিছু শর্ত নির্ধারণ করে চার সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। গঠিত তদন্ত কমিটিকে ১৫ কার্যদিবসের মধ্যে এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন দাখিল করতে নির্দেশ দিয়েছে বিএসইসি।

গত রবিবার (২৭ এপ্রিল) এ সংক্রান্ত একটি আদেশ জারি করা হয়েছে। বিএসইসির সংশ্লিষ্ট বিভাগের কর্মকর্তারা রাইজিংবিডি ডটকমকে এই তথ্য জানিয়েছেন।

আরো পড়ুন:

‘অরেঞ্জ বন্ড অন্তর্ভুক্তিমূলক পুঁজিবাজার তৈরির সুযোগ দিচ্ছে’

যমুনা অয়েলের ৯ মাসে মুনাফা বেড়েছে ৩৭.৭৮ শতাংশ

তদন্তের বিষয়টি ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই), চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ (সিএসই) ও সেন্ট্রাল ডিপোজিটরি বাংলাদেশ লিমিটেডকে (সিডিবিএল) অবহিত করা হয়েছে।

গঠিত তদন্ত কমিটির সদস্যরা হলেন-বিএসইসির অতিরিক্ত পরিচালক মোহাম্মদ শামসুর রহমান, উপ-পরিচালক মুহাম্মদ ওরিসুল হাসান রিফাত, ডিএসইর সহকারী মহাব্যবস্থাপক মাহফুজুর রহমান এবং সিডিবিএলের সহকারী ব্যবস্থাপক কাজী মিনহাজ উদ্দিন।

বাজার বিশ্লেষণে দেখা গেছে, গত বছরের জুলাই-আগস্টের গণঅভ্যুত্থানে রাজনৈতিক ক্ষমতার পট পরিবর্তনের পর পুঁজিবাজারের হাল ধরেন নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসির চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদ। ওই দিন অর্থাৎ ১৯ আগস্ট ডিএসইর প্রধান ডিএসইএক্স সূচক ছিল ৫৭৭৫.৪৯ পয়েন্টে। তিনি কাজে যোগ দেওয়ার ৮ মাস অতিবাহিত হলেও পুঁজিবাজারে গতিশীলতা ফিরে আসেনি। বরং, ক্ষেভে বিনিয়োগকারীরা সড়কে নেমে বিক্ষোভ ও মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেন।

সর্বশেষ সোমবার (২৮ এপ্রিল) ডিএসইর ডিএসইএক্স সূচক কমে দাঁড়িয়েছে ৪ হাজার ৯৫২.৭৯ পয়েন্টে। ফলে প্রায় ৮ মাসে ডিএসইএক্স সূচক ৮২২.৭০ পয়েন্ট কমেছে।

এমন পরিস্থিতি বিএসইসির গঠিত তদন্ত কমিটি সাম্প্রতিক সময়ে পুঁজিবাজার নিম্নমুখী প্রবণতার কারণ খতিয়ে দেখবে। এ কাজে কোনো কারসাজি চক্র জাড়িত আছে কি-না এবং বাজারে চক্রান্তকারী গুজব রটিয়েছে কিনা-তা খতিয়ে দেখা হবে বলে জানা গেছে।

বিএসইসির তদন্তের আদেশ
সাম্প্রতিক সময়ে পুঁজিবাজারের নিম্নমুখী প্রবণতা পর্যবেক্ষণ করেছে বিএসইসি, যা অস্বাভাবিক এবং সন্দেহজনক বলে মনে করা হচ্ছে। তাই কমিশন বিষয়টি পুঁজিবাজার এবং সাধারণ বিনিয়োগকারীদের বৃহত্তর স্বার্থে তদন্ত করে দেখা প্রয়োজন বলে মনে করছে। এরই ধারাবাহিকতায় সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ অধ্যাদেশ, ১৯৬৯ (১৯৬৯ সালের অধ্যাদেশ নম্বর XVII) এর ২১ ধারা এবং বাংলাদেশ সিকিউরিটিও অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন আইন, ১৯৯৩ (১৯৯৩ সনের ১৫ নম্বর আইন) এর ১৭(ক) ধারার প্রদত্ত ক্ষমতাবলে কমিশন আলোচ্য বিষয়ে তদন্ত করার নির্দেশ দিয়েছে। উক্ত তদন্ত কার্যক্রম পরিচালনা করার জন্য বিএসইসি, ডিএসই এবং সিডিবিএলের ৪জন কর্মকর্তা নিয়োগ দেওয়া হলো। গঠিত তদন্ত কমিটির কর্মকর্তারা এই আদেশ জারির তারিখ থেকে ১৫ কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত সম্পন্ন করে এ সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদন কমিশনে দাখিল করবে।

যেসব বিষয় খতিয়ে দেখবে তদন্ত কমিটি
ডিএসইএক্স সূচকের সাম্প্রতিক পতনের কারণ চিহ্নিত করা। বাজারে গুজব ছড়ানোর সাথে জড়িত ব্যক্তিদের চিহ্নিত করা অন্য কোনো আনুষঙ্গিক বিষয় থাকলে তা চিহ্নিত করা। গঠিত তদন্ত কমিটি বিনিয়োগকারীদের আস্থা বাড়ানোর জন্য সুপারিশ প্রদান করা।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিএসইসির পরিচালক ও মুখপাত্র মো. আবুল কালাম রাইজিংবিডি ডটকমকে বলেন, “বিনিয়োগকারীদের স্বার্থে সাম্প্রতিক সময়ে পুঁজিবাজার নিম্নমুখী প্রবণতার কারণ খতিয়ে দেখতে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। গঠিত তদন্ত কমিটি কি কি কারণে বাজার পতনমুখী প্রবণতায় রয়েছে তা খতিয়ে দেখবে। একইসঙ্গে বিনিয়োগকারীদের আস্থা বাড়ানোর জন্য কি কি করা প্রয়োজন সে বিষয়েও সুপারিশ প্রদান করবে তদন্ত কমিটি।”

ঢাকা/এনটি/এসবি

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • সাপ্তাহিক পত্রিকা : সোনালি অতীত ও প্রসঙ্গকথা
  • পুঁজিবাজারে ধারাবাহিক পতনের কারণ অনুসন্ধানে তদন্ত কমিটি