Samakal:
2025-08-01@04:45:37 GMT

ই-সিগারেটে স্বাস্থ্যঝুঁকি

Published: 13th, January 2025 GMT

ই-সিগারেটে স্বাস্থ্যঝুঁকি

গত বছরের ডিসেম্বরের প্রথম দিন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে আবাসিক হলের শিক্ষার্থীদের ডোপ টেস্ট (মাদক পরীক্ষা) কার্যক্রম শুরু হয়। ডোপ টেস্টে জানা যাচ্ছে, কে মাদকে আসক্ত বা কে নয়। কিন্তু মাদক থামানোর কোনো উপায় আছে কি? সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন বলছে, মাদকসেবীদের অর্ধেকের বেশি সংখ্যক কিশোর-তরুণ। তরুণদের মাদকাসক্তির দিকে ঝুঁকি বাড়াচ্ছে ই-সিগারেট। সাধারণভাবে ই-সিগারেট নিকোটিনের সঙ্গে বিভিন্ন ফলের ফ্লেভার মিশিয়ে তৈরি করা হয়। এটি তরুণদের মধ্যে এক নতুন আসক্তির ঝোঁক তৈরি করেছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এর ক্ষতিকর প্রভাব সাধারণ সিগারেটের চেয়েও ভয়াবহ। রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন অভিজাত এলাকার দোকান ও অনলাইন প্ল্যাটফর্মে ই-সিগারেটের সহজলভ্যতা তরুণদের জন্য বড় উদ্বেগের কারণ হয়ে উঠেছে। ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশনের এক গবেষণা জানায়, ই-সিগারেটের দ্বৈত ব্যবহার হৃদরোগের ঝুঁকি ৫০০ শতাংশ বাড়িয়ে দেয়।

শখের বশে ই-সিগারেট ব্যবহার শুরু করলেও পরে এটি ধূমপানের প্রবণতা বাড়িয়ে দেয়। বাংলাদেশে ই-সিগারেটের বিক্রি নিয়ন্ত্রণে সুনির্দিষ্ট কোনো আইন নেই। অনলাইন প্ল্যাটফর্ম ই-সিগারেট বিক্রির একটি বড় ক্ষেত্র হয়ে উঠেছে। বিশ্বের ১০৯টি দেশে ই-সিগারেট বিক্রি নিষিদ্ধ বা কঠোর নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। ই-সিগারেট, সিগারেটসহ বিভিন্ন মাদক তরুণদের যক্ষ্মাসহ ফুসফুস-সংক্রান্ত বিভিন্ন রোগের সংক্রমণ করছে। প্রতিবেশী ভারত, নেপালসহ অস্ট্রেলিয়া, শ্রীলঙ্কা এই নিষেধাজ্ঞার মধ্যে রয়েছে। তবে বাংলাদেশে এমন আইন না থাকায় তামাক কোম্পানিগুলো এ সুযোগ নিচ্ছে। ই-সিগারেটের অন্যতম উপাদান নিকোটিন, যা একটি উচ্চমাত্রার আসক্তি সৃষ্টিকারী পদার্থ। নিকোটিন সিগারেটের মতো ই-সিগারেটেও কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রকে উদ্দীপিত করে এবং মস্তিষ্কের সেরোটোনিন ও ডোপামিন নিঃসরণে প্রভাব ফেলে। এটি বিশেষত তরুণদের জন্য বিপজ্জনক। কারণ তাদের মস্তিষ্ক তখনও পূর্ণাঙ্গভাবে বিকশিত হয়নি। ফলে নিকোটিনের কারণে মস্তিষ্কের বিকাশ প্রক্রিয়া ব্যাহত হয় এবং স্মৃতি, মনোযোগ ও শেখার সক্ষমতা ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। তরুণদের মধ্যে ই-সিগারেট ব্যবহারের প্রবণতা বৃদ্ধি পাওয়ায় তাদের নিকোটিনের প্রতি আসক্ত হওয়ার ঝুঁকি আরও বাড়ে। যে জিনিস ঝুঁকি বাড়ায়, তা বন্ধে সরকারের পদক্ষেপ নেই কেন?

ই-সিগারেটের তরল দ্রবণ সাধারণত প্রোপেলিন গ্লাইকল, গ্লিসারিন এবং বিভিন্ন স্বাদযুক্ত রাসায়নিক বা ফ্লেভার দিয়ে তৈরি। এগুলো গরম হয়ে বাষ্পে রূপান্তরিত হয়, যা ব্যবহারকারীরা গ্রহণ করে। তবে এই দ্রবণগুলোর বেশ কিছু উপাদান শ্বাসযন্ত্রের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। প্রোপেলিন গ্লাইকল ও গ্লিসারিন শ্বাসতন্ত্রের কোষে প্রদাহ সৃষ্টি করতে পারে। যার ফলে শ্বাসকষ্ট, ফুসফুসের ক্ষতি এবং দীর্ঘমেয়াদি অসুস্থতার ঝুঁকি বেড়ে যায়। কিছু ফ্লেভারযুক্ত ই-সিগারেটে ডায়াসেটাইল নামে একটি রাসায়নিক পাওয়া গেছে, যা ফুসফুসে ‘পপকর্ন লাং’ নামে পরিচিত এক ধরনের বিরল ও ক্ষতিকারক রোগ সৃষ্টি করতে পারে। এই পদার্থ ই-সিগারেটের তরল গরম করার সময় উৎপন্ন হয় এবং ফুসফুসের টিস্যুতে মারাত্মক ক্ষতি করতে পারে। 

আমেরিকান স্ট্রোক অ্যাসোসিয়েশনের তথ্য অনুযায়ী, ই-সিগারেট ব্যবহারের ফলে শ্বাসনালিতে প্রদাহ এবং কণ্ঠনালির সংক্রমণের সমস্যা দেখা দিতে পারে। দীর্ঘমেয়াদি ব্যবহারে এটি ফুসফুসের কার্যক্ষমতা হ্রাস করে, শ্বাসকষ্টের ঝুঁকি বাড়ায় এবং গুরুতর শ্বাসযন্ত্রজনিত রোগের কারণ হতে পারে। এসব তথ্য ইঙ্গিত দেয়; ই-সিগারেট কেবল সাধারণ সিগারেটের বিকল্প নয়, বরং তা শারীরিক স্বাস্থ্যের ওপর নতুন ধরনের ক্ষতিকর প্রভাব ফেলতে পারে।

ই-সিগারেট ‘কম ক্ষতিকর’ পণ্য নয়, বরং অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। ই-সিগারেট ব্যবহারে কিশোর-তরুণদের ধূমপানের প্রবণতা দুই থেকে ছয় গুণ হয়েছে। ২০০৫ সালের তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনে ই-সিগারেট বিষয়ে কিছু উল্লেখ নেই। আইন হালনাগাদ করে ই-সিগারেট আমদানি ও বিক্রি নিষিদ্ধ করা প্রয়োজন। ই-সিগারেটের সহজলভ্যতা এবং এর বিপজ্জনক প্রভাব নিয়ে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া না হলে তরুণ প্রজন্ম আরও বড় স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পড়বে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন। ই-সিগারেটের ব্যবহার নিয়ে তরুণদের মধ্যে সচেতনতা বাড়ানো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এর ক্ষতিকর প্রভাব সম্পর্কে প্রচার চালানো এবং আইনি নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে এর ব্যবহার সীমিত করা প্রয়োজন।

জাহিদ হোসাইন খান: গবেষক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
zahid.

[email protected]

উৎস: Samakal

এছাড়াও পড়ুন:

চার সমুদ্রবন্দরে ৩ নম্বর সতর্কতা, ভারী বর্ষণের আশঙ্কা

দেশের উপকূলীয় এলাকায় সক্রিয় রয়েছে স্থানীয় মৌসুমী বায়ু। এর প্রভাবে চার সমুদ্রবন্দর চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মোংলা ও পায়রাকে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্কতা সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। দেশের বিভিন্ন স্থানে ভারী বৃষ্টি হতে পারে বলেও জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। 

আবহাওয়ার পূর্বভাসে বলা হয়েছে, মঙ্গলবার (৩০ জুলাই) সকাল ৯টা থেকে পরবর্তী পাঁচ দিন দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বৃষ্টিপাতের প্রবণতা অব্যাহত থাকতে পারে। কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের ভারী থেকে অতি ভারী বর্ষণের সম্ভাবনাও রয়েছে।

আজ ঢাকা, খুলনা, বরিশাল ও চট্টগ্রাম বিভাগের অধিকাংশ জায়গায় এবং রংপুর, রাজশাহী, ময়মনসিংহ ও সিলেট বিভাগের অনেক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি বা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। খুলনা, বরিশাল ও চট্টগ্রামে কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের ভারী থেকে অতি ভারী বর্ষণ হতে পারে।

বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার ঢাকা, ময়মনসিংহ, খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের অধিকাংশ জায়গায় এবং রাজশাহী ও রংপুরে অনেক জায়গায় বৃষ্টিপাত হতে পারে। একইসঙ্গে কোথাও কোথাও ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। 

শনিবার রংপুর, রাজশাহী, ঢাকা, ময়মনসিংহ ও সিলেট বিভাগের অধিকাংশ এলাকায় এবং খুলনা, বরিশাল ও চট্টগ্রামে অনেক জায়গায় বৃষ্টিপাত হতে পারে। সারা দেশের কোথাও কোথাও ভারী থেকে অতি ভারী বর্ষণের আশঙ্কা রয়েছে। এই দিন থেকে দিন ও রাতের তাপমাত্রা সামান্য কমতে পারে।

আগামী পাঁচ দিনের মধ্যে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বৃষ্টিপাতের প্রবণতা অব্যাহত থাকবে বলে পূর্বাভাসে জানানো হয়েছে।

আবহাওয়া অধিদপ্তর সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছে, বিশেষ করে নদীতীরবর্তী ও নিম্নাঞ্চলের বাসিন্দাদের। একইসঙ্গে সম্ভাব্য জলাবদ্ধতা ও কৃষিক্ষেত্রে ক্ষতির বিষয়ে নজর রাখতে বলা হয়েছে স্থানীয় প্রশাসন ও সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোকে।

গত ২৪ ঘণ্টায় সর্বোচ্চ বৃষ্টি হয়েছে খুলনায় ৭৫ মিলিমিটার। সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল নরসিংদীতে ৩৫ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। গতকাল ঢাকায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩২ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
 

ঢাকা/ইভা 

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ইসলাম অনুসারে সন্তানের আধুনিক নাম
  • চার সমুদ্রবন্দরে ৩ নম্বর সতর্কতা, ভারী বর্ষণের আশঙ্কা
  • ২৫ বছরে বিশ্বে লিভার ক্যানসারে আক্রান্তের সংখ্যা দ্বিগুণ হওয়ার আশঙ্কা