লস অ্যাঞ্জেলেসে ঝড়ো বাতাসের পূর্বাভাস, আরো ভয়ংকর হতে পারে দাবানল
Published: 14th, January 2025 GMT
যুক্তরাষ্ট্রে লস অ্যাঞ্জেলেসের বাসিন্দারা নতুন করে ধ্বংসযজ্ঞের আশঙ্কায় দিন কাটাচ্ছেন। আবহাওয়ার পূর্বাভাস বলছে, সেখানে দমকা হাওয়ার গতি আরো বাড়তে পারে। এর ফলে আরো ছড়িয়ে পড়তে পারে ভয়ংকর আগুন।
মঙ্গলবার (১৪ জানুয়ারি) এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ সাংবাদমাধ্যম বিবিসি।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এক সপ্তাহ পেরিয়ে গেলেও লস অ্যাঞ্জেলেসের দাবানল এখনো নিয়ন্ত্রণে আসেনি। তিনটি দাবানল এখনো জ্বলছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বড় প্যালিসেডস দাবানল ২৩ হাজার একরেরও বেশি জমি পুড়িয়ে দিয়েছে এবং সোমবার সন্ধ্যা পর্যন্ত মাত্র ১৪ শতাংশ নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হয়েছে।
আরো পড়ুন:
লস অ্যাঞ্জেলেসের দাবানল আরো ছড়িয়ে পড়ার শঙ্কা, মৃত্যু বেড়ে ২৪
মার্কিন বিমানবাহী রণতরীতে ফের হামলার দাবি হুতিদের
লস অ্যাঞ্জেলেসের মেয়র কারেন বাস জানিয়েছেন, মঙ্গলবার ঘূর্ণিঝড়ের মতো বাতাসের পূর্বাভাস থাকায় ‘জরুরি প্রস্তুতি’ নেওয়া হচ্ছে।
ইটন ও প্যালিসেডসে দাবানলে অন্তত ২৪ জন মারা গেছেন এবং ২৩ জন নিখোঁজ রয়েছেন।
এদিকে, আগুনে পুড়ে যাওয়ার বিভিন্ন আবাসিক এলাকায় লুটপাট ও চুরির ঘটনা বেড়েছে। সোমবার, কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, দাবানলের মধ্যে লুটপাটের অভিযোগে আরো নয়জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
লস অ্যাঞ্জেলেসের জেলা অ্যাটর্নি নাথান হকম্যান এক সংবাদ সম্মেলনে লুটপাটের কিছু ভিডিও দেখিয়ে জানিয়েছেন, অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ শাস্তির আবেদন করা হবে।
এছাড়া নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধি, ইন্টারনেট প্রতারণা এবং ড্রোন ওড়ানো নিয়ে সতর্কবার্তা দিয়েছে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলো কর্তৃপক্ষ। ড্রোন উড়ানোর বিরুদ্ধেও সতর্ক করেছে, যা অগ্নিনির্বাপক বিমানের কাজে হস্তক্ষেপ করতে পারে।
লস অ্যাঞ্জেলেস পুলিশ বিভাগের বিশেষ অভিযান অফিসের সহকারী প্রধান ব্লেক চাউ লুটেরাদের কঠোর সতর্কবার্তা জারি করে বলেছেন, “আপনারা পার পাবেন না।”
গত সপ্তাহে লস অ্যাঞ্জেলেসজুড়ে ছড়িয়ে পড়া দাবানলের মধ্যে দ্বিতীয় বৃহত্তম ইটনের দাবানল ১৪ হাজার একরেরও বেশি জমি পুড়িয়ে দিয়েছে। এই দাবানলটি ৩৩ শতাংশ নিয়ন্ত্রণে আনা হয়েছে বলে কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে।
সোমবার প্যালিসেডসের আগুনের "খুব কম আগুনের বৃদ্ধি" হয়েছে, ক্যালফায়ারের ডেপুটি চিফ জিম হাডসন বলেছেন।
বিবিসি ওয়েদার সেন্টার জানিয়েছে, সান্তা আনা বাতাস মঙ্গলবার ঘণ্টায় ১১২ কিলোমিটার পর্যন্ত গতিবেগে প্রবাহিত হতে পারে। এর ফলে দাবানল আরো ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে।
আবহাওয়া কর্মকর্তারা বলছেন, বুধবারের পর বাতাস কমার সম্ভাবনা রয়েছে, যা দমকলকর্মীদের আগুন আরো নিয়ন্ত্রণে আনার সুযোগ করে দেবে।
ক্যালিফোর্নিয়ার নবনির্বাচিত ডেমোক্র্যাটিক সিনেটর অ্যাডাম শিফ বিবিসিকে বলেছেন, তিনি আশা করেন আসন্ন ট্রাম্প প্রশাসন এই দুর্যোগে ত্রাণ সরবরাহের জন্য দ্রুত পদক্ষেপ নেবে।
দাবানল ক্রমশ রাজনীতিকীকরণের দিকে ঝুঁকে পড়েছে কিনা জানতে চাইলে শিফ বলেন, “দাবানল শুরু হওয়ার পর থেকেই মানুষ এটা করছে। এটা এখনই সহায়ক নয়, আসুন আমরা কেবল এই আগুন নেভানোর দিকে মনোনিবেশ করি, মানুষকে প্রয়োজনীয় সাহায্য করি।”
নবনির্বাচিত মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প আগামী দিনে এলাকাটি পরিদর্শন করার পরিকল্পনা করছেন বলে জানা গেছে।
বিদায়ী মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেছেন, তিনি ক্যালিফোর্নিয়ায় শত শত ফেডারেল কর্মী, বিমান এবং স্থল সহায়তার নির্দেশ দিয়েছেন। যেকোনো অতিরিক্ত সাহায্যের অনুরোধে দ্রুত সাড়া দেবে তার প্রশাসন।
ঢাকা/ফিরোজ
.উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
এই সরকারও আমলাতন্ত্রের চাপে!
চব্বিশের গণ-অভ্যুত্থান নতুন যে জন-আকাঙ্ক্ষা তৈরি করেছে, সেখানে নিশ্চিত করেই জনপ্রশাসন সংস্কারের প্রশ্নটি নাগরিকদের কেন্দ্রীয় একটি চাহিদা। কিন্তু অন্তর্বর্তী সরকার যেভাবে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের মতোই পদ ছাড়া পদোন্নতি দিচ্ছে, তাতে উদ্বিগ্ন না হওয়ার কোনো কারণ নেই। কেননা, আগের সরকার কর্তৃত্ববাদী ও স্বৈরাচারী হয়ে উঠেছিল যে কয়টা স্তম্ভের ওপর দাঁড়িয়ে, তার অন্যতম আমলাতন্ত্র।
জনপ্রশাসনকে রাজনীতিকরণের বৃত্ত ভেঙে জনবান্ধব করার একটা বড় সুযোগ এনে দিয়েছিল অভ্যুত্থান। কিন্তু শুরু থেকেই অন্তর্বর্তী সরকার আমলাতন্ত্রের ওপর অতিনির্ভরশীল হয়ে ওঠায় সেই সুযোগ অনেকটাই হাতছাড়া হয়েছে। সরকারি কর্মকর্তাদের বিরোধিতার কারণে জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের বড় কোনো সুপারিশ বাস্তবায়ন করতে পারেনি সরকার। অন্যদিকে বেতন বাড়াতে গঠন করা হয়েছে বেতন কমিশন। কিছু মুখকে সরিয়ে দেওয়া ছাড়া জনপ্রশাসনে সেই পুরোনো চর্চা অব্যাহত রয়েছে। বিশেষ করে পদ ছাড়া পদায়নের ক্ষেত্রে জনপ্রশাসনে যেভাবে আগের সরকারের চর্চার ধারাবাহিকতা বজায় রাখা হয়েছে, সেটা যারপরনাই দুঃখজনক।
প্রথম আলোর খবর জানাচ্ছে, উপসচিব স্তরে যেখানে আগে থেকেই পদের চেয়ে ৬০০ কর্মকর্তা বেশি রয়েছেন, সেখানে আগস্ট মাসে নতুন করে ২৬৮ জনকে এই পদে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে। অতিরিক্ত সচিব পদেও পদোন্নতির আলোচনা শুরু হয়েছে। রাজনৈতিক সরকারের আমলে জনপ্রশাসনে হরেদরে পদোন্নতি দেওয়ার অনেক নজির আছে। এর কারণ একটাই, আমলাতন্ত্রকে তুষ্ট রাখা। অন্তর্বর্তী সরকার এই চর্চায় ছেদ ঘটাতে পারবে, সেটাই সবাই প্রত্যাশা করেছিল।
পরিহাসের বিষয় হচ্ছে, জনপ্রশাসনে পদ ছাড়া পদোন্নতি দেওয়ার পর বেশির ভাগ কর্মকর্তাকে আগের জায়গাতেই রেখে দেওয়া হয়। এর মানে হচ্ছে তাঁরা আগের দায়িত্বই পালন করেন, কিন্তু মাঝখান থেকে বেতন-ভাতা বাড়ে। উপসচিব পর্যায়ের কর্মকর্তারা তিন বছর চাকরি পাওয়ার পর বিনা সুদে গাড়ি কেনার জন্য ঋণসুবিধা পান। অন্তর্বর্তী সরকারের আমলে অবসরে যাওয়া সরকারি কর্মকর্তাদের যেভাবে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে, তার দৃষ্টান্তও খুব বেশি নেই। অবসরে যাওয়া প্রশাসন ক্যাডারের ‘বঞ্চিত’ ৭৬৪ জন কর্মকর্তাকে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে ও অন্য ক্যাডারের ‘বঞ্চিত’ ৭৮ জন অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে ভূতাপেক্ষ পদোন্নতির সুপারিশ করা হয়েছে।
জনপ্রশাসনের মেধাবী ও যোগ্য কর্মকর্তারা পদোন্নতি পেয়ে পরের ধাপে যাবেন, সেটা স্বাভাবিক বিষয়। কিন্তু পদ না থাকার পরও কেন পদায়ন করা হবে? এ ক্ষেত্রে সরকারকে পর্যালোচনা করে দেখা প্রয়োজন, জনপ্রশাসনের বিভিন্ন স্তরে পদ বাড়ানো যায় কি না। আবার যেখানে এমনিতেই পদের বিপরীতে নিয়োগপ্রাপ্ত কর্মকর্তার সংখ্যা বেশি, সেখানে অবসরে যাওয়া কর্মকর্তাদের নিয়োগ দেওয়া কতটা যৌক্তিক?
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসন বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ও জনপ্রশাসনবিশেষজ্ঞ সালাউদ্দিন এম আমিনুজ্জামান বলেছেন, জনপ্রশাসনে পদ ছাড়া পদোন্নতি দেওয়া যায় না। তবে বিশেষ ক্ষেত্রে মেধাবীদের পদোন্নতি দেওয়ার সুযোগ রয়েছে। এরপরও কেন এমন পদোন্নতি—সেই ব্যাখ্যায় তিনি বলেছেন, সরকার সম্ভবত আমলাতন্ত্রের চাপে রয়েছে। এই ধারণা শুধু তাঁর একার নয়, নাগরিক পরিসরের
বিস্তৃত একটি ধারণাও। অন্তর্বর্তী সরকারকে অবশ্যই এর পরিষ্কার ব্যাখ্যা হাজির করা উচিত।
মাথাভারী আমলাতন্ত্র সরকারি সেবা নাগরিকের কাছে ঠিকভাবে পৌঁছানোর ক্ষেত্রে বড় একটা বাধা। অন্যদিকে সরকারকে এখানে বিশাল ব্যয়ের বোঝা বহন করতে হয়। ফলে মাঠ প্রশাসন থেকে শুরু করে সিনিয়র সচিব পর্যন্ত একটি সামঞ্জস্যপূর্ণ ও গতিশীল জনপ্রশাসনই সবাই প্রত্যাশা করে। জনপ্রশাসনের সব স্তরে পদোন্নতি রাজনৈতিক বিবেচনায় নয়, মেধার ভিত্তিতেই হতে হবে।