যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া অঙ্গরাজ্যের লস অ্যাঞ্জেলেসে ভয়াবহ দাবানলের এক সপ্তাহ পার হলেও নিয়ন্ত্রণে আনা যাচ্ছে না। এখনও যে চারটি দাবানল ধ্বংসযজ্ঞ চালাচ্ছে, তার মধ্যে দুটি অনেকটাই অপ্রতিরোধ্য। ছোট আরও দুটি দাবানল সক্রিয় আছে। এগুলো নেভাতে কাজ করছেন অগ্নিনির্বাপককর্মীরা। পাশাপাশি আকাশ থেকে পানি ও রাসায়নিক নিক্ষেপ করে আগুন নেভানোর কাজও চলছে। বিভিন্ন রাজ্য থেকে আনা হয়েছে কর্মীদের। অনেকে অবসর ভেঙে আগুন নেভাতে মাঠে নেমেছেন। প্রতিবেশী কানাডা ও মেক্সিকো সহায়তায় কর্মী পাঠিয়েছে। কিন্তু সবচেয়ে বড় হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে ঝোড়ো বাতাস।

যুক্তরাষ্ট্রের আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়, বাতাসে দাবানলের গতি আরও বাড়তে পারে, ছড়াতে পারে নতুন এলাকায়। এরই মধ্যে ১০ হাজারের বেশি স্থাপনা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।   

আবহাওয়া পূর্বাভাসের বরাত দিয়ে গতকাল মঙ্গলবার বিবিসি জানায়, ‘সান্তা আনা’ নামে পরিচিত ভয়ানক ওই বাতাসের গতি ৭০ মাইল ছাড়িয়ে যেতে পারে। এতে বিস্ফোরণের গতিতে আগুন ছড়িয়ে পড়তে পারে। স্থানীয় সময় মঙ্গলবারই এ পরিস্থিতি দেখা দিতে পারে। এরই মধ্যে আগুনে বিশ্বের অন্যতম ধনাঢ্য এলাকাটির বাড়িঘর পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। 

লস অ্যাঞ্জেলেসের মেয়র কারেন ব্যাস বলেন, তারা প্রস্তুত আছেন। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত ২৪ জন নিহত ও ২৩ জন নিখোঁজ আছেন। পুলিশ বলছে, মৃতের সংখ্যা বাড়তে পারে। নতুন করে আরও ৯০ হাজার বাসিন্দাকে সরে যেতে বলা হয়েছে।

সিএনএনের সাবেক প্রযোজক ডেভ ওয়াটারফল বলেন, তিনি সাধারণত অন্য মানুষের দুর্ভোগ দেখে অভ্যস্ত। কিন্তু কখনও ভাবেননি, যে এলাকায় থাকেন সেখানে এভাবে দুর্যোগ নেমে আসবে। লস অ্যাঞ্জেলেসের শান্তা মনিকা থেকে স্ত্রী ও দুই সন্তানসহ তাঁকে অন্যত্র সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। আকাশে বিমান উড়ছে, অগ্নিনির্বাপণ কর্মীরা লড়ে চলেছেন জমিনে। ডেভ বলেন, এটা যেন প্রকৃত অর্থে যুদ্ধক্ষেত্র।

প্যাসিফিক প্যালেডসের বাড়িতে প্রতিদিন পিয়ানো বাজাতেন হারিয়াত গ্লেসার। বাড়িতে ছিল ৫০টি শিল্পকর্মও। দাবানলে সব পুড়ে গেছে। প্রাণ বাঁচাতে ঘরবাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ছেড়ে পালাচ্ছেন বাসিন্দারা। এ সুযোগে অনেকে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে চুরি ও লুটপাটে। দাবানলে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় চুরি ও লুটপাটের ঘটনায় নতুন করে আরও ১০ জনকে আটক করা হয়েছে। লস অ্যাঞ্জেলেসের ডিস্ট্রিক্ট অ্যাটর্নি নাথান হোচম্যান জানান, তিনজনের বিরুদ্ধে ২ লাখ ডলারেরও বেশি মালপত্র লুটের অভিযোগ রয়েছে। গত কয়েক দিনে লুটপাটের অভিযোগে ৩৯ জনকে আটক করা হলো।  

পুলিশ বলছে, ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় লুটপাট চালাতে অনেকে ছদ্মবেশের আশ্রয় নিচ্ছে। আটকদের মধ্যে দু’জন দমকলকর্মী সেজে লুট করতে গিয়েছিল। চুরি ও লুটপাট ঠেকাতে আক্রান্ত এলাকায় নজরদারি বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। লস অ্যাঞ্জেলেস কাউন্টি শেরিফ রবার্ট লুনা বলেন, ‘মালিবু এলাকায় আমি একজনকে দেখলাম একেবারে দমকলকর্মীর মতো। তিনি বসে ছিলেন। আমি তাকে জিজ্ঞেস করলাম, ঠিক আছেন কিনা। বুঝতেই পারিনি, তাকে হ্যান্ডকাফ পরাতে হবে। আমরা তাকে পুলিশে দিয়েছি। তিনি দমকলকর্মীর পোশাক পরে ছিলেন, যদিও বাহিনীর কর্মী নন।’ 

সূত্র জানায়, প্যালিসেডস, ইটন, কেনেথ, লিডিয়া, হার্স্ট ও আর্চারের অনেক এলাকায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা যায়নি। এর মধ্যে সবচেয়ে বড় তাণ্ডব ঘটাচ্ছে প্যালিসেডস ও ইটন ফায়ার। এগুলো ক্রমেই নতুন নতুন এলাকায় ছাড়াচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় জরুরি ব্যবস্থাপনা বিভাগের প্রশাসক ডিয়ানে ক্রিসওয়েল বলেন, পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে আরও সময় লাগবে। তিনি বলেন, অনেকেই নিজ এলাকায় ফিরতে চাচ্ছেন; ঘরবাড়ির অবস্থা দেখতে চাচ্ছেন। তবে বাতাস আরও বাড়লে আপনি জানেন না যে, কোন পথে সরে যেতে হবে।


 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: লস অ য ঞ জ ল স এল ক য় কর ম র

এছাড়াও পড়ুন:

ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ হই হই অবস্থা, প্রস্তুতি না নেওয়া আত্মঘাতী

ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে উত্তেজনা বিরাজ করছে। এ পরিস্থিতিতে প্রতিবেশী দেশ হিসেবে বাংলাদেশেরও প্রস্তুতি নিয়ে রাখা দরকার বলে মনে করেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেছেন, ‘এমন বিশ্বে আমরা বাস করি, প্রতিনিয়ত যুদ্ধের হুমকি আমাদের ঘিরে থাকে। ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ হই হই অবস্থার মধ্যে রয়ে গেছে। সকালের খবরে দেখলাম, হয়তো গুজব, যে আজকেই শুরু হয়ে যাবে যুদ্ধ। প্রস্তুতি না নেওয়াটা আত্মঘাতী। আধাআধি প্রস্তুতির কোনো জায়গা নাই।’

গতকাল বুধবার রাজধানীর বীরউত্তম এ কে খন্দকার ঘাঁটিতে বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর অনুশীলন পর্যবেক্ষণ অনুষ্ঠানে এ মন্তব্য করেন প্রধান উপদেষ্টা। খবর বিবিসি বাংলা ও বাসসের।

নিজেকে ‘যুদ্ধবিরোধী মানুষ’ উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘পৃথিবীতে যুদ্ধ হোক– এটা আমরা কামনা করি না।’ যুদ্ধের প্রস্তুতি অনেক সময় যুদ্ধের দিকে নিয়ে যায়– এ রকম ধারণার বিষয়ে ঘোরতর আপত্তির কথা জানান ড. ইউনূস।

তিনি আরও বলেন, ‘দেশের সার্বভৌমত্ব ও স্বাধীনতার প্রতি যে কোনো চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সদা প্রস্তুত আধুনিক বিমানবাহিনী গড়ে তোলার লক্ষ্যে সরকারের প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে।’

দেশপ্রেম ও পেশাদারিত্ব আগামী দিনের নিরাপদ বাংলাদেশ গড়ার মূল ভিত্তি উল্লেখ করে মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, ‘বিমানবাহিনীর সব সদস্যের প্রতি যুগোপযোগী ক্ষমতা ও দক্ষতা অর্জন এবং পেশাগত ও কারিগরি সক্ষমতা বৃদ্ধির প্রতি অব্যাহত মনোযোগ বজায় রাখার আহ্বান জানাচ্ছি। আমাদের সবার ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টায় আমরা একটা নিরাপদ, উন্নত ও শক্তিশালী বাংলাদেশ গড়ে তুলব।’

তিনি বলেন, ‘ভবিষ্যতে অত্যাধুনিক যুদ্ধবিমান, এয়ারক্রাফ্ট ক্যারিয়ার, রাডার সংযোজনের জন্য বিমানবাহিনীকে সর্বাত্মক সহযোগিতা প্রদান করবে সরকার।’

প্রধান উপদেষ্টা আরও বলেন, ‘বর্তমান বিশ্বের দ্রুত পরিবর্তনশীল প্রযুক্তির সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলার জন্য আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন প্রশিক্ষণ ও অনুশীলনের গুরুত্ব অপরিসীম। এ প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর সদস্যরা নিয়মিতভাবে বহুমাত্রিক প্রশিক্ষণ কার্যক্রম ও অনুশীলনে অংশগ্রহণের মাধ্যমে জ্ঞান-দক্ষতাকে যুগোপযোগী করতে সদা সচেষ্ট রয়েছেন।’

তিনি দেশের বিমানবন্দরগুলোর সুষ্ঠু পরিচালনা ও নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত বিমানবাহিনীর সদস্যদের ধন্যবাদ জানান।

মহড়া কেবল একটি সাময়িক অনুশীলনই নয় উল্লেখ করে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, এটি আমাদের সার্বভৌমত্ব রক্ষায় বিমানবাহিনীর পেশাদারিত্ব ও দক্ষতার পরিচয় বহন করে। বাংলাদেশ বিমানবাহিনী সময়োপযোগী পরিকল্পনা ও দূরদর্শী নেতৃত্বের মাধ্যমে ভূরাজনৈতিক পরিস্থিতি এবং কার্যকর আকাশ প্রতিরক্ষার পাশাপাশি বিস্তীর্ণ সমুদ্র এলাকায় নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা দেওয়ার লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে। 

এর আগে বিমানঘাঁটিতে এসে পৌঁছলে প্রধান উপদেষ্টাকে স্বাগত জানান বিমানবাহিনী প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল হাসান মাহমুদ খান। অনুষ্ঠানস্থলে বিমানবাহিনীর একটি সুসজ্জিত দল তাঁকে রাষ্ট্রীয় সালাম জানায়।

বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের ঘর বিতরণ প্রধান উপদেষ্টার

গত বছরের বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য বিশেষ আবাসন প্রকল্পে নির্মিত ঘর বিতরণ করেছেন প্রধান উপদেষ্টা। গতকাল সকালে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে তিনি গত বছরের আগস্ট-সেপ্টেম্বরে দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের কয়েকটি জেলার বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝে এসব ঘর বিতরণ করেন।

ওই বন্যায় অনেক মানুষ গৃহহীন হয়ে পড়ে। প্রাথমিকভাবে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত ফেনী, নোয়াখালী, কুমিল্লা ও চট্টগ্রাম। অসংখ্য বাড়িঘর সম্পূর্ণরূপে ও আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। নির্মাণের সামর্থ্য নেই, এ রকম তিনশ পরিবারকে সরকারের পক্ষ থেকে ঘর পুনর্নির্মাণ করে দেওয়া হয়। এর মধ্যে ফেনীতে ১১০টি, নোয়াখালীতে ৯০টি, কুমিল্লায় ৭০টি ও চট্টগ্রামে ৩০টি ঘর বরাদ্দ দেওয়া হয়। দুটি কক্ষ, কমন স্পেস, শৌচাগার, রান্নাঘরসহ বারান্দা রয়েছে। ৪৯২ বর্গফুট আয়তনের ঘরে ৭ লাখ ২৫ হাজার ৬৯৪ টাকা এবং ৫০০ বর্গফুটের ঘরে প্রাক্কলিত ব্যয় ৭ লাখ ২৬ হাজার ৬৭৮ টাকা বরাদ্দ করা হয়। সেনাবাহিনী ঘরগুলো নির্মাণ করেছে।

অনুষ্ঠানে সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফারুক-ই-আজম, প্রধান উপদেষ্টার মুখ্য সচিব এম সিরাজ উদ্দিন মিয়া এবং বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার লেফটেন্যান্ট জেনারেল এস এম কামরুল হাসান বক্তব্য দেন।

চট্টগ্রাম বন্দরের সক্ষমতা বৃদ্ধির উদ্যোগ ত্বরান্বিত করার নির্দেশ

চট্টগ্রাম বন্দরের সক্ষমতা বৃদ্ধির উদ্যোগ ত্বরান্বিত ও বিশ্বমানের সেবা নিশ্চিত করতে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা। নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা), বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেজা), চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষসহ সংশ্লিষ্ট বিভাগের কর্মকর্তাদের নিয়ে উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকে এ নির্দেশ দেন তিনি। গতকাল রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় এ বৈঠক হয়।

অধ্যাপক ইউনূস বলেন, বন্দর ব্যবস্থাপনায় এমন অপারেটরদের সম্পৃক্ত করতে হবে, যাতে এগুলো আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিযোগিতা করার সক্ষমতা অর্জন করতে পারে।

বৈঠকে বিডা ও বেজার নির্বাহী চেয়ারম্যান চৌধুরী আশিক মাহমুদ বিন হারুন বলেন, ‘দেশের নৌবন্দরগুলোর বর্তমান হ্যান্ডলিং ক্যাপাসিটি বছরে ১ দশমিক ৩৭ মিলিয়ন ইউনিট, যা সঠিক পরিকল্পনা ও কর্মপন্থার মাধ্যমে আগামী পাঁচ বছরে ৭ দশমিক ৮৬ মিলিয়ন ইউনিটে উন্নীত করা সম্ভব।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ