লস অ্যাঞ্জেলেস যেন ‘যুদ্ধক্ষেত্র’
Published: 14th, January 2025 GMT
যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া অঙ্গরাজ্যের লস অ্যাঞ্জেলেসে ভয়াবহ দাবানলের এক সপ্তাহ পার হলেও নিয়ন্ত্রণে আনা যাচ্ছে না। এখনও যে চারটি দাবানল ধ্বংসযজ্ঞ চালাচ্ছে, তার মধ্যে দুটি অনেকটাই অপ্রতিরোধ্য। ছোট আরও দুটি দাবানল সক্রিয় আছে। এগুলো নেভাতে কাজ করছেন অগ্নিনির্বাপককর্মীরা। পাশাপাশি আকাশ থেকে পানি ও রাসায়নিক নিক্ষেপ করে আগুন নেভানোর কাজও চলছে। বিভিন্ন রাজ্য থেকে আনা হয়েছে কর্মীদের। অনেকে অবসর ভেঙে আগুন নেভাতে মাঠে নেমেছেন। প্রতিবেশী কানাডা ও মেক্সিকো সহায়তায় কর্মী পাঠিয়েছে। কিন্তু সবচেয়ে বড় হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে ঝোড়ো বাতাস।
যুক্তরাষ্ট্রের আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়, বাতাসে দাবানলের গতি আরও বাড়তে পারে, ছড়াতে পারে নতুন এলাকায়। এরই মধ্যে ১০ হাজারের বেশি স্থাপনা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
আবহাওয়া পূর্বাভাসের বরাত দিয়ে গতকাল মঙ্গলবার বিবিসি জানায়, ‘সান্তা আনা’ নামে পরিচিত ভয়ানক ওই বাতাসের গতি ৭০ মাইল ছাড়িয়ে যেতে পারে। এতে বিস্ফোরণের গতিতে আগুন ছড়িয়ে পড়তে পারে। স্থানীয় সময় মঙ্গলবারই এ পরিস্থিতি দেখা দিতে পারে। এরই মধ্যে আগুনে বিশ্বের অন্যতম ধনাঢ্য এলাকাটির বাড়িঘর পুড়ে ছাই হয়ে গেছে।
লস অ্যাঞ্জেলেসের মেয়র কারেন ব্যাস বলেন, তারা প্রস্তুত আছেন। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত ২৪ জন নিহত ও ২৩ জন নিখোঁজ আছেন। পুলিশ বলছে, মৃতের সংখ্যা বাড়তে পারে। নতুন করে আরও ৯০ হাজার বাসিন্দাকে সরে যেতে বলা হয়েছে।
সিএনএনের সাবেক প্রযোজক ডেভ ওয়াটারফল বলেন, তিনি সাধারণত অন্য মানুষের দুর্ভোগ দেখে অভ্যস্ত। কিন্তু কখনও ভাবেননি, যে এলাকায় থাকেন সেখানে এভাবে দুর্যোগ নেমে আসবে। লস অ্যাঞ্জেলেসের শান্তা মনিকা থেকে স্ত্রী ও দুই সন্তানসহ তাঁকে অন্যত্র সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। আকাশে বিমান উড়ছে, অগ্নিনির্বাপণ কর্মীরা লড়ে চলেছেন জমিনে। ডেভ বলেন, এটা যেন প্রকৃত অর্থে যুদ্ধক্ষেত্র।
প্যাসিফিক প্যালেডসের বাড়িতে প্রতিদিন পিয়ানো বাজাতেন হারিয়াত গ্লেসার। বাড়িতে ছিল ৫০টি শিল্পকর্মও। দাবানলে সব পুড়ে গেছে। প্রাণ বাঁচাতে ঘরবাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ছেড়ে পালাচ্ছেন বাসিন্দারা। এ সুযোগে অনেকে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে চুরি ও লুটপাটে। দাবানলে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় চুরি ও লুটপাটের ঘটনায় নতুন করে আরও ১০ জনকে আটক করা হয়েছে। লস অ্যাঞ্জেলেসের ডিস্ট্রিক্ট অ্যাটর্নি নাথান হোচম্যান জানান, তিনজনের বিরুদ্ধে ২ লাখ ডলারেরও বেশি মালপত্র লুটের অভিযোগ রয়েছে। গত কয়েক দিনে লুটপাটের অভিযোগে ৩৯ জনকে আটক করা হলো।
পুলিশ বলছে, ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় লুটপাট চালাতে অনেকে ছদ্মবেশের আশ্রয় নিচ্ছে। আটকদের মধ্যে দু’জন দমকলকর্মী সেজে লুট করতে গিয়েছিল। চুরি ও লুটপাট ঠেকাতে আক্রান্ত এলাকায় নজরদারি বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। লস অ্যাঞ্জেলেস কাউন্টি শেরিফ রবার্ট লুনা বলেন, ‘মালিবু এলাকায় আমি একজনকে দেখলাম একেবারে দমকলকর্মীর মতো। তিনি বসে ছিলেন। আমি তাকে জিজ্ঞেস করলাম, ঠিক আছেন কিনা। বুঝতেই পারিনি, তাকে হ্যান্ডকাফ পরাতে হবে। আমরা তাকে পুলিশে দিয়েছি। তিনি দমকলকর্মীর পোশাক পরে ছিলেন, যদিও বাহিনীর কর্মী নন।’
সূত্র জানায়, প্যালিসেডস, ইটন, কেনেথ, লিডিয়া, হার্স্ট ও আর্চারের অনেক এলাকায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা যায়নি। এর মধ্যে সবচেয়ে বড় তাণ্ডব ঘটাচ্ছে প্যালিসেডস ও ইটন ফায়ার। এগুলো ক্রমেই নতুন নতুন এলাকায় ছাড়াচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় জরুরি ব্যবস্থাপনা বিভাগের প্রশাসক ডিয়ানে ক্রিসওয়েল বলেন, পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে আরও সময় লাগবে। তিনি বলেন, অনেকেই নিজ এলাকায় ফিরতে চাচ্ছেন; ঘরবাড়ির অবস্থা দেখতে চাচ্ছেন। তবে বাতাস আরও বাড়লে আপনি জানেন না যে, কোন পথে সরে যেতে হবে।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: লস অ য ঞ জ ল স এল ক য় কর ম র
এছাড়াও পড়ুন:
৫ আসামিকে বাদ দিতে হলফনামা, বাদী কৃষক দল নেতাকে শোকজ
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগর উপজেলায় জুলাই আন্দোলনে হামলার অভিযোগে বিস্ফোরক দ্রব্য আইনে করা মামলায় পাঁচ আসামির নাম বাদ দিতে আদালতে দুটি হলফনামা দিয়েছেন বাদী কৃষক দল নেতা শাহ আলম পাঠান। টাকার বিনিময়ে তিনি হলফনামা দিয়েছেন, এমন অভিযোগ ওঠার পর তাঁকে কারণ দর্শানোর (শোকজ) নোটিশ দিয়েছে জেলা কৃষক দল।
শাহ আলম পাঠান নাসিরনগর উপজেলা কৃষক দলের সদস্যসচিব। ৪ জুন পাঁচজনের নাম মামলা থেকে বাদ দিতে আদালতে হলফনামা দেন শাহ আলম। সম্প্রতি বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে সমালোচনা তৈরি হয়।
যে পাঁচজনকে বাদ দিতে হলফনামা দেওয়া হয়েছে, তাঁরা হলেন উপজেলার নূরপুর গ্রামের মো. মাসুদ, গোকর্ণ গ্রামের শেখ মো. জোবায়ের হাসান, বেনিপাড়ার মামুন মিয়া, টেকানগরের জসিম উদ্দিন কায়কোবাদ ও নূরপুর গ্রামের শামসুল আরেফিন মিঞা। তাঁরা যথাক্রমে মামলার ৯৭, ৭৯, ৯১, ১০৫ ও ৮৭ নম্বর আসামি। তাঁরা আওয়ামী লীগের রাজনীতি করলেও কোনো পদ–পদবি ছিল না।
হলফনামা দেওয়ার বিষয়টি জানাজানির পর গত শুক্রবার রাতে জেলা কৃষক দলের দপ্তরে দায়িত্বে থাকা যুগ্ম আহ্বায়ক মো. আল আমিন স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে শাহ আলমকে কারণ দর্শাতে বলা হয়। সাত দিনের মধ্যে নোটিশের জবাব দিতে বলা হয়। বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয় জেলা কৃষক দলের আহ্বায়ক আবু শামীম মো. আরিফ ও সদস্যসচিব জিল্লুর রহমান এক যৌথ বিবৃতিতে দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে শাহ আলম পাঠানের বিরুদ্ধে কেন সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে না, তা আগামী সাত দিনের মধ্যে জেলার দায়িত্বশীল ব্যক্তিদের কাছে সশরীর হাজির হয়ে ব্যাখ্যা দিতে বলা হয়েছে।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গত বছরের ৪ আগস্ট বেলা ১১টার দিকে নাসিরনগর উপজেলা বিএনপির কার্যালয়ের সামনের সড়কে সরকার পতনের এক দফা দাবিতে ছাত্র-জনতা মিছিল নিয়ে জড়ো হন। তখন আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে তাঁদের সংঘর্ষ হয়। এ ঘটনায় শাহ আলম ১১৮ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা ৩০০ জনকে আসামি করে আদালতে মামলার আবেদন করেন। আদালত আবেদনটি আমলে নিয়ে এজাহারটি মামলা হিসেবে নথিভুক্ত করতে নাসিরনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) নির্দেশ দেন। গত ২ নভেম্বর মামলাটি থানায় নথিভুক্ত হয়। ওই মামলার পাঁচ আসামিকে বাদ দিতে আদালতে হলফনামা দেওয়া হয়েছে।
একটি হলফনামায় বাদী উল্লেখ করেন, লিখিত এজাহারে মাসুদ, জোবায়ের, মামুন ও জসিম উদ্দিনের নাম আসামির শ্রেণিভুক্ত ছিল না। অসাবধানতার কারণে চারজনের নাম আসামি হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। তাঁদের চারজনকে তিনি ব্যক্তিগতভাবে চেনেন না, জানেন না। খোঁজখবর নিয়ে জানতে পারেন, তাঁরা কোনো রাজনীতির সঙ্গে জড়িত নন।
আরেকটি হলফনামায় বলা হয়, আসামি শামসুল আরেফিন মিয়া ২০১৪ সালে উপজেলা ছাত্রদলের সহসভাপতি, সাবেক সদস্যসচিব ও ২০০৩ সালের উপজেলা ছাত্রদলের সদস্য ছিলেন। অসাবধানতাবশত ভুলের জন্য তিনি (শাহ আলম) অনুতপ্ত এবং অনুশোচনা প্রকাশ করছেন।
তবে বিষয়টি জানাজানির পর সমালোচনামুখর হন বিএনপি ও ছাত্রদলের কয়েকজন নেতা। তাঁরা বলেন, শাহ আলম ২০২০ সালে আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য বি এম ফরহাদ হোসেনের সঙ্গে কেক কেটে মুজিব বর্ষ পালন করেন। তাঁর বাবা মো. ইয়াছিন পাঠান উপজেলার চাতলপাড় ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন।
নাসিরনগর সরকারি কলেজ শাখা ছাত্রদলের সাবেক আহ্বায়ক ইয়াছিন মাহমুদ ফেসবুক পোস্টে লেখেন, শাহ আলম মোটা অঙ্কের টাকা নিয়ে হলফনামা দিয়েছেন। আওয়ামী লীগের ছত্রচ্ছায়ায় যাঁরা ছিলেন, এখন তাঁরাই আওয়ামী লীগকে পুনর্বাসনে লিপ্ত।
তবে কৃষক দলের সদস্যসচিব শাহ আলম পাঠান বলেন, ‘পাঁচজনকে মামলায় ভুলবশত সম্পৃক্ত করা হয়েছে। আওয়ামী লীগের সঙ্গে তাঁদের কোনো সম্পৃক্ততা নেই। তাই হলফনামা দিয়েছি। জেলা কৃষক দলের কাছে তথ্য গিয়েছে যে আমি টাকার বিনিময়ে এমন করেছি, যা মোটেও সত্য নয়। স্থানীয় বিএনপিসহ অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মীদের অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন।’
নাসিরনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) খায়রুল আলম প্রথম আলোকে বলেন, মূল ঘটনার তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।